somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এদের চিনে রাখুন, একদিন এরাই আপনাদের ছিড়ে-খুঁড়ে খেয়েছিল (দ্বিতীয় পর্ব)

০৮ ই এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
তাভারনিয়েরও [Jean-Baptiste Tavernier (1605 – July 1689)]



তিনি ছিলেন একজন খৃষ্টান ধর্ম প্রচারক। তাঁর জন্মভূমি ফ্রান্স। অনদিকে তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক মানের ব্যবসাদার। ইংলণ্ডের রাজনীতিবিদরা তাঁকে বিশেষ এক দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন ভারতে। দায়িত্বটি ছিল মুঘল দরবারের অন্দরমহলের খুঁটিনাটি সংগ্রহ করা। তিনি ঐ দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়েছিলেন এবং ঐসব সংগ্রহ করা তথ্যকে কেন্দ্র করে অতথ্য, অসত্য, মিথ্যা মিশ্রিত করে সৃষ্টি করেছিলেন একটি ইতিহাসের। সেটাকে তাঁর ভ্রমণকাহিনী বলে চালানো হয়েছে, আর তা ইউরোপের প্রায় প্রত্যেক ভাষাতেই মুদ্রিত হয়েছে সগৌরবে। তাঁর জন্ম সাল ছিল ১৬০৫ আর মৃত্যু হয় ১৬৮৯ খৃষ্টাব্দে


ফ্রাসোঁ বার্নিয়ের (François Bernier)



এঁর বাড়ি ছিল ফ্রান্সের মঞ্জু প্রদেশের জই নামক স্থানে। জন্ম ১৬২০ খৃষ্টাব্দে। তিনি ছিলেন চিকিৎসক। খুব ভালভাবে ডাক্তারি পাশ করার পর তাঁকে স্থায়ীভাবে কোন জায়গায় ডাক্তারি করতে না দিয়ে পর্যটকের ভূমিকায় সমগ্র ইউরোপ এবং মিশর, তুরস্ক, সিরিয়া প্রভৃতি মুসলিম দেশ ঘুরিয়ে ১৬৫৮ তে সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে পাঠানো হয় ভারতবর্ষে। মিঃ বার্নিয়ের বিশ্ববিখ্যাত ডাক্তার হওয়া সত্ত্বেও কার ইঙ্গিতে তিনি এতগুলো দেশ, বিশেষত মুসলিম দেশে পর্যটন করলেন এবং কেনই বা তিনি সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বে ভারতবর্ষে এলেন তার কারণ, আধুনিক গবেষকরা মনে করেন যে, ভারত আক্রমণ করলে অন্যান্য মুসলিম দেশগুলো ভারতের পক্ষে থাকবে কি বিপক্ষে থাকবে অথবা থাকবে নিরপেক্ষ তা দেখার জন্যই ছিল তাঁর ঐ ভ্রমণকার্য। শাহজাহান ছিলেন ধার্মিক লোক। অতএব বিলেতি সুরা আর বিদেশি সুন্দরী দিয়ে তাঁকে যে মুগ্ধ করা যাবে না এটা বিলেতি রাজনীতিজ্ঞরা জানতেন ভালভাবে। ভাগ্য প্রসন্ন হোল। যে মুহূর্তের প্রতীক্ষা করছিলেন বার্নিয়ের, তা পেয়ে গেলেন তিনি। বাদশার জ্যোষ্ঠ পুত্র দারশিকো ছিলেন বিলাসী। আহমেদাবাদে রাজকুমার দারার সঙ্গে বার্নিয়ের দেখা করেন এবং তাঁর স্ত্রীর শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসার গ্যারান্টি দেন। তাঁর চিকিৎসায় রাজকুমারের স্ত্রী কিছুটা সুস্থ বোধ করেন সেইজন্য প্রিন্স দারা তাকে পারিবারিক চিকিৎসক হিসাবে বরণ করে তাঁকে বিশেষ এক অনুমতিপত্র দেন যার বলে তিনি রাতে দিনে রুগী দেখার নাম করে দিল্লির রাজদরবারে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়ে যান অবাধে।সবচেয়ে মজার কথা, তিনি কোন পারিশ্রমিকই নিতেন না। তিনি নাকি ছিলেন নির্লোভ। তবে যে বিষয়ে লোভ ছিল সেটা হলো, রাজদরবারের বালক-বালিক থেকে প্রত্যেক মহিলার সঙ্গে চিকিৎসার নামে আলাপ করা এবং ভেতরের কথা বের করে নেয়া। দারাকে তিনি প্রথম পরামর্শ দিয়েছিলেন যাতে সম্রাটের মৃত্যুর পর পরবর্তী সম্রাট হতে পারেন তিনিই। তাতে বার্নিয়ের স্বার্থ ছিল নতুন যুবক রাজাকে হাতে করে ভারতবর্ষে প্রভাব বিস্তার। তাঁকে আকবরের অনুসরণে উদ্বুদ্ধ করেন তিনি। একটি নতুন ধর্ম তৈরি করতে আকবরের মত দারাশিকোও “মজমউল বাহরাইন” বলে যে বই লিখেছিলেন এবং হিন্দু ধর্মগ্রন্থ উপনিষদের যে অনুবাদ তিনি করেছিলেন অথবা করিয়েছিলেন সেসব ছিল বিলেতি মস্তিষ্কপ্রসূত কৌশল।


জব চার্নক [Job Charnock (c. 1630-1692)]



১৬৫৫-র পরে জব চার্নককে বিলেত থেকে পাঠানো হয় ভারতে। কাশিমবাজার কুঠির অধ্যক্ষ হন তিনি। নবাবের সঙ্গে ইংরেজদের বিবাদ শুরু হলে কোন ইঙ্গিতে বা কোন পরিকল্পনায় তিনি কাশিমবাজার থেকে চলে এলেন ২৪পরগনার বরিশা। ওখানকার জমিদার ছিলেন সাবর্ণ চৌধুরী। জমিদারদের সঙ্গে বৃটিশদের আঁতাত কেমন ছিল সে আলোচনা পরে হবে। ঐ চৌধুরী মশাইয়ের কাছ থেকে ‘কালিকোঠা বা কালিঘাট, গোবিন্দপুর , সুতানুটি’ এত তিনটি গ্রাম তিনে নিয়ে কলকাতা নগরীর পত্তন করেন তিনি। তখন আমাদের দেশের কেউ আঁচ করতে পারেননি যে এই কলকাতা একদিন হবে বৃটিশদের প্রধান ঘাঁটি- রাজধানী দিল্লি থেকে উঠে আসবে এই কলকাতাতেই। মুর্শিদাবাদের টাকশালও উঠে এসেছিল এখানেই। এই বিচক্ষণ ব্যক্তির মৃত্যু হয় ১৬৯২ খৃষ্টাব্দে।

মিস্টার ডুপ্লে (Joseph François Dupleix)



ভারতবর্ষ নামক মৌচাকটিতে শুধু ইংলণ্ডের মধুকরেরাই আসেননি, ফরাসী যে সব মধুকর এসেছিলেন তার মধ্যে অন্যতম মিঃ ডুপ্লে। ১৬৯৭ এ তাঁর জন্ম এবং মৃত্যু ১৭৬৩ খৃষ্টাব্দে। ১৭১৫-তে ভারতে এসে ১৭২০-তে পণ্ডিচেরি কাউন্সিলের সদস্য হয়েছিলেন তিনি। ভারতে আরো প্রভাব ফেলতে তিনি প্রচণ্ড বাধা পেলেন ইংরেজ ক্লাইভ তথা ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির পক্ষ থেকে। শেষ পর্যন্ত ক্লাইভের জয় হয় আর খর্বিত হয় ফ্রান্সের প্রভাব।

মি: ক্লেভারিং (Clavering)


জন্মগ্রহণ করেন ১৭২২ খৃষ্টাব্দে এবং ১৭৭৭-তে হয় তাঁর পরলোকগমন। তিনি ছিলেন একজন সামরিক কর্মী। সারা বাংলার সৈন্য বিভাগটি যখন তাঁর দায়িত্বে ছিল তখন ছিল ১৭৭৪ সাল। তিনি ছিলেন মিঃ ওয়ারেন হেস্টিংসের মন্ত্রীসভার সদস্য। তাঁর সমস্ত মতামতে ক্লেভারিং একমত হতে পারতেন না। সুতরাং বাংলার এতবড় সামরিক নেতা হয়েও বাড়তি সুযোগ সুবিধা পাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়েছিল স্বাভাবিকভাবেই। সেই কারণেই ‘স্যার’ ‘লর্ড’ ইত্যাদি চটকদার উপাধিও জোটেনি তাঁর ভাগ্যে

এদের চিনে রাখুন,একদিন এরাই আপনাদের ছিড়ে-খুঁড়ে খেয়েছিল (প্রথম পর্ব)
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সংস্কার না করেই ডক্টর ইউনুসকে বিদায় নিতে হবে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:৫৯



সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের জন্য ডক্টর ইউনুসের সরকার জুন’২৬ পর্যন্ত সময় চেয়েছেন। সেনাপ্রধান ও বিএনপি তাঁদেরকে ডিসেম্বর’২৫ এর বেশী সময় দিতে সম্মত নয়। আওয়ামী বিরোধী আন্দোলনে বিএনপি আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের দরীদ্র সমাজ এখনো ফুটপাতে ঘুমাচ্ছেন

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ১:৪৪

বেরিয়েছিলাম উত্তরা যাওয়ার উদ্দেশ্যে। মানিক মানিক মিয়া এভিনিউ পার হওয়ার সময়ে, খামারবাড়ির সামনে গোল চত্বরে হঠাৎ চোখ গেলো। চত্বর ঘিরে সারি সারি মানুষ শুয়ে আছেন। গত সরকারের আমলে আমার এলাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূসের ক্ষমতার ভারসাম্য এবং পিনাকী গং-এর সংঘবদ্ধ মিথ্যাচার ও সামাজিক প্রতারণা

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৪ শে মে, ২০২৫ ভোর ৫:৪৬


এই পোস্টটি মূলত ঢাবিয়ানের পোস্ট "বিএনপি - জুলাই বিপ্লবের বিশ্বাসঘাতক" এবং জুল ভার্নের পোস্ট "আব তেরা ক্যায়া হোগা কালিয়া!"-এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে লেখা।

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংস্কারের দাবির বিষয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বর্তমান রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থার প্রেক্ষাপট এবং প্রত্যাশা......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৪ শে মে, ২০২৫ সকাল ৭:১১

বর্তমান রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থার প্রেক্ষাপট এবং প্রত্যাশা......

বিএনপি নেতারা ডক্টর ইউনূসের দেখা করতে সময় চেয়ে এক সপ্তাহ ধরে ঘুরতেছেন। কিন্তু ইনটেরিম প্রধানের শিডিউল- ই পাচ্ছেনা। আর ওদিকে নাহিদ শুনলেন, ডক্টর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওগো ভিনগেরামের নারী, তোরে সোনাল ফুলের বাজু দেবো চুড়ি বেলোয়ারি......

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২৪ শে মে, ২০২৫ সকাল ১১:২৯


সেই ছোটবেলায় আমার বাড়ির কাছেই একটা বুনো ঝোপঝাড়ে ঠাসা জায়গা ছিলো। একটি দুটি পুরনো কবর থাকায় জঙ্গলে ছাওয়া এলাকাটায় দিনে দুপুরে যেতেই গা ছমছম করতো। সেখানে বাস করতো এলাকার শেষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×