আল্লাহ্ যখন শয়তানকে তার সান্নিধ্য থেকে বের করে দিচ্ছিলেন, তখন শয়তান একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ শপথ করেছিল, যা থেকে তার মানুষকে ধ্বংস করার অন্যতম একটি প্রধান পদ্ধতি সম্পর্কে জানা যায়ঃ
(শয়তান বলল) “আমি মানুষের কাছে আসব, আপনি দেখবেন ওরা বেশিরভাগই অকৃতজ্ঞ। [আ’রাফ ৭:১৭]
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ নয়, সে আল্লাহর প্রতিও অকৃতজ্ঞ।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮১১)
আল্লাহ্ তাআলা বলেন : “যখন তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন যে,যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো তাহলেতোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর”। [সূরা ইব্রাহিম ১৪:৭]
নিশ্চয়ই শয়তান চাইবে না আপনি জীবনে আরও বেশি পান, আরও ভালো থাকেন।
কেন আল্লাহ্ আমাদেরকে কৃতজ্ঞ হতে বলেন? তাঁর তো আমাদের কাছ থেকে কিছুই পাবার দরকার নেই। আমরা কৃতজ্ঞ হই আর না হই, তাতে তো তাঁর কোন লাভ নেই। তাহলে কৃতজ্ঞ হয়ে কি লাভ?
গত বছর টাইম ম্যাগাজিনের নভেম্বর সংখ্যায় একটি আর্টিকেল বের হয়েছে কৃতজ্ঞতার উপকারিতার উপরে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০০৩ সালে ২০১৬ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের উপরে গবেষণা করে দেখা গেছে, যারা অপেক্ষাকৃত বেশি কৃতজ্ঞ, তাদের মধ্যে মানসিক অবসাদ, দুশ্চিন্তা, অমূলক ভয়-ভীতি, অতিরিক্ত খাবার অভ্যাস এবং মদ, সিগারেট ও ড্রাগের প্রতি আসক্তির ঝুঁকি অনেক কম। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে মানুষকে নিয়মিত আরও বেশি কৃতজ্ঞ হতে অনুপ্রাণিত করলে, মানুষের নিজের সম্পর্কে যে হীনমন্যতা আছে, নিজেকে ঘৃণা করা, নিজেকে সবসময় অসুন্দর, দুর্বল, উপেক্ষিত মনে করা – ইত্যাদি নানা ধরণের সমস্যা ৭৬% পর্যন্ত দূর করা যায়।
২০০৯ সালে ৪০১ জন মানুষের উপর গবেষণা করা হয় যাদের মধ্যে ৪০% এর ক্লিনিকাল স্লিপ ডিসঅর্ডার অর্থাৎ জটিল ঘুমের সমস্যা আছে। তাদের মধ্যে যারা সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ, তারা বেশি ঘুমাতে পারেন, তাদের ঘুম নিয়মিত হয়, রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েন এবং দিনের বেলা ক্লান্ত-অবসাদ কম থাকেন।
নিউইয়র্কের Hofstra University সাইকোলজির অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডঃ জেফ্রি ফ্রহ ১০৩৫ জন ১৪-১৯ বছর বয়সি শিক্ষার্থীর উপর গবেষণা করে দেখেছেন যারা কৃতজ্ঞ বেশি, তাদের পরীক্ষায় ফলাফল অপেক্ষাকৃত বেশি ভালো, সামাজিক ভাবে বেশি মেলামেশা করে এবং হিংসা ও মানসিক অবসাদে কম ভোগে।
সবাই আসুন, এবারের রমজানে সব ভালো কাজের কৃতজ্ঞতা জানানোর অভ্যাস করি। সরকারের ভাল কাজের জন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ হোন, বাবা-মার প্রতি কৃতজ্ঞ হোন, স্বামী কিংবা স্ত্রীর ভালো কাজের জন্য কৃতজ্ঞ হোন, বন্ধুর সেবার জন্য কৃতজ্ঞ হোন। সামহোয়ারইনব্লগ থেকে শিখতে পারছি, অনেক কিছু। তাই এ ব্লগের প্রতি কৃতজ্ঞ হোন।
খারাপটি চিন্তা করে বিরক্ত হয়ে অতৃপ্ত মন নিয়ে সুখী হতে পারবেন না। আমাদের অতৃপ্ত মনটাই আমাদেরকে দিন দিন অসুখী করে রাখছে। তাই এত হানাহানি, ঝগড়া, ফেসাদ, এত এত তালাক। সব কিছুর জন্য দায়ি অতৃপ্তবোধ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:৫২