somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলফ্রেড হিচককঃ দ্য মাস্টার অফ সাসপেন্স।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আপনি যদি হলিউডি ম্যুভির ভক্ত হন বা খোঁজখবর রাখেন তবে আপনার অবশ্যই পরিচয় আছে "আলফ্রেড হিচকক" নামটার সাথে।চলচ্চিত্র জগতে তিনি "দ্য মাস্টার অফ সাসপেন্স" বা "রহস্যের জাদুকর" নামে পরিচিত।

আলফ্রেড জোশেফ হিচকক ১৮৯৯ সালের ১৩ আগস্ট যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে জন্মগ্রহণ করেন।যুক্তরাজ্যে জন্ম হলেও তিনি তাঁর জীবনের অধিকাংশ ছবিই নির্মান করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের হলিউডে।

চলচ্চিত্রের ইতিহাসে হিচককের আজকের যে স্থান এবং স্বীকৃতি তা তিনি পেয়েছেন ৬০ বছর বয়সে, দীর্ঘ ৩৭ বছরে ৫০ টি ছবি নির্মানের পর।এর আগে চলচ্চিত্র জগতে তাঁর স্থান খুব একটা উপরে বিবেচনা করা হতনা। এর কারন হচ্ছে, হিচকক মূলত ছিলেন রহস্য-রোমাঞ্চ ছবির নির্মাতা, যা চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের বিবেচনায় অভিজাত বা খুব একটা উপরের সারির ছবি হিসেবে বিবেচিত হতোনা।হিচকককে প্রথম আলোচনায় নিয়ে আসেন, ফরাসী লেখক, চলচ্চিত্র পরিচালক ও সমালোচক এরিক রোহমের এবং ফ্রান্সের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ক্লোদ শ্যাব্রল । এ দুজনেই তাকে প্রথম অনন্য চলচ্চিত্রকার হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং তুলনা করেন জার্মান চলচ্চিত্র পরিচালক ফ্রিডরিখ হিবলহেলম মুরনাউ এবং সোভিয়েত রাশিয়ার বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সের্গেই মিখাইলোভিচ আইজেনস্টাইনের সঙ্গে।এর কয়েক বছর পরে কাইয়ে দ্যু সিনেমা গোষ্ঠীর আরেক নেতা, ফ্রঁসোয়া ক্রফো তাঁর এক বইয়ে হিচকককে "উৎকন্ঠার শিল্পী" হিসেবে আখ্যায়িত করে তুলনা করেন দস্তয়েভস্কি , এডগার এলান পো এবং কাফকার সঙ্গে।সেই থেকে হিচককের স্বীকৃতি পাওয়া শুরু।

আলফ্রেড হিচকক দর্শকের মন নিয়ে পিয়ানোর মত খেলতে পারতেন। খুনের দৃশ্যকে ভালোবাসা আর ভালোবাসার দৃশ্যকে খুনের মত করে উপস্থাপনে তাঁর জুড়ি ছিলনা।হিচকক মনে করতেন একটি ভালো ছবির প্রধান উপকরণ হচ্ছে এর চিত্রনাট্য।হিচকক যেমন দর্শকদের মনস্তত্ব খুব ভালোভাবে বুঝতেন তেমনি তিনি সেটাকে কাজেও লাগাতেন অসাধারণ ভাবে।মানুষের মনে ভীতি এবং সাসপেন্স ছড়ানোর কাজে তাঁর পটুত্ব আজও বিশ্বের সেরা হিসেবে গন্য করা হয়।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো আলফ্রেড হিচকক জীবনে চলচ্চিত্রের সেরা পুরষ্কার একাডেমী পুরষ্কার বা অস্কার জিততে পারেননি।বিশের যে ক'জন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের অস্কার না পাওয়াটাকে চলচ্চিত্র বোদ্ধারা অস্কার কমিটির ব্যর্থতা হিসেবে দেখেন তাদের নধ্যে অন্যতম হচ্ছেন আলফ্রেড হিচকক (এ তালিকায় আছেন স্ট্যানলি কুবরিক , গ্রেটা গার্বো সহ আরো কয়েকজন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব)।হিচকক অস্কার জিততে না পারলেও ৬ বার শ্রেষ্ঠ পরিচালকের ক্যাটাগরীতে অস্কার মনোনয়ন লাভ করেন।

হিচকক টেলিভিশানের জন্যেও কাজ করেছেন।তিনি টেলিভিশানের জন্য ১৯৫৫ সাল থেকে পরবর্তী ১০ বছর "আলফ্রেড হিচকক প্রেজেন্টস" নামে ৩৬৫ টি পর্ব প্রযোজনা করেন।এর মধ্যে ২০টির পরিচালক ছিলেন তিনি নিজে।

আলফ্রেড হিচকক ১৯৮০ সালের ২৯ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন।

হিচকক পরিচালিত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ছবিঃ

১. ব্লাকমেইল (১৯২৯)
২. দ্য 39 স্টেপস (১৯৩৫)
৩. দ্য লেডী ভ্যানিশেস (১৯৩৮)
৪. রেবেকা (১৯৪০)
৫. স্যাবোট্যার (১৯৪২)
৬. স্পেলবাউন্ড (১৯৪৫)
৭. নটোরিয়াস (১৯৪৬)
৮. স্ট্রেঞ্জারস অন আ ট্রেইন (১৯৫১)
৯. আই কনফেস (১৯৫৩)
১০. রিয়ার উইন্ডো (১৯৫৪)
১১. ডায়াল এম ফর মার্ডার (১৯৫৪)
১২. দ্য ম্যান হু নিউ টু ম্যাচ (১৯৫৬)
১৩.ভার্টিগো (১৯৫৮)
১৪. নর্থ নাই নর্থ-ওয়েষ্ট (১৯৫৯)
১৫. দ্য ট্রাবল উইথ হ্যারি (১৯৫৫)
১৬. সাইকো (১৯৬০)
১৭. দ্য বার্ডস (১৯৬৩)
১৮. টর্ণ কারটেন (১৯৬৬)
১৯. টোপাজ (১৯৬৯)
২০. ফ্রেনজী (১৯৭২)
২১. ফ্যামিলি প্লট (১৯৭৬)

বিশ্ব চলচ্চিত্র ইতিহাসে আলফ্রেড জোশেফ একটি অমর নাম।মেধাবী এই পরিচালককে নিয়ে অনেক লেখাই লেখা যায়, কিন্তু তৃপ্তি পাওয়া যায়না।সবসময় মনে হয় এই দিকটা তো লিখলাম, কিন্তু এই দিকটা বাকী রয়ে গেল।হিচককের বেশ কিছু ম্যুভি আমি দেখেছি।এক কথায় অসাধারণ লেগেছে।তাই মনে হয়েছিল এই মহারথীকে নিয়ে একটা পোস্ট দেয়া উচিত।অন্তত কিছুটা হলেও শান্তি পেলাম লিখতে পেরে।

সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, ইন্টারনেট ম্যুভি ডেটাবেজ এবং উইকিপিডিয়া।

















সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৪৭
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভারতের পাশে আমেরিকা-ইসরায়েল। পাকিস্তানের পাশে কারা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩


গত রাতে ইসরায়েল থেকে ভারতে বিপুল পরিমাণ যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে গেছে একটি কার্গো বিমান। তাতে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির গাইডেড মিসাইল বিপুল পরিমাণে আছে। এই মিসাইলগুলো অতি নিখুঁতভাবে মেঘ, বৃষ্টি বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত ও পাকিস্তান উভয় সম্পূর্ণ কাশ্মিরের দখল পেতে মরিয়া

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৩



ভারত হয়ত এবার যুদ্ধকরেই পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির দখল করতে চায়। পাকিস্তানও হয়ত যুদ্ধকরেই ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির দখল করতে চায়। এমতাবস্থায় ভারতের পাশে ইসরাইল এবং পাকিস্তানের পাশে চীন থাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঈশ্বরের ভুল ছায়া – পর্ব ৩ | ভূমিকা-ব্রীজ

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৮



"তুমি যদি বাতাসকে ভালোবাসো, তাকে বশ করো না—তার সুর বোঝো। কারণ বাতাস একবার থেমে গেলে, তার কণ্ঠ আর কখনো শোনা যায় না।"

“ঈশ্বরের ভুল ছায়া” সিরিজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবার কমন শত্রু আওয়ামী লীগ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:৫৮


শেখ হাসিনা সবসময় তেলবাজ সাংবাদিকদের দ্বারা বেষ্টিত থাকতেন। তেলবাজ নেতাকর্মীরাও বোধহয় তার পছন্দ ছিল। দেশে কী হচ্ছে, না হচ্ছে, সে সম্পর্কে তার ধারণাই ছিল না। সামান্য কোটাবিরোধী আন্দোলন উনার পক্ষে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক কনফ্লিক্ট জোনে পরিণত করলো ড. ইউনুসের অবৈধ দখলদাররা ‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ২:২১



শেষ পর্যন্ত ড.ইউন তার আন্তর্জাতিক সক্ষমতা প্রদর্শন করে দেখালেন! উনি বাংলাদেশের মানুষের জন্য কখনোই কোন কাজ করেননি ।আমাদের কোনো দুর্যোগে কখনো পাশে দাঁড়িয়েছেন তার কোনো দৃষ্টান্ত নেই । যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×