গতমাসে বাথরুমে পা পিছলে পড়ে আমার মার হাত ভেঙ্গে গেল। হিউমেরাসের লোয়ার এন্ডে খুব কমপ্লিকেটেড ফ্রাকচার তৈরী হল। NITOR -এ (পঙ্গুতে) নিলাম। মনে পড়ল ক্লাশমেট বন্ধু বাদলের কথা। অর্থোপেডিক্স স্পেশালিস্ট। বাদলকে ফোন দিলাম। আশ্বস্ত করল। বলল, আমি ঢাকা থেকে একটু দূরে আছি। তুই আগামী কাল নিয়ে আয়। নিয়ে গেলাম ওর চেম্বারে -মোহনায়। বাদল বলল নূরুল আহাদ স্যারকে দেখাতে হবে। স্যার আমাদের মেডিকেলের অর্থোর হেড ছিলেন। সে হিসেবে আমিও স্যারের ছাত্র। সেও এক যুগ আগের কথা। নিয়ে গেলাম স্যারের চ্যাম্বারে -মেডি এইডে। স্যারকে দেখানো হল। অপারেশন করানোর কথা বলা হল। স্যার তার টিমকে খবর দিলেন। এনেস্থেসিয়ার একজন প্রফেসর, স্যারের এসিস্টেণ্ট হিসেবে বাদল ও আরো একজন সার্জনকে নেয়া হল। অপারেশন হয়ে গেল। ফ্রাকচারটা খুব খারাপ ছিল। মাসল এংকরে অভিজ্ঞতা না থাকলে বের হয়ে আসা কঠিন। আল্লাহর রহমতে স্যারের কাছে এগুলো পানিভাত। তাও প্রায় ঘণ্টা দুয়েক লাগল অপারেশন শেষ হতে। এনেস্থেসিয়ার স্যার ব্লক দিলেন। যার ফলে অজ্ঞান না করেই অপারেশন করা গেল। মাশাআল্লাহ। তিন চারদিন হসপিটালে থাকতে হল। সেলাই কাটা হয়েছে। প্লাস্টারও খোলা হয়েছে। হাতের ব্যায়াম শিখিয়ে দেয়া হয়েছে।
সবকিছু ভালয় ভালয় শেষ হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।
স্যারের কাছে গেলাম অপারেশনের খরচ দিতে। স্যার বললেন, তোমাদের কি এগুলোই শিখিয়েছি? আমার মা'র চিকিৎসা করলে তুমি টাকা নিতে? আমি বললাম, আস্তাগফিরুল্লাহ। পুরো টিমের কেউ টাকা নেয়নি। এনেস্থেসিয়ার স্যারও না।
শুনলাম নূরুল আহাদ স্যার নিজেও অসুস্থ। কিডনীর সমস্যা। তবুও এখনও রোগী দেখেন নিয়মিত। আমার মা ফলো আপে যান। আমার মা-ই বললেন স্যার অসুস্থ। আমি দূরে থাকি, অন্য রোগীদের খেদমত করি। কাছে থেকে অসুস্থ মার সেবা করতে পারি না। নিকটজনদের খবর নেয়াও অনেক সময় সম্ভব হয় না।
_______________________
ডা: জহির
৩০ এপ্রিল, ২০১৫