আমি ধরেই নিয়েছিলাম ও আমার চে ১৫বছরের বড়, ২ বছরে এভাবেই কেটে গেলো আমাদের । ও আচ্ছা তার নামটাই তো বলা হলোনা, আরম্ভ হলে আর শেষ হতেই চায়না যখন তার আসল নাম আমার গল্পে থাকে না । তার নাম অনন্ত ।
ধীরে ধীরে আমাদের সম্পর্কটা বদলাতে লাগলো,আমরা একটু আধটু করে নিজেদের কথাগুলো শেয়ার করা শুরু করলাম তবে স্পেসিফিক কিছুই আমি ওর কাছে জানতে চাইতাম না যেমন কোথায় পড়ে কি করে এসব ।
সম্পর্কটার মোড় একদম ঘুরে গেলো যখন আমাদের দেখা হলো। হঠাত্ করে এক পহেলা বৈশাখে, অনেকগুলো ব্লগারের মাঝে ওকে সেই প্রথম দেখা । আর ও তো আমাকে আগেই দেখে বসে আছে ফেসবুকে ।
অনন্তকে দেখার পর আমি গভীর বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম, ছেলেটা মোটেও আমার চে ১৫বছরের বড় নয় । এতটা শান্তশিষ্ট, চুপচাপ, নিষ্পাপ চেহারার ছেলেটা আমার সাথে চ্যাটিং এ এত কথা বলে ভাবতেই হাসি পাচ্ছিলো । ও সারাটাক্ষণ চুপচাপ মাথা নিচু করে রইলো, আর চঞ্চল আমি হৈ হুল্লোড় করে কাটিয়ে দিলাম পুরোটা দিন ।
চলে আসার পর ব্যাপারটা বদলে গেলো, আমরা প্রচুর কথা বলা শুরু করলাম নেটে,আগের দুবছর যে কথাগুলো বলিনি সেগুলো পুষিয়ে নেয়া আরকি । অনলাইনে চ্যাটিং আর কেউ কাউকে না পেলে ইনবক্সে বিশাল বড় মেসেজ ।
একটা সময় আমি লক্ষ্য করতে লাগলাম ওর জন্য অনলাইনে অপেক্ষা করতে ভালোলাগছে, ওকে ভালো লাগছে, ওর ছোট ছোট চ্যাট মেসেজগুলো পড়তে ভালো লাগছে পুরোটাই ভালো লাগাময় ব্যাপার ।
পহেলা বৈশাখে দেখা হওয়ার ঠিক ১০দিন পর আমাদের দেখা হলো । একদম হুট করে ফোরামের ৫জন বন্ধু মিলে দেখা বসুন্ধরা সিটিতে । অনন্ত একটা ব্ল্যাক টিশার্ট পড়ে এসেছিল, আমরা ফুডকোর্টে খাওয়া শেষ করে স্মোকিং জোনের অর্থাত্ বাইরের দিকটায় বসলাম আমরা যদিও আমাদের মাঝে কোন স্মোকার নেই । গল্পগুজবের মাঝে হঠাত্ করেই অনন্তর ফোনের মেসেজ টোন বেজে উঠলো,ওর গার্লফ্রেন্ডের মেসেজ ও চেক করছিলো তো আমরা ক্ষেপাতে লাগলাম এইটা নিয়ে । আমার পাশের ছেলেটা একটার পর একটা সিগারেট টানছে আর সেই নিকোটিনের ধোয়াগুলোর মাঝে আমি খেয়াল করলাম আমার মনটা অদ্ভুত বিষন্ন হয়ে গেছে ।
আরো কিছুক্ষণ গল্প করে যখন ফিরে আসবো, অনন্তর দিকে তাকালাম । তাকানোর পর এক অদ্ভুত অনুভূতি হলো এবং সবকিছু তোলপাড় করে আমার মনে হলো আমি এই ব্ল্যাক টিশার্ট পড়া শান্তশিষ্ট, ইনোসেন্ট ছেলেটাকে অসম্ভব পরিমাণে ভালোবেসে ফেলেছি ।
এই ভাবনাটা মাথায় আসার পর আমি নিজেই অবাক হয়ে গেলাম । ও সামনে গল্প করতে করতে হাটছে আর আমি পুরোই বিধ্বস্ত, আমার চিন্তাগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে ।
বাস আসলো আমরা উঠে পড়লাম,ওর দিকে বিদায়ের ভঙ্গিতে হাত নাড়লাম । ওর দিকে তাকানোর সাহস আমি তখন পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছি, ভয় করছিলো অনন্তর তীক্ষ্ন দৃষ্টির কাছে না জেনো ধরা পড়ে যাই,চোখে পানি জমছিলো ।বাস ছেড়ে দেওয়ার পর মনে হলো আমি কি যেনো ফেলে আসছি,গাল ভিজিয়ে দিয়ে গেলো কয়েকফোটা চোখের জল উদ্দেশ্যহীন ভালোবাসার জন্য ।সেদিন ফিরে আসার পর প্রচন্ড কান্না, নিজেকে খুব বেশি অসহায় লাগছিলো তারপরেও ওর সাথে খুব স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে লাগলাম ।
একদিন অনন্তর কাছ থেকে কথায় কথায় ওর গার্লফ্রেন্ডের কথা জানতে চাওয়াতে জানালো ওরা শুধুই বন্ধু, ওদের বন্ধুত্বটা খুব বেশি ভালো দেখে সবাই এটাকে ভুল বোঝে । আগে ভুল ভাঙ্গাতো এখন আর না, যে যা খুশি ভাবুক ।
টুকটাক কথায় আমাদের তিনটা দিন পার হয়ে গেলো, আর আমার ভেতরের কষ্টগুলো গুমরে মরছিলো, কাঁদাচ্ছিলো ওকে বলতে না পারার যন্ত্রণা । কিভাবে জানি দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করছিলাম সবকিছু ।
চতুর্থদিনে, সন্ধ্যাবেলা এপ্রিলে কালবোশেখী ঝড়, এরপরেই ঝুম বৃষ্টি । আমার মাঝের সমস্ত অনুভূতি আমাকে নিমিষেই এলোমেলো করে দিলো । অনন্তকে দেখলাম অনলাইন, চ্যাটিং করার সময় আমার প্রতিটা রিপ্লাইয়ে চরম বিষন্নতার সুর ও বুঝে ফেললো । বারবার গোয়ারের মত জানতে চাইছিলো হয়েছেটা কি আমার ।
আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, গান শুনবে?
ও আমাকে একটা হাসির ইমোকটিন পাঠিয়ে বললো, হ্যা শুনতে চাই ।
চ্যাটস্ক্রিনে ভেসে উঠলো আমার পাঠানো এক গানের লিরিক্স,
"যদি ডেকে বলি,
এসো হাত ধরো চলো ভিজি আজ বৃষ্টিতে
এসো গান করি মেঘমল্লরে করুণাধারার দৃষ্টিতে।
আসবেনা তুমি, জানি আমি জানি
অকারণে তবু কেন কাছে ডাকি?
কেন মরে যাই তৃষ্ণাতে. . . . ."
ও এবার খুব শক্ত হয়ে জানতে চাইলো কি হয়েছে আমার,
আমি কিছুক্ষণ চুপ তারপর নিতান্ত খেলাচ্ছলেই বলে দিলাম, আমি যাকে ভালোবাসি উনিই সেই মহাপুরুষ ।
সবচে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো ও এটা আরো আগেই বুঝতে পেরেছিলো !
এরপর শুরু হলো অভিনয়ের পালা,দুজনের কথা হয় দেখা হয় কিন্তু আমরা ভুলেও পুরান কথা তুলিনা উল্টো দেখা হলে ভাব দেখাই কিছুই যেন হয়নি ।
আমাদের প্রায়ই দেখা হতে লাগলো, অনেক মানুষের মাঝে দেখা হয়, আমি আমার সব অনুভূতি চেপে রেখে হাসিমুখে ওর সাথে কথা বলি । কিন্তু ও যদি দেখতো আমার চোখে ওর জন্য কি পরিমাণ ভালোবাসা. . .
হঠাত্ করেই বিছিন্নতা, যোগাযোগ নেই আমাদের । সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে আমি অনন্তর আড়ালে চলে গেলাম ।
জানিনা কিভাবে তবে প্রতিটা দিন খুব বেশি দীর্ঘ আর কষ্টকর ছিলো ওকে ছাড়া ।
১৫দিন পর যখন ফোন অন করি, প্রথম মেসেজটাই ওর,আমাকে খুঁজে না পেয়ে তার মন খারাপ হয়ে আছে ।
ইনসমনিয়াক এই আমি নিঃসঙ্গ রাত জেগে রইলাম ।ঘড়ির কাটায় ৪টা বেজে ৯মিনিট । হঠাত্ করেই ফোনটা হাতে তুলে নিলাম এবং কল. . . .
ঘুমকাতুরে ছেলেটা এখনো জেগে রয়েছে ভেবে অবাক হয়ে গেলাম যখন সে আমার ফোন ধরে বললো, হ্যালো !
পাগলামি ভর করেছিলো সন্দেহ নেই,শুধু বললাম,
"এই আমাকে বিয়ে করবে?"
এরপরেই নিরবতা,শুধু বুকের ভেতরের এক কম্পন । সেই কম্পন থামিয়ে দিয়ে সে বললো,
"হুম করবো. . . .চলো এখুনি বিয়ে করে ফেলি"
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:০০