পর্ব: ০১
ভ্রমনপিপাসু মনরে তোরে বেঁধে রাখা দায়রে, প্রকৃতির আপরূপ রূপসুধা পানে বারে বারে ছুটে যায় তোরই কাছে। সময়ের স্বল্পতার কারণে এ মনে মাঝে মাঝে লাগাম পরে যায়। ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছা করলেও পারা যায় না। তাই সুযোগ খুঁজতেছিলাম স্বল্প সময়ে কোথাও থেকে ঘুরে আসার জন্য। আর সেই সুযোগ করে দিল ইকো ট্রাভেলার্স। ইকো ট্রাভেলার্সের আবু বকর ভাই এর সাথে ঘুরে এলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক থেকে। ইন্টেরনেট থেকে যতটুকু জেনেছি তার থেকেও অনেক বেশি সুন্দর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক। স্বল্প সময়ে এত সুন্দর একটা জায়গা থেকে ঘুরে আসার জন্য ইকো ট্রাভেলার্স এবং আবু বকর ভাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে ঢাকা ময়মনসিংহ মহসড়কের বাঘের বাজার হতে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে সাফারী পার্কটির অবস্থান। সাফারী পার্কটি দক্ষিণ এশিয় মডেল বিশেষ করে থাইল্যান্ডে সাফারী ওয়ার্ল্ড এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে এবং ইন্দোনেশিয়ার বালি সাফারী পার্কের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ধারণা নিয়ে প্রায় তিন হাজার ছয়শত নব্বই একর জায়গা নিয়ে স্থাপন করা হয়েছে। এখানে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র, তথ্য ও শিক্ষাকেন্দ্র, নেচার হিস্ট্রি মিউজিয়াম, বন্যপ্রাণী হাসপাতাল, কুমির পার্ক, লিজার্ড পার্ক, ফেন্সি ডাক গার্ডেন, ক্রাউন্ড ফিজ্যান্ট এভিয়ারি, প্যারট এভিয়ারি, ধনেশ পাখিশালা, ম্যাকাউ ল্যান্ড, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, ফোয়ারা, বাঘ পর্যবেক্ষণ রেস্তোরাঁ, সিংহ পর্যবেক্ষণ রেস্তোরাঁ, , ফুড কোর্ট, এলিফেন্ট শো গ্যালারি, বার্ড শো গ্যালারি, ও শিশুপার্ক। সাফারী পার্কের চারিদিকে নির্মাণ করা হয়েছে স্থায়ী ঘেরা এবং সাফারী পার্কের মধ্যে বিভিন্ন অংশ চিহ্নিত করে বন্যপ্রাণী অবাধ বিচরণ ও বংশবৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।
নির্মাণাধীন আছে বিশ্রামাগার, ডরমিটরি, , মেরিন একোয়ারিয়াম, অর্কিড হাউজ, প্রজাপতি বাগান, ক্লাইমেট হাউজ, ভালচার কর্নার, ঝুলন্ত ব্রিজ, কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্র, ইকো-রিসোর্ট, এগ ওয়ার্ল্ড।
আমরা তিনবন্ধু এবং ইকো ট্রাভেলার্সের বন্ধুদের সাথে ঘুরে আসলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক। ২০।১২।২০১৩ সকাল ৭:০০ টায় কুয়াশার চাদরে ঢাকা ভোরে আমাদের ভ্রমন শুরু, অনেক ভাল মানের ট্রান্সপোর্ট থাকা সত্ত্বেও আমাদের পৌঁছাতে দেড়ি হয়ে গিয়েছিল রাস্তায় যানজটের কারণে। জ্যামে পড়ে বাসে বসে সবাই মজা করছিলাম “এই দেখ আমরা চলে এসেছি” ডাক শুনে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আমাদের সামনে বিশাল এক গেটে লেখা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক, গাজীপুর।
গেটের দুপাশে বিশাল দুই হাতি শুঁড় তুলে দাড়িয়ে আছে সবাইকে স্বাগত জানানোর জন্য। গেটের সৌন্দর্য দেখে জ্যামের কষ্টের কথা ভুলে গিয়ে মনে হতে লাগল পার্কের ভিতরে না জানি কত সুন্দর। এরই মধ্যে দেখি বন্ধুরা বিভিন্ন ভাবে ছবি তোলা শুরু করে দিয়েছে, এরই মাঝে আবু বকর ভাই আমাদের সবার জন্য পার্কে প্রবেশের টিকেট নিয়ে আসলেন। আর দেড়ি না করে হইহুল্লোর করে জোড়া হাতিফটক পেরিয়ে প্রথম দর্শনেই সবাই হতবাক—এ কী! বাঘ-সিংহ তো বটেই, বাজপাখি, ক্যাঙারু, এমনকি ডাইনোসরও আছে! তবে এগুলো প্রাণহীন, মাটি বালু সিমেন্টের ওপর ভাস্করের কারুকাজ। নরম ঘাসের মাঠ, ফুলের গাছ, মাঝে বাঁধাই করা টলটলে পানির ফোয়ারা দেখে মনে হল আমাদের স্বাগত জানানো হয়েছে।
ফটকের ডানেই বিশাল ম্যাপ দেখে জেনে নিলাম পার্কের কোথায় কি আছে আর কোন রাস্তায় গেলে কি দেখা যাবে।
সেই সকালে বের হওয়ায় আবু বকর ভাই আমাদের বললেন মূল সাফারীতে যাবার আগে একটু পানীয়জল খেয়ে নিতে। সে উদ্দেশে আমরা পৌছালাম লায়ন রেস্টুরেন্টে। রেস্তোরার নামে সিংহ কেন জানতে চাইলে বকর ভাই বললেন ওখান থেকে সিংহ দেখা যায় তাই এরকম নামকরন। শুনে একটু ভয় হচ্ছিল কারন সিংহ যদি রেস্তোরায় চলে আসে (?) কিন্তু রেস্তোরায় ঢুকে দেখি অনেক সুন্দর সাজানো গুছানো পরিবেশে চারিদিকে কাঁচ আর লোহার গ্রিল দিয়ে বানান হয়েছে। আমরা রেস্তোরায় মাত্র বসেছি এরই মাঝে একজন চিৎকার দিয়ে বলে ঐদিকে দেখেন সিংহ দেখা যায়। সবাই দৌড় দিয়ে ঐদিকে গিয়ে দেখি একটা সিংহ হেটে যাচ্ছে, ওমা একটা না দুইটা না তিনটা, আমাদের খুশি দেখার মতো মনে হচ্ছিল সবাই ছোট বাচ্চা হয়ে গেছি। আমরা আর দেড়ি না করে মূল সাফারী পার্কের উদ্দেশে রওনা হলাম। নাম না জানা হরেক ফুলের সমাহারে দুদিক বেষ্টিত রাস্তা ধরে সামনের দিকে যতই যাচ্ছিলাম ততোই মুগ্ধ হচ্ছিলাম সবকিছু এত সাজানো গুছানো দেখে।
বাঘ, সিংহ সাফারীর জন্য পার্কের নির্দিষ্ট বাসের অপেক্ষা করাতে বন্ধু গৌতম আমাদের ছবি তুলতে লাগল।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস চলে আসায় আমরা সবাই বাসে উঠে মূল সাফারীর উদ্দেশে রওনা হলাম। ড্রাইভার ভাই আমাদের সবাইকে জানালা বন্ধ রাখার জন্য বললেন। সবার নিরাপত্তার সার্থেই মূল সাফারী ঢুকার জন্য ফটকের সিকিউরিটি সিষ্টাম অনেক হাই লেভেলের। আমাদের ড্রাইভার অনেক দক্ষতার সাথে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। ওওওমা! এইদিকে! আরে ঐদিকে দেখেন সবাই গাছের আড়ালে কি যেন নড়াচড়া করে বলে চিৎকার করে উঠল একজন, বাস থেমে গেলে, সবাই ঐদিকে দেখতে লাগলাম প্রথেমে একটি পড়ে আর দুইটি বাঘ মামা মানে ডোরাকাটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার তার রাজকীয় চলনে হেটে চলেছে। আমরা সবাই দেখে মুগ্ধ হচ্ছিলাম আর ছবি উঠালাম।
তারপরে ড্রাইভার আমাদের নিয়ে গেল সিংহ দেখানর জন্য। অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করছিল, আমরা বাসের মধ্যে বন্দি আর সিংহ আমাদের পাশদিয়ে হেটে যাচ্ছে। একসাথে ভয় আর ভাললাগার মিশ্র অনুভূতি। এর পড়ে আমরা সাদা সিংহ দেখলাম।
বাঘ মামা, সিংহ কে টাটা দিয়ে আমরা একে একে দেখতে লাগলাম মায়াবী চোখের হরিণ, জেব্রা, বন মহিষ, জিরাফ।
চলবে........।
ইকো ট্রাভেলার্স
ট্রপিকাল ট্রপিকানা টাওয়ার (ঠিক পুরানা পল্টন মোড়ে)
৪৫, তোপখানা রোড ( দৈনিক ফাইন্যন্সিয়াল ও ফেনি সমিতি যে ভবনে)
৮ম তলা, রুম ৭/জি
ঢাকা-১০০০।
যে কোন প্রয়োজনে: ০১৭১৪৪৪৪৩৩০