তার আগে নীচের লেখা গুলো পড়ে দেখার অনুরোধ রইলো:
১) ইসলামে বাল্যবিবাহ ও তার ওপর নিয়ম কানুন
২) ইসলামে পর্দা
৩) সৌদীতে ইসলামের নামে যা হচ্ছে
৪) ইসলাম ও বিজ্ঞানের আলোকে বাল্যবিবাহ
৫) ইসলামী অর্থনীতি
ইসলাম এখন একটা মাল্টি ট্রিলিয়ন ডলারের ব্যাবসার নাম। ইসলাম বেঁচে কেউ নিজের আখের গোছাচ্ছে আবার কেউ ক্ষমতা বা পুরো দেশটাই দখল করে নিচ্ছে। আবার বিরোধী পক্ষরা ইসলামের নামে কুৎসা রটনা করে সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতিতে বিভিন্ন ভাবে নিজের স্বার্থ হাসিল করছে। ফলাফল হলো সাধারন মানুষ মরছে, কষ্ট পাচ্ছে। দেখা গেলো ইসলামোফোবিয়ার কারনে কোনো সন্দেহভাজন ব্যাক্তির কাছে কোরান শরীফ পেলে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে আবার কেউ যদি বলে ইসলামের নামে খুন হত্যা হারাম দেখা গেলো ইসলামিস্টরা তাকে মেরেই ইসলাম কায়েম করছে।
তেমনি প্রেক্ষাপটে আইএসআইএসের জন্ম। এরা প্রতিটা হত্যাকান্ড, গনধর্ষনকে জাস্টিফাই করার জন্য কোরানের আয়াত আর হাদিসের আশ্রয় নিচ্ছে। এদের প্রধান বোগদাদী সাহেব ইরাকের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে ইসলামিক স্টাডিজে পিএইচডি করেছেন। সেহেতু বলা যায় এই লোকের দ্বারা পরিচালিত দল কখনো ইসলাম বিরুদ্ধ কাজ করবে না। এমনটা নাস্তিক বা যারা ঘোর ইসলাম বিরোধী তাদের মতামত।
তো এতো লোকের কান কথা না শুনে আসুন আমরা নিজেরাই জানার চেষ্টা করি কোরান, হাদিস, নবিজী সাঃ এর জীবনিতে কি আছে? তিনি কি আসলেই এত বর্বরতার কথা বলেছেন?
তার আগে কিছু কথা বলে নেই। এইসব যুদ্ধবিগ্রহ বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের বিষয় যে টার্মের সাথে সম্পর্কযুক্ত তাকে আমরা সবাই জিহাদ হিসেবেই চিনি। বলা হয়ে থাকে কোরান শরীফের ১০৯ টি আয়াত আছে যেখানে বলা আছে কিভাবে বিধর্মী বা ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলা লোকজনদের কেমন করে শাস্তি দিতে হবে। এখন ১০৯ টি আয়াত নিয়ে আলোচনা একটা বিশাল ব্যাপার। কারন কোরানের আয়াত নিয়ে আলোচনা করটে গেলে নির্দিস্ট কিছু শর্ত লাগে:
১) কোরান যে প্রাচীন আরবী ভাষা রচিত সেটা সম্পর্কে সম্যক ধারনা রাখা।যদি ধারনা না থাকে তাহলে শব্দ গুলো যে মূল থেকে উৎপন্ন সে সম্পর্কে জানলে কোরানের শব্দগুলো সম্পর্কে জানা সহজ হবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে আমরা অনলাইনে উন্মুক্ত অনুবাদ এবং বিভিন্ন অনুবাদক ও প্রতিষ্ঠানের তৈরী কোরান শরীফের ব্যাকরন ও তাদের ভাষাবিন্যাসের গবেষনামূলক প্রকল্প সমূহ আমাদের জন্য স হজ করে দিয়েছেন।
২) কোরান শরীফের আয়াত সরাসরি মহানবী সাঃ এর ওপর অবতীর্ন হয়েছে এবং সব একবারে অবতীর্ন হয় নাই। বিভিন্ন সময়ে পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এসব আয়াত অবতীর্ন হয়েছে। এখন দেখা গেলো ইসলাম বিরোধীরা কোনো একটা বাক্যাংশ তুলে ধরে যাচ্ছেতাই নিজের মতো করে বর্ননা করলেন, যেটা ঠিক নয়। আবার দেখা গেলো যুদ্ধের মধ্যে অবতীর্ন আয়াত দিয়ে পুরোপুরি জেনারালাইজ করা বোকামী। সেহেতু আগে পরের আয়াত এবং অবতীর্ন হবার সময় যেসব পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছিলেন সেগুলো বিবেচনা অবশ্যই রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে কোরানের তফসীর খুবই গুরুত্বপূর্ন।
৩) সূরা আল ক্বামারে চার বার (১৭,২২,৩২,৪০) বলা আছে
"আমি কোরআনকে বোঝার জন্যে সহজ করে দিয়েছি। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি? "
তার মানে কোরআন স হজ ভাবে লেখা হলেও নিজের চিন্তাভাবনা বিবেক বোধ দিয়ে পরিচালিত করার অবশ্যই একটা প্রয়াস আছে। আর সেজন্য আমাদের মহানবী সাঃ তার জীবনাবলি আর হাদিস সমূহ আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। সমস্যা হলো হাদিস সমূহ নবিজী সাঃ এর মৃত্যুর প্রায় ২০০-২৫০ বছর পর তাবেঈন, তাবেঈ তাবেঈনদের স্মৃতি ঘেটে সঞ্চালিত। তাই এর মধ্যে জাল বা জঈফ, আহাদিস স হ নানা প্রকারের সম্মিলন ঘটায় বেশ কিছু প্রশ্নবিদ্ধ। তাই আমি আমার পোস্টে সবচয়ে গ্রহন যোগ্য হাদীস এবং কোরান শরীফের তাফসীরকে অনুসরন করবো।
কোরান শরীফের তাফসীর হিসেবে সবার আগেই ইবনে ইশহাক/হিশামের নাম আছে। যদিও গুটিকতক ইসলামিক স্কলার তার তাফসীর গ্রহন করেন নি। কিন্তু সুন্নী মাযহাবে উনার চেয়ে স্বীকৃত কোনো তাফসীর কারী নেই বলেই জানা। আর উনার লেখার সময়কালও ছিলো নবীজী মৃত্যুর ১৫০ বছরের মধ্যে। যদিও তার লেখাসমূহ বেশীরভাগ নষ্ট করে ফেললেও পরে তার ছাত্র ইবনে হিশাম তা পুনরায় সংকলন কিন্তু কিছু অংশ বাদ দিয়ে। ঐ অংশ সমূহ নিয়েও আলোচনা করবো, তবে আমি এটা শিওর ঐ অংশ নিয়ে কথা বললে ইসলামিস্টরা আমার গলা কাটতে চাইবে।
যাই হোক শুরু করি সূরা বাকারা দিয়ে। নাস্তিকরা যেসব আয়াত তুলে ইসলামকে সরাসরি জঙ্গিবাদের সাথে তুলনা করেন সেগুলার কিছু যুক্তিখন্ডন করি। আশা করি আপনারা যারা আলোচনায় আগ্রহী তারা এই পোস্ট সংশ্লিষ্ট আয়াত আর তার তফসীর নিয়েই আলোচনা করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞানী এবং ক্ষমাশীল, এবং তিনিই সবচেয়ে বড় হেদায়েত দান কারী।
কোরানের বাংলা অনুবাদের আশ্রয় আমি এখান থেকে নিয়েছি।
আর তাফসীরের জন্য এই লিংক ফলো করতে পারেন। কারো কাছে আরো ভালো লিংক থাকলে অবশ্যই কমেন্টে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো। এবং আমার তাফসীর বা অনুবাদ বা ব্যাখ্যায় ভাষাগত ভুল থাকলে অবশ্যই কমেন্টে তা আলোচনা করবেন উপযুক্ত রেফারেন্স দিয়ে।
আয়াত ১৯০ থেকে ১৯৩:
আর লড়াই কর আল্লাহর ওয়াস্তে তাদের সাথে, যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। অবশ্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না। আর তাদেরকে হত্যাকর যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে বের করে দাও সেখান থেকে যেখান থেকে তারা বের করেছে তোমাদেরকে। বস্তুতঃ ফেতনা ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ। আর তাদের সাথে লড়াই করো না মসজিদুল হারামের নিকটে যতক্ষণ না তারা তোমাদের সাথে সেখানে লড়াই করে। অবশ্য যদি তারা নিজেরাই তোমাদের সাথে লড়াই করে। তাহলে তাদেরকে হত্যা কর। এই হল কাফেরদের শাস্তি।আর তারা যদি বিরত থাকে, তাহলে আল্লাহ অত্যন্ত দয়ালু। আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর যদি তারা নিবৃত হয়ে যায় তাহলে কারো প্রতি কোন জবরদস্তি নেই, কিন্তু যারা যালেম (তাদের ব্যাপারে আলাদা)।
তফসীর কারীদের মতে এই আয়াতটি রহিত। এটি যে আয়াত বা আয়াত সমূহ দিয়ে রহিতকরন করা হয়েছে সেটা হলো সূরা তওবার ৫ নম্বর। আসুন আমরা দেখি সূরা তওবার ১-৫ নম্বর আয়াত কি বলেছে:
সম্পর্কচ্ছেদ করা হল আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে সেই মুশরিকদের সাথে, যাদের সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলে।অতঃপর তোমরা পরিভ্রমণ কর এ দেশে চার মাসকাল। আর জেনে রেখো, তোমরা আল্লাহকে পরাভূত করতে পারবে না, আর নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফেরদিগকে লাঞ্ছিত করে থাকেন। আর মহান হজ্বের দিনে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে লোকদের প্রতি ঘোষণা করে দেয়া হচ্ছে যে, আল্লাহ মুশরেকদের থেকে দায়িত্ব মুক্ত এবং তাঁর রসূলও। অবশ্য যদি তোমরা তওবা কর, তবে তা, তোমাদের জন্যেও কল্যাণকর, আর যদি মুখ ফেরাও, তবে জেনে রেখো, আল্লাহকে তোমরা পরাভূত করতে পারবে না। আর কাফেরদেরকে মর্মান্তিক শাস্তির সুসংবাদ দাও। তবে যে মুশরিকদের সাথে তোমরা চুক্তি বদ্ধ, অতপরঃ যারা তোমাদের ব্যাপারে কোন ত্রুটি করেনি এবং তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্যও করেনি, তাদের সাথে কৃত চুক্তিকে তাদের দেয়া মেয়াদ পর্যন্ত পূরণ কর। অবশ্যই আল্লাহ সাবধানীদের পছন্দ করেন।অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
সূরা বাকারার ঐ আয়াত সমূহ মদিনায় হিজরত করার পর প্রথম জিহাদে অংশগ্রহন করার দিক নির্দেশনা হিসেবে নাযিল হয়েছিলো। পরে এটি সূরা তওবার ৫ নম্বর আয়াত দিয়ে রহিত করা হয়। কিন্তু এখানে এটি বিবেচ্য বিষয় নয় কারন নবীজী সাঃ কখনো ঐসব লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেন না যারা তারা বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতো না। এই আয়াতটি শুধু উৎসাহব্যান্জ্ঞক হিসেবেই অবতীর্ন হয়েছিলো কারন যখন হিজরত করেন তখন তার অনুসারীরা অনেকটা নিস্পৃহই ছিলেন। যেসব মুশরিকরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করছে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাটাই যুক্তি এবং ন্যায় সঙ্গত। এখন কেউ যদি কথা নাই বার্তা নাই এই রহিতকরন আয়াত দিয়ে ঠুসঠাস মেরে দেয় তাহলে কিছু বলার নেই। কারন নিজের জান মালের হেফাজত আর অধিকারের জন্য লড়াই করা এটা মানুষের মৌলিক অধিকার।
তবে তারপরও অনেকেই বলবে,"আর তাদেরকে হত্যাকর যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে বের করে দাও সেখান থেকে যেখান থেকে তারা বের করেছে তোমাদেরকে।" এসব কুযুক্তির বিরুদ্ধে যুক্তি দুটি:
১) এই আয়াত রহিত। শুধু পড়বার জন্যই কোরানে রাখা হয়েছে।
২) সূরা তওবার ৩৬ নম্বর আয়াত,
"নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না। আর মুশরিকদের সাথে তোমরা যুদ্ধ কর সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমবেতভাবে। আর মনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাকীনদের সাথে রয়েছেন। "
তার মানে সমবেতভাবে যুদ্ধ করা হয়েছে যদি তারাও সমবেতভাবে যুদ্ধ করে।
সূরা আল বাক্বারাহ (মদীনায় অবতীর্ণ), আয়াত সংখ্যা ২৪৪:
"আল্লাহর পথে লড়াই কর এবং জেনে রাখ, নিঃসন্দেহে আল্লাহ সবকিছু জানেন, সবকিছু শুনেন।"
তাফসীর: এই আয়াতটি নাযিল হয়েছিলো ওয়াসাতের দিকে সুপ্রাচীন যাওয়ারদান বা মতান্তরে আযরাআত নামক গ্রামের লোকজনদের ওপর। ওখানকার অধিবাসীদের সংখ্যা নিয়ে মতাপার্থক্য থাকলেও একদা ঐ গ্রামে প্লেগের প্রাদুর্ভাব হয় এবং সেই ভয়ে তারা গ্রাম পরিত্যাগ করা শুরু করেছিলো। তারা যখন আরেকটি গ্রামে উপস্থিত হয় তখন আল্লাহর নির্দেশে সবাই মারা যায়। এর বেশ কিছুকাল পর যখন তাদের মৃত দেহগুলো মাটির সাথে মিশে যাচ্ছিলো, অস্থি সমূহ ক্ষয় হয়ে যাচ্ছিলো এমনকি উক্ত উন্মুক্ত স্থানের আশেপাশে নতুন বসতিও গড়ে উঠছিলো, তখন তার পাশ দিয়ে বনী ইসরাঈলের হিযকীল নামের এক নবী যাচ্ছিলেন। তিনি এসব দেখে আল্লাহর কাছে হাত তুলে প্রার্থনা করেন তাদেরকে জীবিত করে দেবার জন্য এবং মহান আল্লাহ তাআলা তাদের সবাইকে জীবিত করে দেন। এটা ছিলো তার নিদর্শন যে কেয়ামতের পর আরাফাতের ময়দানে কিভাবে আমাদেরকে রক্তমাংসে জীবিত করবেন শেষ বিচারের জন্য। এই আয়াতটি এটাই বলতে চেয়েছেন আল্লাহ চাহে তো সব কিছু করতে পারে। কখনো পরিত্যাগ করো না। তেমনি যুদ্ধে ময়দানেও আল্লাহর পথে যুদ্ধে গেলে পিছু হটতে নেই।
সুরা বাকারা আয়াত ২১৬-২১৮:
তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে, অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না।সম্মানিত মাস সম্পর্কে তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে যে, তাতে যুদ্ধ করা কেমন? বলে দাও এতে যুদ্ধ করা ভীষণ বড় পাপ। আর আল্লাহর পথে প্রতিবন্দ্বকতা সৃষ্টি করা এবং কুফরী করা, মসজিদে-হারামের পথে বাধা দেয়া এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে বহিস্কার করা, আল্লাহর নিকট তার চেয়েও বড় পাপ। আর ধর্মের ব্যাপারে ফেতনা সৃষ্টি করা নরহত্যা অপেক্ষাও মহা পাপ। বস্তুতঃ তারা তো সর্বদাই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকবে, যাতে করে তোমাদিগকে দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দিতে পারে যদি সম্ভব হয়। তোমাদের মধ্যে যারা নিজের দ্বীন থেকে ফিরে দাঁড়াবে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের যাবতীয় আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে। আর তারাই হলো দোযখবাসী। তাতে তারা চিরকাল বাস করবে।আর এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে, যারা ঈমান এনেছে এবং যারা হিজরত করেছে আর আল্লাহর পথে লড়াই (জেহাদ) করেছে, তারা আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী। আর আল্লাহ হচ্ছেন ক্ষমাকারী করুনাময়।
ইসলামবিরোধীরা যা বলে: নবী সাঃ তার ৭-৮ জন সাহাবীদেরকে একটা পত্র দিয়ে পাঠিয়ে দেয় কুরাইশ যাত্রীদের গতিবিধি জানার জন্য। বলা হয়েছিলো দুই দিন দুরত্ব পথ অতিক্রম করে ঐ চিঠিটা পড়তে। পরে উক্ত ৭-৮ জনের দল যখন জায়গা মতো পৌছায় তখন তারা কুরাইশদের কিছু মালটানা গাড়ী দেখতে পায়। ঐসব কুরাইশদের মধ্যে একজন টাকলা ছিলো। তাকে দেইখা মনে করছিলো যে ব্যাটা তীর্থযাত্রী। তখন সাহাবীরা লোভে পইড়া দুই জন বাদের সবাইরে হত্যা করে এবং তাদের জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে আসে। পরে ওসব জিনিস ৫ ভাগ করে একভাগ নবিজী সাঃ কে দিয়ে জিজ্ঞেস করে এই খুন ডাকাতী ইসলাম সম্মতকিনা। তখন নবিজী সাঃ এক হাকাও আয়াত নাজিল কইরা সেটা জায়েজ করে এবং কুরাইশদের পরে খবর দেয় তোমাগো দুইটারে পাইছি, অখন কি করুম? তখন কুরাইশরা প্রথমে বলে তোমরা পবিত্র রজব মাসে হত্যা করবানা বইলা কথা দিছিলা। কথা ভঙ্গ করছো। তখন নবিজী সাঃ নাকি বলে, প্যাচাল কম, হয় কিছু দিয়া এগো ছুটায়া নাও নাইলে মারলাম। তখন কুরাইশরা দুজন মুসলমানদের বিনিময়ে তাগো দুইজনরে ছাড়ায়া নেয়। (আস্তাগফিরুল্লাহ)
আসল কাহিনী: উপরের বর্ননাটা নাস্তিক বা ইসলামবিরোধীরা আরও মনের মাধুরী মাখায়া বলে, পারলে আরও কিছু যুক্ত করে, কিন্তু কাহিনী আসলে তা হয় নাই। সেটা তাফসীর পড়লেই বুঝতে পারবেন
হযরত মুহাম্মদ সাঃ ৭ জন মুহাজীর সাহাবীর একটা দলের প্রধান হিসেবে হযরত আবু উবাইদা বিন জাররাহ রাঃ নির্বাচিত করেন। কিন্তু অভিযানের কারনে নবিজী সাঃ এর থিকা দূরে থাকতে হবে এই দুঃখে কান্নাকাটি শুরু করলে হযরত আব্দুল্লাহ বিন জাহাশ রাঃ কে তার স্থলাভিশিক্ত করেন। ৭ জনের নাম দিলাম না, পোস্ট বড় হবে। জাহাশ রাঃ কে নবী সাঃ একটা চিঠি দিয়ে বলেন দুদিন দুরত্ব পার করলে ঐ চিঠি যেন খুলে পড়া হয়। যাই হোক অভিযাত্রী দল হাটা দিলেন, দুইদিন পর বাতেনে নাখলা স্থানে পৌছাবার পর সে চিঠি খুলে পড়তে থাকেন যেখানে লেখা ছিলো নাখলা নামক জায়গায় অবস্থান করে কুরাইশদের গতিবিধি সম্পর্কে খবরাদি সংগ্রহ করতে এবং সহযাত্রীদের উদ্দেশ্য করে বলেন আমি পড়লাম এবং তা পালন করবো। আর যারা এই অভিযানে অংশগ্রহন করতে চায় না তারা যেনো ফিরে যায়। তো এক জায়গায় লেখা আছে ২ জন ফিরা গেছে আবার এই তাফসীরে বলা আছে কেউ যায় নাই। এর মধ্যে তাদের মধ্যেকার দুজন নিজেদের ঘোড়া হারায়া ফেলে। যাই হোক। একটা উপযুক্ত স্থানে অবস্থান করলে তারা একটা মরুযাত্রীদলের দেখা পায় যারা কোরাইশদের অন্তর্ভূক্ত। এদের মধ্যে একজন মুক্ত দাসীও ছিলো। যাই হোক ঐ মরুযাত্রীদল যখন এই মুহাজীর সাহাবীদের দল দেখতে পায় তখন তারা ভয়ে সঙ্কিত হয়ে যায়। তখন মুহাজীর সাহাবীদের মধ্যে উকাসা বিন মিহসানের মাথা টাক দেখে কুরাইশরা শন্কামুক্ত হয় এই ভেবে যে এরা মনে হয় ওমরা হজ্জ্ব করা দল, মানে তীর্থযাত্রী।এরা কোনো ক্ষতিসাধন করবে না।
উল্লেখ্য ঐ মরুযাত্রীদল শুস্ক কিশমিশ যা মক্কার আঙ্গুরের বাগানে চাষকৃত, খাদ্যদ্রব্যাদী আর বিক্রি করার জন্য জিনিসপত্র ব হন করছিলো তাদের ভারবাহন কারী গাড়ীতে।এদিকে মুহাজীররা জানতো না আজকে কুন দিন। আর তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলো যে আল্লাহর নামে এদের ছেড়ে দিলে এরা পবিত্র জায়গায় প্রবেশ করবে এবং তোমাদের থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেবে। আর যদি মারো, তাহলে পবিত্র মাসেই মারা হবে।
মুহাজীর সাহাবীরা তাদেরকে মারতে চাইতেছিলো না। তাই নিজেদেরকে একে অপরকে সাহস দিতেছিলো এসব অবিশ্বাসীদের মেরে তাদের জিনিসপত্র নিজেদের জিম্মায় নিয়ে নিতে। কিন্তু এরই মধ্যে ওয়াক্কিদ ইবনে তামিম একটা তীর ছুড়ে মারে এবং ঐ তীরে বিদ্ধ হয়ে কুরাইশ আমীর বি হাদামী জায়গায় মারা যায়। এটা দেখে দুজন সারেন্ডার করে আরেকজন ধস্তাধস্তি করে জায়গায় পটল তুলে। পরে ঐ দুজন স হ যাবতীয় মালামাল আর মালবহনকারী গাড়িটি মুহাজীর সাহাবীরা নবিজী সাঃ এর কাছে নিয়ে আসে এবং এই অভিযান থেকে সংগৃহিত মালামালের ৫ ভাগের এক ভাগ তাকে দিতে চাইলে নবিজী সাঃ প্রথমেই বলে, আমি তোমাদের পবিত্র মাসে যুদ্ধ করতে বলি নাই।
এই কথা বলার পর সাহাবীরা কান্নায় মুশরে পড়ে এই ভেবে যে তারা ইসলাম থেকে বরখাস্ত হয়ে গেলো বুঝি। তখন মহান আল্লাহপাক সুরা বাকারার এই আয়াত সমূহ নাজিল করে। মূলত কুরাইশ যুদ্ধ বন্দিদের ধরে নিয়ে আসলে ইহুদীদের মাধ্যমে কুরাইশরা জানায় যে তোমরা চুক্তি ভঙ্গ করেছো, পবিত্র মাসে তোমরা যুদ্ধ করেছো। মূলত ঐদিন ছিলো রজবের প্রথম রাত্রী আর জামিদিউল উখরার শেষ রাত্রী। মুহাজীরগনের এই সময়টা তাদের মাথায় ছিলো না। তখন আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন যার সারমর্ম হলো "এই মাসগুলোতে যুদ্ধ করা হারাম বটে কিন্তু হে মুশরিকরা! তোমারাদের মন্দ কার্যাবলী মন্দ হিসেবে এর চেয়েও বেড়ে গেছে।তোমরা আমাকে অস্বীকার করছো।তোমরা আমার নবী সাঃ ও তার সহচরদেরকে আমার মসজিদ হতে প্রতিরোধ করছো।তোমরা তাদেরকে সেকান হতে ব হিস্কৃত করেছো। সুতরাং তোমরা ঐ সব কার্যাবলীর দিকে দৃষ্টিপাত করো যে সেগুলো কতটা ঘৃন্য।" ইতিহাস কিন্তু তাই বলে যে এই নিষিদ্ধ মাসগুলোতেই কিন্তু নবিজী সাঃ আর সহচরদের উৎখাত করেছিলো মুশরিকরা।
তার মানে এই অভিযানে যা ঘটেছিলো তার পেছনে যেসব যুক্তি সমূহ:
১) দুটো হত্যাকান্ড ইচ্ছাকৃত ছিলো না।
২) এই পবিত্র মাসে নবিজী সাঃ আর তার সহচরদেরকে নিরস্ত্র অবস্থায় তাদেরকে বিতাড়িত করেছিলো।
_______________
যাই হোক, আজ এ পর্যন্তই, পরবর্তী পর্বে নতুন আয়াত সমূহ আর ঘটনাবলী নিয়ে আলোচনা করা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:৩০