somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ছেলেবেলা ২

২৯ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৮:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোন পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া লিখে যাওয়ার ভেতরে নির্ভার একটা ব্যাপার থাকে। প্লট গেঁথে তোলা কিংবা চরিত্রগুলিকে ধারাবাহিকতার ভেতরে রাখা- এইসব নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নাই।
কৈশোরেরে কথাগুলি লিখে যাওয়ার একটা উদ্দেশ্য ছিল - লেখনীর এই তৃ[প্তিটুকু যেন নিতে পারি।
তবে, স্মৃতি থেকে কিছু মনে আনার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখছি- অনেক হালকা হয়ে আসা ঘটনা মনে পরছে।
৭৬ পর্যন্ত ঢাকার থাকাকালিন শহরের কোন স্মৃতি মনে নাই। বিচ্ছিন্ন কিছু ছবি- যেমন বর্ষায় ঝিল দালাঙ্গুলির ভেতরে চলে আসছে; রাস্তায় নৌকা মূল সড়ক পর্যন্ত লোক পাড়াপাড় করছে। রেললাইনের দুধারে পশরা নিয়ে দোকানীরা। আমার প্রথম প্লেনে চড়ার ঘটনা এই সময়েই- এর পর দীর্ঘ গ্যাপ দিয়ে আবার প্লেনে উঠতে পেরেছি ২১/২২ বয়সে।
পাখা লাগানো ডাকোটা প্লেন; দুই সারিতে।
পাঠকদের মনে আছে কিনা জানিনা- তখন প্লেনে সুগার কিঊব দিতো চা খাবার জন্যে। ছোট ছোট সাদা চারকোনা গুটির মতো। বরাবরই যেকোন খাবারের দিকে আমার টান। চিনির চারকোনা টুকরা বের করে সাথে সাথেই মুখে চালান করে দিয়েছিলাম। চা দিতে এসে এয়ার হোস্টেস আমাকে আর কিছু দিলোনা; খুব রাগ হয়েছিলো। সেটা সামলাতেই আম্মা আবার আমার কাপে আলাদা করে চা ঢেলে দিলেন। সেই প্লেন থেকে নেমে আবার আমরা বাসে উঠে বসেছিলাম নানা বাড়ি যাবো বলে। কালুর ঘাট ব্রীজের উপর দিয়ে যাবার ছবিটা চোখে ভাসে। কোন একটা কারণে সেতু পাড় হবার সময়- বাসের কাঠের জানাগুলি বন্ধ করে দিলো। কি জানি কেন! বাসগুলি ছিল - আশির দশকের রামপুরা টু সদরঘাটের 'মুড়ির টিনের' মতো।
ঢাকা থেকে বিদায় নিয়ে চট্টগ্রাম আসা হলো; কিন্তু বাসা তখনো ভাড়া করা হয়নি। কদমতলিতে আমার ফুপির বাসায় ( আমরা ডাকতাম 'আপ্পি' - এটা বার্মিজ ডাক) ঊনার বড় উঠান জুড়ে আমাদের নতুন কাঠের ফার্নিচার; সেগুলি ছিল আমাদের সারাদিনের খেলার জায়গা। সমবয়সী অনেক কাজিন থাকায় বেশ ভালোই হৈ চৈ করে কাটছিল। সেখানে থাকা হয়েছিলো সপ্তা দুই। এর ভেতরেই দূর্ঘটনা ঘটে গেল। পাড়ার এক ছেলে আমাকে ডেকে নিলো সাইকেল চড়াবে বলে। পেছনের ক্যারিয়ারে পা উঁচু করে বসেছি ঠিকই; কিন্তু কীভাবে যেন এক পা চলে গেল একেবারে চেইনের ভেতরে। সাইকেল এর চেইন গেঁথে ছিল আমার বাম গোড়ালির বাহিরের দিকটায়; রক্ত বন্ধ করার জন্যে তাড়াতাড়ি পাশের এক ডিসপেন্সারি থেকে বয়ান্ডেজ করিয়ে নিলো ছেলেটা। পরে বাসায় ফিরে আর একবার ডাকতারের কাছ এযেতে হয়েছিলো যদীও টিটেনাস আর নতুন করে ব্যান্ডেজ করার জন্যে। এর পর দীর্ঘ সময় সাইকেলের দিকে হাত বাড়াই নি। পরে ক্লাশ সেভেনে উঠে- বন্ধুর সাইকেল নিয়ে চালানো শিখেছিলাম।
এই ফাকে একটা কথা বলে রাখি। খুব ছোটবেলাতেই আমি ম্যাক্সিম গোর্কির তিন খন্ডের আত্মজীবনী পড়ে শেষ করেছিলাম। অসম্ভব মুগ্ধ করা লেখেনী, জীবনবোধ। আমার গল্পগুলি লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে- এই জিবনবোধের ব্যাপারটা কেমন জানি আনা যাচ্ছেই না। এটা কি পর্যবেক্ষণের অভাবের জন্যে, নাকি একসাথে অনেক কথা মনে করার চেষ্টা করছি দেখে হচ্ছে- বুঝতে পারছি না।
কিছু কিছু ঘটনা হুটহাট মনে পরে যায়। নানা বাড়ির সাথে তখন সম্পর্ক বেশী, কারণ দাদা-দাদী দুজনের কেউ বেঁচে নেই। নানুর বাড়ির পাশে একজনকে কাকে নাকি ভুতে ধরেছিল। ভুত তাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। আমরা বাচ্চারা সব দল বেঁধে দেখতে গেলাম। গোবরের পানি, পঁচা ডিম মিশিয়ে তাকে খাইয়ে দেয়া হলো। কেমন একটা বীভৎস গন্ধ! এখন বুঝি মেয়েটির হিস্টেরিয়া ছিল। সেটারই টোটকা চিকিৎসা করা হলো। পরে যখনই মেয়েটাকে দেখেছি- খুব ভালো করে লক্ষ করার চেষ্টা করতাম আগের কোন রেশ দেখা যায় কিনা।
১০ নং জামাল খান রোড।
এটাই হলো আমাদের ঠিকানা- একটা বড় উঠান ঘিরে তিনটা ঘর; দুটা দোতলা দালান আর একটা টিনের ঘর- যেখানে বাড়িওয়ালি থাকেন- অবাঙালী। বেশ বড় পরিবার তাদের। ৭৬ থেকে ৮১ পর্যন্ত এখানেই বেড়ে ওঠা। জায়গাটি এইতো কিছু দিন আগেও আগের মতোই ছিল; এখন সব বদলে গেছে। এই বাসা থেকেই আমার পড়ার হাতেখড়ি- শিশুবাগ স্কুলে।
মাকে ভর্তি করা হলো নার্সারিতে বছরের শেষ দিক তখন। ভর্তি পরীক্ষায় সাদা খাতা দিয়ে আসার কারণে আমাকে কেজিতে নেয়া হয়নি। পরে শুনেছিলাম- পশের বাচ্চাটা কিছু না পেরে কান্না করছিলো দেখে, আমি নাকি তার খাতার সব উত্তর লিখে দিয়েছিলাম -নিজেরটা খালি রেখে!
নার্সারীর একটা ঘটনাই মনে আছে। আমাদের বর্ণমালা লিখেতে দেয়া হয়েছিল। আমি চোখের পলকে লেখা শেষ করে, খট খট করে জুতার হিলের শব্দ তুলে আপার কাছে খাতা দিয়ে আসলাম। আপা একনজর খাতার দিকে তাকিয়ে বললেন- "এই ছেলে তো সব পারে! এ নার্সারিতে কেন?!"
তথাস্তু! আমাকে প্রমোশন দিয়ে কেজি ওয়ানে তুলে দেয়া হলো।

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:৩৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: প্রভূ-ভৃত্য নয়, চাই সমতা ও ইনসাফভিত্তিক মৈত্রী

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৫০

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: প্রভূ-ভৃত্য নয়, চাই সমতা ও ইনসাফভিত্তিক মৈত্রী

ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের ছবিটি http://www.gettyimages.com থেকে সংগৃহিত।

ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ভৌগোলিক নৈকট্যের গভীর বন্ধনে আবদ্ধ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ‘হয় পানি, না হয় তোমাদের রক্ত​এই নদীতেই প্রবাহিত হবে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:২০




কাশ্মীরের পহেলগামে ভয়াবহ হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। এ ঘটনায় সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে নয়াদিল্লি। এমনকি পাকিস্তানকে এক ফোঁটা পানিও দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধলে বাংলাদেশের কি করণীয় ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:১৬


কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ নাগরিক মুসলিম হওয়ায় এবং ভারত বিদ্বেষী(যৌক্তিক কারণ আছে) হওয়ায় এই ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে মুসলিমদের উপর নির্যাতন থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউসুফ সরকার

লিখেছেন তানভীর রাতুল, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:২৭

নৈতিকতা এবং নীতিবোধ কখনোই আইনের মুখে পরিবর্তিত হয় না (দুঃখিত, বলা উচিত “হওয়া উচিত নয়”)।

নৈতিকতা ও নীতিবোধ কখনোই সহিংসতা বা আইনী চাপের মুখে বদল হয় না (দুঃখিত, বলা উচিত “হওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাক-ভারত যুদ্ধ হলে তৃতীয় পক্ষ লাভবান হতে পারে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:২৭



সাবেক ভারত শাসক মোগলরা না থাকলেও আফগানরা তো আছেই। পাক-ভারত যুদ্ধে উভয়পক্ষ ক্লান্ত হলে আফগানরা তাদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করতেই পারে।তখন আবার দিল্লির মসনদে তাদেরকে দেখা যেতে পারে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×