somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালো আদর মন্দ আদর ৩

০৯ ই এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব ঃ Click This Link

১ম পর্বঃ Click This Link

দুঃস্বপ্ন দেখে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলে মনটা কেমন আচ্ছন্ন হয়ে থাকে সারাদিন। স্বপ্নে কী ঘটেছিল সেটা অনেক সময় মনে না থাকলেও, তার রেশ যে রয়ে যায়। ঠিক তেমনি যেন এক ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের মত বারবার পুরোনো সেই স্মৃতিগুলো হানা দেয় অনিকের মনে। অনেক ছোটবেলার কথা সেসব। ওর বাবা-মা দুজনেই ছিলেন কর্মজীবী। কাজের মেয়ের কাছে ওকে রেখে বাসায় তালা দিয়ে দুজনেই চলে যেতেন কাজে। বাবা-মা যখন বাসায় থাকতো না, কাজের মেয়ের কথা না শুনলে মার খেতে হতো ওকে। খুব কাঁদতো তখন ও। কাজের মেয়েটা ওকে যে শুধু মারত, তাই নয়, মাঝে মাঝে...। আবছা আবছা কিছু মনে পড়ে অনিকের, বেশির ভাগই মনে পড়ে না। আসলে এসব ও মনে করতে চায় না। তবু মনের উপর বিষাদের কালো ছায়া লেগে থাকে লেপ্টে। এই কষ্টগুলোর কথা কেউ কোনদিন জানতে পারবে না।



এভাবেই বেশির ভাগ যৌন নিগৃহিত শিশুদের কথা আমাদের কাছে অজানা থেকে যায়। যেকোন সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার শিশুরা নিগৃহিত হতে পারে, তবুও এ ব্যাপারে আমাদের মধ্যে তেমনভাবে সচেতনতা দেখা যায় না। শিশুদের যেমন এ ব্যাপারে আগে থেকে সাবধান করে দেওয়া হয় না, তেমনি ওরা নিগৃহিত হলেও অসচেতনতার কারণে আমরা সেগুলো বুঝতে পারি না। অনিকের মত যারা শৈশবে যৌন নিগৃহের শিকার হয়ে থাকে তারা পরবর্তীতে,( এমন কি প্রাপ্তবয়ষ্ক হবার পরেও) শারিরীক, মানসিক, আবগিক, সামাজিক বিভিন্ন সমস্যায় ভুগে থাকে।

শিশু নিগ্রহকারীরা সাধারণ এক ধরনের বিকৃত রুচির মানসিকতা পোষণ করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে নিগ্রহকারীর নিজেরই শৈশবে অন্যের দ্বারা নিগৃহিত বা ধর্ষিত হবার অভিজ্ঞতা থাকতে পারে। কেউ কেউ শিশুদের প্রতি যৌন আকর্ষণবোধ করে বলে এ ধরনের কাজ করতে পারে। এটি এক ধরনের মানসিক রোগ, যার নাম পিডাওফিলিয়া। যারা শিশুদেরকে নিজের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার সুযোগে থাকে, সাধারণত ঐ শিশুর পরিবারে তারা আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে জায়গা তৈরি করে নেয়। আর তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, শিশুটি তার খুব পরিচিত ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের দ্বারাই ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে নিগ্ররহকারী শিশুর পরিবারের সদস্য হতে পারে (এমন কি বাবা, ভাই), হতে পারে পারিবারিক বন্ধু, প্রতিবেশি বা প্রাইভেট শিক্ষক। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিশুরা শিশুদের দ্বারাও নিগৃহিত হতে পারে।

নিগ্রহকারীরা শিশুদের নানাভাবে নিগ্রহের কথাটি অন্য কাউকে বলা থেকে বিরত রাখে। সাধারণত ওরা শিশুদের ভয় দেখায় এই বলে যে, বাবা-মা জানতে পারলে শিশুটির উপরে রাগ হবেন। শিশুদেরকে তারা সহজেই দ্বিধান্বিত করে দেয়। ফলে শিশুরা বুঝতে পারে না, কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়। আর এ সুযোগটাই নেয় নিগ্রহকারীরা। অনেক শিশু লজ্জায় এ কথাগুলো কাউকে কখনো বলতে পারে না। আবার অনেক শিশু বুঝতেই পারে না বা তাদের এটা বোঝার ক্ষমতা থাকে যে, সে নিগৃহিত হচ্ছে। অনেক নিগ্রহকারী শিশুদেরকে এটা একটা খেলা বা এতে কোন অসুবিধা নেই বলেও বুঝিয়ে থাকে।

আমাদের সমাজ ব্যবস্থাটা এমন যে, এ ধরনের ঘটনা ঘটলে ভিকটিমের গায়ে কলংক দিতে তৈরি থাকি। ফলে একবার শারিরিকভাবে নিগৃহিত হবার পরে তাকে আবার নিগৃহিত হতে হয় মানসিক ও সামাজিকভাবে। এভাবেই শিশুটি, শিশুর পরিবারটি থেকে যায় নীরব। আমাদের কাছে অনেক সত্য চিরকাল থেকে যায় অজানা। তাই এ ধরনের ঘটনাগুলো সম্পর্কে আমাদের খোলামেলা আলোচনা করা উচিত। অভিভাবকদের এ ব্যাপারে আরো সচেতন হতে হবে। শিশুদের শেখাতে হবে ভালো ও মন্দ স্পর্শ সম্পর্কে। তাদের শেখাতে হবে, এমন ঘটনা ঘটলে যেন সে লুকিয়ে না রাখে। ভীতু নয়, তাকে আত্নবিশ্বাসী করে গড়ে তুলুন। আপনার শিশুটিকে বিষাদের অন্ধকারে নয় ‘’আলোকের ঝর্ণাধারায়’’ জীবনকে ভাসিয়ে নিতে শেখান।

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৯
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×