আকাশ পাহাড়ে গেছে ঘুরতে। ৩ বন্ধু আসার কথা থাকলেও, আসছে ২ জন। আকাশ আর নির্ঝর। আকাশ খুব ভাল ছবি তোলে। নির্ঝর প্রচুর বক বক করে। আকাশ ছবি তোলার সময় বক বক পছন্দ করে না। হোটেল থেকে অনেক ভোর এ নির্ঝর কে না নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছে আকাশ, পাহাড়ের ছবি তুলবে বলে। পাখির ছবি তুলবে। আসে পাশের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে ছবি তুলছে।
হঠাত মনে পড়ল, হোটেল এ মোবাইল ফেলে এসেছে। মনে মনে ভাবল, থাক। এমনিতেও ১ ঘন্টা পর ফিরে যাবে। আর মোবাইল এ নেটওয়ার্ক ও ঠিক মত কাজ করে না।
ছবি তুলতে তুলতে অনেক ভিতরে চলে আসছে আকাশ, খেয়াল করে নাই। অনেক ছবি তুলছে। ছবি তুলতে গিয়ে ক্যামেরার লেন্সের মধ্যে দিয়ে দেখে কাছেই একটা পাহারের চুড়ায় একটা অপরুপ সুন্দরী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভাবল ভুল দেখছে। এত সকালে এই গভীর জঙ্গলে একটা মেয়ে একা কেন আসবে।
কনফার্ম হওয়ার জন্য আবার ক্যামেরার লেন্স দিয়ে দেখার চেষ্টা করে। দেখে সত্যি একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিশ্চয়ই আত্মহত্যা করতে এসেছে ভেবে, কোন কিছু না ভেবে দোড় দেয়। একটা টিলা পার হয়ে পাহাড়ের উপর উঠে পরে । মেয়েটার পিছে গিয়ে, “দাড়ান” বলে থামানোর চেষ্টা করে।
মেয়েটা ওর চিৎকার শুনে ঘুরে দাঁড়ায়। বলে কে আপনি। আকাশ মেয়েটাকে দেখে কথা হারিয়ে ফেলে। এত সুন্দরি মেয়ে সে জীবনে দেখে নাই। সাদা শাড়িতে যেন একটা শুভ্র পরী দাঁড়িয়ে আছে। নির্বাক দড়িয়ে আছে। মেয়েটার কথায় জ্ঞান ফিরে ওর। কি ব্যাপার আপনি এখানে কি করছেন এত সকালে।
উত্তর না দিয়ে, আকাশ বলে, আপনি কে? আত্মহত্য করছেন কেন?
উত্তরে মেয়েটা বলল, আমি আত্মহত্যা করছিলাম না। আমি তো অনেক আগেই এই পাহাড় থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছি। আপনি চলে যান। একা কখনো এই জায়গায় আসবেন না।
আকাশ মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছে কি করবে। পরে বলল, আমি চলে জাব, কিন্তু আমি জানতে চাই আপনি কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন। কি এমন হয়েছিল।
মেয়েটা বলল, আমি ভালবেসে পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম। বাবা মা মেনে নেয় নাই। শ্বশুরবাড়ি মেনে নিলেও, খুব একটা ভালভাবে নেয় নাই আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে। আমার একটা ছেলে আছে ফারদিন নাম। ফারদিন এর যখন ৬ বছর বয়স। হঠাৎ ফারদিন এর বাবা মারা যায়। আমি খুব অসহায় হয়ে পড়ি। শ্বশুর বাড়িতে শুরু হয় নানান অত্যাচার। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেই।
কিন্তু এটা ছিল আমার সবচেয়ে বড় ভুল। আমার ছেলেটার তো কেউ থাকল না। এখন খুব কষ্ট হয়, ছেলেটার কষ্ট দেখে। কিন্তু এখন কিছুই করার নাই। মনে হয় আমি যদি বেচে থাকতাম, ফারদিনের একটা মাথা গোজার একটা জায়গা থাকত। চলে যেতে পারতাম অন্য কথাও। কিন্তু এখন কিছুই করার নাই।
নির্বাক হয়ে শুনছিল মেয়েটার কথা আর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছিল। কেমন একটা অচেনা অনুভূতি। আকাশ বলল, আপনার নামটা জানতে পরি!
মেয়েটা বলল আমার নাম “নিলা”!
আকাশ আবার প্রশ্ন করল, মৃত্যুর পর সবাই কি এইভাবে যেখানে সেখানে জেতে পারে? বা যার সাথে ইচ্ছা থাকতে পারে?
নিলা বলল, হুম পারে।
কথা শেষ হওয়ার আগেই, আকাশ পাহাড়ের চুড়া থেকে লাফ দেয়।
নিলা না বলে চিৎকার দিয়ে উঠে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ গল্পটি সম্পুর্ন কাল্পনিক।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:৩৯