somewhere in... blog

উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র: সারাহ গ্যাভ্রনের সঙ্গে আলাপ-সালাপ (উত্সর্গ: ইরতেজা)

২২ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ৩:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(সামহোয়ারইনে অনেকদিন পর এসে ব্রিকলেন ছবিটির ওপর ইরতেজার লেখাটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর এ নিয়ে সচলায়তনে আমি একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। তার একটা লিংক এখানে দিলাম। অনেকগুলো ছবি আপলোড করা আছে সে লেখায়। এতো ছবি আবার ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে আপলোড করার ধৈর্য নাই। আমার আগের ল্যাপটপটি মৃত্যুবরণ করায় সেগুলোর সংগ্রহও নাই আমার কাছে। চমত্কার একটা সমালোচনা পড়ার সুযোগ করে দেয়ায় এই পোস্টটি উত্সর্গ করছি ইরতেজাকে।)

সবগুলো ছবিসহ মূল পোস্টের লিংক


ছবিছাড়া সম্পূর্ণ লেখাটি:

মনিকা আলীর প্রথম উপন্যাস ব্রিকলেন শুরুতেই ব্রিটেনে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলো। বই প্রকাশ হওয়ার আগেই তাকে তুলনা করা হচ্ছিল সালমান রুশদির সাথে, তার নাম উঠে গিয়েছিলে অন্যতম শ্রেষ্ঠ তরুণ ব্রিটিশ লেখকদের তালিকায়। বাংলাদেশে বাঙালিরা একজন বাঙালি বংশোদ্ভুতের ইংরেজি উপন্যাস প্রকাশ হওয়ার বিস্ময় নিয়ে চোখ যতোটা বড় করেছেন ব্রিকলেন উপন্যাস ঠিক ততোটা পড়েন নি। অন্যদিকে ব্রিকলেনের প্রবাসী বাঙালিরা (বলা যায় সিলেটিরা) উপন্যাসে সিলেট অঞ্চল থেকে আসা মানুষকে ছোট করে দেখানো হয়েছে বলে প্রতিবাদ/বয়কট এসব করেছেন। তাতেও ব্রিকলেন উপন্যাসের একটু অন্যরকম প্রচার হয়েছিলো। অনেকে এই প্রতিবাদকে ইস্ট ভার্সাস ওয়েস্ট বলেও তত্ত্ব দেয়ার চেষ্টা করেছেন।

[img_assist|nid=10609|title=ব্রিকলেনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিডিয়ার নেকনজর পেয়েছে|desc=|link=popup|align=none|width=320|height=240]

বল্টনে বড় হওয়া মনিকা ব্রিকলেনে কখনও আসেননি, সিলেট থেকে আসা প্রবাসীরা পূর্বলন্ডনে কীভাবে বাস করছেন তা নিজ চোখে দেখেননি - সুতরাং তার লেখার গভীরতা নিয়ে প্রতিবাদকারীদের প্রশ্ন সাধারণ বাঙালিদের কাছে গ্রহণযোগ্যই মনে হয়েছে। ব্রিটিশ সাহিত্যাঙ্গনের লোকজন এ অভিযোগকে খুব একটা আমলে নেননি। মনিকা আলীর দ্বিতীয় উপন্যাস হয়তো তার একটা উত্তর হতে পারে। আলেন্তিয় ব্লু নামে তার দ্বিতীয় উপন্যাস যেটি ২০০৬ সালে বেরিয়েছে তার কাহিনী পর্তুগালের একটি গ্রাম নিয়ে। ব্রিকলেন পড়তে আমার আগ্রহ না হওয়ার পেছনেও একটা কারণ ছিল যে এ উপন্যাসের প্রামাণ্য তথ্য আর গভীর সমাজ-মনস্তাত্বিক দিকগুলো আমার কাছে খেলো মনে হবে। লেখকের অভিজ্ঞতার অভাব উপন্যাসে বড় প্রকট হয়ে ধরা পড়ে।

[img_assist|nid=10610|title=মনিকা আলীর স্বল্প পরিচিত দ্বিতীয় উপন্যাসের প্রচ্ছদ|desc=|link=popup|align=none|width=217|height=320]

তবে যে পরিমাণ বিক্রি হয়েছিলো এই উপন্যাস, [url=http://www.bookrags.com/studyguide-brick-lane/]এই উপন্যাসের স্টাডি গাইডও আছে[/url], তাতে এ থেকে একটা ফিল্ম বানানোর প্রেরণা প্রযোজকরা পেতেই পারেন। এই ভরসায় এগিয়ে এসেছিলো চ্যানেল ফোর। গত মাসের মাঝামাঝি সিনেমা হলে ব্রিকলেন মুক্তি পেয়েছে।

উপন্যাসটা হাতে নিলেও পুরোটা পড়ার ধৈর্য হয়নি বলে ফিল্মটা দেখার আগ্রহ ছিলো। প্রথম দিন হে-মার্কেটের সিনে-ওয়াল্র্ডে এক ঘন্টা আগে গিয়েও টিকেট পাওয়া গেলো না। বিনামূল্যে দুশো টিকেট দেয়া হয়েছিলো আর ফিল্ম শেষে ছিলো পরিচালকের সাক্ষাত্কার। বেশ লোভনীয় আয়োজন। তবু আশা করেছিলাম আমার মতো অবসরপ্রাপ্ত সিনেমারসিক কমই হয়তো আছে। কিন্তু টিকেট না পাওয়ার দলে পূর্ব-ইউরোপিয় মেয়েদের দীর্ঘ লাইন দেখে একরকম ধাক্কাই খেলাম।

ব্রিকলেন পরিচালনা করেছেন সারাহ গ্যাভ্রন। এটা তারও প্রথম ছবি পরিচালনা। অবশ্য বিবিসির জন্য একটা ফিচার সারাহ করেছেন। সোমবার বিকেলে ইলিং স্টুডিওতে ফিল্ম স্কুলের আয়োজনে ব্রিকলেন ছবির ওপর সারাহ‘র একটা ওয়ার্কশপ আছে তাই রোববারে বৃষ্টির মধ্যেও ঘর থেকে বের হয়ে ছবিটা দেখে ফেললাম।

ভেবেছিলাম হলে গোটা বিশেক লোক হবে তাই দর্শক ঢোকার সময় গুণছিলাম কিন্তু সংখ্যাটা যখন ৮০ ছাড়িয়ে গেলো তখন গোণা বাদ দিলাম। বিভিন্ন ধরনের মানুষের আলাপচারিতার যেসব অংশ বাতাসে ভেসে কানে আসছিলো তা থেকে অনেকগুলো কারণ বুঝতে পারলাম এ‌ই দর্শকপ্রিয়তার। লন্ডন এবং ইমিগ্র্যান্ট সমাজ নিয়ে সামাজিক একটা ছবি। হলিউডের বিরাট সব ধুমধাড়াক্কা ছবির মধ্যে অনেকেই নিজেকে খুঁজে পায় না। তাই এরকম ছবি দেখতে আসা। এদের অনেকে ব্রিকলেন পড়েছে। সেটাও একটা কারণ।

[img_assist|nid=10612|title=সেলাইয়ের কাজ করে নাজনীনের সাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা|desc=|link=popup|align=none|width=320|height=268]

ছবি হিসেবে ব্রিকলেন বেশ ভালো মানের চলচ্চিত্র। লন্ডনের পত্রিকাগুলো সংক্ষেপে যাকে বলছে মনিকা আলীর ব্রিকলেন উপন্যাসের প্রিটিফাইড ভার্সন। একেবারে বর্তমান সময়ের উপর ভিত্তি করে দাঁড় করানো কাহিনীটা খুবই সাদামাটা আটপৌরে প্রবাসী জীবনের। বাংলাদেশের গ্রামের মেয়ে নাজনীনের হঠাত্ বিয়ে হয়ে যায় দ্বিগুণ বয়সী প্রবাসী চানুর সাথে। পূর্ব লন্ডনের কাউন্সিলের ছো্ট্ট ফ্ল্যাটে স্ত্রী হিসেবে বন্দীজীবনে তার সবচে বড় সুখস্মৃতি হলো ফেলে আসা গ্রামের খোলা প্রান্তরে বোনের সাথে দাপিয়ে বেড়ানোর দিনের দৃশ্য। উচ্চশিক্ষিত স্বামী চানু চাকুরি হারিয়ে বেকার হয়ে যাওয়ার পর পাশের ফ্ল্যাটের এক মহিলার পরামর্শে নাজনীন সেলাই মেশিন জোগার করে শুরু করে দর্জির কাজ। সেইসূত্রে কাজ দিতে আসা যুবকের সাথে তৈরি হয় প্রেম। কিন্তু ২০০১ এর তালেবানি টুইন-টাওয়ার আক্রমণের পর সেই যুবক ঝুঁকতে থাকে ইসলামের দিকে। নাজনীনও মন ফিরায় মোটাসোটা স্বামীর দিকে। ছোট মেয়েটার প্রতিবাদ ও চেষ্টাচরিত্রে যখন নাজনীন ও দুই শিশুকে রেখেই চানু বাংলাদেশে যায় তখন মা ও মেয়েরা যেন নতুন করে তাদের জীবনের স্বাদ নেয়ার সুযোগ পায়। ব্রিটেনের প্রতি তাদের ভালোবাসাটাও শক্ত হয় এই নতুন পাওয়া স্বাধীনতার হাত ধরেই।

ব্রিকলেন ছবি নিয়ে আপত্তি করার মতো অনেক বিষয়ই আছে। বাঙালি হিসেবে প্রথমেই আমার চোখে পড়ে যায় কেন কাহিনীর অনেক জায়গায় মূল চরিত্র চানুর আচার আচরণ আসলে বাঙালির মত মনে না হয়ে ভারতীয়দের মত মনে হয়। ব্রিটিশ দর্শকদের কাছে তা মনে না হওয়ারই কথা কারণ আমাদের মত তারাও ফিলিপাইন, কোরিয়া, চীন ও জাপানের মানুষকে আলাদা করতে পারে না। ভারত, শ্র্রীলংকা, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ গুলিয়ে ফেলার কথা। পরিচালক সারাহ গ্যাভ্রনের সাথে কিছু বাংলাদেশি সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন কিন্তু তারা এসব সূক্ষ্ম বিষয়ের সমাধান জানবার মত মেধাবী নন তা আমি জানি। সুতরাং চানুর চরিত্রের অভিনেতা সতীশ যখন হাঁটে, তার ভারতীয় এ্যাক্সেন্টে ইংলিশ বলে, ভারতীয় ফিল্মি কায়দায় বোকামির অভিনয় করে তখন দর্শক হিসেবে আমার অস্বস্তি লাগে। নাজনীনের চরিত্রে তন্বিষ্ঠা চ্যাটার্জির অভিনয় সে তুলনায় মহাভালো হয়েছে। শুরুতে তার এক্সপ্রেশন এতো স্বাভাবিক ছিল যে মনে হচ্ছিল ডকুমেন্টারি দেখছি এবং এ মেয়ে গন্ডগ্রাম থেকে মাত্র লন্ডন এসে নামলো।

কিন্তু বাঙালি হওয়ার কারণে সামাজিক-সাংস্কৃতিক যেসব গভীর বিষয় আমি জানি এবং পরিচালক ধরতে পারেননি তা দিয়ে আমি ছবিটাকে বিচার করা ঠিক হবে না। কারণ সারা পৃথিবীজুড়ে নানা জাতির লোকজন এই ছবি দেখবে এবং ছবিটিতে আসলে সার্বজনীন একটা গল্পকেই ধরা হয়েছে।

[img_assist|nid=10613|title=প্রথম ফিচার ফিল্মে ভালো সাড়া পাওয়ায় স্বভাবতই খুব খুশি পরিচালক সারাহ গ্যাভ্রন|desc=|link=popup|align=none|width=246|height=320]

তারচেয়ে বরং পরিচালক সারাহ গ্যাভ্রনের আলাপচারিতার অংশটুকু নিয়েই কথা চালাই। ইলিং স্টুডিও লন্ডনের আরেক প্রান্তে, একেবারে সেন্ট্রাল লাইনের শেষ স্টেশন ইলিং ব্রডওয়েতে। কাক ভেজা হয়ে ৫ নং ফ্লোরে যখন হাজির হলাম তখন দেখি ফিল্ম স্কুলের অল্প কিছু ছাত্র-ছাত্রী বাদে বাকী সবাই আমার মতো দূর-দূরান্তের যাত্রীই। সব মিলিয়ে গোটা ২৫ জন আসতে পেরেছেন এই ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে। এতে আয়োজকদের মন একটু খারাপ হলেও আমাদের ভালোই লাগছিলো। কারণ আলোচনাটা অনেক বেশি ঘরোয়া হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলো আর তাছাড়া অতিথিদের জন্য রাখা ফ্রেঞ্চ বিয়ার, চিপস্ আর বাদামও ভাগে বেশি পড়লো।

জৌলুস থাকার মতো অবস্থা ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির আর নেই।স্টুডিওর এক কোণায় চার/পাঁচটা চেয়ার বসানো যায় এমন একটা স্টেজ। ভীষণ পুরনো আসবাবপত্র। যেহেতু ওয়ার্কশপ সুতরাং হবু ফিল্মমেকারদের কথা মাথায় রেখেই পরিচালকের সাথে আলাপ শুরু করলেন উপস্থাপক। সারাহ শুরু করলেন তার ডিপ্লোমা ফিল্ম এই স্টুডিওতেই শ্যুট করেছিলেন সেই গল্প দিয়ে। তারপর নয়টার মতো শর্টফিল্ম। বিবিসিতে একটা ফিচার তারপর বড় পর্দায় এই তার প্রথম ছবি ব্রিকলেন।

[img_assist|nid=10614|title=নাজনীনের চরিত্রে তন্বিষ্ঠার অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন পরিচালক নিজেও|desc=|link=popup|align=none|width=320|height=232]

কেন ব্রিকলেন নিয়ে ছবি? এই প্রশ্নটা কেউ একজন করলো। সারাহ খুব সাধারণ উত্তর দিলেন। কোনো একটা ছবির প্রস্তাব নিয়ে তিনি চ্যানেল ফোরে ঘুরাঘুরি করছিলেন, তখন তারা তাকে পাল্টা প্রস্তাব দিলো ব্রিকলেনের ব্যাপারে উত্সাহী কিনা। সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলেন তিনি। স্ক্রিপ্ট রাইটার থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। সুতরাং ইমেইল চালাচালি করে প্রথম ড্রাফট যখন হাতে পেলেন তখন তার সাথে যোগ দিলেন ভিন্ন একজন স্ক্রিপ্ট রাইটার। তারপর তারা গল্প ও স্ক্রিপ্ট নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে লাগলেন। গল্পের কোন অংশ চলচ্চিত্রে থাকবে আর কোন অংশ থাকবে না এ নিয়ে অনেক টানাহেঁচড়া হয়েছে। তবে মনিকা আলী এই পর্যায়ে তাদের সাথে ছিলেন না। তাদেরকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে দূরে ছিলেন। মনিকা শুটিং-এর শেষে এডিটিংয়ের সময় এসে কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন।

কয়েকটা খসড়া চিত্রনাট্যের পর তারা সিদ্ধান্ত নিলেন শুধু নাজনীনের গল্পটাই ছবিতে থাকবে। উপন্যাসে যে নাজনীনের বোনের, তার প্রতিবেশিদের নানা উপ-গল্প আছে সেগুলো ছেঁটে ফেলা হবে স্ক্রিপ্টে। স্ক্রিপ্ট ডেভেলেপমেন্টের টাকা দিয়েছিলো চ্যানেল ফোর। সুতরাং ছবি বানানোর টাকার জন্য তারা গেলেন ফিল্ম কাউন্সিল ইউকের কাছে। ফিল্ম কাউন্সিলের টাকা পেতে হলে আবার কোনো একটা পরিবেশকের আগাম সম্মতি আনতে হয়। পরিবেশক তখন স্ক্রিপ্ট দেখে নানারকম পরামর্শ দিতে লাগলো। ফলে তখন আরেকদফা পরিবর্তন হলো স্ক্রিপ্টে।

উপন্যাসের অনেকটা জুড়ে ছিলো চিঠি। দুই দেশে থাকা দুইবোনের আলাদা আলাদা জীবন নিয়ে তাদের এই পত্রযোগাযোগ সিনেমায় কীভাবে আনা যায় তা নিয়ে পরিচালক খুব সমস্যায় ছিলেন। একবার তারা সিদ্ধান্ত নেন যে দুই দেশে দুই বোনের জীবন নিয়ে সমান্তরালভাবে ছবিটার কাহিনী এগিয়ে যাবে। কিন্তু দুই দেশে শুটিং-এর খরচ নিয়ে উদ্বিগ্নতা থাকায় এটা বাদ যায়। দীর্ঘ চিঠি পড়ে যাওয়ার বিষয়টা সিনেমায় খুবই বোরিং হবে বলে নাজনীনের চিঠি পাঠের অংশগুলোও চিত্রনাট্য থেকে বিদায় নেয়।

[img_assist|nid=10615|title=ব্রিকলেন ছবি নির্মাণের সাথে মূলত: নারী কর্মীরাই যুক্ত ছিলেন|desc=|link=popup|align=none|width=320|height=240]

ব্রিকলেনের কাহিনীটাই যে শুধু একজন নারীর জীবনকে ঘিরে ছিলো তা নয়, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, ক্যামেরাওম্যান, এডিটরসহ ব্রিকলেন ছবিতে নারী কর্মী ও ক্রুর সংখ্যাই বেশি। এটা কি ইচ্ছাকৃত? এরকম একটা প্রশ্নের মুখোমুখিও হতে হয়েছে সারাহ-কে। সারাহ বললেন চিন্তার সাযুজ্যের জন্যই নারী-প্রধান টিম তিনি চেয়েছিলেন তা ছাড়া তার মনে হয়েছে নারীর এমন দরদী গল্প নারীই ঠিকভাবে বুঝতে পারবে।

কিন্তু উপন্যাসে যে চিঠি ছিলো তা চলচ্চিত্রে বদলে কী হলো? সারাহ বললেন চিঠি ছিলো ফেলে আসা গ্রামের সাথে নাজনীনের সংযোগসূত্র। ছবিতে সে জায়গাটা নাজনীনের পারস্পেকটিভে গ্রামের ভিজ্যুয়াল দিয়ে পূরণ করার চেষ্টা করা হয়েছে।

বাংলাদেশে শ্যুটিং না হয়ে ছবিটির শুটিং হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। অনেকে উজ্জ্বল রং আর বর্ণিল সিনেমাটোগ্রাফির প্রশংসা করলেন যখন তখন সারাহর চোখ-মুখও উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। সাথে বেরিয়ে এলো আক্ষেপও। বললেন, ব্রিটেনে ফিল্মতো এখন কটেজ ইন্ডাস্ট্রি। ইন্ডিয়াতে এটা বিশাল ইন্ড্রাস্টি। একটা ট্রাইপড ধরতে চারজন লোক থাকে। ইন্ডিয়াতে শুটিং-এর সময়টা খুব উপভোগ করেছেন সারাহ। যদিও তার ক্রুর দলে কখনই একশ‘র বেশি লোক ছিলোনা। ব্রিটেনে যখন শ্যুট করেছেন তখন তো থাকতো ২৫-৩০ জন।

[img_assist|nid=10616|title=ছবির মূল তিন অভিনেতা-অভিনেত্রীর সাথে ডানে পরিচালক সারাহ|desc=|link=popup|align=none|width=320|height=226]

সিনেমা, সিনেমা নির্মাণের নানা বিষয় নিয়ে তার অভিজ্ঞতার কথা তিনি বললেন। বললেন কীভাবে কোথায় গিয়ে তিনি খুঁজে পেয়েছেন প্রধান চরিত্রের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের। কীভাবে ব্রিকলেনের মুরুব্বিদের সাথে মিল-মিশ করে ব্রিকলেনে শুটিং করেছেন। কীভাবে প্রথম প্রিভিউর পরে ফোকাস-গ্রুপের মতামত শুনে আবার সম্পাদনা করে পশ্চিমবঙ্গে শুটিং করা অনেক অংশ ফেলে দিয়েছেন। যারা অর্থ দিয়েছে তাদের মতামত ও অগ্রাধিকারকে কীভাবে পর্দায় জায়গা করে দিয়েছেন। কতটা বিস্মিত হয়েছিলেন যখন ফ্রান্সে চলচ্চিত্র উত্সবের পর তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো ফিল্ম কতটা কবিতার মতো আর কতটা ছবি আঁকার মতো।

ওয়ার্কশপে এ বিষয়গুলো নিয়েই কথা হওয়ার কথা। পরিচালকের অভিজ্ঞতা থেকে নিজেরা কিছু শিখতেই সবাই সেখানে জড়ো হয়েছিলেন। সারাহও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছিলেন খুব আন্তরিকভাবেই।

আমারও একটা প্রশ্ন ছিলো। সেটা করলাম শেষের দিকেই। জানতে চাইলাম, ছবিটা দেখে আমার মনে হয়েছে যখন গল্পে কোনো নাটকীয়তা নেই, দর্শক কিছুটা বোর ফিল করছে, কাহিনীর কোনো মোড় বা মোচড় নেই তখন পরিচালক ভিজ্যুয়াল দিয়ে একধরনের কোলাজ সৃষ্টি করে দর্শকদের নাড়া দিতে চেয়েছেন। বিষয়টা খুবই শৈল্পিক হয়েছে এবং আমার ভালোও লেগেছে। কিন্তু আমি জানতে চাই এটা স্ক্রিপ্ট পর্যায়ে কি ছিলো? নাকি এডিটিং টেবিলে এসে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে? সিদ্ধান্তটা কে নিয়েছে? পরিচালক না সম্পাদক।

[img_assist|nid=10619|title=ব্রিকলেন বলতে বাঙালি পাড়াই বুঝায় এখন|desc=|link=popup|align=none|width=320|height=221]

সারাহ মৃদু হেসে বললেন, সম্পাদকই নিয়েছে। অনেক সময় আমি মতামত দিয়েছি। তবে ডিস্ট্রিবিউটার, ফোকাস-গ্রুপ, ফাইন্যান্সার এরকম নানা পক্ষের কাছ থেকে আমরা ফিডব্যাক পেয়েছিলাম। তার ভিত্তিতে অনেক কিছু যোগ-বিয়োগ করতে হয়েছে। সিনেমায় এরকম করতে হয়। এটা একটা কোলাবোরেটিভ আর্ট মিডিয়া। শিল্প এখানে সবার সম্মিলিত চেষ্টার মাধ্যমেই তৈরি হয়। কোনো বিশেষ একজনের চিন্তা-ভাবনা সেটা আর থাকে না।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ৩:৫৫
৯৭০ বার পঠিত
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক সিস্টেম কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখবে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পতনের পর ড. ইউনূসের সরকার দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্কার কাজের প্রতিশ্রুতি দেন। নির্বাচন কমিশন ও ভোটের পদ্ধতি সংস্কারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

WW3 WARNING ☣️- ব্রিটেন, আমেরিকা,রাশিয়া,ইউক্রেন

লিখেছেন সরকার পায়েল, ২০ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮

এই প্রথম রাশিয়ায় ব্রিটেনের স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ইউক্রেনের
এই প্রথমবারের মতো রাশিয়ার অভ্যন্তরে যুক্তরাজ্যের তৈরি দূরপাল্লার স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইউক্রেন। বুধবার (২০ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে আমি.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১১

কে আমি?.....

Jean-Paul Charles Aymard Sartre (আমরা সংক্ষেপে বলি- জ্যা পল সাত্রে) নাম ভুলে যাওয়া একটা উপন্যাসে পড়েছিলাম, জার্মানীর অর্ধ অধিকৃত ফরাসীদের নিয়ে।

'হিটলারের সৈন্যরা প্যারিস দখল করে নিয়েছে। কয়েকশো মাইল দূরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হচ্ছে না!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:০৮


বেশ কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ করার জন্য সমাজের একটি বৃহৎ অংশ দাবী জানিয়ে আসছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিএনপি কে অনেকে দায়ী করছে কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পকে আধুনিকায়নের চেষ্টা

লিখেছেন জটিল ভাই, ২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(ছবি নেট হতে)

বনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×