বিদায় । কতই না সহজে লিখে ফেললাম কথাটা। কিন্তু মনের এইসব গোপন খাপছাড়া কথার সাথে বাস্তবতার মিল কল্পনা করাটা ও বোকামী। স্কুলে যখন সুকান্তের লেখা পড়ে সকল শোষকের গলা কেটে রক্তে স্নান করার স্বপ্ন দেখতাম, এই সবই ছিল বয়সের দোষ। মানুষ এমনই এক রোমান্টিক হিরোর চরিত্রে নিজেকে কল্পনা করতে ভালবাসে, ভেবে শিহরিত হয়। রক্ত ফুটে টগবগ করে উঠে। প্রতিদিনের শত লাঞ্ছনা, বিবাদ, ক্ষোভ, হতাশার জাল ছিড়ে বেড়িয়ে পড়তে চায়। কিন্তু বিছানায় পাশ ফিরতেই তার তন্দ্রা ছুটে যায়। মনে পড়ে যায় কিছু দায়িত্ব, কিছু চেনা মুখ। যাদের জন্য বেঁচে থাকা, যাদের ঠোঁটের কোনায় এক চিলতে হাসির জন্য এই বেঁচে থাকা। একজনের কমেন্ট পড়লে ব্যাপার টা বুঝা যাবে-
অনিন্দিতা_একা বলেছেন: আহা ! এই তো বয়স এইসব ভাবার ! না, আমিও এমন ই ভাবতাম। তার মানে এই না যে এই রকম জীবন ই আমার চাই, তবে কথা হল, কারো কারো জন্য ভালো একটা চাকুরী পাওয়াটা আবশ্যক, ইচ্ছার ব্যাপার নয়। যদি তোমাকে তোমার বাবা মা'র দায়িত্ত নিতে হয়, ভাই বোন, সংসার এর দায়বদ্ধতা থাকে।
‘দায়বদ্ধতা’- শব্দটার মত এর ব্যাপকতাও বেশ কঠিন। একজন সৌভাগ্যবান পৃথিবীতে আসে একটা পরিবারের মধ্যে। তৈরী হয় মায়ের সাথে নাড়ীর টান, বাবার সাথে আদরের। আমি ভূমিষ্ট হওয়ার আগেই সবাই যার যার মত করে আমাকে নিয়ে তাদের স্বপ্ন সাজিয়ে ফেলেছিলেন। যেই স্বপ্নে আমার চরিত্র ছিল, কিন্তু কোন ভূমিকা ছিল না। আমরা সবাই মোটামুটি এমন স্বপ্নের একটি পাত্র হয়েই জীবন যুদ্ধ শুরু করি। একজন ইন্ডিভিজুয়াল হয়ে আমরা খুব কম মানুষ-ই জন্মাতে পারি। আমরা জন্ম নেই কারো ছেলে বা মেয়ে হয়ে। প্রথমে কোন সমস্যাই হয় না। আস্তে আস্তে আমরা তাদের মত করেই জীবন যাপন করতে থাকি। কিন্তু সমস্যা তৈরী হয় যখন আমরা শিক্ষিত হই, যখন আমাদের জ্ঞান-বিবেক-বুদ্ধি জাগ্রত হয়। নিজের মত ভাবতে শিখি। মনের কোনে সুপ্তভাবে জন্ম নিতে থাকে নিজের কিছু কামনা-বাসনা-ইচ্ছা-স্বপ্ন।
বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের স্বপ্নগুলো অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে ফেলা হয়। অনেক সময় আমরা নিজেরাই নষ্ট করে ফেলি, ভাবি খামখা ঝামেলা বাড়িয়ে কি লাভ। যেমন চলছে চলুক। অনেকের ক্ষেত্রেই অন্য কোন পথ খোলা থাকে না। বুড়ো মা-বাবার অবলম্বন হয়ে তাদের থাকতে হয়। আস্তে আস্তে কখন যে মানুষ এই চক্রব্রূহতে আটকে পরে...। খুব কম সংখ্যক মানুষই আমাদের এই আর্থ-সামাজিক অবস্থায় নিজের মত করে জীবন যাপন করতে পারে। যারা পারে তারা ভাগ্যবান। আর যারা পারেন না, তারা কিন্তু মোটেও অসুখী নয়-তারা বঞ্চিত। কেননা মানুষের একটা বড় গুন হল মানিয়ে নেয়া। সব পরিস্থিতিতেই সে মানিয়ে নিতে পারে। এটা ও মেনে নেয়। কারন টা আর কিছুই না, সেই নাড়ীর টান, ভালোবাসা, পরিবার, সমাজ, দায়িত্ব।
মাঝে মাঝে হয়ত বা কোন এক নির্জন মূহুর্তে এক দীর্ঘশ্বাসে তাদের সেই স্বপ্ন গুলোকে লালন করেন।
সবার জীবন এক রকম হয় না। এমন খাপছাড়া চিন্তা অনেকেই করে। যে কয়জন আমার লেখেটি পড়েছেন তাদের মধ্যে বেশীর ভাগই আমার মত চিন্তা করেন বা এক সময় করতেন। যারা করতেন (হয়ত মনের গহীন কোন প্রকোষ্ঠে এখন তার কিছুটা সুপ্ত আছে) তারা হয়ত কোন এক পরিস্থিতির চাপে নিজের ইচ্ছাকে বিসর্জন দিয়েছেন। প্রথম দিকে খারাপ লাগলেও এক সময় নিজের মনকে মানিয়ে নিয়েছেন। এমন এক নিশ্চিত জীবনে নিজেকে সুখী করতে পেরেছেন।
তবুও মাঝে মাঝে সেই দীর্ঘশ্বাস...।
আমি যেভাবে চিন্তা করছি ব্যাপার টা কি আসলেই ততটা সহজ? বাবা-মা’র ইচ্ছা/স্বপ্ন/অধিকার কে কি এতটা সহজে বাইপাস করা যায়? যায় না, মোটেও যায় না। [ইচ্ছা করেই স্কুল জীবনে আমার মা/আমার বাবা টাইপ ভারী ভারী কথা গুলো লিখলাম না]। এইসব প্রাকৃতিক সম্পর্ক নিয়ে কিছু ডিফাইন করার নাই।
...যতই বলি না কেন আমি রুথলেস, এইসব প্রেম-ভালবাসা, স্নেহ, আদর-আজাইড়া ইমোশন গুলো আমার মধ্যে নাই। কে কি ভাবল আমার কিছু যায় আসে না। একা আসছি এই পৃথিবীতে। একাই চলে যাব, দোজখে গেলে কেউ আমার সাথে যাবে না। আমার কৃতকর্মের জন্য যদি আমি নিজেই দায়ী থাকি তাহলে জীবন টার সাথে আমি কি করব সেটাও আমারই ঠিক করা উচিৎ। যতই বড় বড় বুলি কপচাই, যতই অংবং করি- দিন শেষে কিন্তু আমি ও মানুষ। তারপরেও কিছু কথা থাকে...
... আচ্ছা, যারা বাবা-না’র অমতে বাসা থেকে পালিয়ে বিয়ে করে তাদের সেই সময়ে মানসিক অবস্থা কেমন থাকে? তখন কি বাবা-মা’র কথা মনে থাকে? মনে থাকে এইসব দায়-দায়িত্ব, মান-সম্মান? তখন সেই সব মা-বাবাদেরই বা কেমন লাগে? নিজেদের বঞ্চিত মনে করেন কি?
বিয়ের পরে যখন আলাদা ফ্ল্যাটে উঠে যাই (সাংসারিক ঝামেলা এড়াতে) তখন তাদের কেমন লাগে? এই উওর গুলো জানা লাগবে...
পরিস্থিতির সাথে আমিও হয়ত নিজেকে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে পারি । দায়বদ্ধতা তো আমারো কিছু আছে। কিন্তু তবুও কথা থেকে যায়, কেন? এই মানিয়ে নেয়া টা্কে কি হেরে যাওয়া বলে না? নিজের কাছে হেরে যাওয়া? যুদ্ধ না করে সত্যাগ্রহ কি কখনোই সম্মানজনক হতে পারে?
এইসব থেকেই ধীরে ধীরে জন্ম নেয় বিদ্রোহ। নিজের সাথে নিজের বিদ্রোহ। এইটুকু খাপছাড়া কথাবার্তা যেদিন উপলব্ধি করতে পারলাম সেদিন হঠাৎ করেই অনেক একা হয়ে গেলাম। চেনা সেই বন্ধুদের থেকে ধীরে ধীরে দূরে চলে গেলাম। নিজের ভাবনায় হারিয়ে যেতাম। তাদের সাথে আর কিছুতেই নিজেকে মিলাতে পারতাম না। আমার চিন্তা গুলো জট পাকানো ছিল। আমি জানতাম এমন নিশ্চিত জীবন আমি চাই না। কিন্তু এটা জানতাম না আমি তাহলে কেমন জীবন চাই। অস্থির কিছু সময় পার করলাম কিছুদিন। কিছু শেয়ার ও করতে পারতাম না বন্ধুদের সাথে। কিবা শেয়ার করব? নিজেই তো কিছু জানি না। কি করব, কেন করব, কিভাবে করব??? সবাই ভুল বুঝা শুরু করল। নিজেকে এক খোলসে আবদ্ধ করে রাখছিলাম। স্বপ্নের খোঁজে হাতড়ে বেড়াচ্ছিলাম এদিক-ওদিক।
খাপছাড়া কথা [এক] - Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ২:০৮