somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাগো তোমায় কথা দিলাম, সুন্দরবন রক্ষার শফত নিলাম...

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তড়িঘড়ি করে ঘড়ি বিলাই গাড়ি থামাতে বললেন ড্রাইভারকে। তারপর খুব ধারালো চোখে হঠাৎ চোখ পড়ে যাওয়া দেয়ালের দিকে কাচের ভেতর থেকে বিস্ময়ের সাথে তাকিয়ে থাকলেন। ডানপাশে বসা লোকটাকে জিজ্ঞেস করলেন কি লেখা দেয়ালে। হাত কচলাতে কচলাতে হে হে করে হাসতে হাসতে লোকটা উত্তর দিল, নাথিং স্যার। দ্যাট কমিটি পিপল ব্রেইন ওয়াশিং পুওর পিপল ফুলবাড়ি লিভিং এণ্ড দে রাইটিং ফুল ওয়ার্ড স্যার। ডোন্ট ওয়ারি উই সিকিউরিটি হ্যাভ স্যার।

ঘড়ি বিলাইয়ের প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হল। ইচ্ছা করল কষে লোকটাকে একটা থাপ্পড় দিতে। এত কষ্ট করে তিনি এই ফকিরা দেশে এসেছেন এ.এ.-র মার খাওয়া ব্যবসাটা আবার দাঁড় করানোর একটা চেষ্টা করতে, আর এখন এই গাধাটা যে শুদ্ধ করে একটা ইংরেজি বাক্য বলতে পারে না তার আবোল তাবোল কথা নিজ দায়িত্বে বুঝে নিতে হচ্ছে। যাই হোক, অনেক কষ্টে তিনি নিজেকে সামলালেন। অচিন দেশ অচিন জায়গা, ব্যাটা ক্ষেপে গিয়ে আবার কখন কি করে বসে!

গাড়ি আবার চলতে শুরু করল।

বিলাই একগাদা কম্বল নিয়ে এসেছেন বিলি করার জন্য। বড়ই দয়ার শরীর তার, শীতে ফুলবাড়ির লোকজন কষ্ট পাচ্ছে, আহা আহা, বেচারারা এখনি মরে গেলে কয়লাখনি করার পর কারা মরবে? বিলাইয়ের কম্বলগুলোতে অবশ্য তাঁর মহান পূর্বপুরুষ ক্রিস্টোফার কলম্বাসের আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া কম্বলগুলোর মতন বিষ মেশানো নেই।

তিনি খোঁজখবর নিয়েই এসেছেন। ২০০৬ সালের মত যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। উফ, সেবার কি একটা জবর খেলই না দ্যাখালো এই গরীব দেশের গরীবতর এলাকার লোকগুলো! আরে ব্যাটা, তোদের সাতপুরুষের ভাগ্য দূরদেশের শাদা আর প্রতিবেশী দেশের আধা-শাদা সাহেবরা তোদের দেশটাকে ডেভেলাপড করে দেওয়ার জন্য এত কষ্ট করে আসে, খনি করতে চায়, তোদের দেশের তেল গ্যাস কষ্ট করে তুলে দিতে চায়, বিদ্যুৎকেন্দ্র করে দিতে চায়, আর তোরা তোদের ধূলাবালিভরা শহর থেকে আসা কয়টা টোকাইরে মাথায় তুলে নাচিস আর নির্বোধের মত চেঁচাসঃ 'আমার দেশের সম্পদ, আমার দেশেই রাখবো।' তো সেবার এই নির্বোধেরা লাখে লাখে জড়ো হয়ে গেল আর বাধ্য হতে তিনটাকে ফেলে দিতে হল। অবশ্য এসব কোনো বিষয় না, বিলাইয়ের মহান পূর্বপুরুষেরা আমেরিকা আবিষ্কার করার সময় কোটিতে কোটিতে ফেলেছেন, এইখানে তো মাত্র তিনটা ছেলেকে...কিন্তু তারপর কি থেকে কি হয়ে গেল, বিলাইয়ের কোম্পানিকে ফুলবাড়ি ছেড়ে বিলাইয়ের মতোই পালাতে হল। বাপ রে বাপ, এই ফকিন্নীর পোলা আর মাইয়াগুলার কি তেজ, ট্যাকা নাই ক্ষ্যামতা নাই, তাও যখন রুখে দাঁড়ায় ভয়ে বিলাইদের প্যান্ট ভিজে যায়। কিন্তু এবার নাকি এমন কিছুই হবে না, অনেকদিন পার হয়ে গেছে, ওদের রক্তও নাকি ঠাণ্ডা হয়ে গেছে, তাই আবার এ.এ.-র কাজ এখানে শুরু করা যায় কিনা তাই বিলাইয়ের এই দেশে আসা। এসি গাড়ির আরামদায়ক সিটে বসে এসব ভাবতে ভাবতে বিলাইয়ের একটু ঝিমুনি এসে যাচ্ছিলো।

তাই তিনি ধরফর করে উঠে বসলেন যখন হঠাৎ করে তার কানে প্রচুর শব্দ আসলো। একটু পরেই তিনি দেখতে পেলেন হাজার হাজার লোক লাঠি সোটা হাতে তাঁর গাড়ির দিকে আসছে। আতঙ্কে তার শরীর শীতল হয়ে আসতে লাগল এবং তিনি কম্বল প্রজেক্ট মুহূর্তের সিদ্ধান্তে বাতিল করে দিয়ে গাড়ি উল্টোদিকে ঘোরাতে বললেন।

বিলাই বাংলা জানেন না। তাই দেয়ালের লিখন পড়তে পারেননি। সেই দেয়ালে আমিন তরিকুল আর সালেকীন নামের তিনজন শহিদের শুদ্ধ রক্ত দিয়ে লেখা ছিল দু'টি বাক্যঃ "মাগো তোমায় কথা দিলাম, ফুলবাড়ি রক্ষার শফত নিলাম"

এখানেই শেষ নয়

ফুলবাড়ির হাজারো আমিন তরিকুল আর সালেকীন কথা দিয়েছিল বাংলাদেশকে যে ফুলবাড়িকে রক্ষা করবে। আমরা ইতিমধ্যে নিশ্চয় জেনে গেছি, আমাদের প্রাণপ্রিয় সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি ধবংস করে সুন্দরবন থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে ভারতীয় স্বার্থে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প হচ্ছে। ইতিমধ্যে সরকারের সাথে ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসির সাথে চুক্তিও হয়ে গেছে। আমরা কি পারি না, রামপালকে ফুলবাড়ি করে তুলতে? আমরা কি আমাদের মনের দেয়ালে লিখতে পারি নাঃ "মাগো তোমায় কথা দিলাম, সুন্দরবন রক্ষার শফত নিলাম"? তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ-বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি লড়াই করে যাচ্ছে, কিন্তু এটা বাংলাদেশের লড়াই, এতে সবাইকেই আসতে হবে, আসতেই হবে...

রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত জানতেঃ Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৮
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×