ফাঁকিবাজ নামে একটা পোস্টে প্রমিজ করেছিলাম, আমার রুমমেট কাম ক্লাসমেট কাম ভালো বন্ধু সাইফুল কে নিয়ে একটা মহাভারত(!) রচনা করব। সেই প্রমিজ রক্ষার্থে এই লেখা। তবে লেখাটা আসলেই বড় হয়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় আমি পর্ব উল্লেখ করে দিলাম।
লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে, আমার আর সাইফুলেরে পরিচয় থেকে ঘনিষ্টতা - শুধু এই ব্যাপারটাকে নিয়েই একটা লেখা লিখে ফেলা যায়। যাই হোক, আমি সেই দিকে যাব না। তার চেয়ে বরং ওর আর আমার কিছু মজার ঘটনা লিখি।
২/১ সেমিস্টারে ছুটিতে বাসায় গিয়েছি। ছুটির পরে ই অবশ্য নন মেজর (গনিত) পরীক্ষা। তাই একটু আগে চলে আসলাম মেসে, যেন কিছু অংক করতে পারি। এসে দেখি, সাইফুল আমার ৭/৮দিন আগেই মেসে চলে এসেছে। তবে সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপারটা শুনলাম যখন মেসের অন্য ছেলেরা আমাকে বলল, সাইফুল এই ৭/৮দিন কি ধরনের পড়া দিছে। ভয়ংকর বললাম এই কারনে, তার মানে খুব কঠিন কোর্স। আমি তো ক্লাস তেমন করতাম না, তাও আবার নন মেজর। অন্য সময় বাসা থেকে আসার পরে আমি আর সাইফুল খুব চুটিয়ে আড্ডা দেই। কিন্ত এবার দেখি ঘটনা অন্য। আমারে হাই-হেলো জিজ্ঞেস করেই অংক করতে বসে গেল এবং সতর্ক করে দিল, যদি পাস করতে চাও, তবে তাড়াতাড়ি অংক করতে বসে পড়। বাসা থেকে আসার পরে মনটা এম্নিই কিছুটা খারাপ থাকে, তার উপরে এইসব ভয়ংকর কথা-বার্তা। পুরাপুরি দমে গেলাম। সাইফুল মনে হয়, ব্যাপার টা ধরতে পারল। তাই কিছুক্ষন পরে বলল, রেফিন চিন্তা করো না, আমি তো আছি, আমি তোমাকে হেল্প করব। আমি কিছুক্ষন রাগারাগি করলাম, বেটা তুমি আগে আসছ, আমারে একটা কল দিবা না, চলে আসতাম। তাহলে তো একসংগে অংক করা যেত। ও বলল, কোন সমস্যা নাই, এই কয়দিন আমি যা করেছি, সেটা তো আমি তোমাকে দেখিয়ে দিতে পারব।
মেট্রিক, ইন্টার দুটোতে ই আমার অংকে লেটার ছিল। তাতে অবশ্য এটা প্রমান করে না যে আমি তুখোড় কোন গনিতবিদ। যাই হোক, পাসের টার্গেট নিয়ে অঙ্ক করতে বসলাম। সব দেখি নতুন নতুন লাগে। কি করব বুঝতে পারছি না। একবার সাইফুলের টেবিলে যাই, ও বলে এইটা কর, তারপর আমার টেবিলে এসে সেটা করে, আবার ওর কাছে যাই, এখন কোনটা করব, ও বলে এইটা কর............এভাবে চলতে থাকে পরীক্ষার আগ পর্যন্ত। পরীক্ষার দিন বুঝতে পারলাম, পাস তো মনে হয়ে যাবে। আর সাইফুলের যে প্রিপারেশন, তাতে ওর এ অথবা এ- পাওয়া উচিত, এই কোর্সে। যাই হোক, পরীক্ষা দিলাম। এক পার্ট আন্সার করতে পারলাম, আর এক পার্ট কিছুই পারি নাই। ভাবলাম, পাস তো হয়ে যাবে। আর সাইফুল এর অবশ্য পরীক্ষা বেশ ভালো ই হইল। এ- পাওয়ার কথা বলল।
রেজাল্ট যা আসল, তাতে তো আমার চক্ষু ছানবোড়া হওয়ার জোগাড়। আমি পাইছি বি প্লাস, আর সাইফুল পাইছে সি। বুঝলাম, কোপ যা দেওয়ার ওই এক পার্টে ই দিছি। তবে সাইফুলের জন্য খুব খারাপ লাগতেছিল। ওর কাছে অংক করলাম, আর ও পাইলো কিনা সি। তবে কিছুক্ষন পরে আমার সেই রকম হাসি পাচ্ছিল, এই টা কি হইলো? আমার দেখাদেখি সাইফুল ও হাসে আর বলে এই টা কি হহলো? যাই হোক, আমাদের এই ব্যাপার টা ক্লাসের মোটামুটি সবাই জেনে গিয়েছিল। অবশ্য জানছে, আমার মাধ্যমেই। আমি খুব মজা করে, রস-কষ মিশিয়ে সাইফুলের সামনে অন্য বন্ধুদের এই গল্পটা বলতাম।
সবাই খুব মজা পেত।
আর লিখতে ইচ্ছে করছে না, আজ এই পর্যন্ত ই।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:৩০