ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ক্ষমতায় আসা বর্তমান সরকার দেশকে ডিজিটালাইজড করতে এপর্যন্ত নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ওয়াই ম্যাক্স, থ্রীজি, সরকারি কাজে অটোমেশন সহ আরও অনেক কিছু। এ সরকার শুরু থেকেই জনগণের কাছে টেক-বান্ধব একটি ভাবমূর্তি তৈরি করেছে। যেমন ফিরে যাওয়া যাক ১৯৯৬ এ। সে বছর প্রথম ক্ষমতায় এসেই তারা মোবাইল ফোন কে বিলাসী এবং মধ্যবিত্তের ধরা সীমার বাইরে থেকে একেবারে নিম্ন বিত্তের লুঙ্গির কোঁচরে পর্যন্ত নিয়ে এসেছিলেন। কম্পিউটার এর উপর সব কর প্রত্যাহার করে মধ্যবিত্তের ক্রয়সীমার মধ্যে নিয়ে এসেছিলেন। এবার ক্ষমতায় এসে থ্রিজি সহ নানা রকম তাক লাগানো প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন সাধারণ মানুষকে। সরকারের এসব কাজ ছিল প্রশংসা পাওয়ার দাবিদার। কিন্তু এখন সময় এসেছে এসব প্রযুক্তিকে আরও টেকসই করে এবং কাজে লাগিয়ে দেশের অগ্রগতি।
কিন্তু এবার বাজেটে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে গোটা জাতি দেখল যে সরকার হঠাৎ করেই যেন উলটো দিকে ঘুরে গেল! একটু ব্যাখ্যা করা যাক।
থ্রিজি, অপটিক্যাল ক্যাবল নেটওয়ার্ক এসব দ্রুত গতির ইন্টারনেট ব্যবস্থা এখন বাংলাদেশে সহজ লভ্য। কিন্তু এখন সময় হল এগুলো ব্যবহার করার, আর তার জন্যে দরকার ভাল মানের ডিভাইস। অথচ এবারের বাজেটে সরকার মোবাইল ফোনের উপর ১৫% কর বসিয়ে দিল! অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে তাতে ক্ষতিটা কি হল। ক্ষতিটা হয়েছে সুদূরপ্রসারী। আমরা সবাই জানি বাংলাদেশে এখনও স্থানীয়ভাবে ভাল মানের হ্যান্ড-সেট তৈরির অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। দেশীয়পণ্য বলে যা চালানো হচ্ছে তা আসলে চায়না থেকে বানিয়ে আনা সাধারণ মানের হ্যান্ড-সেট। ফাস্ট ইন্টারনেট থেকে লাভটা কি যদি সেটা ব্যবহার করার জন্য ভাল মানের ডিভাইসই না থাকে?
বাজেটে এসব ভাল মানের ডিভাইসের উপর কর বসালেও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা তো বাড়েনি। সুতরাং বেশীরভাগ মানুষই ঝুঁকবে ওই সব তথাকথিত দেশি পণ্য নাম ধারী সাধারণ মানের চায়না ফোনের দিকে। ফলাফল সাধারণ মানুষ সরকারের এইসব সুবিধা পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারবে না।
যেহেতু মানুষ সবসময় চায় আরও ভাল প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে তাই ভ্যাট বসালেও তারা হ্যান্ডসেট কিনবে কিন্তু তখন তাদের বাজেটের ভেতর মোবাইল কিনতে গিয়ে কিনবে রিফারবিশড এবং লো কোয়ালিটি হ্যান্ডসেট। এতে একদিকে যেমন মানুষের ভোগান্তি এবং টাকার অপচয়, অন্যদিকে এসব মোবাইলের কোন ট্রেস থাকে না বলে সরকার পড়বে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পুরোপুরি বাস্তবায়নে দরকার এই ভ্যাট যত দ্রুত সম্ভব প্রত্যাহার করা। নাহয় প্রযুক্তি বিমুখ হতে দেশের মানুষের বেশি দিন সময় লাগবে না।