আমাদের দেশের সব ক্ষেত্রের মানুষদের দুর্ভাগ্য বোধহয় এটাই যে তাদের কাজের ক্ষেত্রটাকেও তাদেরই তৈরি করতে হয়, জঞ্জালমুক্ত রাখতে হয়, তারপর সেখানে ফুলও ফুটাতে হয়।
লেখালেখির ক্ষেত্রেও তা সমান সত্য।
যদিও ভার্চুয়াল তবুও সামহোয়ার ইনে আমাদের সমাজের পরিপূর্ণ প্রতিচ্ছায়া পড়েছে। সামহোয়ার ইন ডুবে আছে ক্লেদ ও আবর্জনায়।
যারা কান্ডারি তাদেরই দায়িত্ব ছিল সুন্দর শুরুটাকে অব্যাহত রাখা। আরিল, হাসিনকে আমি অফিসে গিয়ে একমাত্র যে অনুরোধটি করেছি তা হলো, দয়া করে একজন ফুলটাইম প্রোগ্রামার দিন যে শুধু সামহোয়ার ইন ব্লগের দায়িত্বে থাকবে, দরকার হলে তার বেতনের অর্থটুকু আমরা ব্লগাররা কন্ট্রিবিউট করবো। আরিল এর আগের দফায় যে পোস্ট দিয়েছিলন তাতেও আমি একই কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলাম।
আমাদের প্রিয় ব্লগটির অবস্থা এখন আমাদের প্রিয় দেশটির মতো। এখন সমস্যায় পড়ে রাজনীতিবিদরা সংস্কার সংস্কার করে বাতাস ভারী করছেন। সামহোয়ার ইনে সে আওয়াজটাও এখনও উঠেনি। সুতরাং আমাদের আশা পূর্ণ হওয়ার এখনও অনেক বাকী।
সামহোয়ার ইন নিয়ে আমার অনেক ভালবাসা ও আশার মূলে কর্তৃপক্ষ কুঠারাঘাত করেছেন অনেক অনেক আগেই। তখনই অনুমান করতে পেরেছি তারা সৃজনশীল লেখকদের টানতে পারবেন না এবং এখানে যারা আছেন তাদেরকেও আস্থায় নিতে পারবেন না। অনেকের হয়তো মনে আছে আমি আমার বন্ধু মাসুদা ভাট্টিকে এখানে এনেছিলাম। তার লেখা উপন্যাস কর্তৃপক্ষ মুছে দিয়েছিলেন বিনা দ্বিধায়। সেই উপন্যাস 'আগামী প্রকাশনী' গত বইমেলায় বের করেছে। সেই বই নিয়ে বাংলাদেশে কোনোরকম শোরগোল হয়নি। সুতরাং আগামী প্রকাশনীর ওসমান গণি যে আরিল এন্ড গং-এর চেয়ে লেখালেখি, লেখকের স্বাধীনতা ও পাঠকের মনন বেশি বুঝেন তাতে চক্ষুস্মান কারো সন্দেহ থাকার কথা না। (একথা বলে আমি একটা পোস্টও দিয়েছিলাম।)
সুতরাং যারা সিরিয়াসলি লেখালেখি করেন, অন্তত: প্রবাসেও তারাও যে এই সাইটটিকে আস্থার সাথে গ্রহণ করতে পারছেন না এই সমস্যাটি কর্তৃপক্ষ তাদের যোগ্যতা দিয়ে দূর করতে পারেন নি। কর্তৃপক্ষ টেকনিক্যালি অনেক ভালো একটা লেখালেখি বা ব্লগিং-এর জায়গা করে দিয়েছিলেন কিন্তু সৃজনশীলতা সম্পর্কে তাদের ধারণার ঘাটতিটুকু তারা বিশেষজ্ঞ লোক দিয়ে পূরণ করেননি। তাদের এই চেষ্টার অভাব আমাদের জন্যই কাল হয়েছে।
এখানে মিলিত হওয়ার পর অনেকে ইয়াহুতে গ্রুপ খুলেছেন, নেটওয়ার্কও তৈরি হয়েছে নানা রকম, বইমেলাতে অনেকের লেখা নিয়ে বই প্রকাশও হয়েছে সম্মিলিতভাবে, প্যাঁচালি নামে একটা সাইট তৈরি হয়েছে কিন্তু নানা কারণে সচলায়তনের তৈরি হওয়াটা সবচে বেশি সাড়া জাগিয়েছে।
এই সাড়া জাগানোর কারণ সম্ভবত: সচলায়তনের ব্লগারদের তালিকা, যারা সামহোয়ার ইন ব্লগে লিখতেন এবং তূলনামূলকভাবে ভালোই লিখতেন। একটা কথা বোধসম্পন্নরা মানবেন এসব ব্লগাররা এতটা বিবেকবোধ বর্জিত নন যে এই সাইটের ক্ষতি করতে তারা ষড়যন্ত্র করবেন। বরং এ ধারণাটারই সত্যতা বেশি যে তারা নিভৃতে লেখালেখির জন্য আরো ঘনিষ্ঠ একটা আড্ডায় বসতে চেয়েছেন। সেখানে তারা যে লেখাগুলো লেখেন তা তাদের অনেকেই সামহোয়ারেও রেখে যান। কারণ সামহোয়ারের প্রতি তাদের ভালবাসার কোনো কমতি নেই। ঝরাপাতার সাম্প্রতিক পোস্টটার কথাও এ প্রেক্ষাপটে স্মরণ করা যায়।
একথা বললে খুব একটা আশ্চর্যজনক শোনাবে না যে, আমরা সবাই চাই, সামহোয়ার সচল হোক। অথবা একে আরো বেশি সত্যের কাছাকাছি এনে বলতে হলে বলতে হবে, আমরা চাই সামহোয়ার ফিরে পাক তার শুরুর সময়কার ছন্দ।
এ অনেকটা বাংলাদেশের ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার মত আকাঙ্খা। স্বপ্নের শুরুতে ফিরে যাওয়ার প্রার্থনা।
ভুলগুলো উপড়ানোর দায় এড়িয়ে অন্যের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার মধ্যে দোষ খুঁজলে নিজে আমরা যে তিমিরে ছিলাম সেই তিমিরেই থেকে যাবো। এ থেকে আমাদের উদ্ধার হবে না।