somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুধু তোমারে জানি

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি বসে বসে রুদমিলা আর রুদ্রের কথপোকথন দেখি। ওদের কথপোকথনেই আমি আবিষ্কার করি কতটা বিবেক বিবর্জিত হীন আচরণ করেছিলাম আমি একদিন। ঠিক একইভাবে। ওই বিবেকহীন ছেলেটির সাথে আমার কোনোই পার্থক্য নেই। জঘন্যতম অপরাধে অপরাধী মনে হয় নিজেকে। আমার কষ্ট হয়। ঘুষি মেরে মনিটর ভেঙ্গে ফেলতে ইচ্ছে করে। তবুও ধৈর্য্য নিয়ে বসে থাকি আর অবাক হই রুদমিলার ধৈর্য্যশক্তি দেখে। রুদমিলা আর আগের মত রেসপন্স করছে না।


- হাই
--------
-হেলো
---------
- আর ইউ দেয়ার?
--------------
- হেই আর ইউ লিসনিং টু মি?
-----------------------
- হে--- ল-----ল-----লো--------
-------------------------------
- ইউ বিচ--- হ্যোয়াই ডোন্ট ইউ আন্সার মি?
------------------------------------ -----
-আই উইল টিচ ইউ আ গুড লেসন। আমাকে অবজ্ঞা করার মজা তোমাকে আমি বোঝাবো---
--------------------------------------------------------
- তোর সারাজীবনের কেরিয়ার আমি পথের ধুলায় লুটাই দেবো। তোর .....
- প্লিজ। প্লিজ রুদ্র, বি কোয়ায়েট। ডোন্ট বি সো ক্রুয়েল...বোঝার চেষ্টা করো...
- নো ওয়ে .. আমি কিছু বুঝতে চাইনা। আমি শুধু একটা কথাই জানি, ইউ হ্যাভ টু লিসেন টু মি.... আদারওয়াইজ....আমি তোর.....

উফ অসহ্য ! আর সহ্য করতে পারিনা আমি । মনিটর অফ করে দিয়ে বসে থাকি। রুদমিলার অসহায় মুখটা আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আমি চোখ বুজে দেখতে পাই ওর দুচোখের অঝর ধারার কান্না। রুদমিলা কখনও তীব্র যন্ত্রনাতেও মুখ ফুটে একটা শব্দ করেনি। ফুঁপিয়ে কেঁদেছে। ও কাঁদলে ওর চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে ওঠে। নাকের পাটা ফুলে ওঠে। মুখ থমথমে হয়ে যায়। সেসব দিনে ও কাঁদলে ওকে আরও বেশি সুন্দর লাগতো। আই এনজয়েড হার ক্রাইং। ওকে দারুন সেক্সি লাগতো তখন। কতবার জোর করে সে অবস্থাতে আমি ....

নাহ, অসহ্য কষ্ট হচ্ছে আমার। রুদ্র আর রুদমিলা, নামের মিল থাকলেও রুদমিলা আবারও একই ভুল করলো। ভুল মানুষের পাল্লায় পড়লো সে। সারাটা জীবন শুধু ভুল মানুষের পাল্লাতেই পড়েছে মেয়েটা। কত দিন, কত রাত এসব অকথ্য কথাগুলোই আমি বলেছি ওকে। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে রাতে বাড়ি ফেরার পর জেরা করেছি। সন্দেহ করেছি। বার বার জেরা করবার পরেও তার কোনো জবাবই আমার মনঃপুত হয়নি। অকথ্য গালিগালাজ করেছি ওকে।গলা টিপে ধরেছি। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হত খুন করে ফেলতে।আমার মনে হত, খুন হয়ে যাবার সময়ও নিশ্চয় ওকে আরও সুন্দর লাগবে। আমার খুব সে দৃশ্যটা দেখতে ইচ্ছা হত। আমি রুদমিলার তীব্র কামার্ত মুখ হতে শুরু করে নিদারুন কান্নাভেজা মুখটার মাঝেও সৌন্দর্য্য খুঁজে বেড়াতাম।

আজ নিজের উপর ঘেন্না হয়। মরে যেতে ইচ্ছে করে। আমি মানষিক রোগী হয়ে উঠেছিলাম। রুদমিলাকে কষ্ট দিয়ে আমি ওকে আরও বেশি ভালোবেসে ফেলতাম। আমি ওর শাররীক সৌন্দর্য্য, ওর আবেগ, ওর দুঃখ আর যন্ত্রনাময় কষ্টগুলোকে তিল তিল করে উপভোগ করতাম। রোমাঞ্চিত হতাম। ওর যন্ত্রনাকাতর মুখ ভেবে আমার বড় কষ্ট হয় আজ। ওর আনন্দ, ওর সাফল্য আমাকে ঈর্ষান্বিত করে তুলতো। ওরই টাকায় মদ খেয়ে টাকা উড়াতাম, বিলাসবহুল গাড়ি চালাতাম তবুও ওর সাফল্য আমাকে পাগল করে তুলেছিলো। ওকে কোনো পুরুষ অভিনয় করেও ছুঁয়েছে, এটা সহ্য হত না আমার।

রুদমিলা আমার প্রতি ভালোবাসা হারিয়েছিলো। আমি জানতাম কিন্তু মানতে পারতাম না। এই রকম যন্ত্রনাদায়ক মানষিক রোগীকে কারো সহ্য হবার কথা নয়। কিন্তু তার সহ্য করতে হয়েছিলো আমাকে এতগুলো বছর। কারণ আমি জেনে শুনেও মানতে পারতাম না রুদমিলা আমাকে ভালোবাসে না। একবার আমার খুব জ্বর হলো। রুদমিলা তার সব কাজ বন্ধ করে দিয়ে আমার পাশে বসে থাকলো পুরো ছয় ছয়টি দিন। জ্বর মাপা, স্যুপ করে মুখে তুলে খাইয়ে দেওয়া। আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো, লজ্জাও হয়েছিলো সেবার।এই ফুলের মত মেয়েটার সাথে আমি কি করে এমন অত্যাচার করি? আমার নিজের হাত দুটো কেটে ফেলতে ইচ্ছে হয়েছিলো।

বার বার প্রতিজ্ঞা করেছি। নিজের সাথে নিজের প্রতিজ্ঞা, রুদমিলাকে আর কষ্ট দেবোনা। ওর প্রতি আর কোনো অন্যায় করবোনা আমি।
অকারণ সন্দেহ, কারণে অকারণে অপবাদ গঞ্জনা এসব ভুলে যাবো সারাজীবনের মত। রুদমিলাকে আমি ভালোবাসি। আমার জীবনের চাইতেও অনেক বেশি ভালোবাসি ওকে। কিন্তু পরক্ষনেই ভুলে গেছি আমার সেসব প্রতিজ্ঞা। মাঝে মাঝে ভাবি শুধুই কি আমারই দোষ ছিলো? রুদমিলাও কি দোষী ছিলোনা? সে আমার কোনো অন্যায় অপবাদের উত্তর দিত না। কখনও প্রতিবাদ করতো না যে সে এসব কোনোরকম অন্যায়ই করেনি। সে চুপচাপ মুখ বুজে শুনতো। সব রকম অত্যাচার সহ্য করতো আর পরক্ষনে সে একটা অতুলনীয় অন্যায় জানতো। চরম উপেক্ষা। আমার কোনো দুঃখ, কষ্ট বা সন্দেহকেই সে পাত্তা না দিয়ে, আমার সে অক্ষম যন্ত্রনার কোনো রকম মূল্য না দিয়েই চরম উপেক্ষায় উড়িয়ে দিত সে। এ জিনিসটাই সহ্য করতে পারতাম না আমি। সহ্য করতে পারিনি।

কিন্তু রুদমিলাকে আমি ভালোবাসি। সে ভালোবাসার তীব্রতা কতখানি তা এতগুলো দিন পরে রুদমিলাবিহীন এই প্রবাসে বসেও অনুভব করেছি আমি। যদি পারতাম রুদমিলার জীবন থেকে আমি মুছে দিতাম আমার সকল স্মৃতি। ওর সকল যন্ত্রনাময় অতীত। আমি পারিনি । আমি কিছুই পারিনি। আমি একজন অক্ষম মানুষ। রুদমিলার মত একজন রজনীগন্ধার পবিত্র কুড়িকে আমি দুমড়ে মুচড়ে ক্ষত বিক্ষত করেছি। আমার পাপের কোনো মাফ হয়না। আমার অপরাধের শেষ নেই।

কিন্তু না, আমি যে ভুল করেছি বা আমার ভুলের কারণে রুদমিলা তার জীবনে সে সাফারটা করেছে সেই দূর্বিসহ দূর্ভোগ আমি আর তার জীবনে আসতে দেবোনা। যে কোনো মূল্যেই হোক আমার প্রাণের বিনিময়ে হলেও আমি রক্ষা করবো আমার রুদমিলাকে। রুদমিলার জীবন থেকে যে কোনো অপশক্তির ছায়া দূর করবোই আমি। তাতে যদি আমার জীবন বিপন্ন হয় তাই হবে। আমার প্রানের বিনিময়ে হলেও রুদমিলাকে আমি দিয়ে যাবো একটি নিষ্কন্টক জীবন......






ষোলটি বছর পর-
এখানে আসবার সময় আমার বয়স ছিলো ছত্রিশ। আজ ষোলটা বছর পর বার্ধক্যের দ্বারপ্রান্তে পৌছে যাওয়া এক সফল মানুষ আমি। এই জীবনের নানা বিফলতার পর এই সর্বশ্রেষ্ঠ সাফল্য প্রাপ্তি আমাকে গর্বিত করে নিজের কাছে। আমার ধারণা তাতে আমার সকল পাপের প্রায়েশ্চিত্ত না হোক কিছুটা হলেও আমার পাপের বোঝা কমাতে পেরেছি। আর সর্বোপরি রুদমিলাকে দিতে পেরেছি এক কন্টকবিহীন জীবন।

আজ আমার মুক্তির দিন। ষোল বছর আগের ছেড়ে রাখা পোষাক পরে আমি যখন এক মুখ দাড়ি গোঁফ নিয়ে জেইল গেইটে এসে দাঁড়ালাম। এক উর্দীপরা গাড়িচালক আমাকে এসে সালাম দিলো। আমাকে সে নিয়ে যেতে এসেছে। আমি অবাক হলাম না কেনো জানিনা। তাকে অনুসরন করে গাড়িতে উঠে বসলাম।

আমি রুদমিলাকে জিগাসা করলাম, আমরা কোথায় যাচ্ছি?
রুদমিলা যথারীতি সেই আগের মতই। উত্তর দিলোনা। আমি কিছু না বলে অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম এ ষোলটা বছরে রুদমিলা একদম বদলায়নি। একটুও বুড়িয়ে যায়নি বরং যেন আরও সুন্দরী হয়ে উঠেছে। একটু মুটিয়ে যাওয়া শরীরে রুদমিলা আজও ক্ষুরধার সৌন্দর্য্যের অধিকারী। আমি জানালা দিয়ে দূরে তাকালাম।

ফের জানতে চাইলাম, রুদমিলা একটা উত্তর দেবে প্লিজ? আমার কন্ঠে অনুনয় ছিলো।
রুদমিলার বুঝি করুণা হলো। সে অন্যদিকে তাকিয়ে বললো, বলো-
আমি বললাম, আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, তোমার সাথে বিচ্ছেদের পর তুমি তোমার পাসওয়ার্ডগুলো বদলে দাওনি কেনো?
রুদমিলা মুখ খুললো, আমি জানতাম তুমি উন্মাদ, শুধু জানতাম না তোমার উন্মত্ত ভালোবাসাটা, জানলে বদলে দিলাম....
আমি চুপ রইলাম।

রুদ্রকে নির্মমভাবে খুন করে আত্ম সমর্পনের পর আমি ভেবেছিলাম পোলিস অফিসারকে বলা কথাগুলো মানে রুদ্রের সাথে আমার ব্যাক্তিগত দ্বন্দের নিছক পরিকল্পনা মাফিক অভিনয়টা নিঁখুত ছিলো। কেউ কখনও ইভেন রুদমিলাও কখনও জানতে পারবেনা পেছনের সত্য ঘটনাটি। কিন্তু আজ বুঝলাম শুধু এগারোটা বছর কেনো এগারো শত বছর ধরেও রুদমিলার মত পাক্কা অভিনেত্রীর সাথে থেকেও পাক্কা অভিনেতা হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। আমার নিঁখুত অভিনয় ভেবে তৃপ্তি পাওয়ার কোনো মানে নেই।শতবার জন্মালেও রুদমিলার কাছে আমাকে ভালোবাসা, ঘৃনা ও অভিনয়ে পরাজিত হতেই হবে বারবার।

শেষ

শুধু তোমার জন্য-১
রুদমিলা তোমাকে ভালোবাসি-২
তুমি আছো দূর ভুবনে-৩
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৩৬
৩৭টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×