আমরা প্রায়ই কারো কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় বলি, ভাই দোয়া কইরেন। খুব ভালো কথা, কোন সমস্যা নাই। কিন্তু বাস্তবে যেটা হয়, আমরা নামাজ পড়ে যখন দোয়া করি, তখন কিন্তু ঐ ভাইএর জন্য দোয়া করি না বা করা হয় না। ব্যাপারটা খুব ই স্বাভাবিক, কারন তখন তার নাম মনে আসে না। এ ব্যাপারে আমি একজন হুজুরের সাথে কথা বলি। হুজুর বললেন, আসলে সত্যিকার অর্থেই কেউ যদি কারো উপরে খুশি থাকে, তখন অটোমেটিক দোয়া চলে যায়।এর জন্য হাত তুলে দোয়া করা জরূরী না।
উপরের কথাগুলো বললাম এই কারনে, আমি আমার জীবনে এর খুব সুন্দর একটা ব্যাখ্যা খুঁজে পেয়েছিলাম।
ঘটনাটা, আমি যখন মেট্রিক পরীক্ষা দিয়ে কলেজে ভর্তি হবো তখনকার। কলেজের ভর্তির ফর্ম কিনে সেটা সুন্দর করে পূরন করে জমা দিয়ে আসছি বাসায়। বাসায় আসার পরে হটাত করে মনে হলো - বিরাট একটা ভুল হয়ে গেছে। কোন একটা সাবজেক্টের নাম্বার যোগ না করে ফর্ম জমা দিয়ে আসছি। এবং এই ভুলের কারনে আমি যত ভাল ভর্তি পরীক্ষা ই দেই না কেন, কলেজে চান্স পাব না। পুরা মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সবার আগে কলেজে গেলাম। ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের প্রধানের রুমে সব ফর্ম জমা আছে। উঁকি মেরে দেখলাম, ৪/৫ জন স্যার বসে গল্প করছে। কোন স্যারকে ই তো চিনি না, চিনার কথা ও না। যাইহোক, রুমে ঢুকে আমার সমস্যাটা খুলে বললাম, বিভাগীয় প্রধান কে। উনি বললেন, করা সম্ভব না, পারলে নাম রোল দিয়ে যাও, যদি পারি পরে দেখব। আরো বললেন, এতো ফর্মের ভিতরে তোমার ফর্ম আমি কিভাবে খুঁজব। মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেল, তার মানে আর সরকারী কলেজে পড়া হইলো না। তখন হটাত করে অন্য এক স্যার (পরে জেনেছি, উনি রসায়ন বিভাগের) বিভাগীয় প্রধান কে বললেন, স্যার আমি দেখছি, ছেলেটা হয়তো বা চান্স ই পাবে না এই একটা কারনে। তখন স্যার বললেন, এসো দুজনে মিলে বের করি। আমার চোখে পানি চলে আসছিল (এখন লেখার সময় ও দেখি চোখে পানি)। পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমার ফর্মটা খুজে বের করলেন স্যার। বললেন, নাও, তাড়াতাড়ি ঠিক করে দাও। আমি ঠিক করে, স্যার কে ধন্যাবাদ দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। কোন মতে কান্না আটকে রেখেছিলাম। পরে আল্লাহর রহমতে, ভর্তি পরীক্ষায় বেশ ভালো মার্ক্স নিয়েই ভর্তি হয়েছিলাম, এই কলেজে।
যাই হোক, কাজের কথায় আসি। আমি আমার জীবনে কখনো এই স্যারের জন্য হাত তুলে দোয়া করি নাই, দরকার ও নাই। কারন এই স্যারের প্রতি আমার যে কৃতজ্ঞতাবোধ, শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা - এসব থেকেই আল্লাহ আমার দোয়া নিয়ে নিবে। যখন ই এই স্যারের কথা মনে হয়, মনে হয়, স্যার পৃথিবীর ভালো মানুষদের একজন।
পরিশিষ্টঃ এই স্যার যদিও আমাদের ক্লাস নিতেন না, তারপরে ও স্যার আমাকে বেশ ভাল করে চিনতেন - দেখা হলেই জিজ্ঞেস করতেন, কেমন আছো?
আল্লাহ, তুমি আমার এই স্যারকে সবসময় খুশী রাখিও, শান্তি তে রাখি ও - ঠিক যেভাবে আমি খুশী হয়েছিলাম ঐ দিন।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১৫