আত্মপ্রতিকৃতি
রবিদা অতি অল্প বয়সে আমাকে নিয়ে একটি গান লিখেছিলেন। মাত্র ২০ বছর তখন তাঁর। এত অল্প বয়সে জীবনের এমন গভীর বোধ ও দর্শন নিয়ে এমন একটি গান কী করে লিখেছিলেন ভাবতে গেলে অবাক হতে হয়। প্রকৃতির সব সুন্দরের সাথে আমার একাত্মতার খবর রবিদা কী করে জানলেন, এও কম বিস্ময় নয়! প্রকৃতির সাথে আমাকে মিশিয়ে দিয়ে গান লিখলেন,
আমার চোখে তো সকলই শোভন,
সকলই নবীন, সকলই বিমল, সুনীল আকাশ, শ্যামল কানন,
বিশদ জোছনা, কুসুম কোমল— সকলই আমার মতো ।
তারা কেবলই হাসে, কেবলই গায়, হাসিয়া খেলিয়া মরিতে চায়—
গানের প্রতিটি অক্ষর, শব্দ যেন আমাকে নিয়েই লেখা। প্রকৃতির সর্বত্র শুধু আনন্দ। হেটাররা অবশ্য বলবে, গানের ঐ "আমি" টা কবি নিজে। অথচ আমি তো জানি, ঐ "আমি" টা আসলে কে!
ফুল, জোছনা, আকাশের তারা, প্রকৃতির সব কিছু তাদের কাজ শেষে হাসিমুখে কত সহজ ভাবে বিদায় নেয়! জীবনকে কত সহজভাবে নেয়া যায়! গানে বলা হয়েছে,
ফুল সে হাসিতে হাসিতে ঝরে, জোছনা হাসিয়া মিলায়ে যায়,
হাসিতে হাসিতে আলোকসাগরে আকাশের তারা তেয়াগে কায় ।
পুরো গান ভর্তি কেবল আনন্দ আর আনন্দ। প্রকৃতির মতো সহজ আনন্দ। রবিদা আবারও আমার কথা ভেবেই লিখেছেন,
আমার মতন সুখী কে আছে। আয় সখী, আয় আমার কাছে—
সুখী হৃদয়ের সুখের গান শুনিয়া তোদের জুড়াবে প্রাণ ।
প্রতিদিন যদি কাঁদিবি কেবল একদিন নয় হাসিবি তোরা—
একদিন নয় বিষাদ ভুলিয়া সকলে মিলিয়া গাহিব মোরা।।
যেমন পানি যে মীন পিয়াসী, পানির মধ্যে থেকেও একটি মাছ তৃষ্ণার্ত, তেমনি এত আনন্দ, এত সুন্দরের মধ্যে থেকেও কোথায় যেন একটি বিষাদ, একটি হাহাকার ঠিকই গানের ভেতর দিয়ে হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়। সত্যিই, শুধু আনন্দের মধ্যে থাকাটুকুই জীবন নয়। ভালোবাসা পাওয়া এবং প্রায় একই সাথে ভালোবাসা না পাওয়া, ভালোবাসাকে ছুঁতে পারার যে যন্ত্রণা, যা কোন সংজ্ঞা দিয়ে বর্ণনা করা যায় না, ঐ যন্ত্রণা ছাড়া তো জীবনের পরিপূর্ণতা আসে না! এ যেন সুখে থাকতেও ভূতের রাম কিল খাবার ইচ্ছে! সে ইচ্ছে থেকেই রবিদা জিগিয়েছেন, আমিও জিগাই, সখী, ভালোবাসা কাকে কয়?
অতএব, হে সখা ও সখীগণ, রবিদা যে এই গানটি আমাকে নিয়েই লিখেছেন, তাহা স্বীকার না করিয়া তোমরা যাইবে কোথায়?
পুনশ্চ- আপনাকে নিয়ে রবিদা কোন গান/কবিতাটি লিখেছেন?
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১৮