somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৮৬'র নির্বাচন ও দেশনেত্রীর আপোষহীন হয়ে উঠা (শেষ পর্ব)

১৮ ই নভেম্বর, ২০০৮ সকাল ৯:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক পর্যায়ে আন্দোলন চরম ভাবে এগিয়ে যায় - আর এরশাদও অস্থির হয়ে উঠে। জাতির উদ্দেশ্য এক ভাষনে এরশাদ ৪৮ ঘন্টা সময় বেঁধে দেয় নির্বাচনে যাওয়া বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে। পরিস্থিতি বিবেচনার জন্যে শুরু হয় ১৫ দল আর ৭ দলের মিটিং। ম্যারাথন মিটিং এর বিষয়ে পরষ্পরের মধ্যে যোগাযোগ করার জন্যে লিয়াঁজো কমিটি সাটলের মতো দৌড়াতে থাকে।

প্রথম দিন পার হয় - ১৫ দল নীতিগতভাবে নির্বাচন করার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়। তবে বিস্তারিত পরিকল্পনার তৈরী জন্যে আরো মিটিং চলতে থাকে। ২য় দিনের সন্ধ্যায় শুনা যায় ৭ দলও আন্দোলনের অংশ হিসাবে নির্বাচনে যাবার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

সর্বশেষ মিটিং শুরু হলো জাসদের কার্যালয়ে। জিপিও উল্টদিকের রাস্তায় বসে আছে উদ্বিগ্ন জনতা। তারমধ্যে ঢাকসুর নির্বাচিত নেতাদেরও দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে পরিচিত একটা মুখ - ঝাকড়া চুলের লম্বা মতো একজন অন্যান্যদের সাথে ভিতরের খবরের জন্যে বসে আছে। উনি হলেন মোজাম্মেল বাবু। সদস্য পাশ করা প্রকৌশলী - যদিও সাংবাদিকতাকেই পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন।

ভিতরে মিটিং করছে লিয়াঁজো কমিটি। তাতে বিএনপির ক্যাপ্টেন আব্দুল হালিম, নুরুল ইসলাম আর আব্দুল মতিন চৌধুরী উপস্থিত।

রাত তখন প্রায় ২ টা বাজে। বেড়িয়ে এলেন নেতারা। হাসি মুখে লিয়াঁজো কমিটির সদস্যরা জানালো - ৭ দল ও ১৫ দল সন্মিলিত ভাবে নির্বাচনের আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়বে।

সবাই সারাদিনের হরতালের পিকেটিং করার পর অনেকটা স্বস্থি নিয়ে চলে গেল।

কিন্তু সকালে খবরের কাগজে দেখা গেল - বিএনপিসহ ৭ দল নির্বাচনে যাবে না। পরদিন রাশেদ খান মেনন সহ আরো কয়েকটা দল ১৫ দল থেকে বেড়িয়ে গেল। এরাও নির্বাচনের বিপক্ষে।

পরদিন থেকে বামপন্থী আর বিএনপি মিলে প্রচার শুরু করলো - যারা নির্বাচনে যাবে তারা "জাতীয় বেঈমান।" বিষয়টাকে আরো দারুনভাবে উপস্থাপন করতে সাহায্য করলো বামপন্থী ওয়ার্কাস পার্টি, বাসদ আর জাসদের অংশ বিশেষ।

এদিকে দুইদিন পর লিয়াঁজো কমিটির ৭ দলের দুই সদস্য আবদুল হালিম আর নুরুল ইসলাম চলে গেল এরশাদের মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিতে - পিছনে রেখে গেলো খালেদা জিয়াকে - যিনি ইতোমধ্যে নিজেকে আপোষহীন হিসাবে পরিচিত করে ফেলেছেন।

পুরো আন্দোলনে জামায়াতের ভুমিকা নিয়ে কিছু বলা দরকার। পুরো সময়ে জামায়াত শুধু বাইতুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে মগবাজার পর্যন্ত মিছিল করলেও গিয়াস কামাল চৌধুরীর বদৌলতে ১৫ দল আর ৭ দলের পাশাপাশি সমানভাবে ভোয়ায় প্রচার পেতে থাকলো।

এখানে উল্লেখ করা দরকার যে - দেশের একমাত্র রেডিও টিভি সরকারের দখলে আর পত্রিকাগুলো উপর কঠোর নিয়ন্ত্রনের করানে এরা 'হারতাল"কে লিখতো "কর্মসূচী"। এই কাজটি করতে এরশাদকে সহাযতা করেন আনোয়ার জাহিদ নামের একজন দালাল - যিনি পরে খারেদা জিয়ার উপদেষ্টাও হয়েছিলেন।

ছাত্ররা দেশে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ব্যষ্ত থাকার সুযোগে শিবির বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্টানে এদের শক্তি বৃদ্ধি করতে লাগলো - কিন্তু কোন দিন হরতালে বা পিকটিং এ শিবিরের কোন কর্মী আহত পর্যণ্ত হয়নি।

ধারনা করা হয় লিয়াঁজো কমিটির আবুদলু মতিন চৌধুরী - যিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় রাজাকার ছিলো - জামায়াতের এজেন্ট হিসাবে কাজ করেছে। যোগাযোগে অভাবেই হোক বা অন্য কোন কারনেই হোক - ৮৬ নির্বাচনে জামায়াত অংশ নিলো। মজার কথা হলো ৮৬ এর নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের কর্মীদেরও দেখি জাতীয় বেঈমান হিসাবে আওয়মীলীগকে নিয়ে কথা বলতে।

যাই হোক - নির্বাচনের ফলাফল ঘোষনা আর মিডিয়া ক্যু করে এরশাদ প্রকৃত ফলাফল বদলে দেয়। এখনও অনেকের হয়তো মনে আছে নির্বঅচনের ফলাফলে এরশাদ বিরোধীরা এগিয়ে যাচ্ছিলো - একসময় টানা তিনটা বাংলা সিনেমা দেখানো হয় টিভিতে - পরে ফলাফল ঘোষনা করা হয় যাতে এরশাদের দল বিজয়ী হয়। এখন মনে হয় - যদি সেইদিন সব দল মিলে নির্বাচনে যেত তবে হয়তো নির্বাচনের দিনেই এরশাদের শেষ দিন হতো। কারন নির্বঅচন নিয়ে এতো বড় জোচ্চুরী সহ্য করা কটিন ছিলো। পরে আওয়ামীলীগসহ সবাই ৮৭ সালে সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে আবারো আন্দোলন বেগবান হয় - সেই সময় আওয়ামীলীগের নুর হোসেন শহীদ হন।

অবশ্য এরশাদ আরেকটা নির্বাচন করে ৮৮ সালে - তাতে শুধু আসম আবদুর রবের নেতৃত্বে জাসদ আর কর্নেল ফারুকের ফ্রিডম পার্টি যোগ দেয় এবং একসময়ের বিপ্লবী ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রী এরশাদের গৃহপালিত বিরোধী দলের নেতা হন।

(২)

আন্দোলনের সফলতা আসে ১৯৯০ সালে - যখন মওদুদ আহমেদ উপরাষ্ট্রপতি আর কাজী জাফর প্রধানমন্ত্রী। গনতান্ত্রিক আন্দোলনের সময় ছাত্ররা ১০ দফা দাবী সহ আগামী রাজনীতির বিষয়ে কিছু সুপারিশ শেখ হাসিনা আর খালেদা জিয়ার কাছে উপস্থাপন করে। যার মধ্যে শিক্ষা বিষয়ক দাবী দাওয়া সহ রাজনীতিকে বেশ কিছু লোককে নিষিদ্ধ ঘোষনার দাবী ছিলো। দুই নেত্রীই সেই দাবী মানার অঙ্গীকার করেন।

১৯৯১ এর নির্বাচনের মনোনয়ন দেবার সময় প্রথম দেখা গেল আপোষহীন নেত্রী প্রথম আপোষ করলেন - এম কে আনোয়ার নামের একজন চাকুরী হারানো সচিবকে মনোনয়ন দিয়ে। এম কে আনোয়ার এরশাদের শাসনামলে মন্ত্রীপরিষদের সচিব হিসাবে এরশাদের স্বৈরশাসনকে সহায়তা করেছে - যার ফলে শাহাবুদ্দিন এর সরকার তাকে চাকুরী থেকে অবসরে পাঠায়। এই ভদ্রলোক আর কেরামত আলী (আরেক সচিব) প্রথমে আওয়অমীলীগের নমিনেশেনর জন্যে ধর্না দিলে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের চাপে তাকে নমিনেশন দেওয়অ হয়নি। পরদিনই খালেদা জিয়া এই দুই ভদ্রলোককে নমিনেশন দিয়ে স্বৈরশাসকের পতিতদের সাথে আপোষ করে সবাইকে অবাক করে দেন - বিশেষ করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের প্রতি ছিলো সেইটা একটা বজ্রপাত।

তারপর জামায়াতের সাথে আপোষ, দূর্নীতির সাথে আপোষসহ সব রকম আপোষই করেছেন খালেদা জিয়া।

তারপরও কর্মী সমর্থকদের কাছে উনি আপোষহীন নেত্রী।

এখন ২০০৮ সাল। নির্বাচন হচ্ছে একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যাদের নিজেদের কোন প্রার্থী নেই - নেই তাদের দল। এই নির্বাচনে না গিয়েও কি উনি আপোষ করবেন?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০০৮ সকাল ৯:৫১
২১টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×