ঈশ্বরের বিশ্বাস আদিকাল থেকেই মানুষের মনে দু প্রকারের প্রশ্ন জাগায়। যখন মানুষ অনেকটা অস হায় হয়ে যায় তখনই সে ঈশ্বরকে খুজে বেড়ায়, যখন মানুষ প্রচন্ড প্রতাপ অর্জন করে তখন ঈশ্বর হয়ে যায় হাইপোথিসিস। তাই দেখা যায় এই ধর্ম হয়ে যায় কখনো রাজনীতির অংশ কখনো সমাজ বদলাবার মূল মন্ত্র।
বিজ্ঞান একসময় দর্শনের মাধ্যমে উৎপত্তী লাভ করে অনেকটা এসব বিশ্বাস দ্বারা চালিত ছিলো। যখন গণিত স হ অন্যান্য শাখার প্রসার লাভ করলো তখন বিজ্ঞান অনেকটা গাণিতিক ভাবে পরিচালিত হবার শুরু করে। আর তাই তো এখন গণিত হয়ে গেছে সবকিছুর মূল হাতিয়ার।মানুষ এই গণিত দিয়েই বলে দিচ্ছে কালকে দেশের অর্থনীতি কোথায় যাবে অথবা সামনের মাসে শীতের প্রচন্ডতা কতটা কমবে।
মহাবিশ্ব সৃষ্টির গোড়ার দিকে খুজলে দেখা যাবে অসীম ঘনত্ব এবং চাপে এক বিন্দুকে কেন্দ্র করে বিপুল বিস্ফোরনের ফলে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি। ঐ বিস্ফোরন কি কারনে ঘটলো সেটা নিয়েও আছে কিছু ব্যাখ্যা। নানা পরীক্ষায় এর প্রমান চলছে। সবার কাছে মহাবিশ্বের অতীত ব্যাপারটাই বেশী গুরুত্বপূর্ন। বোসন কনিকা সমূহের ভরপ্রাপ্তির পেছনে দায়ী হিগস কনিকার খোজ পাওয়া গিয়েছিলো ২০১১ সালে কিন্তু গণিতের মাধ্যমে এর অস্তিত্বের কথা জানান দেয়া হয়েছিলো ৭০ এর দশকের মাঝামাঝি। ২০১১ সালে এর অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিৎ হওয়া গেলেও কয়েকমাসে আগে এর সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিৎ ভাবে বলা যাচ্ছে সে হিগস ম্যাকানিজমের ফলেই কিন্তু আমাদের এই ভরপ্রাপ্তি।
হুমায়ুন আহমেদ তার বেশ কিছু উপন্যাসে কেন্দ্রিয় চরিত্র দিয়ে এক উপ হাস করাতেন। সেটা হলো মহাবিশ্বের সৃষ্টি এনার্জীর প্যাকেট দিয়ে। এনার্জীর যেহেতু ওজন বা ভর নেই সেহেতু মহাবিশ্বেরও ভর নেই। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখছি ভর আছে, জনসংখ্যার ওজনের ভারে বাংলাদেশের কাধ নুয়ে পড়ছে। যাই হোক, হুমায়ুন আহমেদ বেচে থাকলে এখন তার এই রসিকতাটা পাল্টে যেতো নিশ্চয়ই।
আপনি যদি রেসলিং দেখে থাকেন তাহলে টীম হেল নো কে অবশ্যই চিনবেন যার একজন হলো বিশালাকৃতির কেন আরেকজন হলো ড্যানিয়েল ব্রায়েন।কেন উচ্চতায় ৭ ফুট সেখানে ড্যানিয়েল ব্রাউন মাত্র ৫'১০"। তারা এখন ট্যাগ টীম চ্যাম্পিয়ন। ধরা যাক তারা মধ্যম সারির কোনো টীমের সাথে রেসলিং করতে আসলে অবশ্যই জিতে যাবে। কিন্তু যখন তিনটা ম্যাচ খেলবার পর যখন আরো শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হয় তখন কি হবে? তাদের জন্য টিকে থাকাটা দুস্কর এবং হেরে যাবে নিশ্চয়ই। কিন্তু যদি ড্যানিয়েল ব্রাউন আরো একটু শক্তিশালী বা উচ্চতায় আর বড় হতো তাহলে সে খেলে যেতে পারতো।
কিছুদিন আগে এক বিজ্ঞানী এক ক্যালকুলেশন শুরু করলেন। বললেন হিগসের ভর আমরা পেলাম ১২৬ GeV যেটা মূলত প্রত্যাশিত মানের রেন্জ্ঞের সবার নীচের দিকে।
এর ফলে দেখা যাচ্ছে যদি এই কনিকার কারনেই সকল বস্তু ভরপ্রাপ্ত হয় এবং আমাদের এই মহাবিশ্ব তিল তিল করে ইটের পর ইট রেখে এরকম মহীরুহ হয়েছে তাহলে সকল বস্তু একসময় তাদের বাধন আলগা করে ফেলবে। চলনশক্তি হারিয়ে শীতল হতে শুরু করবে এবং তারা আবারও ভরহীন হয়ে আরও একটা বিগ ব্যাং এর রূপ নিতে পারে।
তবে ভয় নেই, হিসাব অনুযায়ী হিগসের এই ভরের জন্য আমাদের এই মহাবিশ্ব আগামী ১০^১০০ (১০ এর পর ১০০ টা শূন্য) বছর চিন্তামুক্ত যার মধ্যে আমরা কেবল ১৩৭০ কোটি বছর পার করেছি।
আসলে ব্যাপারটা অনেকটা এমন ১২৬ GeV ভরের হিগস যখন ১৭৩ ± ১ GeV টপ কোয়ার্কের সাথে কাপলিং বা জোড় বাধে তখন পুরো মহাবিশ্বের চরিত্রটা মেটা স্ট্যাবল হয়ে যায়।মেটা স্ট্যাবল হলো এই মহাবিশ্বকে ভবিষ্যতে বর্তমান অবস্হা থেকে বিবর্তন হতে হতে এর ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে।
আসলে টপ কোয়া্র্কের সাথে দুর্বল তড়িৎশক্তির মাধ্যমে হিগসীর যুক্ত হবার মান পুরোটাই নির্ভর করে বিগ ব্যাং এর ইনফ্লেশন শুরু হবার আগে যে ভ্যাকুয়াম পরিবেশ পরিস্হিতি বিরাজ করছিলো ঠিক সেই সময়ে হিগসীর ভর আর ইকোয়েশনটা হলো λ(µ) = M2H/2v2+∆λ(µ)।
মহাবিশ্বের আসলে ভবিষ্যত কি এই প্রশ্নের উত্তরের ব্যাপারে তিনটা অপশন আসে।নীচের ছবি অনুসারে লাল দাগান্কিত জায়গাটা হলো সবচেয়ে আনস্ট্যাবল জায়গা যার মানে হলো বিগ ব্যাং এর পর সবকিছু এতটাই আনস্ট্যাবল হবার কথা যে একটা মহাবিশ্ব সৃষ্টি হতে পারে না। অনেকটা এমনকিছু সুপার নোভা যার ফলে নতুন তারকারাজী সৃষ্টি হবার বদলে হয়তবা সেটা কৃষ্ঞগ হ্বর বা নিউট্রন স্টারে পরিণত হবে অথবা হোয়াইট ডোয়ার্ফে পরিণত হয়ে অন্য একটা তারার সাথে মিশে থার্মোনিউক্লিয়ার বিস্ফোরন ঘটায়। খুব কম সুপারনোভা থেকেই নতুন নক্ষত্রের যাত্রা শুরু হতে পারে।
সবুজ অংশটা পুরোপুরি স্হির মহাবিশ্ব নির্দেশ করে। মানে চিরকাল যেমন আছে তেমনি থাকবে। হলুদ স্হানটা হলো মেটা স্ট্যাবল ইউনিভার্স যার মানে হলো হিগস ক্ষেত্রের মানের পরিবর্তনের ফলে পুরো মহাবিশ্বের সকল অনু একসময় ধ্বংস হয়ে যাবে।
চুম্বকের যেমন চৌম্বকত্ব একটা গুন হিগস কনার হিগস ক্ষেত্রও সেরকম একটা গুনাবলী। আর হিগস কনিকা হলো এই হিগস ক্ষেত্রে সাগরের ঢেউ এর মতো উত্তেজিত হওয়া কনিকা। পানি যেমন গরম করলে তরল অবস্হা বাস্পায়িত হতে শুরু করে তেমনি মহাবিশ্বের এই শান্ত স্হির রূপটিও পরিবর্তন হয়ে যাবে।পানিতে বুদবুদ হয়ে যেমন একসময় বাতাসে মিলিয়ে তেমনি হিগস কনিকা একসময় ইলেক্ট্রন আর কোয়ার্কের ভরের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে এবং পুরো অনু সমূহের গঠন ধ্বংসের মুখে ফেলে দেবে।
এখন প্রশ্ন হলো কেন আমাদের মহাবিশ্বের এই হিগসের মান এরকম ভাবে ১২৬ গিগাইলেক্ট্রন ভোল্ট হলোই বা কেন এবং এরকম স্ট্যাবল আর মেটা স্ট্যাবলের মধ্যে পড়লামই বা কেন?
এমনকি হতে পারে যে এরকম হিগসের অন্যান্য মানের জন্য এরকম আরও অসংখ্য ইউনিভার্সের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব? যদি থেকেই থাকে তাহলে তাদের চেহারাটা কি রকম হবে?
পেটে ভাত থাকলে অনেক চিন্তাই আসে মাথায় তাই না?
দ্রষ্টব্য: এটা সামান্য একটা ব্রেন স্টর্মিং আর্টিক্যল কনসেপ্ট। এই কনসেপ্ট টা এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এছাড়া এখনও নিশ্চিৎ হওয়া যায়নি যে হিগস বোসন পাওয়া গেছে সেটা আসলে কোন ধরনের হিগস বোসন। স্ট্রিং, সুপার সিমেট্রির জন্য বেশ কিছু হিগস বোসন আছে এগুলো সবকিছুই নির্ভর করে তারা কিভাবে মিথস্ক্রিয়ায় অংশগ্রহন নেয় এবং কিভাবে ভর প্রদান করে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ১:১৮