বিজ্ঞাপন ০১: সাথী কলেজে পড়ে। সে খুব ভালো গান গাইতে পারে। কিন্তু তার গায়ের রং ময়লা, যা তার কনফিডেন্স কমিয়ে দিয়েছে! খুব ভালো গান জানার পরও গায়ের রং ময়লা হওয়ায় সে কোন অনুষ্ঠানে বা বন্ধুদের সামনে গান গাইতে লজ্জা পায়! সাথীর বান্ধবী সিলভিয়া তার এই প্রবলেম দেখে তার হাতে তুলে দিল কেয়ার এন্ড লাভলী !
মাত্র ৭দিনেই হয়ে যান ফর্সা! ১০০% গ্যারান্টি! কেয়ার এন্ড লাভলী আপনার সৌন্দর্যকে করে তুলবে আরো আকর্ষণীয় ও অতুলনীয়। মুখের সব অবাঞ্চিত দাগ ও ব্রণকে দুর করে আপনার ভিতরের রূপকে জাগিয়ে তুলবে।আপনাকে পরিপূর্ণ নারীতে বদলাতে মাত্র ৭দিন কেয়ার এন্ড লাভলী ব্যবহারই যথেষ্ঠ!
আর কেয়ার এন্ড লাভলীর জাদুকরী ছোঁয়ায় সাথী মাত্র ৭দিনেই হয়ে গেল ঝকঝকে ফর্সা! এবার সাথী কলেজের ফাংসানে গলা ফাটিয়ে গান করে সবাইকে মাতিয়ে তুললো!
বিজ্ঞাপন ০২: সোহেল একজন স্ট্যান্টম্যান। সিনেমায় হিরোদের স্ট্যান্ট দেওয়া তার কাজ। যদিও হিরোদের চেয়ে তার চেহারা এবং পারফরমেন্স কোন অংশে কম যায় না কিন্তু গায়ের রংটাই হয়েছে জ্বালা! ময়লা গায়ের রং তাকে কোন পরিচালকের সামনেই যাওয়ার সাহস জোগায় না! এরপর এসে গেল কেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম!
পুরুষদেরও চিন্তা নাই, আপনাদের জন্যও এসে গেছে কেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম! আপনার মুখের কালো ভাব দূর করে আপনাকে আরো হ্যান্ডসাম এবং আকর্ষণীয় করে তুলতে কেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম এর জুড়ি নাই।
কেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম মেখে সোহেল তার গায়ের চকচকা রং নিয়ে পরিচালকের সামনে যেতেই পরিচালক তাকে পরবর্তী সিনেমার জন্য কাস্ট করে ফেললেন।
কি ভাবছেন? নতুন কোন ফেয়ারনেস ক্রিমের অ্যাড? না..না...এগুলো হচ্ছে বাজারে প্রচলিত ফেয়ারনেস ক্রিম কোম্পানী গুলোর অ্যাডের ভাষা।আমি এখানে কোন ক্রিমের অ্যাড নিয়ে আসিনি...এসেছি এই সব ক্রিম আর সৌন্দর্য নিয়ে কিছু কথা বলতে।
টিভি খুললেই আজকাল প্রতিটি চ্যানেলে বিভিন্ন ফেয়ারনেস ক্রিম কোম্পানীর অ্যাড দেখা যায়, যারা কেউ মাত্র ৭দিনে কেউবা আবার ১৪দিনে নারী-পুরুষ উভয়েরই রূপ তথা সৌন্দর্য নিয়ে অত্যাধিক মাত্রায় চিন্তিত! আর আমরা ম্যাঙ্গো-পিপল এইসব অ্যাড দেখে যে কোম্পানী যত চাপা মারতে পারে তার ক্রিম কিনি। ফেয়ারনেস ক্রিম আগে শুধু নারীদের জন্য হলেও এখন পুরুষরাও পিছিয়ে নেই। কিন্তু কেন এই ফেয়ারনেস ক্রিম??? গায়ের রং ফর্সা করাটা কি এতই জরুরী??
কোন কথা বলতে গেলে আমি সব সময় নিজের উদাহরণ দিতে পচ্ছন্দ করি। আমার ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি প্রতিদিন রুটিন করে আমার মাকে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী মাখতে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো মা যেমন ছিলো তেমনই আছে শুধু বয়সের ছাপটা পড়েছে চেহারায়! মাঝখান থেকে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী যে কি কাজ করলো ঠিক বুঝতে পারছি না! আপনারাও একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন আপনাদের বাড়িতে মা-বোনরা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দেশী-বিদেশী ফেয়ারনেস ক্রিম ব্যবহার করছে....বাবা-ভাইরাও পিছিয়ে নেই। যারা এগুলো ব্যবহার করছেন তাদের কি কোন লাভ হচ্ছে?
যারা নারীবাদী অর্থাৎ নারী-পরুষের সমান অধিকার নিয়ে লড়াই করছেন তাদেরকে বলছি, এই সব চটকদার বিজ্ঞাপন কি আপনাদের চোখে পড়ে না? কালো বলে কি সমাজে কোন মেয়ের মাথা উচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই? আমরা কি এখনো সেই আদিম যুগে পড়ে আছি? এখনো কি কালো-সাদা বিবেচনা করে সাফল্য আসে? এটা তো ইভটিজিং এর চেয়েও ভয়ঙ্কর অপরাধ। ইভটিজিং যদি সামাজিক ব্যাধি হয় তাহলে তো রং ফর্সা করা ক্রিমের নামে এইসব ভাওতাবাজি আন্তর্জাতিক ব্যাধি! এদের বিরুদ্ধে আপনারা সোচ্চার হচ্ছেন না কেন? এই সব ক্রিম কোম্পানী তাদের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে লক্ষ-কোটি (কথিত) কালো মেয়েদের প্রতিনিয়ত অপমান করছে! আর আপনারা সব মুখ বুজে দেখছেন? নাকি নারী অধিকার শুধু ফর্সা মেয়েদের জন্য? পুরুষদের অবশ্য কিছু বলার নেই। কারণ তারা নারী-পুরুষের সমান অধিকারের মত ফেয়ারনেস ক্রিমেও অধিকার পেয়ে গেছেন। আসলে এই সব কোম্পানী গুলো রং ফর্সা করার কথা বলে সমাজ তথা পুরো বিশ্বের মানুষকে দুইভাগ করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত আর আমরা সব দেখে-শুনেও নির্বিকার বসে আছি। কিন্তু এই ভাবে আর কতদিন? আর কত দিন আমরা মানবতার এই অপমান দেখবো? এই সব বহুজাতিক বেনিয়ারা আর কত ভাবে অপমান করলে আমাদের অনুভূতিকে নাড়া দিবে?
আল্লাহপাক প্রত্যেকটি মানুষকে ভিন্ন ভিন্ন করে সৃষ্টি করেছেন। কারও সাথে কারও তুলনা হয় না। আমাদের চেহারা কেমন হবে তা আল্লাহপাক নিজেই নির্ধারন করে দিয়েছেন। আমার বা আপনার এত কোন হাত নেই। সুন্দর-অসুন্দর, ফর্সা-কালো সবই আল্লাহর ইচ্ছা। সুতরাং মানুষের বাহ্যিক চেহারা তার সৌন্দর্য নির্ধারক হতে পারে না। সৌন্দর্য মানুষের ব্যবহারের মধ্যে নিহিত। আমাদের আচার-ব্যবহার, চাল-চলন কেমন হবে তা আমরা নিজেরাই নির্ধারণ করতে পারি। আমাদের অন্তরের সৌন্দর্য আমরা নিজেরাই উজ্জ্বল করতে পারি। তাই অন্তরের সৌন্দর্যই আসল সৌন্দর্য। আসুন, গায়ের রংকে ফর্সা করার ব্যর্থ চেষ্টা না করে মনের রংকে ফর্সা করি। মন থেকে সব হিংসা-বিদ্বেষ, ক্রোধ, অন্যায়, মিথ্যাকে দূর করে নিজেকে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলি। তাহলেই ব্যক্তি জীবনে, কর্মজীবনে তথা জীবনের সর্বস্তরে সাফল্য আসবে।
এ ব্যাপারে আপনাদের সুচিন্তিত মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৩ রাত ৩:৪৪