নতুন বছরের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ। ফাল্গুনের পর বছরের শেষ মাস চৈত্র চলে যায়। আবার আসে নতুন বছরের প্রথম মাস বৈশাখ। যেন পুরনো কুটুম এলো অনেক দিন পর। বাংলার ঘরে ঘরে পালিত হয় এই সর্বজনীন উৎসব। রমনার বটমূলে ছায়ানটের প্রাতঃসঙ্গীত, চারুকলার উচ্ছাস ও বাউল গানে মুখরিত হয়ে ওঠে। কেবল ঢাকা নয় বাংলার আনাচে কানাচে এই পার্বণ ছুঁয়ে দেয় আমাদের সংস্কৃতিকে।
পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা যে কয়টি প্রচলিত আইটেম নিয়ে হয় তাহলো-মুখোশ ,সরা আর কিছু প্রাণির প্রতিলিপি। এছাড়া রয়েছে সময়োপযোগি কিছু বাঁশ দিয়ে তৈরি করা প্রতীকি কাজ। যেমন গত পহেলা বৈশাখে বাংলাদেশ সমুদ্র জয় করেছে তাই তারা বাঁশ দিয়ে তৈরি করেছিল সাম্পান, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে তৈরি করেছিল কুমির। পহেলা বৈশাখ বাঙালির উৎসবের দিন। বিশ্বের সকল প্রান্তের সকল বাঙালি তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, শিশু-বৃদ্ধ, কৃষক-কৃষাণী, নতুন বছরকে বরণ করে।
এই পহেলা বৈশাখের আরম্ভটা কোথা থেকে কিভাবে আমরা পালন শুরু করলাম তা আমাদের জানা দরকার। পহেলা বৈশাখ (বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখের ১ তারিখ) বাংলা সনের প্রথম দিন। দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়। বিশ্বের সকল প্রান্তের সকল বাঙালি এ দিনে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়, সবার কামনা থাকে যেন নতুন বছরটি সমৃদ্ধ ও সুখময় হয়। বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা একে নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করার উপলক্ষ্য হিসেবে বরণ করে নেয়। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১৪ এপ্রিল অথবা ১৫ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালিত হয়। আধুনিক বা প্রাচীন যে কোনো পঞ্জিকাতেই এই বিষয়ে মিল রয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল এই উৎসব পালিত হয়। বাংলা একাডেমী কর্তৃক নির্ধারিত আধুনিক পঞ্জিকা অনুসারে এই দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে। বাংলা দিনপঞ্জির সাথে হিজরী ও খ্রিস্টীয় সনের মৌলিক পার্থক্য হলো হিজরী সন চাঁদের হিসাবে এবং খ্রিস্টীয় সন ঘড়ির কাঁটার হিসেবে চলে। এ কারণে হিজরী সনে নতুন
তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যায় নতুন চাঁদের আগমনে। ইংরেজি দিন শুরু হয় মধ্যরাতে। আর বাংলা সনের দিন শুরু হয় ভোরে, সূর্যোদয়ের সাথে সাথে। কাজেই সূর্যোদয়ের সাথে সাথে শুরু হয় বাঙালির পহেলা বৈশাখের উৎসব।
সনাতনী সৌর পঞ্জিকা অনুসারে বাংলা বারটি মাস অনেক আগে থেকেই পালিত হত। এই সৌর পঞ্জিকার শুরু হত গ্রেগরীয় পঞ্জিকায় এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় হতে। সনাতনী সৌর বছরের প্রথম দিন আসাম, বঙ্গ, কেরালা, মনিপুর, নেপাল, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, তামিল নাড়– এবং ত্রিপুরার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অনেক আগে থেকেই পালিত হত। এখন যেমন নববর্ষ নতুন বছরের সূচনার নিমিত্তে পালিত একটি সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে, এক সময় এমনটি ছিল না। তখন নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ আর্তব উৎসব তথা ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে পালিত হত। তখন এর মূল তাৎপর্য ছিল কৃষিকাজ। প্রযুক্তির প্রয়োগের যুগ শুরু না হওয়ায়
কৃষকদের ঋতুর উপরই নির্ভর করতে হত। ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরী পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরী সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সাথে মিলত না। এতে অসময়ে কৃষকদেরকে খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করা হতো। খাজনা আদায়ে সুষ্ঠুতা প্রণয়নের লক্ষ্যে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। তিনি মূলত প্রাচীন বর্ষপঞ্জিতে সংস্কার আনার আদেশ দেন। সম্রাটের আদেশ মতে তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজী সৌর সন এবং আরবি হিজরী সনের উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ মার্চ বা ১১ মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসনে আরোহণের সময় (৫ নভেম্বর ১৫৫৬) থেকে। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিতি পায়।
আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেককে চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হত। এর পরদিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হত। এই উৎসবটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয় যার রূপ পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে এই পর্যায়ে এসেছে। তখনকার সময় এই দিনের প্রধান ঘটনা ছিল একটি হালখাতা আয়োজন করায়। হালখাতা বলতে একটি নতুন হিসাব বই খোলাকে বোঝানো হতো। প্রকৃতপক্ষে হালখাতা হল বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাঠের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। গ্রাম, শহর বা বাণিজ্যিক এলাকা, সকল স্থানেই পুরনো বছরের হিসাব বই বন্ধ করে নতুন হিসাব বই খোলা হয়। হালখাতার দিনে দোকানদাররা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টান্ন আপ্যায়ন করে থাকে। এই প্রথাটি এখনও অনেকাংশে প্রচলিত আছে, বিশেষত স্বর্ণের দোকানে।
আর আধুনিক নববর্ষ উদযাপনের খবর প্রথম পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে। প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোমকীর্ত্তণ ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর ১৯৩৮ সালেও অনুরূপ কর্মকাণ্ডের উল্লেখ পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৭ সনের আগে ঘটা করে পহেলা বৈশাখ পালনের রীতি তেমন একটা জনপ্রিয় হয়নি। তবে কলকাতাতে বৈশাখ মাসকে বিবাহের জন্য আদর্শ সময় মনে করা হত। মানুষজন নতুন পোশাক পরিধান করে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে যেত। চৈত্র মাস জুড়ে মানুষ নানাবিধ কাজের মধ্য দিয়ে নিজেদেরকে উদযাপনের জন্য প্রস্তুত করে তুলত। এ সময় পোশাক ব্যবসায়ীরা বেশ ছাড়ে পোশাক বিক্রি করতো। আর বৈশাখ মাস জুড়ে চলত বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকা-। পরিবারের সদস্যদের মঙ্গল কামনা করে প্রার্থনা করা হত। মেয়েরা লাল পেড়ে সাদা শাড়ি পরে আর ছেলেরা কুর্তা আর ধুতি পরে সকালে নতুন বর্ষবরণে শোভাযাত্রা বের করতো।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, আমাদের সংস্কৃতির অতি প্রাচীন অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম হল পহেলা বৈশাখ। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমসত্ত্বার বাঙালিদের অতি প্রাণের উৎসব এই পহেলা বৈশাখ। ’৫২-তে সংগ্রাম করে ভাষা অর্জনের মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলার বাঙালিরা তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে নতুন করে সচেতন হতে শুরু করে। ’৭১-এ একটি নির্দিষ্ট ভূ-খণ্ডের পাশাপাশি আমরা পাই আমাদের সংস্কৃতির স্বাধীনতা। বলা যায় দীর্ঘ দিন যুদ্ধ করে অনেক ত্যাগ-তিতীক্ষার মধ্য দিয়ে এই স্বাধীনতা পাই বলেই আমরা আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে খুব সজাগ হয়ে উঠি। ফলে পহেলা বৈশাখ হয়ে ওঠে হিন্দু-মুসলমান সকলের প্রাণের উৎসব এবং বাঙালির জাতীয় ও সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান তো বটেই। সমগ্র বৈশাখ মাস হয়ে ওঠে বাঙালির আপন সংস্কৃতির সাধনা ও প্রেরণার মাস।
পহেলা বৈশাখের সাথে আমাদের অনেক পুরনো সংস্কৃতি জড়িয়ে আছে-যাত্রা, পালাগান, কবি গান, গাজীর গান, অষ্টক, পুতুল নাচ, বাউল-মুর্শিদি-ভাটিয়ালি গান, বর্ণনামূলক নাটক: লাইলি-মজনু, রাধা-কৃষ্ণ, ইউসুফ-জুলেখার মঞ্চস্থ ইত্যাদি যা এখন আর খুব একটা দেখা যায় না। যদিও পুতুল নাচ ও যাত্রা এখনো কোথাও কোথাও দেখানো হয় তবে তা বিকৃত অবস্থায়। একসময় ঢাকায় ঘুড়ি উড্ডয়ন, মুন্সিগঞ্জে ষাঁড়ের দৌড় প্রতিযোগিতা এবং গ্রামাঞ্চলে ঘোড়দৌড়, ষাঁড়ের লড়াই, মোরগের যুদ্ধ, নৌকা বাইচ বেশ জনপ্রিয় ছিল যা এখন প্রায় আমাদের বিলুপ্তপ্রায় সংস্কৃতি হিসাবে গণ্য হচ্ছে। তবে এখনো পহেলা বৈশাখে চট্টগ্রামে বলি খেলা ও রাজশাহীতে গম্ভীরা বেশ আড়ম্বরের সাথে পালন করা হয়। পহেলা বৈশাখ কি শুধুই একটি অনুষ্ঠান? অনুষ্ঠান তো আরো আছে-ঈদ, জন্মদিন, বিবাহ, ভালোবাসা দিবস, বাবা দিবস, হ্যাপি নিউ ইয়ার আরো শত শত। এই অনুষ্ঠানগুলোর সাথে পহেলা বৈশাখের পার্থক্যটা কোথায় এই বিষয়গুলো একটু ভেবে দেখা দরকার। গ্রাম্য সংস্কৃতির বা কৃষকদের এটাই একমাত্র অনুষ্ঠান যেটা ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে পালন করা হয়। এই অনুষ্ঠানের মর্মবাণী হচ্ছে কৃষকদের নতুন ফসল ঘরে তোলা ও জমিদারদের কাছে ঋণমুক্ত হওয়ার আনন্দ। অথচ শহরের কয়জনই বা এই বিষয়ে অবগত থাকেন! জমিদারী প্রথা বিলোপের সাথে সাথে কৃষকদের মাঝে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করার আমেজ বেশ থিতিয়ে এসেছে। তবে বাংলা দিনপঞ্জিকার প্রথম দিন হিসাবে দেশের শিক্ষিত সমাজে এর কদর বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণে।
বিষয়টি আপাত দৃষ্টিতে আমাদের ভেতরে আশার সঞ্চার করে বটে; কিন্তু একটু খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে আজকাল সবখানেই আমাদের সংস্কৃতি চর্চার নামে যা হচ্ছে সেটা হল তার বিকৃতিকরণ। ভাষা থেকে শুরু করে পোশাক, সঙ্গীত, নৃত্যকলা, খাদ্যাভ্যাস সবখানেই। আমাদের দেশিয় সংস্কৃতি এখন ব্যবসায়ের পণ্যতে পরিণত হয়েছে। আমাদের লোকজ সংস্কৃতিকে বিশেষ বিশেষ দিনে বিশেষ বিশেষ কায়দায় প্রদর্শন করে সর্বোচ্চ মুনাফা আদায় করছে বহুমুখী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো।
রমনার বটমূলে (১৯৬৫ সাল থেকে) রবীন্দ্র নাথের ‘এসো হে বৈশাখ এসো হে, এসো এসো...’ গানের মধ্য দিয়ে হাজার হাজার বাঙালি পহেলা বৈশাখকে বরণ করে নেয়। এখানে প্রকাশ পায় বাংলার স্বাধীন মানুষের প্রাণের উচ্ছ্বাসের বহিঃপ্রকাশ। সমস্ত জাতি একই কাতারে সামিল হয়ে আনন্দ উদযাপন করে এমন দিন হরহামেশা আসে না। অন্তত আমাদের মত দরিদ্র দেশে তো সেটা কল্পনা করাই আকাশ কুসুম চিন্তার সমান। হাজার সমস্যায় জর্জরিত আমাদের জীবন প্রবাহ, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। এমন অবস্থায় পহেলা বৈশাখ প্রতি বছর সমগ্র বাঙালির দেহে এক চিলতে প্রাণের সঞ্চার করে। সেটা রমনার বটমূলে বেশ স্পষ্ট হয়। তবে এখানে যা হয় তার সবটা আমাদের সংস্কৃতি না। ২০০১ সালে বোমা হামলা, প্রতি বছরই যত্রতত্র নারীরা টিজিংয়ের শিকার হওয়া। আর ৩০০-৪০০ টাকা দরে এক প্লেট পান্তা-ইলিশ খাওয়া। চাইনিজ বা থাই না খেলে যে বাঙালিদের আজকাল জাত রক্ষা হয় না, সে বাঙালিদের বছরে এই একটি দিনে আয়েশ করে পান্তা-ইলিশ ভক্ষণ করে বাঙালিত্ব জাহির করার যে প্রয়াস তা আমাদের পূর্বপুরুষদের দারিদ্রতাকে প্রচ-ভাবে অপমান করে এবং হেয় করে আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্যকে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে যত দিন যাচ্ছে পহেলা বৈশাখ উদযাপন তত বেশি আড়ম্বরময় হচ্ছে। তার মানে কি, এই যে সময়ের পরিক্রমায় আমাদের বাঙালিত্ব আরো প্রগাঢ় ও গূঢ় হচ্ছে, বোধহয় না! মিথ্যাকে জাহির করার জন্যই তো ঢাক- ঢোলের প্রয়োজন বেশি! আমরা যে আমাদের হাজার বছরের পথ পরিক্রমায় অর্জিত সংস্কৃতি থেকে ক্রমান্বয়ে ছিটকে যাচ্ছি সেটা ঢেকে রাখার জন্যই এত বাদ্য পেটানো। নিজের বিবেককে ঠেকানো ও ঠকানোর সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম এটা। অতি আড়ম্বরের সাথে নেচে- গেয়ে পহেলা বৈশাখ পালন এ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় ফ্যাশন ও প্যাশন হয়ে উঠেছে। আর পেছন ফিরে তাকালে দেখা যাবে কোনো ফ্যাশনই সময়কে জয় করতে পারেনি। তাই আমাদের সংস্কৃতির আচার ও অনুষ্ঠানগুলো যেদিন থেকে ফ্যাশনের কারণ হয়ে উঠেছে সেদিন থেকে শুরু হয়েছে আমাদের সংস্কৃতির সর্বনাশ। একটা জাতি যখন তাদের সংস্কৃতি ও লোকাচারকে বাইরে বের করে আনে তখন তাদের শূন্য অন্দরমহলে অন্যকোনো সংস্কৃতি গোপনে দানা বাঁধতে থাকে।
আমাদের ভেতরে এমনটি হচ্ছে না’তো? একটু বুকের ভেতরটা নেড়ে- ঘেঁটে দেখা খুব জরুরি হয়ে উঠেছে। স্বদেশ ও সংস্কৃতিকে আপন অন্তরে লালন করতে হবে। তাই বলে কি অনুষ্ঠান, আমেজ-আনন্দ করা যাবে না? অবশ্যই যাবে। বাড়িতে নতুন অতিথির আগমনে আমরা আনন্দ-অনুষ্ঠান করি না ব্যাপারটা হতে হবে ওইরকম, ভেতর থেকে উৎসারিত। আমি আমাদের সংস্কৃতি চর্চার সবখানেই হতাশাবাদ ব্যক্ত করে আলোচ্য লেখার ইতি টানবো না। আশার ব্যাপার হল, তরুণ প্রজন্মের অনেকেই দেশ ও দেশের সংস্কৃতি নিয়ে ভাবছে। সাংস্কৃতিক উপনিবেশবাদের হাত থেকে আমাদের সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে তারা সদা তৎপর। আন্তর্জাতিক পরিসরে বাঙালিরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শুরু করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পহেলা বৈশাখের উৎসবমুখর উদযাপন তারই প্রমাণ বহন করে। তাই যেখানে প্রাণের মেলায় একতারা আর দোতারা প্রাণের স্পন্দন জাগায়, আমি যাব সেই মিলন মেলায়, আমি যাব সেই সবুজ গাঁয়ে, যেখানে রোদে পোড়া কৃষক নতুন গামছা মাথায় বাঁধে পয়লা বৈশাখে, কৃষাণী তার প্রিয়তম’র দেওয়া তাঁতের শাড়িখানা অঙ্গে জড়ায় বড় ভালবেসে, আমি যাব সেই দরুন্ত শিশুর কাছে, আমার শৈশবেÑ যে কি-না বাঁশের বাঁশি আর মাটির ঘোড়া কিনে ঘরে ফেরে, যেখানে আমার মা পথ চেয়ে বসে আছে সাজিয়ে গরম ভাত আর পুঁটিঁ মাছের ঝোল নিয়ে,আমি যাব সেখানে।
পরিশেষে রবীন্দ্রনাথের মত বলতেই হচ্ছে, ‘মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা,অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’। আমাদেরকে নিজের দেশ ও সংস্কৃতিকে আপন করতে জানতে হবে, অন্যথায় প্রকৃত মুক্তি মিলবে না। প্রাত্যহিক জীবনে আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পূর্ণ প্রতিফলন ঘটুক এই প্রত্যাশাই রইল আগামীর কাছে।
জয়তু পহেলা বৈশাখ! জয়তু ১৪২২ বাংলা নববর্ষ!