প্রথম পর্বটা এখানে আছে। যে কেউ ইচ্ছে করলে ঢু মারতে পারে। তবে না মারলেও কোন সমস্যা নাই। কারন ঐ টা না পড়লেও এই লেখা বুঝতে কোন সমস্যা হবে না।
আমার রুমমেট কে নিয়ে গল্প করছিলাম। ওর নাম সাইফুল। আমার ভালো বন্ধুদের একজন। যাইহোক, কাজের কথায় আসি।
আমি ভারসিটিতে পড়ার সময় একটা সফটওয়্যার ফারমে কাজ করতাম। বিকালে যেতাম, আসতে আসতে রাত হয়ে যেত। এরকম কোন এক বিকালে আমি কাজ করছি ফার+মে, ঠিক সেই সময় আমার এক বন্ধু ফোন করে জানাল, সাইফুলের অবস+হা তেমন ভাল না, ওকে হাসপাতালে ভর+তি করা হয়েছে, আমি যেন তাড়াতাড়ি চলে আসি। আমি কোনমতে অফিসে ম্যানেজ করে দ্রুত চলে আসলাম হাসপাতালে। রাগীব-রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এসে দেখি, আমার প্রায় ১০/১২ জন বন্ধু অলরেডি চলে এসেছে। অবশ্য সাইফুলের অবস+হা ও কিছুটা ভাল। আসলে দুপুরে ভাত না খেয়ে তেলে ভাজা কি খাইছে, আর তাতেই প্রচন্ড প্যাট ব্যাথা। ঘটনার সূত্রপাত এভাবেই। পরে ব্যাপারটা ধীরে ধীরে বেড়েছে। সাইফুল আমারে পেয়ে মনে হয় আরো কিছুটা চাংগা হয়ে গেল, হাজার হোক রুমমেট তো। আমি আমার বন্ধুদের বললাম, ও কে খবর দেয়া হয়েছে? সবাই বলল, সাইফুলের খবর তো আলরেডি লেডিস হলে চলে গিয়েছে, তারমানে ও জেনে গেছে। আমি সাইফুলরে আসস্ত করলাম, ওকে খবর পাঠানো হয়েছে, বলা যায় না, যে কোন মুহূর+তে চলে আসতে পারে। ব্যাচারা শুনে খুব খুশী হলো। বুদ্ধিমান পাঠকরা মনে হয় ইতিমধ্যে এই ও র পরিচয় টা বের করে ফেলছেন। ও হচ্ছে সাইফুলের ভাললাগা মানুষ, আমাদের ক্লাসেই পড়ে। তবে কখনো মুখ ফুটে সেটা বলতে পারে নাই। তাতে অবশ্য বিশেষ কোন সমস্যা হয় নাই, কারন ব্যাপারটা ক্লাসের সবাই জানত। ইতিমধ্যে আমার বন্ধুরা হাসপাতালের সুন্দরী ইন্টার+নী ডক্তারদের দিকে দৃষ্টি দিল এবং নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিল। একটু পর দেখি সাইফুল ও ওদের সাথে সে আলোচনায় যোগ দিছে। বুঝলাম, সাইফুলের অবস+হা উন্নতির দিকে।
যাইহোক, একটু পরে সবাই বিদায় নিয়ে চলে গেল, আমাকে আর সাইফুলকে রেখে। তখন বাজে রাত ১০টা। ইতিমধ্যে অবশ্য সাইফুলকে স্যালাইন দেয়া হয়েছে। আমার মেজাজ চরম খারাপ হতে শুরু করল, কারন আমাকে হাসপাতালে থাকতে হবে, সাইফুলের সাথে।
আমি হাসপাতালে থাকতে পারি না - এটা আমার কাছের মানুষরা বেশ ভালো ভাবেই জানে। আমি সাইফুলকে বললাম, তুমি একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো, আমি দেখি একটু হাটাহাটি করে আসি। সাইফুল বলল, রেফিন, তুমি চলে যাও মেসে, আমি একা থাকতে পারব। আমি বললাম, চুপ, একদম চুপ। ওরে কিছুক্ষন ধমক-টমক দিয়ে হাসপাতাল পরিদর+শনে বের হলাম। বাইরে থেকে জুস কিনে খাইলাম, কিন্তু সময় তো আর যায় না। পুরা রাত কিভাবে পার করব? রাত ২টার দিকে সাইফুলের কাছে এসে দেখি, ও ঘুমায় না, তাকায় আছে। কিছুক্ষন দুজনে মিলে গল্প করলাম। কিন্ত কতক্ষন আর গল্প করা যায়। হটাত সাইফুল কে বললাম, সাইফুল তুমি কি সুস+হ্য বোধ করতেছো? ও বলল, হ্যা - কোন সমস্যা তো আর নাই। আমি বললাম, হাটতে পারবা? ও বলল, হ্যা, কিন্ত স্যালাইন যে চলতেছে এখনো। আমি বললাম, ঐ টা আমি ভুলে যাও এবং আগামী কিছুক্ষন আমি যা করতে বলব, তুমি তাই করবা, ঠিকাছে? ও মাথা নেড়ে সায় জানাল। আমি তখন বললাম, আমরা এখন মেসে যাব, তোমার কোন আপত্তি আছে? ও বলল, না, কিন্তু...............আমি বললাম, সব ব্যাবস+হা আমি করতেছি, তুমি শুধু কোন কথা বলবা না।
আমি গিয়ে নারস কে বললাম, আমরা এখন চলে যাব, আপনার কোন সমস্যা আছে? নারসদের ব্যাবহার খুব খারাপ - এই কথাকে পুরাপুরি মিথ্যা প্রমানিত করে ওই মহিলা বলল, রিলিজ না নিয়ে কেমনে যাবেন? আমি বললাম, দেখেন আপনি কি চান ওই ছেলেটা (সাইফুল) আবার অসুস+হ্য হয়ে যাক, ও হাসপাতালে থাকতে পারে না (আমি যে হাসপাতালে থাকতে পারি না, এটা পুরাপুরি চেপে গেলাম), হাসপাতালে থাকলে আবার অসুস+হ্য হয়ে পড়বে। মহিলা বলল, না, তাহলে তো যাওয়া ই উচিত । মহিলা আরো কিছুক্ষন উপদেশ-টুপোদেশ দিল এবং বলল, কালকে যেন এসে রিলিজ পেপার নিয়ে যাই। আমি বললাম, কোন সমস্যা নাই।
রাত বাজে তখন ৩টা। কোন রিক্সা যাইতে চায় না। হাসপাতাল থেকে আমার মেসের দূরত+ব ১৫ মিনিটের। অগত্যা কোন উপায় না দেখে সাইফুলকে বললাম, সাইফুল হাটতে পারবা না? ইতিমধ্যে সে আমার কাম-কাজ দেখে পুরাপুরি আউলা হয়ে গেছে। সে বলল, পারব, তুমি আছো না?
রাত ৩টার সময় একহাতে স্যালাইন ব্যাগ, আর অন্য হাতে কাথা-বালিশ নিয়ে হেঁটে হেঁটে মেসে ফিরছি এবং সেই স্যালাইন ব্যাগের অন্য প্রান্ত আর একজনের হাতে সুই দিয়ে ঢুকানো - দৃশ্যটা নিশ্চয় খুব সুন্দর কিছু না। দৃশ্যটা যে সুন্দর না, সেটা বুঝেছি রাস্তায় যে অল্প কিছু মানুষ আমাদের দেখেছে, তারা সবাই অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিল।
যাইহোক, কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই মেসে আসলাম। মেসে আসার পর, সাইফুল আমাকে বলল, রেফিন, তুমি যা করলা আজকে, আমার সারাজীবন মনে থাকবে। আমি ভাবলাম, ব্যাচারা মনে হয় মনে কষ্ট পাইছে, এতো রাতে হাটায়ে আনছি, তাই এ কথা বলতেছে। কিন্তু ও যেটা বলল, সেটা শুনে তো আমার আক্কেল গুড়ুম। বলে, রেফিন, আসলে হাসপাতালে আমার এক ফোটা ঘুম আসছিলো না, এখন নিজের রুমে ফাটাফাটি একটা ঘুম দেওয়া যাবে।
আমি খুব আনন্দিত মন নিয়ে ঘুমাতে গেলাম। একটু পরে সাইফুল বলে, রেফিন, হাসপাতাল থেকে এভাবে চলে আসাটা মনে হয় ঠিক হয় নাই। আমি না শোনার ভান করে বললাম, হু। ব্যাটা তখন যেটা বলল, সেটা শুনে আমি পুরাপুরি টাশকী খেয়ে গেলাম। বলে, হাসপাতালে থাকলে আমাকে দেখতে অন্তত ও আসতে পারত, এখন তো আর কোন সম্ভবনা ই নাই।
আমি কোনমতে হাসি চাপায় রেখে বললাম, হু............