মুলত খবর দেখাই হলো উদ্দেশ্য। তবে মাঝে মধ্যে সময় পেলে যা চলে তাই দেখি। কিন্তু আমার মনে হয় ভাগ্যই খারাপ। যখনই টিভি খুলি - দেখি একটা মেয়ে স্নো-বুট পড়ে গায়ের মধ্যে উল্কি করে অদ্ভুদ ভাবে কথা বলছে। বাংলা আর ইংরেজী মিশিয়ে কি একটা ভয়াবহ ভাষা তৈরী হচ্ছিলো। প্রথম মনে হয়েছিলো হয়তো ভুলে বম্বের কোন অনুষ্ঠান দেখছি - পড়ে ভুল ভাংলো যখন একটা বাংলা গান বাজানো শুরু করলো। মেয়েটার নাম তিশমা। সে মিউঝিক ঝেমজ নামে একটা অনুষ্ঠান করে এনটিভিতে - যেখানে সে কানাডিয়ান গায়িকা আভ্রা লাভিনকে অনুকরন করার চেষ্টা করছে - যা দেখলে আভ্রা লাভিন হয়তো বোরকা পড়া শুরু করবে। ছোট মানুষ বলে ওকে মাফ করে দিলাম।
কিন্তু যখন দেখি "টক শো" নামের বকরবকর অনুষ্ঠানে অনেক সুশীল আসেন - যারা না পারেন ভাল বাংলা না পারেন ভাল ইংরেজী। তাতে কি - কথা বলতে হবে। আমার মনে হচ্ছে - সাধারন মানুষকে ভয় দেখানোর কথার মাঝে ইংরেজী বেশ কার্যকরী। হতাশ হয়েছি এদের জ্ঞানের বহর দেখে - বিশেষ করে কথায় কথায় পশ্চিমের উদারহর আর ইংরেজী শব্দ বললেই যদি জ্ঞানী হওয়া যেত, হায় তাইলে টরন্টোর সব মানুষই জ্ঞানী আর সুশীল হয়ে যেত।
একই অবস্থা দেখি টিভির বিজ্ঞাপন গুলোতে। বলা হচ্ছে "আপনার পছন্দের উত্তর ....টাইপ করে সেন্ড করুন"। কেন কের ভাই, সেন্ড না করে "পাঠানো" যাবে না?
তার বিপরীতে দেখি অনেক মানুষ সুন্দর বাংলা বলেন। যেমন ড. আকবর আলী তাদের মধ্যে অন্যতম। উনি টরন্টো থেকে পিএইডি করেছে - সেটা নিশ্চয় ইংরেজীতে করেছেন। কিন্তু উনার বাংলা শব্দচয়ন আর বাংলাভাষার উপযুক্ত ব্যবহার সত্যই শ্রদ্ধা করার মতো। তারপর মনে পড়ছে আমার শিক্ষক ড. আলি আজগরের কথা। যেমন বাংলা বলতেন - তেমনি ইংরেজী। কিন্তু কোন দিন শুনিনি মিশিয়ে কথা বলতে।
প্রসংগক্রমে ব্লগের লেখকদের কথাও বলা যায় - অনেকের ঝোক আছে ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করে লেখাকে ওজনদার বানানো। এটা একটা বিরাট ভুল। একজন লেখক যখন অভিধান বর্জন করে লেখার চেষ্টা করেন বা লেখার ওজন বাড়ানোর জন্যে সচেতনভাবে ইরেজী শব্দ ব্যবহার করেন - যার সুন্দর এবং সহজবোধ্য বাংলা প্রতিশব্দ আছে - তার কাজকে কি বাংলা ভাষার প্রতি অবজ্ঞা মনে করা ভুল হবে। তবে এটাও স্বীকার করছি - কিছু ইঙরেজী শব্দ আছে যা বাংলা না করাই ভাল।
আবারো টিভি প্রসংগে ফিরে যাই। গত এক বছরে প্রচুর "টক শো" দেখা হয়েছে। তা ছাড়া খবরের বদৌলতে অনেক মানুষের কথা শুনার সুযোগ হয়েছে। তার থেকে মোটামুটি একটা সিদ্ধান্তে পৌছেছি - যারা সাহসী এবং সৎমানুষ - অর্থাৎ নিঃসংকোচে যারা জনসমক্ষে নিজের মনে ভাব প্রকাশ করেন - তাদের অনর্গল বাংলায় কথা বলতে দেখা যায়। আর যারা কথা আর শব্দের আড়ালে নিজেদের আসল চেহারা লুকিয়ে একটা সুন্দর চেহারা উপস্থাপনের চিন্তা মাথায় রেখে কথা বলেন - এরা বাংলার সাথে ইংরেজী মিশান - যাতে কঠিন শব্দের আড়ালে তার আসল কথাগুলো মানুষ ধরতে না পারে।
আপনারাও একটু লক্ষ্য করে দেখতে পারেন - এই পর্যবেক্ষন সত্য কিনা?
ভাষার মাসে সবার উচিত বাংলা ভাষার সর্বোচ্চ উন্নতির লক্ষ্যে কাজ করা - সেটা ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করা। লেখার সময় একটা অভিধান হাতের কাছে রাখা। একটা ইংরেজী শব্দের যায়গায় যদি একটা যুতসই বাংলা শব্দ ব্যবহার করা যায় - সেইটাই হবে শহীদদের প্রতি উপযুক্ত সন্মান জানানো।
আসুন - শুধু নিজের জন্যে না - ভাষার জন্যে লিখি।
( বাংলা লেখার চমৎকার সুযোগ করে দেবার জন্যে সামহোয়ার ইন আর অমিক্রন ল্যাবের প্রতি কৃজ্ঞতা জানাচ্ছি)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১২:০৮