বাংলাদেশ ছাত্রলীগঃ সংবাদপত্র থেকে নেয়া তথ্য
বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরানো ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এদেশের সাধারণ মানুষের কাছে আজ এক আতঙ্কের নাম। ১৯৪৮ সালে অবিভক্ত পাকিস্তানে এই সংগঠনটি এদেশের মানুষের পক্ষে কথা বলার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ছাত্ররাই জাতির নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। কিন্তু এই ছাত্র সমাজ যখন হত্যা, রাহাজানি, লুটপাট, ধর্ষণ, টেন্ডারবাজি, ভর্তি বাণিজ্য ও নানান ধরনের অন্যায়ের সাথে যুক্ত হয়, তখন পুরো জাতির ভবিষ্যৎ নেতৃত্বেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। গত ২৯ ডিসেম্বর, ২০০৮ নির্বাচনের পর থেকে আজ পর্যন্ত ছাত্রলীগ এদেশে যে সীমাহীন অপকর্ম চালিয়েছে তা জাতির কাছে স্পষ্ট। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এদেশের কর্তাব্যক্তিগণ ছাত্রলীগের অপকর্মকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার যে প্রবণতা দেখাচ্ছেন তা জাতিকে অন্ধকারের দিকেই নিয়ে যাচ্ছে।
ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র আবু বকরের খুনের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একে যেভাবে ”বিচ্ছিন্ন ঘটনা” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তাতে স্পষ্ট বর্তমানে ছাত্রলীগ সারাদেশে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ইন্ধনেই।
২৮ ডিসেম্বরের এক বিতর্কিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গত সাড়ে তের মাসে ছাত্রলীগ সারা দেশে যে নৈরাজ্য চালিয়েছে তার খুব অল্প সংখ্যাই তুলে ধরা হলোঃ
জানুয়ারি - মার্চ, ২০০৯
ক্ষমতায় আসার পর পরই ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোকে তাদের দখলে আনার জন্য অভ্যন্তরীণ গ্র্রুপ গুলো সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
নির্বাচনের পর পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো হল থেকে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের পিটিয়ে তাড়িয়ে দেয়। পরবর্তী সময় সারা দেশে ছাত্রলীগ তার নৈরাজ্যের জাল বিস্তার করে।
প্রথম তিন মাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সহিংস ঘটনায় প্রায় ৩০টি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রক্কতক্ষয়ী সংঘর্ষে হয়েছে কমপক্ষে অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এতে তিন ছাত্রনেতা মারা যায়। এর মধ্যে ছাত্রলীগের একজন ও ছাত্রশিবিরের দু’জন। এছাড়া আহতদের সংখ্যা সহস্রাধিক।
(সূত্রঃ মানবজমিন, ১/৪/২০০৯)
১০ই মার্চ জামালপুর দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা শাখার শিবির সভাপতি আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র হাফেজ রমজান আলীকে ছাত্রলীগ নিশংসভাবে হত্যা করে। (দৈনিক সংগ্রাম, ১২/৩/২০০৯)
১৩ই মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান নোমানীকে ছাত্রলীগ কর্মীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় শিবিরের ৫০ জন নেতাকর্মী ছাত্রলীগের হামলায় গুরুতর আহত হয়। (আমার দেশ, ১৪/৩/২০০৯)
“জগন্নাথে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ৩০।”
“আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গতকাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে দু’দফা সংঘর্ষে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে। তবে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপই দাবি করেছে, ছাত্রলীগ নামধারীরা এ ঘটনার জন্য দায়ী। অপরদিকে পুলিশ সংঘর্ষের জন্য ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে দায়ী করেছে।”(মানবজমিন, ১৮/১/২০০৯)
“জাবিতে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপে গোলাগুলি আহত ৩০ঃ প্রক্টর লাঞ্ছিতঃ শিক্ষক সমিতির আলটিমেটাম।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে এক মাসের স্থগিতাদেশ শেষ হওয়ার একদিন আগে গতকাল আবারো সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ। দুই দফা সংঘর্ষে কমপক্ষ ২৫ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। আহত হন ৩০ জন। বিক্ষুদ্ধ ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন প্রক্টর। এদিকে হামলার প্রতিবাদে ও প্রক্টরকে লাঞ্ছনার বিচার দাবিতে শিক্ষক সমিতি প্রশাসনকে তিন দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে। (যায়যায় দিন, ১৭/২/২০০৯)
গত ১১ই মার্চ ছাত্রলীগ রাজশাহী মেডিকেল কলেজে দৈনিক ইত্তেফাকের ফটো সাংবাদিক নজরুল ইসলাম জুলু ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়। (ইত্তেফাক, ১২/৩/২০০৯)
“আ’লীগ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে নোয়াখালীতে ২৫ জন আহতঃ দিনাজপুরে সরকারি কর্মকর্তারা লাঞ্ছিত টেন্ডারবাজি চাঁদাবাজি অফিস দখল।
সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের মধ্যে সংঘর্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া ঠাকুরগাঁয়ে টেন্ডারবাজি, অফিস দখল ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মধ্যে সংঘর্ষে দু’জন গুরুতর আহত হয়েছেন। (নয়া দিগন্ত, ১৬/২/২০০৯)
ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে ৩১শে মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আসাদ রাজিব নিহত হয়। (মানবজমিন, ১/৪/২০০৯)
গত ১৮ই মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলে শিবিরের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান রাজিবকে ক্লাশ করতে গেলে ছাত্রলীগ বেদরক পিটিয়ে আহত করে। এ সময় আরো তিন জন শিবির কর্মী আহত হয়। (সংগ্রাম, ১৮/১/২০০৯)
“অস্ত্রধারী সেই ছাত্রলীগ কর্মী গ্রেফতার জাবি ছাত্রলীগ কমিটি বিলুপ্ত, দুই নেতা বহিষ্কার।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সোমবার ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের সময় বন্দুকধারী ছাত্রটিকে গতকাল গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৩৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগ কর্মী। নাম সিরাজুল ইসলাম সুমন। এই সংঘর্ষের ঘটনার পর জাবি ছাত্রলীগ শাখার কমিটি গতকাল বিলুপ্ত করা হয়েছে। (সমকাল, ২১/২/২০০৯)
“তেজগাঁও পলিটেকনিকে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষঃ আহত ৩০।”
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের আবাসিক ছাত্রাবাসে শনিবার রাতে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষ ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ জানায়। (আমার দেশ, ১৬/৩/২০০৯)
এই তিন মাসে যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাত্রলীগের হামলায় বন্ধ হয়ে যায় সেগুলো হচ্ছে-
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রুয়েট, রাজশাহী পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, সরকারী সিটি কলেজ, রাজশাহী সিটি কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা মেডিকেল কলেজ, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিজ্ঞান কলেজ, তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও অন্যান্য। (মানবজমিন, ১/৪/২০০৯)