স্টেশনে কোন ট্রেন নেই। একটু দূরে পুরনো রেললাইনের পাশে একসারি চায়ের দোকান। ফাঁকা একটা দোকান দেখে বসে পড়লাম। মধ্যবয়স্কা দোকানি টিভিতে স্টার জলসাতে মগ্ন। পাশেই একটা কামারের দোকান। গনগনে আগুন জ্বলছে। একটু দূরে বসে একজন একটা দড়ি টেনে টেনে হাপরে বাতাস দিচ্ছে। আর কামার হাতুড়ি পিটিয়ে চলেছে আগুনরঙা লোহায়। কি অদ্ভুতভাবে একখণ্ড লোহা থেকে দু'চার মিনিটের মধ্যে বানিয়ে ফেলছে ধারালো বটি! বিশ্রী স্বাদের তিতকুটে এক কাপ চা খেতে খেতে অবাক হয়ে দেখছিলাম। কামারের দোকানের চোখ ঝলসানো আগুন বাদে আশেপাশের সবকিছুই পুরনো দিনের মুভির মতো সাদা কালো। ওপাশের দোকানটাতে বেশ কয়েকজন মানুষ। বিভিন্ন বয়সের। গল্প চলছে তুমুল। কারও যেন কোন তাড়া নেই কোথাও যাবার। আয়েস করে চুমুকের পর চুমুক চলছে চায়ের কাপে। গল্প একসময় গড়াল চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে। তারপর চিরাচরিত নিয়মে আওয়ামী লীগ বিএনপি। ভারত পাকিস্তান। উল্টোদিকে একটা পর্দা টানা হোমিওপ্যাথি দোকান। দোকানের চালের উপর একটা বিড়াল। আরামদায়ক আলস্যে ঘুম ঘুম চোখ মেলে তাকিয়ে আছে। রেললাইনের পাশে গড়াগড়ি দিয়ে ধূলো মাখামাখি করছে কয়েকটা বাচ্চা ছেলেমেয়ে। পাশের আরেক দোকানের সামনে একটা বাচ্চা মেয়ে। কি একটা চেয়ে না পেয়ে চিৎকার দিয়ে মাটিতে গড়াগড়ি। সেদিকে কারো কোন ভ্রূক্ষেপ নেই। দুজন হাওয়াই মিঠাইওয়ালা। রেললাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে দূরে মিলিয়ে গেল। রঙচটা মলিন পোশাক পরিহিত এক কিশোরী রেললাইনের উপর রোদ্দুরে নেড়ে দিয়ে গেল দুটো জীর্ণ মলিন কাঁথা। হঠাৎ কোথা দেখে ছুটে এলো দুটো বাচ্চা ছেলেমেয়ে। হাতে প্লাস্টিকের ছোট বোতল। ভিতরে রঙিন পানি। বোতলের ছিপিতে ছিদ্র। একজন আরেকজনের গায়ে মহা উৎসাহে পানি ছিটাচ্ছে আর ছুটোছুটি করছে। হঠাৎ হুইসেলের শব্দে ধ্যান ভাঙলো। ট্রেন আসছে। চায়ের বিল মিটিয়ে উঠে পড়লাম। সূর্য এখন প্রায় মাথার ওপর। ট্রেনটা স্টেশনে পৌঁছানো পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। তারপর হাঁটতে শুরু করলাম। আবার। গন্তব্য অজানা।
* একা একা উদ্দেশ্যবিহীন হাঁটতে ভালো লাগে। কোন কারণে মন অস্থির থাকলে সেদিন আরও বেশি ভালো লাগে। ফেরিঘাট, নদীর পার, রেল স্টেশন, ব্যস্ত রাস্তা। হাঁটতে হাঁটতে টং দোকানে এক কাপ চা। ঝুপড়ি দোকানে সিঙ্গারা। তারপর আবার হাঁটা। হাঁটতে হাঁটতে মানুষ দেখা। রং বেরঙের মানুষ। রঙের মানুষ। মানুষ; অথবা রঙিন ফানুস।
** অনেকদিন পর আবার ব্লগে এসেছি








সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১৫ রাত ১:১৫