এই লেখা লিখতে গিয়া আমি প্রথমে ভাবলাম হাইকোর্টের পারিমিশন লইতে হইবো কিনা! তাই দেখা করতে গেলাম এক কুতুব উকিলের কাছে। উকিল কইলো আগে ভিজিট পরে কথা। পকেট ফাকা দেইখা গেলাম বটতলার মোক্তারের কছে। মোক্তার আমারে চা খাওনের কথা কইয়া লইয়া গেলো বিশাল একখান রেস্টুরেন্টে!
পকেটে এমনেই টানাটানি, তার উপর সামান্য একখান লেখা লেখতে গিয়া যদি হাইকোর্টের উকিল ধরতে হয়, তাইলে ভাই লেখাই লেখুম না। আমি তো আর হুমায়ুন আহমেদ না যে লেইখা লেইখা কাড়ি কাড়ি টাকার মালিক হইছি, নাকি!
এক বোলগার জানবার চাইলো শ্রোয়েডিঙ্গার যে বিলাইটা মারছেন সেইটার কি বিচার হইবো কি না! বান্দারে বুঝাইবার পারলাম না যেইখানে মানুষ দিনে দুপুরে বাড়ির সামনে থিকা হাওয়া হইয়া যায় সেইখানে কুনখানকার কুন বিলাই, তারে নিয়া আবার মাতামাতী!
তারপরও তার ঠেলাঠেলিতে আমি বিলাইয়ের লগে এইসব ঢলাঢলির কারন খুজতে গেলাম।
কারন খুজতে গিয়া দেখলাম শ্রোয়েডিঙ্গার নামের এক বুড়ো স্বপ্নে পাওয়া এক লোহার বাক্সে একটা বাক্স বানাইলেন। সেই বাক্সে রাখলেন তেজস্ক্রিয় পদার্থ। তো সে বাঙ্গালীর মতো মাগনায় বিশ্বাসী ছিলো না বইলা সেইখানে খুব মাইপা মাইপা এমুন ভাবে তেজস্ক্রিয় পদার্থ গুলা রাখলো যাতে ১ ঘন্টা পর এর ক্ষয় হয় ৫০%। এর পর বাক্সের ভিতর একখান কাউন্টার গীজার রাখলেন যার সাথে একখান হাতুড়া বানলেন। তো এই গীজারের কাম হইলো যদি সে বাক্সে তেজস্ক্রিয়তার সন্ধান পায় তাইলে সে হাতুড়া দিয়া কোনো কিছু বাড়ি দিবো। তো এই বাড়ি দেওনের জায়গায় সে রাখলো সায়ানিড বিষ বোতল।
তো মামা এইবার বাক্স বন্ধ কইরা তেজস্ক্রিয় পদার্থ উন্মুক্ত রাখলো। আর ঘড়ি দেখতে লাগলো।
কথা হইলো আপনে যতক্ষন বাক্স না খুলবেন ততক্ষন আপনে কইবার পারবেন না যে বিলাই মরছে না মরে নাই!
আপাত দৃষ্টিতে মনে হইতে পারে তেজস্ক্রিয় পদার্থের কামই হইলো ক্ষয় হইয়া তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায় দেয়া। কিন্তু ধরেন পরিমানে খুব অল্প হওয়ায় আর এর হাফ লাইফ যদি না পার হয় তাইলে এইটা নাও তেজস্ক্রিয়তা ছড়াইতে পারে। যদি না ছড়া্য তাইলে কিন্তু গীজার হাতুড়া নাড়াইবো না আর বিলাই মরবা না। দিন ভর ম্যাও ম্যাও করবো বাক্সের ভিতরে। আর যদি তেজস্ক্রিয় পদার্থ কাম করে তাইলে বিলাইয়ের জন্য জানাযা রেডী!
এখন ১ ঘন্টা পর আপনে বাক্স না খুললে কইতে পারবেন না বিলাই মরছে না মরে নাই! বিলাইয়ের মরন বাচনের সম্ভাবনা ৫০-৫০।
অখন কন, বিলাই যদি না মরে তাইলে বিলাইয়ের মৃত্যুর জন্য বিচার চাইয়া লাভ আছে? না নাই!
কিন্তু বিজ্ঞানের কামই হইলো সবকিছুই হিসাব কইরা বাইর করা। হিসাব কইরা কইয়া দিবো আমাগো আবুল হাসিনার ঝুলানী মূলা দেইখা কত কিলো জোড়ে দৌড়াইলে সবাইরে পিছনে ফেলাইয়া ফাস্ট হইবো আর মন্ত্রী হইবো। যদি এইটা নাই কইবার পারে তাইলে বিজ্ঞান আর ধর্মের মধ্যে তো কুনো তফাৎ নাই, তাই না?
কিন্তু কাহিনী হইলো বিজ্ঞানীরা এই ঘটনায় আইসা ধরা খাইয়া গেছে। তয় আপনেগো আশ্বস্ত করি বিলাই মরলেও কুনো সমস্যা নাই কারন এই পুরা ঘটনা শ্রোয়েডিঙ্গার স্বপ্নে দেখছে আর আসলেই কুনো বিড়াল নাই!
তার মানে এই পরীক্ষা দ্বারা আমরা কি জানবার পারি?
বিলাই বাইচা আছে: সম্ভাবনা ৫০%
বিলাই এর চল্লিশা খামু: সম্ভাবনা ৫০%
আমরা অনেকেই একখান কথা কই, কোয়ান্টাম ফিজিক্স কোয়ান্টাম লেভেলে কাম করে মাগার আবুলের দৌড়ানিতে কাম করে না। আবুলের দৌড়ের জিতানোর জন্য আমাদের ঐ শেষ ভরসা সবেধন নিউটনের পদার্থবিজ্ঞানই দরকার!
বলা যাইতে পারে এইটা একটা ধাধা।
তো এইখানে বোর সাহেব দুইটা কথা কইছেন। যার নাম কোপেনহেগেন ইন্টারপ্রেটেশন। ইন্টারপ্রেটেশন টা হইলো অনেকটা এমন যে আবুল যে হাসিনার কথায় দৌড়াইছে এইটা কিন্তু আমরা দেখি নাই। কিন্তু যে দেখছে সেই কইবার পারে যে মামা আসলে কেমনে জিতছে, বা কি পরিমান জোরতে দৌড়াইয়া ভূড়ি নাচাইয়া জিতছে। তাই যে দেখছে তার কাছে এইটা একটা ঘটনা। আর আমরা যেহেতু দেখি নাই তাই আমাগো কাছে এইটা একটা সম্ভাবনা বা প্রোবাবিলিটি। কোয়ান্টাম ম্যাকানিক্স আমাগো কখনো এইসব ঘটনার মডেল বানায় দেয় না। সে আমাগো কইবার পারে এর পরিনামের সম্ভাব্যতা কতডু!
একখান সুন্দর উদাহরন আছে যেইটা পলিডিরাকের শূন্যস্হান। ধরেন একখান কোয়ান্টাম ফিল্ড যেইখানে শক্তিগুলান গুটুর মুটুর করতেছে কিছু একটা করনের জন্য। আপনেরা জানেন আমাদের সবকিছু শক্তি দিয়া তৈরী আর এই শক্তি আপনে কোনো দিন ধ্বংস করতে পারবেন না কিন্তু এই শক্তির ধর্মই হইলো রূপান্তর করা আর রূপান্তরিত হওয়া। এখন ধরেন ঘড়ির কাটা চলতে থাকলো। তখন দেখবেন এই যে ক্ষেত্র ভরা শক্তি এগুলা কখনো কখনো কোয়ান্টামের প্যাকেটে আবদ্ধ হইয়া কনার মতো আচরন করতাছে আবার যখন এই কনাগুলা পরস্পরের সাথে গুটুর মুটুর কইরা ধ্বংস হওয়া যায় তখন সে তরঙ্গের মতো আচরন করতেছে। একেকটার স্হায়িত্ব ১০^-২২ সেকেন্ডের (প্লাংক বেরিয়ারের উপ্রে) মতো। কিন্তু এইখানে এত সংখ্যাক কোয়ান্টা কখনো কোন সময়ে কি পরিমান শক্তি নিয়া কনা হয় আবার গুতা গাতি খাইয়া মিলায় যায় এইটা আপনে এক সাথে বলতে পারবেন না। এইটা একটা গোলক ধাধা।
এখন আমরা আগের বিলাইতে ফিরা আসি। ধরেন বিলাই মইরা আছে না বাইচা আছে সেইটা আপনে জানেন না। কিন্তু দুইটারই সম্ভাবনা আছে। মানে সে বাইচাও থাকতে পারে অথবা মইরাও যাইতে পারে!কিন্তু বিলাই আপনের একটা বাক্স আপনের একটা।
এখন যদি ডাবল ডাবল নেন, তাইলে? তাইলে আপনের প্রত্যেকটা বাক্সের জন্য প্রত্যেকটা বিলাইয়ের বাচন আর মরনের সম্ভাবনা বা প্রোবাবিলিটির কি হইবো?
তাইলে আসেন একটা পরীক্ষা করি। আপনে বাজার থিকা একখান টর্চলাইট কিনা আনেন। কারো মুখের উপর একটা টর্চ মারেন। দেখবেন আলো ভালোই। এখন দুইটা টর্চ যদি এক লগে মারেন তার উপর তাইলে সে আলোর তীব্রতার ঠেলায় কিছুই দেখবো না।
এখন আপনে দুইটা টর্চ একটু দূরে রাইখেন একটা অপরের উপর মারেন। কি হইবো? ঘর আন্ধার থাকলে দেখবেন টর্চের আলো আর ঘরের ভিতর ছড়াইতাছে না।
এইটা আসলে সুপারপজিশন। একই ফেজ এঙ্গেল মানে কৌনিক অবস্হানে এবং একই কম্পান্কে যদি দুটো তরঙ্গ একটা একটার উপর বসিয়ে দেয়া হয় তখন সেটা হয় সুপার পজিশন। তখন সে সম্মিলিত তরঙ্গ পাওয়া যাবে তার এমপ্লিচুড হবে সর্বোচ্চ। কিন্তু তাদের কৌনিক অবস্হানের পার্থক্য ১৮০ ডিগ্রী হয় তখন ওখানে কোনো এমপ্লিচুড পাওয়া যাবে না।
তার মানে দেখা যাইতেছে দুইটা বাক্সের বিলাইয়ের বাচনের অথবা মরনের প্রোবাবিলিটি বাইরা যাইতেছে!
এখন আমরা ছবিটা একটু বড় করি। বিলাই, ইলিয়াস, আবুলের দৌড়ের কথা ভুইলা যান। আসেন আমরা মহাবিশ্ব নিয়া ভাবি।
মহাবিশ্ব সৃষ্টি হইছে কেমনে? উত্তর সবাই জানে, খোদা কইছে ফাইটা যা, ওমনি বিশাল একখান ফাটানি হইছে আর এই মহাবিশ্ব পয়দা হইছে!
সমস্যা হইলো এই বিগ ব্যাং অর্থাৎ মহা ফাটানী আপনে আমি কেউ তো দেখি নাই। তাইলে?
এখন উপরের দিক থিকা ভাবেন, ধরেন ১০^-৩৬ সেকেন্ড সময়ে যে কোয়ান্টাম ইনফ্লেশন ঘটতেছিলো তখন যদি চারটা মৌলিক বল এক সাথে ঘর সংসার না করার সিদ্ধান্তটা আরেকটু বেশীক্ষন ধইরা রাখতো অথবা ঐ প্লাজমা লেভেলে গ্রাভিটী আলাদা না হইয়া বাকী তিনটার সাথে লাগালাগি কইরা থাকতো আর সবার উপর প্রভাব রাখতো তাইলে হয়তো আমাগো মহা বিশ্ব এমন হইতো না। এইটা পুরা অন্যরকম হইতো। অথবা ধরেন যতসংখ্যাক এন্টম্যাটার থাকনের কথা ততগুলাই থাকলো ম্যাটার গুলাই হারায় গেলো অথবা সেইটা দিয়া আরেকখান মহাবিশ্ব হইলো তাইলে কি হইবো?
তার মানে প্রত্যেকটা প্রতিক্রিয়ার কারনে ভিন্ন ভিন্ন মহাবিশ্ব হওনের সম্ভাবনা আছে, তাই না?
যদি সম্ভাবনা নাই থাকতো তাইলে তো সবকিছু আমাদের বিশ্বে একরকম হইতো, কন্তু সেইটাও হয় নাই। পৃথিবীর সাইজ আর মঙ্গলের সাইজ এক না এমনকি পাশের নীহারিকায় যে সৌরজগত পাওয়া গেছে ঐখানকার গ্রহ গুলার সাইজও আমাগো মতো না। আপনে আমার চেহারা এক না। দুনিয়াতে এত বর্নের মানুষ এত মনের মানুষ কেউ এক না। সম্ভাবনা বইলা নিশ্চয়ই কিছু আছে তাই দেখা যায় আমরা সবাই এক দেশে থাইকাও কেউ কারো মতের সাথে সমর্থন জানাই না, শ্রদ্ধা করি না!
এরকম আরো অনেক ব্যাখ্যা দেওন যাইতে পারে, আবার অনেকভাবে এই ধাধার সমাধানও করা যাইতে পারে। যেমন কাহিনী তো হইলো আপনে আমি-র দেখা নিয়া। এখন যদি আপনে মানবতাবাদী হইয়া কইলেন যে বিলাই নিজে কি দেখতেছে অথবা যে পরিবেশে বিলাই আটকাইছে সেই পরিবেশ বিলাইরে কি দেখতেছে তাইলে মনে হয় আপনে একখান সমাধান পাইলেও পাইতে পারেন। বিলাই যদি এমুন তেলেসমাতী দেখায় যে ঐ তেজস্ক্রীয় পদার্থ তার তেজস্ক্রিয়তা ছড়াইবো না অথবা বিলাই বডি বিল্ডিং কইরা এমুন শক্তি শালী হইছে যে তারে এই বিশে বা গুলি করলেও কিছু হইতো না তাইলে এইটার সমাধান হইবার পারে। এখন সমাধানের উচিলায় যদি সত্যি আমি এমন কিছু কই তাইলে মানুষ আবার আমারে পাগলও কইতে পারে! হে হে হে হে হে
যাই হোউক পরে আইনস্টাইন সাহেব আরও দুইজনরে নিয়া আরও একটা গোলক ধাধার কথা কয় মূলত নিজের পন্ডিতি দেখইবার গিয়া সেইটা হইলো ইপিআর প্যারাডক্স। এইটা নিয়া আমি তেমন কথা কমু না তবে এইটার সাথে সুপারকন্ডাক্টিভিটি আর কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গলম্যান্ট জড়িত। পরে হয়তো এইটা খাজুড়া আলাপ খেজুড় গাছে উইঠা করা যাইতে পারে!
তাই হুমায়ুন মিয়া কিছু লিখলে হাইকোর্টের পেটে ব্যাথা শুরু হইয়া যায় তার লেখা থামানীর লিগা আর ওদিকে হাসিনার যোগ্যতম সাঙ্গকূলেরা নিজেদের খেয়াল খুশিমত টাকা ছাপাইয়া পকে্টস্হ করে তখন তারা কিছুই বোঝে না, জানে না!
যাই হোউক, ব্লগার ডাইস আমার এক পোস্টে জানতে চেয়েছিলেন শ্রোয়েডিঙ্গারের বিলাই তার বুঝে আসে না। আমি নিজেও ভালো বুঝি না কারন যত গভীরে যাই হাজারটা প্রশ্ন আটকে ধরে। তবুও যতটুকু পারছি নিজের দ্বন্ধটাকে দূরে রেখে সেটার ব্যাখ্যা করা!
**আমার এই লেখা পইড়া কেউ না বুঝলে অপবাকের অপবাকের এই সিরিজখান ঘুইরা আসেন। এই লোকটা ফিজিক্স নিয়া খেলাধূলা করেন! যদিও এর সাথে আমার কোনোদিন কথা হয় নাই! তিনটা সিরিজ পাঠ্যসূচিতে দেয়ার মতো মনে হইছে আমার!
*আরেকজন আছেন রমিত স্যার। উনি ফিজিক্সের শিক্ষক। উনি অনিশ্চয়তা তত্ব নিয়া খুব সুন্দর একটা লেখা লেখছেন।
রেফারেন্স
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ২:২০