বেশ কিছুদিন ধরেই "থালি" খাবার জন্য মনটা উদাস উদাস লাগছিল! কয়েকটা রেস্টুরেন্টে ঢু মেরেও দেখলাম; কিন্তু ঢাকা শহরে ইন্ডিয়ান ফুডের যতো রেস্টুরেন্ট আছে, কোথাও থালি পাওয়া যাবে বলে মনে হলো না। 'খানা খাজানা' বেশ প্রখ্যাত। তাদের কাছে যখন থালির কথা জানতে চাইলাম, তারা মনে হলো খুব অপমানিত বোধ করলো। জানাল, এমন গরিবী খাবারের ব্যবস্থা তাদের নেই! তারা কেবল সন্জীব কাপুরীয় স্পেশাল শাহী খানাই পরিবেশন করে। যাই হোক; আমরা দুজনও বেশ শাহী ভাব নিয়ে দুই চারটা আইটেম খাবার চেষ্টা করে গেলাম। (বোধহয় আমিরী রুচি না থাকার কারণে খাবার ততোটা সুবিধার লাগেনি)
ইন্ডিয়া অফিস থেকে যখন জানালো হলো প্রজেক্টের ফাইনাল মিটিং এ উপস্হিত থাকতেই হবে আজকালের ভেতর; মন বললো, এবার বুঝি থালি খাবার শখ মিটলো! দেরী না করে ভিসার জন্য টোকেন নিয়ে নিলাম। যারা ইদানীং ভারত ভ্রমণের জন্য ভিসার চেষ্টা করছেন, তারা নির্ঘাত টের পেয়েছেন সিস্টেমটা কতোটা বিচ্ছিরি হয়ে গেছে আজকাল। টোকেনের ডেট পেতেই ১২/১৫ দিন পেরিয়ে যায়। সব কাগজ পত্রের ঝুট ঝামেলা সেরে যাবার দিন ঠিক হলো ২৪ শে মার্চ দুপুর নাগাদ।
এয়ার পোর্টে চেক ইন এর সময় জেট এয়ারের টিকেট বুকিং ডেটের ঝামেলার কারণে কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে হয়েছিল। হাফপ্যান্ট পড়া বেশ বলশালী এক তরুন তার পরিবারকে নিয়ে আসলো চেক ইন করতে। পোশাখ আচড়ণে মালুম হলো দক্ষিণী মনে হয়। লাগেজ নাড়াচাড়ার সময় ঠাস করে লক খুলে একগাদা কাপড় ছিটকে পড়লো মেঝেতে। ভুরভুরে একটা গন্ধ ভরে উঠলো চারপাশ। শাফিন বললো, "নাও, তোমার শখ মিটাও, এই খাইসটা গন্ধটাই হলো আসল ভারতীয় এসেন্স"। আসলে মশলা আর পুরানো কাপড়ে ঘামের মিশেল ঝাঝালো গন্ধটা মোটেই সুরভিত ছিলনা! কোন এক মশলার তীব্র একটা ঝাঝালো গন্ধ। এই গন্ধটাই সারা ভারতে পেয়েছি। বিশেষ করে ব্যাঙ্গালোর আর মাইশোরে। সবচেয়ে বিপদে পড়েছিলাম মাইশোরে। সেখানে গিয়েছিলাম ট্রেনে করে, ব্যাঙ্গালোর থেকে। যদিও এসি কোচ, লোকজনও তেমন ছিলনা। কিন্তু এই ঘ্রাণের অস্বস্তির কারণেই ফেরার পথে ভাবলাম এসি বাসে আরাম করে যাই।
কিন্তু বাসে ওঠামাত্রই মোচড় দিয়ে উঠলো পেটের ভেতরটা। তীব্র ঝাঝালো গন্ধ! নাক চেপে ধরে নেমে আসতে হলো। পরে জীপে করে খোলা জানালার পাশে বসে হাওয়া খেতে খেতে ১৫০ কিমি রাস্তা পার হয়ে আসলাম অর্ধেক খরচে আর প্রায় বিনা গন্ধে

থালি খাবার শখ যে মিটেছিল সেটা আগের পর্বের ছবি দেখেই বুঝে নিয়েছেন আশা করি। এবার দিলাম গুজরাটি থালির ছবি। এটা নাগপুরের বিখ্যাত একটা রেস্তোরা। সবই নিরামিষ। এখানে অবশ্য দক্ষিণের সেই গান্ধিক উৎপাত ছিলনা!
আর একটা কথা; ফেরার পথে ঢাকা এয়ারপোর্টে নেমেই কিন্তু একটা গন্ধ খেয়াল করেছি। সেটা অবশ্য খুব পরিচিত- আমাদের বাংলাদেশের সৌরভ

বই বই আর বই
বিদেশে কোথাও গেলে আমার দ্রষ্টব্য জায়গাগুলির একটি হচ্ছে নতুন পুরানো বই এর দোকান। ব্যক্তিগত কেনাকাটার লিস্টে বই সবার উপরেই থাকে। আর এইসব ওজনদার বই এর লাগেজের কারণে প্রতিবারই কাহিল অবস্থা হয় এয়ারপোর্টে। তবে এইবার জরিমানাও দিতে হলো অতিরিক্ত ২ কেজির জন্য (সব লাগেজ মিলিয়ে ২৩ কেজি হয়েছিল) ফেরার পথে বাকি দুটা এয়ারলাইন্স এটাকে আমল না নিলেও নাগপুর থেকে ইন্ডিগো বেঁকে বসলো। ২০০ রুপি দন্ড দিতে হলো। বেচারারা এমনিতেই সবচেয়ে সস্তায় টিকেট ছাড়ে; তাই টাকা আদায়ের কোন সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না বোধ হয়


যাইহোক, যা বলছিলাম; ব্যাঙ্গালোরের এমজি রোডে নতুন পুরানো বই বেশ কটা বই এর দোকান চোখে পড়েছিল। কয়েকটাতে ঢু মেরে যা কেনা হলো তা মোটামুটি এমন-
আইজাক আসিমভের
The Complete Robots
Complete Short Stories-2nd part
Gold- collection of unpublished short stories & Eassays
Science Fiction Treasury (SciFi stories- edited by Asimov)
Dune সিরিজের ৩টা বই (আগেরগুলি সব রানার কালেকশনে ছিল। এটা Frank Herbart এর অসাধারণ একটা সাইফাই সিরিজ; মাইলস্টোন বলা যেতে পারে। ইচ্ছা আছে এর অনুবাদের কাজ করার)
MS Project 2007 in the Trenches
Autocad Revit Architecture 2010
Vashtushastro ( একদম অকাজের বই)
Modern Ceiling (Interior)
সেই সাথে কমপিউটার আর গেজেট বিষয়ক কিছু ম্যাগাজিন।
আরো বেশ কিছু পুরনো বই কেনার ইচ্ছে হচ্ছিল; কিন্তু লাগেজের ওজন বৃদ্ধি আর পকেটের ওজন হ্রাসের ভয়ে কেনা হয়ে উঠলো না

টিপু সুলতানের মাজার
বিটিভিতে একসময় 'সোর্ড অব টিপু সুলতান' খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। আমরা টিপু সুলতানের সৌর্য্য বীর্যের অনেক গল্পই জানতে পেরেছি সেই সিরয়াল থেকে। কিন্তু মাইশোরে কানাড়া রাজাদের প্রভাব প্রতিপত্তির চিন্হই সব দিকে চোখে পড়ে। গত পর্বে তাদের প্রাসাদের ছবি দেয়া হয়েছিল। জৌলুশ পূ্র্ণ জীবন যাপনের জন্য তারা ইংরেজদের তাবেদারী করতো শুনেছি। তবে এই সব বক্তব্য হলো মাইশোরে আমার গাড়িচালক আহমাদের। তার সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রকাশ্যে যতোই থাকুক না কেন, এখনো অনেক রেষারেষি থেকে গেছে দুই সম্প্রদায়ের মাঝে। সে তার মাথায় একটা কাটা দাগও আমাকে দেখালো- দাঙ্গার চিন্হ। টিপু সুলতানের মসজিদ, মাজার কিংবা সামার প্যালেসের জৌলুশও তেমন নেই, ট্যুরিস্ট উপস্থিতিও কম। আর একটা জিনিষ দেখে কষ্ট লাগলো, ইংরেজদের বিরুদ্ধে টিপু সুলতানের সাফল্যগাঁথা কোথাও নেই। তার দূর্গেরও ভগ্নদশা; প্রত্নতাত্বিক কোন রক্ষণাবেক্ষন নেই। সরকারের পক্ষ থেকে উদাসীনতা প্রচ্ছন্ন।
টিপু সুলতানের মাজারটা সবসময় সরগরম থাকে। আমি যেদিন গেলাম তার পরদিন থেকে ওরস। প্রায় লক্ষাধিক লোক নাকি জমা হয় ওরসের রাতে। নীচের ছবিটা মাজারের।
এটা টিপু সুলতানের দূর্গ শহরে ঢোকার পথ। সব কিছুই প্রায় ধ্বংসস্তুপ।

এটা টিপু সুলতান মসজিদের মিনার। কথিত আছে এই মসজিদের ইমামতি করতেন স্বয়ং টিপু সুলতান।

মসজিদের ভেতরের কারুকাজ। আঙুর লতা ডিজাইন।

(চলবে)
ছবি বড় করে দেখতে চাইলে নীচের প্রিভিউগুলিতে ক্লিক করুন।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১০ সকাল ৯:৩২