ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। রিকশাওয়ালা বলল, আপনের অসুখ হইয়া যাইবো। যে হারে কাপতাছেন, চাইর ঘন্টা তো হইল। আর কতো ? শইলে আর শইব না, বাদ দ্যেন।
আমি বললাম, তোমার রিকশা চালাইতে কষ্ট হলে তোমারে ছেড়ে দেই, তুমি যাওগা।
রিকশাওয়ালা – না তা কই নাই। আমাগো আর কি সমস্যা।
আমি বললাম, তোমাকে আমি একটা সাহায্য করতে পারি। তুমি চাইলে, রিকশার পিছে বসতে পার, আমি চালাই। তোমার ভাড়া আমি ঠিকই দিয়ে দিব।
রিকশাওয়ালা – না মামা এইডা হয় না। আর আপনি যে ভাবে কাপতাছেন, পারবেন না।
আমি বললাম, তাহলে কথা বলবা না, যেইদিকে মন চায় যেতে থাক। চা খাবে ?
রিকশাওয়ালা – না মামা, বৃষ্টির মদ্দে চা খামু না।
আমি বললাম, তুমি কি যান, বৃষ্টির পানি মিশানো চা খেতে কি মজা। থাক তুমি বুঝবা না। চায়ের দোকান পাইলে থামাবা।
রিকশাওয়ালা – মামা একটা কতা কমু ? রাগ কইরেন না আবার !
আমি বললম, রাগ করার মত হলে তো রাগ করবই। যদি মনে কর রাগ করব বইল না।
রিকশাওয়ালা – না মানে, আমার মনে হয়, আপনি ডিগবাজি খাইছেন।
আমি বললাম, কি!
রিকশাওয়ালা – বুঝলেন না। তয় থাক। আচ্ছা কন না মামা আপনের কি মন খারাপ?
আমি বললাম, না, তেমন না, তবে, থাক......
রিকশাওয়ালা – আমি মামা কতা বেশি কই। আমার বাজান কইতো, তোর কতার রেলগাড়ি থামাবি ? নাইলে কিনতুক কান কপাডির উপরে থাবরা খাবি। আমার বাপজান টা আমারে অনেক ভালবাসত। আমি অনেক বার অই থাবড়া খাওনের কতা শুনছি, কিন্তু একবার ও খাই নাই। মামা আমারে কন না আপনের কি হইছে ? আমি শান্তি পাইতেছিনা। কোন মাইয়া কি আপনারে ডিগবাজি দিছে ?
আমি বললাম, আরে না। আমারে ছ্যাক দিতে হইলে মেয়েদের ১০৩ বার জন্ম নিয়া আসতে হবে। আমি কাউরে পাত্তা দেই না।
রিকশাওয়ালা – মাইয়াডারে আপনি অনেক বেশি ভালোবাসতেন, তাই না মামা।
আমি বললাম, আরে না, তেমন কিছু না।
রিকশাওয়ালা – এই অবস্থায় সবাই একই রকম কতা কয় মামা। আপনি মাইন্ড খাইয়েন না। ওর চাইতে আরো ভাল মাইয়া পাইবেন।
আমি বললাম, ওই মিয়া তুমি আসলেই বেশি কথা বল। তোমার বাজানের মত আমার ও মন চাইতেছে, তোমারে ঠাডাইয়া একখান থাবড়া দেই, থামরে ভাই।
রিকশাওয়ালা – সরি।
আমি বললাম, আমি একজনকে কাল খুন করছি।
রিকশাওয়ালা – সরি মামা, আপনের কইতে মন না চাইলে কইয়েন না। আপনাগো মত টাইটুই পরা মানুষ গুলারে এই ভাবে ঘুরতে দেখলে ভাল লাগে না।
আমি বললাম, বললাম না একজন কে খুন করছি। তাই মনটা অনেক খারাপ। কিন্তু আমাকে কেউ খুনি বলবে না, বা শাস্তিও দিবে না। তাই নিজেকে মাফ করতে পারছি না।
রিকশাওয়ালা – থাক মামা, কওয়ন লাগব না। আমি শুনুম না। মিছা কতা কইয়েন না। আমি এইডারে অনেক ভয় পাই। একবার মিছা কতা কওনের লাইগা আমার দম বন হইয়া গেছিল। হের থেকে আমি মিছা কতারে অনেক ডরাই।
আমি বললাম, তুমি থাম, আমি বলি। আমি কাল আমার বৌ-রে মেরা ফেলছি।
রিকশাওয়ালা – কন কি মামা! কে কে জানে ?
আমি বললাম, সবাই জানে। কিন্তু কিছুই করার নাই। গতকাল সকালে অফিস আসার আগে নতুন সিলিং ফ্যান লাগায়া আসছিলাম। তারা হুরড়ার মধ্যে ঠিক মত নাট-বল্টু টাইট না দেয়ায় দুপুরের দিকে খুলে পড়ে মাথা ফেটে মারা গেছে। আজ সকালে দাফন হইছে।
রিকশাওয়ালা – কিছু খাইছেন মামা।
আমি বললাম, কালকে থেকে খাই নাই।
রিকশাওয়ালা - চলেন খাই। বৃষ্টির পানি মিশান চা খাই।
আমি, তোমার ভাবির সাথে টি...এস...সি-র মোড়ে অনেক দিন আমি এই চা খাইছি.....................!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৫ রাত ৮:৩৭