এই রমাজান থেকে কি পেলাম?
=====================
ভাইয়েরা, আমি আমার নিজের ব্যবহারের জন্য এ রমজান থেকে নীচের বিষয়গুলো বুঝে এসেছে বিধায় লিপিবদ্ধ করেছি। আমি চিন্তা করেছি নীচের লেখাটা প্রিণ্ট করে সাথে রাখব। কারণ প্রায়ই দুনিয়াবী পরিবেশে এসব ভুলে যাই। অনেকদিন পর মনে হয়। কিন্তু ততদিনে অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। এটা আমার প্রয়োজন অনুপাতে করা হয়েছে। শেয়ার করলাম এ কারণে যেন কোন ভাই প্রয়োজন মনে করলে তার প্রয়োজন অনুসারে নিজের জন্য এডিট করে রাখতে পারেন।
(১) সবসময় আল্লাহ তায়ালার সাথে সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যদি এ' মুহূর্তে আল্লাহ তায়ালা আমাকে ডাক দেন আমি যেন 'লাব্বায়েক' বলতে পারি।
(২) মালাকুল মওতের সাথে এপয়েণ্টমেণ্ট যেকোন সময় হতে পারে। হঠাৎ করে আমি তাকে দেখে ফেলতে পারি। নামাযে, ঘুমে, ঘরে, বাহিরে, সফরে।
(৩) মালাকুল মওতের প্রতি ভাল ধারণা রাখি। কারণ তিনি একজন সম্মানিত ফেরেশতা। তিনি আল্লাহ তায়ালার হুকুম পালন করছেন মাত্র। নিজের থেকে কিছুই করছেন না। যিনি আল্লাহ তায়ালার হুকুম পালন করেন তিনি কিছুতেই খারাপ হতে পারেন না। তিনি আমাদের বন্ধু।
(৪) আমি আখিরাতের মানুষ। আমি আখিরাতের দিকে যাচ্ছি। দুনিয়াকে পিছনে ফেলে যাচ্ছি।
(৫) তাই দুনিয়ার সাথে মন লাগাব না। আখিরাতের সাথে মন লাগাব। কবর হাশর পুলছেরাত জান্নাত জাহান্নাম এগুলো হল আখিরাত।
(৬) দুনিয়ার টাকা পয়সা, ধন দৌলত, পদবী, চাকুরী ব্যবসায়, আরাম আয়েশ পাওয়া না-পাওয়া দ্বারা জীবনের সফলতা ও ব্যর্থতা নির্ণয় করা যাবে না।
(৭) আখিরাতের সফলতাই প্রকৃত সফলতা।
(৮) রিযিক বাড়ানোও যাবে না, কমানোও যাবে না। হালাল রিযিক অন্বেষণে চেষ্টা করতে হবে। ইহা ইবাদত। কিন্তু রিযিকের জন্য পেরেশান হওয়া যাবে না। ইহা সময়ের অপচয়।
(৯) আমার বিষয়ে দুনিয়াতে কেউ সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেই। কারণ সিদ্ধান্ত আল্লাহ রব্বুল য়ালামীন আগেই নিয়ে রেখেছেন। নতুন কোন সিদ্ধান্ত দাতা নেই।
(১০) তাই আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত দুনিয়ার কোন মানুষকে খাতির করা বা ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই।
(১১) দুনিয়ার কোন অপ্রাপ্তি বিষয়ে নিজেকে ধিক্কার দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
(১২) কোন জিনিস খোয়া গেলে (যেমন, জান-মাল, মোবাইল, সার্টিফিকেট, সম্পদ, ফেসবুক একাউণ্ট ইত্যাদি) বা মনমত না হলে (যেমন বাস বা ট্রেন মিস করা, চাকরী চলে যাওয়া, হঠাৎ অপছন্দনীয় কাজের দায়িত্ব চেপে যাওয়া) সবর করার চেষ্টা করতে হবে। সাথে সাথে পূর্বে প্রাপ্ত নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার চেষ্টা করতে হবে।
রোগ ব্যাধি, বিপদ আপদের ক্ষেত্রেও একই শিক্ষা নিতে হবে।
(১৩) আল্লাহ তায়ালার কাছে (বিপদ এসে পড়ার পূর্বেই) হেফাজত ও পূর্ণ নিরাপত্তা প্রার্থনা করতে হবে। কারণ আল্লাহ তায়ালাই সকল ঘটনা ঘটান। অন্য কেউ কিছুই করতে পারে না।
(১৪) অন্য ব্যক্তির ধন, জন, মাল, অর্জন, দুনিয়াবী সৌন্দর্য্য, চাকচিক্যের সাথে নিজের তুলনা করা যাবে না। বরং বুজুর্গ ব্যক্তিদের ইলেম, তাক্বওয়া, নেক আমল ও পরহেজগারীর সাথে নিজের তুলনা করতে হবে।
(১৫) দুনিয়ার সম্পদ কম পেলে মন খারাপ করা যাবে না। দুনিয়ার সম্পদ বেশী পেলে 'আমার নিজ যোগ্যতায় হয়েছে' মনে করে অহংকার করা যাবে না।
আমল সংশ্লিষ্টঃ
~~~~~~~~~~
(১) কুরআন তিলাওয়াত প্রতিদিন করার চেষ্টা করে হবে। কোন কারণে একদিন মিস গেলে বারংবার আফসোস করতে হবে। আফসোসটাও বড় আমল।
(২) প্রতিদিন একটু একটু করে আরবী ভাষা শিক্ষার চেষ্টা করতে হবে। কোনদিন মিস গেলে আফসোস করতে হবে।
(৩) ফেসবুকের ব্যবহার কমাতে হবে। ফেসবুকের সাথে সম্পর্ক কমিয়ে কুরআনের সাথে সম্পর্ক বাড়াতে হবে। ফেসবুক ততটুকুই ব্যবহার করব যতটুকু না হলেই নয়। কিন্তু নেশাখোরের মত নয়। কোনদিন বেশী ফেসবুক ব্যবহারের কারণে আমল মিস গেলে আফসোস করতে হবে।
(৪) তা'লীমের হালকায় সুযোগ পেলে বসতে হবে।
(৫) ঘরে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে কুরআন হাদীসের তা'লীম করতে হবে। এটাও মিস করা যাবে না। নিয়মিত আমল।
(৬) বাচ্চাকে পড়াতে হবে।
(৭) নিজের পাঠ্যবই পড়তে হবে। প্রতিদিন অল্প হলেও।
(৮) ঘুম আসলে ঘুমিয়ে পড়তে হবে। কিন্তু অযথা বিছানায় গড়াগড়ি করা যাবে না।
(৯) সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করি। আলহামদুলিল্লাহ! এটা ঠিক আছে। কিন্তু সালামের পাশাপাশি হাসিমুখে প্রবেশ করতে হবে। প্রয়োজনে একটু দাঁড়িয়ে থেকে বাহিরের বিরক্তি ঝেড়ে ফেলে ঘরে প্রবেশ করব।
(১০) স্ত্রীর প্রতি সদয় হব। পড়া না পারলে বাচ্চার প্রতি রেগে যাব না। বাসা হবে রাগারাগি মুক্ত। ধৈর্য্য একটু বাড়াতে হবে।
(১১) ২, ৪, ৫, ১০ টাকার জন্য রিক্সাওয়ালা, সব্জিওয়ালা এদের সাথে বাকবিতন্ডা করে ব্লাড প্রেশার বাড়ানো ও মানসিক শান্তি বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে এদের একটু বেশী টাকা দিয়ে দিতে হবে।
(১২) হারিয়ে যাওয়া আত্মীয়দের খুঁজে খুঁজে বের করে তাদের সাথে সম্পর্ক রাখব, তাদের সাথে হাসিমুখে কথা বলব।
(১৩) নিজের পরবর্তী আমলে ডিস্টার্ব হয় বা ঘরের মানুষের ডিস্টার্ব হয় এমন কাজ করা যাবে না। যেমন, রাত জেগে ফেসবুক চালানো।
(১৪) দুটো আমল এবার রপ্ত হয়েছে। তাহিয়্যাতুল অযু ও তাহিয়্যাতুল মসজিদ। চেষ্টা করতে হবে এ দুটো আমল জারি রাখা। এবং অল্প করে হলেও কিছু তাহাজ্জুদ পড়া।
(১৫) প্রতিদিন চোখের পানি ছেড়ে ক্রন্দন করা। অন্তর শক্ত হয়ে গিয়েছিল। এটি হয়েছিল দুনিয়াবী পরিবেশ গায়ে মাখানোর কারণে। হাসি ঠাট্টা, গীবতের কথা শুনা ও বলা, নানা ধরনের লোকজনের সাথে মেশা, দুনিয়াবী লাভ-লোকসানের হিসাব এসবের কুফল ভালই পড়েছিল। এবার আল্লাহর রহমতে ইতিকাফে অন্তর কিছুটা নরম হয়েছে। প্রতিদিন নির্জনে কিছু কান্না বা কান্নার ভান করার মাধ্যমে হলেও অন্তরকে শুকিয়ে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে।
আল্লাহ তায়ালাই তৌফিকদাতা।
_____________________
২৯ রমাজান, ২০১৫
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:২৩