আমি এখন যা কিছু বলতে যাচ্ছি তা আমার সারা জীবনের অভিজ্ঞতাপ্রসুত, আশা করি এটা থেকে পাঠকেরা কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন।
১) সময়ের ব্যাপারে প্রচন্ড স্বার্থপর হোন। মনে রাখবেন আপনার সময় কেবল আপনারই জন্য, আরো পরিষ্কার ভাবে বলতে গেলে আপনার নিজের উন্নয়নের জন্য। আপনি যদি স্বেছায় কাউকে সময় দেন সেটা ভিন্ন কথা কিন্তু আড্ডাবাজী, ঘোরার নাম করে কেউ যেন আপনার সময় নস্ট করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।
২) আপনার বন্ধুদের উন্নয়নের দায়ভার আপনার না। যদি মনে করে থাকেন আপনারা দল বেধে উন্নতি করতে পারবেন তাহলে ভুল ভাবছেন। এটা কখনই হবেনা। যে দলের সাথে আপনি চলেন তাদের অনেকে আপনার চেয়ে অনেক সফল হবে আবার অনেকে ধূলির সাথে মিশে যাবে, এটাই বাস্তবতা, এটাই জীবন।
৩) পেশা বাছাই করার আগে নিজেকে বুঝুন, কি করতে আপনার সবচেয়ে ভাল লাগে এবং কিসে আপনি সবচাইতে দক্ষ? আপনার ভালো লাগার সাথে আপনার দক্ষতা নাও মিলতে পারে, সেটাও মাথায় রাখুন। যা করতে আপনার ভালো লাগে সেটাতে যদি আপনার দক্ষতা থাকে তাহলে পেশা জীবনে আপনার তর তর করে উঠে যাবার প্রবল সম্ভাবনা আছে।
৪) ‘বন্ধুরা অমুক ভার্সিটিতে ঢুকেছে তাই আমাকেও ঢুকতে হবে’ এই ধরনের মনোভাব পরিহার করুন। আপনার জন্য যে ভার্সিটি আপনি সেরা মনে করছেন তাতেই ঢোকার চেস্টা করুন, ওটাতে না হলে সেকেন্ড বেস্ট ট্রাই করুন। অন্যথায় যে বন্ধুত্বের খাতিরে পড়াশনার মান উপেক্ষা করে আপনি ঝাক বেধে ভার্সিটিতে ঢুকলেন, ভার্সিটির মানের কারনে জীবনে সফল হতে না পারলে সেই বন্ধুত্ব কর্পূরের মতোই উবে যাবে।
৫) ছাত্র অবস্থায় প্রেমে জড়ানো থেকে বিরত থাকুন, আপনার জীবনের এই পর্যায়ে এগুলি টাকা এবং সময়ের ‘ব্ল্যাকহোল’ ছাড়া আর কিছুই না। আপনি একটা মেয়েকে পাগলের মতো ভালবাসবেন, তার পেছনে টাকা এবং সময় দেবেন এবং তারপর আপনি ‘প্রতিষ্ঠিত না’ এই যুক্তিতে সেই মেয়ের অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে যাবে। মাঝখান থেকে আপনার টাকা-সময়-কেরিয়ার সবই নষ্ট। কোনো দরকার আছে এতোসব ঝামেলার? যে টাকা গার্লফ্রেন্ড কে খাওয়াবেন সেই টাকা নিজে খান, নিজের যত্ন নিন, আখেরে কাজে দিবে।
৬) নিজের দক্ষতা বাড়ান। আমি এমন অনেক তরুন দেখেছি যারা ফেসবুক ছাড়া ইন্টারনেটের আর তেমন কোনো ব্যবহার জানেনা। যখন কোনো প্রতিষ্ঠান আপনাকে নিয়োগ দেবার চিন্তা ভাবনা করবে তারা আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ড লিস্ট দেখতে চাইবে না, বরং কয়টা দরকারি প্রোগ্রাম আপনি দক্ষতার সাথে ব্যবহার করতে পারেন সেটাই দেখবে।
৭) নিজের ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট পরিষ্কার রাখুন, অনেক কোম্পানিই এখন নিয়োগ দেয়ার আগে চাকুরিপ্রার্থীর বিভিন্ন অন লাইন একাউন্ট চেক করে দেখে। আপনার রাজনৈতিক মতবাদ বা সানি লীওনের প্রতি আপনার ভালবাসা নিজের কাছেই সীমাবদ্ধ রাখুন, প্রাইভেসি পাবলিক মোডে রেখে এসব দুনিয়াকে জানানোর কোনই দরকার নেই।
৮) ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জনের চেস্টা করুন, বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, বিভিন্ন গারমেন্টসে উচুপদে ইন্ডিয়ানদের নিয়োগের এটাই প্রধান কারন। মুরাদ টাকলা জেনারেশন দিয়ে হয়ত প্রেম ভালবাসা চলতে পারে কিন্তু আন্তর্জাতিক লেনদেন কখনই চলেনা।
৯) নিজস্ব নেটওয়ার্ক তৈরি করুন, খেয়াল করে দেখুন আপনার মহল্লায় গুরুত্বপুর্ন কেউ থাকে কিনা, থাকলে দেখা হলেই সালাম দিন, সালাম দেয়া চালিয়ে যান, ঈদে শুভেচ্ছা দিন, বেশ কিছুদিন পর কি সাহায্য চান জানান, নিতান্ত গারল না হলে তিনি অবশ্যই আপনাকে সাহায্য করবেন। তবে এদের কাছে আবার টাকা পয়সা চাইতে যাবেন না, এদের নেটওয়ার্ক (যা আপনার চেয়ে অনেক ব্যপক হবে) ব্যবহার করার চেস্টা করুন।
১০) সব চাইতে গুরুত্বপুর্ন ব্যপার যা কখনো কোনো স্কুল কলেজে শেখানো হয়না, শিষ্টাচার এর ব্যাপারে মনোযোগী হোন। দেখে শিখুন, আদব-বেয়াদব উভয়ের কাছ থেকেই। কম বয়সে মনে হতে পারে এটার আবার কি প্রয়োজন কিন্তু জীবনের কোনো এক বাকে এসে টের পাবেন এটাই জীবনের সব চাইতে গুরুত্বপুর্ন বিষয় ছিল।
বলে রাখা ভাল লেখাটা মুলতঃ ছেলেদের জন্য। লেখাটা আমার চেয়ে অনেক কম বয়সীদের জন্য বলে আমি স্নেহবশত তুমি করে বলেছি, কোন বয়স্ক পাঠক এ জন্য আঘাত পেয়ে থাকলে সে জন্য ক্ষমাপ্রার্থী
১) সিগারেট খাওয়া বাদ দাও, সম্পুর্ন ভাবে। ক্যান্সারের ঝুকিতো আছেই, জানি ক্যান্সার সবার হবে না কিন্তু যদি সিগারেট খাও প্রথমতঃ তুমি সময়ের আগেই বয়স্ক হবে, দ্বিতীয়তঃ ‘বিশেষ সময়ে’ তোমার পারফরমেন্স ক্রমাগত খারাপ হতে থাকবে। কম বয়সে ‘পারফরমেন্স ঘাটতির’ বিষয়টা বোঝা যাবে না কিন্তু যখন তোমার বাড়তি বয়সে পারফরমেন্স ঘাটতির কারনে সঙ্গিনী পরকিয়ার দিকে ঝুকবে তখন সিগারেট খাওয়ার কুফলটা হাড়ে হাড়ে টের পাবে।
২) যদি কোন প্রকার মাদক গ্রহনের অভ্যাস থাকে তাহলে তা বাদ দাও, এখনি। যদি ইতিমধ্যে আসক্ত হয়ে থাক, নিরাময় কেন্দ্রের সাহায্য নাও। তোমার বাপ-মা যত হারামিই হোক না কেন এ ব্যপারে তোমাকে সাহায্য করবে। যদি না করে তাহলে বিভিন্ন এনজিও আছে যারা করবে। মনে রেখ মাদক সেবন করা হচ্ছে বাঘের গুহায় ঢোকার মত, বাঘ খাবে কিনা সেটা প্রশ্ন না, কখন খাবে সেটাই প্রশ্ন!
৩) রাতে ঘুমানর আগে অবশ্যই ভাল মত গোসল করে নাও। যদি না কর সারাদিন যে ধূলা-ময়লা-ঘাম গায়ে জমেছিল তা সারা রাত তোমার দেহের ক্ষতি করতে থাকবে। ছেলেদের জন্য এন্টি ব্যক্টেরিয়াল টাইপ সাবান বেশি ভাল। মুখ পরিস্কার করার জন্য গামছা বা ঝিঙ্গা ব্যবহার কর। মুখ না ঘসার ফাযলামি কেবল মেয়েদের জন্য।
৪) দাত এবং চোখের ব্যপারে সাবধান। এগুলির যত্ন নাও। বছরে অন্তত একবার চেকআপ কর।
৫) সান স্ক্রিন ব্যবহার কর। তবে দিনের শেষে আবার ভাল মত মুখ ধুয়ে নিতে ভুলে যেওনা। এটার উপকারিতা চট করে বুঝতে পারবেনা কিন্তু ব্যবহার শুরু করার ১০ বছর পর যখন দেখবে তোমার বন্ধুদের চেহারায় বয়সের ছাপ পরে গেছে কিন্তু তোমার পরেনি তখন এটা ব্যবহারের উপকারিতা বুঝতে পারবে। সম্ভব হলে SPF 40 বা তার উপরের গুলি ব্যাবহার কর।
৬) গরমকালে নেহায়াত বাধ্য না হলে ঘামে ভেজা কাপড় পর পর দুই দিন ব্যবহার করোনা। একই অন্তর্বাস কোন অবস্থাতেই পর পর দুই দিন নয়, শীত কালে তো নয়ই, গরম কালে তো প্রশ্নই আসেনা।
৭) অল্প হলেও নিয়মিত কিছু ব্যায়াম কর। পর্যাপ্ত পরিমান ঘুমাও। ফোনে/ফেসবুকে রাতের ঘুম নস্ট করা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ৪০ বছর বয়স হলেই মানুষ বুড়িয়ে যায় কথাটা ঠিক না। নিজের যত্ন নিলে ৭০-৮০ বছর বয়স পর্যন্ত দিব্যি টেকসই থাকা যায়।
৮) খাবারের ব্যপারে সাবধান, জানি খেতে অনেক ইছা করবে (আমার নিজেরও করে) কিন্তু তারপরও রাস্তা-ঘাটের ভাজি-ভুজি এড়িয়ে চলাই ভাল। পারলে দিনে একটা করে ডিম সিদ্ধ খাও (কুসুম সহ)।
৯) মানসিক শান্তি নস্ট করে এমন বন্ধু-বান্ধবি-ঘটনা থেকে দূরে থাক।
মুরুব্বিদের সালাম দিতে হয় এগুলি হচ্ছে সাধারন শিষ্টাচার, আমি এই লেখায় যা বলতে যাচ্ছি তা কিছুটা এডভান্স লেভেলের, তবে তোমাদের কাজে আসবে।
১) যদি কারো কোন দৈহিক সমস্যা বা আচরনগত সমস্যা থাকে, আর যদি সেটা তোমার কোন সমস্যা না করে, সেটা নিয়ে কিছু বলতে যাবে না। এই ভদ্রতাটা অনেক বয়স্ক লোকেও জানেনা। মনে কর তুমি যার সাথে কথা বলছ যদি তার দাত সব সময় বের হয়ে থাকে বা তার বিশাল একটা টাক থাকে, তোমার কাজের সাথে তার কি আদৌ কোন সম্পর্ক আছে? তবে উনি যদি কথা বলার সময় তোমাকে থুথু দিয়ে ক্রমাগত ভেজাতে থাকেন সে অবস্থায় সরে বসাই ভাল, উনি নিজেই বুঝে নিবেন তুমি কি বলতে চাও।
২) বাঙ্গালী মাত্রই চাপাবাজ প্রকৃতির, সাথে সাথে চাপাবাজীর প্রতিবাদ করতে চাইলে মোটামুটি সারাজীবন তোমাকে ঝগড়া-ঝাটি করে কাটাতে হবে। এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হচ্ছে যদি সেই চাপাবাজীতে তোমার কোন অপমান বা ক্ষতি না হয়, করতে দাও, তুমি যেমন চাপাবাজী বুঝতে পার, অন্যরাও পারে।
৩) কোন লোকের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে খোচা-খুচি করা উচিত না। যদি বিয়ে সঙ্ক্রান্ত বা ছাত্রী পড়ানো জাতীয় কোন ব্যপার না হয় তাহলে সে মাগীবাজ কিনা তার জানার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ন ব্যপার হচ্ছে এটা জানা যে সে সৎ কিনা।
৪) পোষাকের ব্যপারে সতর্ক হও। যদি তুমি সেই রকম বড় লোক ফ্যমিলির না হও তাহলে তাদের মত দামী কাপড় পরতে যেও না। কাপড়ের ব্র্যান্ড এর চেয়ে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ন ব্যপার হচ্ছে কাপড়টা পরিস্কার এবং যথোপযুক্ত থাকা। কুলখানিতে থ্রী পিস কোট পরে যাওয়া এবং বিয়েতে সাধা-সিধে কাপড় পরে যাওয়া, দুটিই ফাযলামির দুই প্রান্ত মাত্র।
৫) বাসার বাইরে মুরুব্বিদের সামনে ফোন নিয়ে খোচা-খুচি করতে যেওনা। তারা ব্যবহার না করলেও তোমার চেয়ে অনেক বেশি দামী ফোন কেনার সামর্থ তাদের আছে।
৬) যদি কোন দাওয়াতে যেয়ে নিশ্চিত না থাক কি নিয়ে কথা বলতে হবে তাহলে সালাম দিয়ে স্বাস্থ্যের খোজ-খবর নিয়েই চুপ থাক। ভুলেও তার কিশোরী-তরুনী মেয়ের খোজ খবর নিতে যাবেনা। যদি তার কোন বেকার বা অপদার্থ ছেলে থাকে, সে ‘ইদানিং’ কি করছে এটাও জিজ্ঞেস করতে যাবেনা।
৭) যদি পেশাদার রাজনীতিক না হও তাহলে নিজের রাজনৈতিক মতবাদ নিজের কাছেই রাখ। তুমি জাননা যার সাথে কথা বলছ সে ‘আসলে’ কোন দল করে।
৮) কাউকে চট করে সফল বা ব্যর্থ বলে ধরে নিওনা, তার কাহিনী তুমি জাননা।
৯) কখনো কারও প্রতি তাচ্ছিল্য দেখিওনা। আল্লাহ ছাড়া ভবিষ্যত কেউ জানেনা।
১০) মনে রেখ শিষ্টাচার হচ্ছে বড়লোক-সবলের মাথার মুকুট আর গরীব-দুর্বলের পরিচ্ছেদ।
‘আত্মহত্যা’ শব্দটা শুনলেই সবার আগে আমার এক কিশোরের কথা মনে পরে যায়, আমি তখন স্কুলে পড়ি, এক কিশোর (১১-১২ বছরের হবে) তার বাবার পিস্তল দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। ছবিটা দেখে কষ্ট পেয়েছিলাম, ফর্সা, গোলগাল, শান্ত, অবোধ চেহারার একটা বাচ্চা কিভাবে নিজ রক্তের মাঝে চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে আছে ! আত্মহত্যার কারনটা ছিল একটু বিচিত্র, বাচ্চাটি কোনভাবে একটি ‘এডাল্ট কন্টেন্ট’ টাইপ ছবি দেখতে যেয়ে ধরা পরে, অতঃপর পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন কতৃক মানসিকভাবে চরম নিগৃহিত হবার পর লজ্জায়, অপমানে, ক্ষোভে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। অপমান আর শাসনের যে একটা মাত্রা আছে, অনুসন্ধিৎসা যে কিশোর বয়সের এক অতি স্বাভাবিক ধর্ম তা এই অকালে হারিয়ে যাওয়া কিশোরটির বাবা-মাকে হয়তো কেউ কোনদিন বুঝিয়ে বলেনি।
তারপর অনেক বছর পার হয়ে গেছে, কত চিত্র-বিচিত্র কারনে যে মানুষকে আত্মহত্যা করতে দেখেছি তার কোন সীমা-পরিসীমা নেই, প্রেমিক প্রেমিকার সাথে ঝগড়া করে, পরীক্ষায় খারাপ করে আত্মহত্যার ঘটনাতো আছেই, এমনকি প্রিয় নায়কের মৃত্যুতেও (সালমান শাহ) মানুষকে আত্মহত্যা করতে দেখেছি।
আত্মহত্যার না করার প্রচুর ধর্মীয় কারন আছে তবে আমি সেসব এখানে আলোচনা করবো না কারন সেসব নিয়ে অনেকেই লিখেছে আর আমার সব সময়ই মনে হয়েছে যারা আত্মহত্যা করে বা করার কথা ভাবছে, তাদের কাছে ধর্ম খুব একটা গুরুত্ব বহন করেনা।
আত্মহত্যার কিছু সাধারন কারন আছে, বাংলাদেশে তার প্রথম দুটি হচ্ছে পরীক্ষায় খারাপ করা আর প্রেমিক-প্রেমিকা কতৃক প্রতারনা-বঞ্চনার শিকার হওয়া।
পরীক্ষার কথাই প্রথমে বলি, পরীক্ষায় খারাপ করার দুটি কারন থাকতে পারে, প্রথমতঃ ঠিক মত পড়াশোনা করা হয়নি, অথবা কোন ‘চুতিয়া’ (না কিছু শিক্ষকের প্রতি এই শব্দ ব্যাবহারে আমি বিন্দুমাত্র লজ্জিত নই, দে ডিজার্ভ ইট) শিক্ষক ঠিক মত খাতা দেখেনি। না পড়ে খারাপ করে আত্মহত্যাকারীদের প্রতি আমার বিন্দুমাত্র সহানুভূতি নেই, এই সব বলদগুলি মরে সাফ হয়ে যাওয়াই ভাল। কিন্তু যদি কোন খারাপ শিক্ষকের কারনে রেজাল্ট খারাপ হয় তাহলে? তাহলে মন শক্ত করে আবার পরীক্ষা দাও, নিজের সবকিছু ঢেলে পরীক্ষা দাও, দরকার হলে আবার, আবার এবং আবার, তারপরও যদি আশানুরুপ রেজাল্ট না হয়, তাহলে ধরে নাও এই ব্যাপারে তোমার যোগ্যতা আপাতত ঐটুকুই।
রেজাল্ট খারাপ হলে সর্বোচ্চ কি ক্ষতি হতে পারে? তুমি হয়তো কিছু জায়গায় ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবে না, হয়তো যেখানে পড়তে চেয়েছিলে সেখানে পড়া হবেনা, জীবনটা যেমন ভাবে গড়তে চেয়েছিলে তেমনটা না হয়ে হয়তো অন্য রকম হবে, এর বেশীতো আর কিছু হবে না, নাকি হবে? তোমার রেজাল্টের সাথে পৃথিবীর ঘোরা বা সূর্য্য উঠার যদি কোন সম্পর্ক না থাকে তাহলে ধরে নিতে পার যে রেজাল্ট খারাপ হবার কারনে মারাত্মক কিছু হয়ে যায়নি।
আত্মীয়দের নিন্দার কথা চিন্তা করছ? মানুষতো সৃষ্টিকর্তাকে পর্যন্ত নিন্দা করে, সমালোচনা করে, তুমি কোথাকার কে হে যে কেউ তোমার নিন্দা বা সমালোচনা করবে না? তোমার নিন্দা বা সমালোচনা করার মানেই হচ্ছে তুমি হচ্ছ সামবডি। জেনে রাখ তুমি জীবনে যাই হও না কেন, যত সাফল্যই অর্জন করনা কেন কিছু লোক তোমার নিন্দা করবেই (এমনকি জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব হলেও), তবে মজার ব্যাপারটা হচ্ছে এখন যারা তোমার নিন্দা করছে, জীবনে সফল হতে পারলে দেখবে তারাই সবার আগে তোমার নাম আর খ্যাতি ব্যাবহার করবে।
আচ্ছা ধরে নিলাম তুমি ভাল নাম্বার পেলে কাঙ্খিত জায়গায় পড়তে পারতে, তারপর? যারা ঐসব জায়গা থেকে পাস করে বের হয় তারা কি সবাই অনেক বড়লোক আর অনেক বিখ্যাত হয়ে যায়? বাংলাদেশে প্রতিবছর বুয়েট আর মেডিক্যাল কলেজগুলি মিলিয়ে কয়েক হাজার ছেলেমেয়ে বের হয়, বিখ্যাত আর সফল হিসেবে তাদের কয়জনের নাম তুমি শুনেছ বা ভবিষ্যতে শুনবে বলে মনে কর?
বিশ্বাস কর, জীবনে সফল আর বড়লোক হবার ব্যাপারে ভাল রেজাল্টের খুব একটা ভূমিকা নেই, বরং প্রয়োজন আছে সততা, সাধনা আর পরিশ্রমের। তবে হ্যা, তুমি যদি নির্দিষ্ট কিছু পদের কথা চিন্তা কর, যেমন ভার্সিটির প্রফেসর, তাহলে এসব ব্যাপারে ভাল রেজ়াল্টের অবশ্যই একটা বড় ভূমিকা আছে।
এবার আসি প্রেমে বঞ্চনার ব্যাপারে, আচ্ছা একটা ব্যাপার কি কখনো চিন্তা করে দেখেছ, যে ছেলে বা মেয়ে তোমাকে জীবনের শুরুতেই ছেড়ে চলে যেতে পারলো সে জীবনের মাঝে বা শেষে তোমাকে ছেড়ে চলে গেলে তোমার কেমন লাগতো, কি অবস্থা হত? ভালবাসার কথা চিন্তা করছ? তোমারটা হয়তো খাটি ছিল তারটা যে খাটি নয় সেটাতো বুঝতেই পারছো। পানি যতই বিশুদ্ধ থাকুক না কেন, পাত্র যদি ফুটো হয়, কি লাভ?
তুমি আত্মহত্যা করলে তোমাকে ছেড়ে যাওয়া প্রেমিক-প্রেমিকার কি হবে? কিছুই হবেনা, যার জন্য জীবনটা দিয়ে দেবে তার এ নিয়ে কোন ফিলিংই হবে না, সে কষ্ট পাবে মনে করছ? ফরগেট ইট ! তোমাকে জীবিত অবস্থাতেই যে মেরে ফেলল, সেই ছেলে বা মেয়ে তুমি মরার কয়েকদিন পরেই অন্য কারো সাথে সম্পর্কে জড়াবে, বিয়ে করবে, বাচ্চা পয়দা করবে, তোমাকে সে মনেও রাখবে না, এর চেয়ে প্রতিশোধ নেয়া অনেক ভাল। আস্তে, আমি এসিড ছোড়াছুড়ি টাইপ প্রতিশোধের কথা বলছি না। এসিড ছোড়া বা খুন করে ফেলার চেয়েও মানুষকে আরো তীব্র কষ্ট দেয়া যায়, জানতে চাও কিভাবে ? তবে শুনে রাখ, মানুষকে সবচাইতে, এমনকি মৃত্যুর চেয়ে বেশী কষ্ট দেয়া যায় ‘আমি কি হারাইলাম’ মনোভাবে ফেলে। কখনো কি চিন্তা করে দেখেছ, তোমার প্রতিষ্ঠা, যোগ্যতা বা সামর্থ্যেহীনতার অজুহাতে যে ছেলে বা মেয়ে তোমাকে ত্যাগ করলো, তুমি প্রতিষ্ঠা, যোগ্যতা, সামর্থ্য অর্জন করলে তার কেমন লাগবে?
তোমাকে ত্যাগ করা প্রেমিকার উপর চূরান্ত টাইপ প্রতিশোধ নিতে চাও? জীবনে প্রতিষ্ঠিত হও এবং তোমার এক্সের চেয়ে সুন্দরী দেখে (ওহ ইয়েস!) একটা মেয়েকে বিয়ে কর, বিশ্বাস কর, বাকি জীবন সেই মেয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারবে না।
ব্রেক আপ করে যাওয়া প্রেমিককে জন্মের মত শিক্ষা দিতে চাও? নিজ পায়ে দাড়াও আর বুঝিয়ে দাও তাকে ছাড়া তুমি অচল হয়ে যাওনি, দেখবে তোমার এক্স প্রেমিক এর মন বাকী জীবন শুধু কুট কুট করবে। হ্যান্ডসাম দেখে কোন ছেলেকে বিয়ের কথা আর যোগ করলাম না, কাউকে দেখানোর জন্য বিয়ে করতেই হবে, এটা মেয়েদের জন্য ‘নট নেসেসারী’।
তোমার সাথে প্রেম করে অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলেছে বা করতে যাচ্ছে? সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দাও যে তোমাকে একটা বেঈমানের হাত থেকে আগেই বাচিয়ে দিয়েছেন। আর ভবিষ্যতে তুমি তোমার এই বেঈমান এক্সের চেয়ে ভাল কিছু পাবেনা, এমন কোন কথা কি কোথাও লেখা আছে?
যাকে তুমি পছন্দ কর তার সাথে বিয়েতে তোমার বাবা-মার অমত? অপেক্ষা কর, তোমার ১৮ বছর হয়ে গেলে আর কেউ তোমাকে আটকাতে পারবে না, তবে বাবা-মার অমতে বিয়ে করলে নিজের এবং অপরজনের সম্পূর্ন দায়িত্ব যে নিতে হবে সেটা আবার মাথায় রেখ, মনে রেখ ফুচকা খেতে ভাল লাগলেও শুধু ফুচকা খেয়ে জীবন ধারন করা অসম্ভব, বিয়ে ব্যাপারটা যত সহজ মনে হয় আসলে ততটা সহজ নয়, এত রকম হাবিজাবি খরচ আছে যা তুমি বিয়ে করে ফেলার আগে কল্পনাও করতে পারবে না। তোমার কি কখনো মনে হয়েছে যে বাবা মা কেন তোমাকে তোমার পছন্দ মত বিয়ে করতে দিচ্ছে না বা করিয়ে দিচ্ছে না? কারনটা অবশ্য খুব সরল, তোমার মৌলিক চাহিদা মেটানোর দায়িত্ব তোমার বাবা-মার হলেও তোমার যৌন চাহিদা মেটানোর ব্যাবস্থা করা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পরেনা। তুমি যদি ‘দিল্লিকা লাড্ডু’ নিজেই কিনে খেতে চাও তবে তোমাকেই তার দাম দিতে হবে এবং খেয়ে বদ হজম হলে তার দায়িত্বও তোমাকেই নিতে হবে।
প্রেম ভালভাসা পার হয়ে পরবর্তী প্রসঙ্গে আসি, অনেক সময় ছেলেমেয়েরা বাবা-মার উপর রাগ করে আত্মহত্যা করে, তুমি যদি একারনে আত্মহত্যা করেই বস, তোমার জন্য তাদের কোন দুঃখ হবে বলে মনে কর? অবশ্যই না। হারামী টাইপ লোক যেমন আছে হারামী টাইপ বাবা-মাও তেমনি আছে। এখন হয়তো তোমার বয়স কম, আর্থিক সক্ষমতা নেই বলে তারা তোমাকে অত্যাচার করছে, কিন্তু কেবল বেচে থাকলেও এক সময় তুমি বড় হবে আর যদি গাঞ্জাখোর টাইপ কিছু না হও, বিশ্বাস কর, এমন এক সময় তোমার জীবনে অবশ্যই আসবে যখন তুমি তোমার উপর করা অত্যাচারের প্রতিটা বিন্দুর হিসাব চুকিয়ে দিতে পারবে। বাবা-মারা অনেক কারনে সন্তানদের উপর নির্যাতন করে, অনেক বাবা-মা বুঝতে পারেনা তাদের সন্তান কষ্ট পাচ্ছে, অনেক বাবা-মা অজ্ঞতার কারনে কষ্ট দিয়ে ফেলে আর কিছু বাবা-মা আছে যারা আসলেই ‘ব্রান্ডেড হারামী’, তাদের লক্ষ্যই থাকে কষ্ট দেয়া। তোমার বাবা মা যেমনই হোক না কেন, ধৈর্য্য ধর, মনে রাখবে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া সব কিছুরই পরিবর্তন হয়।
হয়তো এতক্ষন যা বললাম তার কোনটাই হয়তো তোমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না, হয়তো তোমার আসলেও কিছু ভাল লাগে না, বেচে থাকতে ইচ্ছা করেনা, আচ্ছা তোমার ব্যাপারটা মানসিক কোন কারনে হচ্ছে নাত ? মনকে ধরা ছোয়া যায়না বলেই মনে করনা যে মনের কোন সমস্যা হতে পারেনা, সফটওয়ারের কথা চিন্তা কর, তুমি সব সময় সফটওয়ার ব্যাবহার করছ, কোনদিন কীবোর্ড বা মাউসের মত কোন সফটওয়ার ছুয়ে দেখেছ না ছুতে পারবে? তোমার কম্পিউটারে যদি ভাইরাস আক্রমন করতে পারে, তোমার মনে কেন কোন মানসিক রোগ আক্রমন করতে পারবে না ? যদি কখনো মনে হয় তোমার কোন রকম মানসিক সমস্যা হচ্ছে, তোমার বাবা-মাকে জানাও, তা যদি সম্ভব না হয় তবে মানসিক ওয়ার্ড আছে এমন কোন হাসপাতালে যাও, তাও যদি না পার দেখবে অনেক পেপারে মানসিক কাউন্সেলররা পরামর্শ দেন, তাদের কাছে দরকার হলে বেনামে তোমার সমস্যার কথা বল, পরামর্শ চাও। ডায়রিয়া হলে তো স্যালাইন খেতে লজ্জা করবে না, তাহলে মানসিক রোগের ক্ষেত্রে এত লজ্জা কেন ?
এতক্ষন আমি যা বললাম তা হয়তো তোমার জীবনের সমস্যার সাথে মিলে, হয়তো মিলে না, বিপুল এই পৃথিবীর জটিল থেকে জটিলতম সমস্যার কতটাই বা আমি জানি? বিশ্বাস কর কেবল মাত্র বেচে থাকার মধ্যেই অনেক আনন্দ আছে, এমনকি কোন সাফল্য ছাড়া বেচে থাকলেও জীবন এক সময় উপহারের ডালা নিয়ে হাজির হয়, ফুটপাথে বসে থাকা ক্ষুদার্থ ছোট শিশুটির হাতে খাবার তুলে দেবার আনন্দ, পাশের বাসার কার্নিশে আটকে থাকে বেড়াল ছানাটিকে উদ্ধারের আনন্দ, তোমাকে যে সারাজীবন কেবল আড়াল থেকে ভালবেসেছে তাকে আবিস্কারের আনন্দ, শীতের সকালে শিশির ভেজা মাঠে হাটার আনন্দ, নদীর ঢেউয়ে নাক গুজে বুক ভরে সুবাস নেবার আনন্দ, বেচে থাকার এমন কত আনন্দই না আছে, তুমি আত্মহত্যা করে চলে গেলে কিভাবে তা পাবে?
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৩৭