somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যারা কথা বলার সময় বাংলার সাথে ইংরেজী মিশায় - তাদের কেন যেন বাটপার ধরনের মানুষ মনে হয়!

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দীর্ঘকাল বাংলাদেশের টিভি অনুষ্ঠান দেখা হয়নি। অবশেষে রজার্স সাহেবের সৌজন্যে প্রথমে এটিএন বাংলা দেখা শুরু করি। কিন্তু আন্তর্জাতিক গায়িকা ইভা রহমানের গানের তোড়ে আর অনুষ্ঠানের কারিগরী মানের কারনে বিরক্ত হয়ে যখন অতিরিক্ত অর্থব্যয় বন্ধের চিন্তা করছি - তখন দেখলাম এনটিভির নেওয়া যায়। এটিএন বাদ দিয়ে এনটিভি দেখা শুরু করি।

মুলত খবর দেখাই হলো উদ্দেশ্য। তবে মাঝে মধ্যে সময় পেলে যা চলে তাই দেখি। কিন্তু আমার মনে হয় ভাগ্যই খারাপ। যখনই টিভি খুলি - দেখি একটা মেয়ে স্নো-বুট পড়ে গায়ের মধ্যে উল্কি করে অদ্ভুদ ভাবে কথা বলছে। বাংলা আর ইংরেজী মিশিয়ে কি একটা ভয়াবহ ভাষা তৈরী হচ্ছিলো। প্রথম মনে হয়েছিলো হয়তো ভুলে বম্বের কোন অনুষ্ঠান দেখছি - পড়ে ভুল ভাংলো যখন একটা বাংলা গান বাজানো শুরু করলো। মেয়েটার নাম তিশমা। সে মিউঝিক ঝেমজ নামে একটা অনুষ্ঠান করে এনটিভিতে - যেখানে সে কানাডিয়ান গায়িকা আভ্রা লাভিনকে অনুকরন করার চেষ্টা করছে - যা দেখলে আভ্রা লাভিন হয়তো বোরকা পড়া শুরু করবে। ছোট মানুষ বলে ওকে মাফ করে দিলাম।

কিন্তু যখন দেখি "টক শো" নামের বকরবকর অনুষ্ঠানে অনেক সুশীল আসেন - যারা না পারেন ভাল বাংলা না পারেন ভাল ইংরেজী। তাতে কি - কথা বলতে হবে। আমার মনে হচ্ছে - সাধারন মানুষকে ভয় দেখানোর কথার মাঝে ইংরেজী বেশ কার্যকরী। হতাশ হয়েছি এদের জ্ঞানের বহর দেখে - বিশেষ করে কথায় কথায় পশ্চিমের উদারহর আর ইংরেজী শব্দ বললেই যদি জ্ঞানী হওয়া যেত, হায় তাইলে টরন্টোর সব মানুষই জ্ঞানী আর সুশীল হয়ে যেত।

একই অবস্থা দেখি টিভির বিজ্ঞাপন গুলোতে। বলা হচ্ছে "আপনার পছন্দের উত্তর ....টাইপ করে সেন্ড করুন"। কেন কের ভাই, সেন্ড না করে "পাঠানো" যাবে না?

তার বিপরীতে দেখি অনেক মানুষ সুন্দর বাংলা বলেন। যেমন ড. আকবর আলী তাদের মধ্যে অন্যতম। উনি টরন্টো থেকে পিএইডি করেছে - সেটা নিশ্চয় ইংরেজীতে করেছেন। কিন্তু উনার বাংলা শব্দচয়ন আর বাংলাভাষার উপযুক্ত ব্যবহার সত্যই শ্রদ্ধা করার মতো। তারপর মনে পড়ছে আমার শিক্ষক ড. আলি আজগরের কথা। যেমন বাংলা বলতেন - তেমনি ইংরেজী। কিন্তু কোন দিন শুনিনি মিশিয়ে কথা বলতে।

প্রসংগক্রমে ব্লগের লেখকদের কথাও বলা যায় - অনেকের ঝোক আছে ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করে লেখাকে ওজনদার বানানো। এটা একটা বিরাট ভুল। একজন লেখক যখন অভিধান বর্জন করে লেখার চেষ্টা করেন বা লেখার ওজন বাড়ানোর জন্যে সচেতনভাবে ইরেজী শব্দ ব্যবহার করেন - যার সুন্দর এবং সহজবোধ্য বাংলা প্রতিশব্দ আছে - তার কাজকে কি বাংলা ভাষার প্রতি অবজ্ঞা মনে করা ভুল হবে। তবে এটাও স্বীকার করছি - কিছু ইঙরেজী শব্দ আছে যা বাংলা না করাই ভাল।

আবারো টিভি প্রসংগে ফিরে যাই। গত এক বছরে প্রচুর "টক শো" দেখা হয়েছে। তা ছাড়া খবরের বদৌলতে অনেক মানুষের কথা শুনার সুযোগ হয়েছে। তার থেকে মোটামুটি একটা সিদ্ধান্তে পৌছেছি - যারা সাহসী এবং সৎমানুষ - অর্থাৎ নিঃসংকোচে যারা জনসমক্ষে নিজের মনে ভাব প্রকাশ করেন - তাদের অনর্গল বাংলায় কথা বলতে দেখা যায়। আর যারা কথা আর শব্দের আড়ালে নিজেদের আসল চেহারা লুকিয়ে একটা সুন্দর চেহারা উপস্থাপনের চিন্তা মাথায় রেখে কথা বলেন - এরা বাংলার সাথে ইংরেজী মিশান - যাতে কঠিন শব্দের আড়ালে তার আসল কথাগুলো মানুষ ধরতে না পারে।

আপনারাও একটু লক্ষ্য করে দেখতে পারেন - এই পর্যবেক্ষন সত্য কিনা?

ভাষার মাসে সবার উচিত বাংলা ভাষার সর্বোচ্চ উন্নতির লক্ষ্যে কাজ করা - সেটা ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করা। লেখার সময় একটা অভিধান হাতের কাছে রাখা। একটা ইংরেজী শব্দের যায়গায় যদি একটা যুতসই বাংলা শব্দ ব্যবহার করা যায় - সেইটাই হবে শহীদদের প্রতি উপযুক্ত সন্মান জানানো।

আসুন - শুধু নিজের জন্যে না - ভাষার জন্যে লিখি।

( বাংলা লেখার চমৎকার সুযোগ করে দেবার জন্যে সামহোয়ার ইন আর অমিক্রন ল্যাবের প্রতি কৃজ্ঞতা জানাচ্ছি)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১২:০৮
১৫৮টি মন্তব্য ৭৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×