মেজর রফিক ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন সমারিক বাহিনীর বাঙালী সদস্যদের ভুমিকার উপর ভিত্তি করে চারটি সুম্পষ্ট শ্রেনীতে ভাগ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে এই শ্রেনী বিভাগটা সাধারন মানুষের ক্ষেত্রেও সমান ভাবে প্রযোজ্য।
মেজর রফিকের মতে -
১) স্বাধীনতার চেতনায় অনুপ্রানিত এবং আক্রান্ত হবার আগেই পাকিস্তানীদের উপর আক্রমন করার মানসিক ও দৈহিক প্রস্তুতি ছিল - এমন নিবেদিত ব্যক্তিগন প্রথম পর্যায়ভুক্ত। তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রথম অবস্থাতেই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
২) দ্বিতীয় দলটি স্বাধীনতার চেতনায় অনুপ্রানিত ছিল। কিন্তু তাঁরা পাকিস্তানীদের প্রাথমিক আক্রমনের ব্যাপারে ততটা সজাগ ও প্রস্তুত ছিলো না। তবুও, যে মুহূর্তে এআ তাঁদের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠে যে শুধুমাত্র চাকুরী নয়, তাদের জীবনও বিপন্ন - তখনই তাঁরা পাকিস্তানী শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন।
৩) আর যারা জীবনের ঝুঁকি নেওয়াতো দুরের কথা, কর্মজীবনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে এমন পদক্ষেপ সম্পর্কেও বিরূপ মনোভাবাপন্ন ছিল - তাদের তৃতিয় পর্যায়ভুক্ত করা যায়। তাদের কাছে স্বাধীন বাংলাদেশই কী, অবিচ্ছিন্ন পাকিস্তানই বা কী? ব্যক্তিগত কর্মজীবন ও নিজের ভবিষ্যৎই ছিল তাদের মুল বিবেচ্য বিষয়। স্বাধীনতাকামী মুক্তিযোদ্ধাগন ও শত্রু পাকিস্তানি - দুই পক্ষের সাথেই এরা অত্য্ন্ত সুকৌশলে সমান সম্পর্ক বজায় রাখছিলো - যাতে যে পক্ষই বিজয়ী হোক না কেন - তাদের যেন কোন অসুবিধা না হয়। এই দলভুক্তরা তখনই যুদ্ধে অবতীর্ন হয় যখন তাঁরা বুঝতে পারে তাদের জীবন হুমকীর মুখে। তাই স্বাধীনতা যুদ্ধে এই দল পরিস্তিতির চাপে পড়েই যুদ্ধে অংশগ্রহন করে, স্বেচ্ছায় নয়।
৪) চতুর্থ দলে রয়েছে অতি নগন্য সংখ্যক কিছু ব্যক্তি যারা পাকিস্তানি প্রভুদের অনুগত দাস ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা তাদের কাছে অর্থহীন।
স্বাধীনতাযুদ্ধে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে পুরো বাঙালি জনগোষ্ঠীই অংশ নিয়ে ছিল। তবে কিছু সংখ্যক ব্যক্তি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দালালি করেছিল এবং মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে।
---
বেশ অনেকদিন পর ব্লগে লিখতে পেরে ভাল লাগছে। বিশেষ করে বিগত কয়দিনের ব্লগের আন্দোলন দেখে মনে হলো মেজর রফিকের সমাজ বিশ্লেষনটাই পোস্টের জন্যে মোক্ষম হব। কারন হলো - যুদ্ধ, প্রকৃতিক দুর্যোগের মতো বিশাল বিপদে মানুষ তাদের বাইরের আবরনটাকে ধরে রাখতে পারে না। প্রকৃত চেহারা প্রকাশিত হয়ে যায়। আর মুক্তিযুদ্ধের থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। যারা ব্লগের আন্দোলন চলাকালে চলমান ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন - তাদের জন্যে স্বরূপ চেনার একটু সুবিধা হবে বিবেচনায় মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাসকের দিকেই হাত বাড়ালাম।
যারা ফিরে এসেছেন - সবাইকে অভিনন্দন। যারা এই আন্দোলনে সরব ও নিরব সমর্থন দিয়েছেন - সবাইকে অভিবাদন।
আশা করছি - ব্লগ কর্তৃপক্ষ বিগত দিনর ঘটনাবলী বিশ্লষন কর মুল সমস্যা - মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করে যে কোন প্রচার প্রচারনা বা কোন ধর্মব্যবসায়ী রাজনৈতিক দল বা তার অংগ সংগঠনের প্রচার এবং যুদ্ধাপরাধীর পক্ষের সকল প্রপাগান্ডা ও প্রচারনা বন্ধের লক্ষ্যে একটা সুস্পষ্ট নীতিমালা চালু করবেন। নীতিমালার এই ধারাটা জরুরী - কারর এরই মাধ্যমে সুস্থ ব্লগিং এর ধারাকে নিশ্চিত করার মাধ্যমে সমাহোয়ার হয়ে উঠবে সকলের মিলন মেলায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ৯:৪২