প্রতি সন্ধ্যায় কিছু যৌবনহীন যুবকের সাথে আড্ডা দিই। জায়গাটার নাম বলতে চাইনে। তারা,গোপনে অর্নুবর হৃদয়ে প্রমের চাষ করে,আর সতেজ ভালবাসাকে বিদ্রুপ করে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করে মাএ। আলোচনায় শুধু ফ্রয়েড তও থাকে না, রাজনীতি,অর্থনীতি,সমাজনীতি,সাহিত্য এবং সবশেষে উঠে আসে ধর্ম। অদ্ভুত এক জ্ঞ্নগর্ব আলোচনা। প্রথম প্রথম ম্যজিক ওয়ার্ড আর অপ্রাসঙ্গিক তথ্যের আঞমনে খেয় হারিয়ে ফেল্তাম। নিজেকে বড়ই অসহায় মনে হত এই ভেবে যে, হিমালয় সম জ্ঞান-বৃক্ষ্য্রে মাঝে আমি কেবলই তৃনসম। অর্থাৎ অতিব মূর্খ।
সেদিন ইউটোপিয়া নিয়ে ব্রান্ট্রান্ড রাসেল থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছিল আমাদের বাম ঘরানার এক বন্ধু। এৗ দিন ইউটোপিয়া শব্দের সাথে প্রথম পরিচিত হই। কিন্তু আলোচনা শেষ পর্যত্তু বেশী দুর এগোতে পারেনি। আমাদের ডান ঘরানার এক বন্ধু বাম হাত ঠেলে দিল। সে অপ্রাস্িঙ্গকভাবে বলে উঠল-রবিন্দ্রনাথের মুসলিম মিত নিয়ে কোন লেখা নাই। ব্যস হয়ে গেল আড্ডা উওপ্ত। সঙ্গে সঙ্গে কার্তিক ঠাকুর তর্জনী উচিয়ে বুঝিয়ে দিলে, তুমি নর হত্যাসম পাপ করেছো। বলে রাখা ভাল,কার্তিক ঠাকুর আড্ডার মধ্যমনি এবং অস¤ভব রকমের রবিন্দ্র ভক্ত। গীতাজ্ঞলির কোথায় দাড়ি,কমা,সেমিক্লোন আছে সব বলে দিতে পারে। ছিপ্ ছিপে, মাঝারি উচ্চতা,ভরাট কন্ঠ,রাস ভারি মেজাজ্ বজায় রাখার চেষ্টা করে। নতুনদের পেলে রীতিমত স্কুল বানিয়ে ফেলে। ভাব বাচ্যে উচিত অনুচিতের বিরাট এক ফিরিস্তি তুলে ধরে। তবে, তার আদর্শ এবং মানবতা অসাধারন
প্রসংশার দাবি রাখে।
কার্তিক ঠাকুর পেশায় একজন সাংবাদিক। আমার এক বছরের বড়। ইউনির্ভাসিটিতে থাকতে সঞীয়ভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। দলীয় গ্র“পিংয়ের কারনে তাকে ২১ খানা কোপ খেতে হয়। এই কোপগুলো গায়ে মেনে নিলেও, মনে মেনে নেয়নি। তাই, দায়িত্ববোধ আর আদর্শকে ষ্টোরে তালা দিয়ে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াল। সরে দাঁড়াক আর যাই করুক, আমি বুঝতে পারি, এগুলোকে কার্তিকদা এখন সম্পদ মনে করে। মাঝে মাঝে বলতে শুনি-জানো, আমার ডাকে ক’য়েক শ ছেলে উঠত,বসত। আমার গায়ে এখনও ২১ খানা কোপের দাগ আছে।
আমার ভূমিকা নিরব। সকলের কথা চুপ করে শুনি। এ জন্য সকলেই আমাকে ভদ্র এবং বিশ্বাসী ভেবে,তাদের ব্যক্তিগত অনেক কথা শেয়ার করে। আমার বদাভ্যাস ভিতরে কথা চেপে রাখতে পারিনে। বমি করে দিই। আমার সদ্য বিবাহিতা ¯তৃী আঁচলে মুখ লুকিয়ে হাসে।
গত এক সপ্তাহ ধরে কার্তিকদার অনুপস্তিতি দেখে আমরা সকলেই বিস্মিত। ঠিকমত অফিসে যাচ্্েছ না,আবার অসুত্থ,তাও না। ফোন করলে ব্যস্ততার কথা বলে। ব্যস্ততার হেতু সকলের কাছে রহস্যজনক। আমি বিষয়টা আন্দাজ করতে পারছি, কিন্তু ওদের বলতে পারছিনে। আমি তার রুচি,অরুতি,অভাব,বোধ সম্পর্কে অনেক খানি জেনে গেছি। কার্তিকদা যতটা না নারী বিদ্ধেষী, দেখায় তার চেয়ে বেশী। কিন্তু রাবিন্দ্রিক রমনীতে এতোটাই হ্যাংলা যে, রবিন্দ্রনাথের লেখনীকে ছাড়িয়ে যায়। তাই দীর্ঘ দিন ধরে সে একজন রাবিন্দ্রিক নারীর সন্ধান করছিল। পেয়েও ছিল, কিন্তুৃৃৃৃ.. ..!
আকাশ মেঘলা, বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বাসায় যাব ভাবছি। হঠাৎ কার্তিকদার ফোন। আমি চোখ কপালে তুলে ফোনটা ধরলাম, মনে হল চিবিয়ে চিবিয়ে হাসছে-কোথায় আছিস?
-অফিসে,
-অফিস থেকে সোজা শিল্প কলায় চলে আয়, কাজ আছে।
হাসতে হাসতে ফোনটা রেখে দিল। মানে বুঝলাম না। তবে কার্তিকদার কাজ মানেই আমাকে কোন মেয়ের সাথে আলাপ করিয়ে দেওয়া এবং তারপর আমাকে করতে হবে মেয়েটার নখ্ থেকে চুল অব্দি বর্নণা। এর আগে গন্ডা দু’য়েকের সাথে আমাকে আলাপ করিয়েছে। রবিন্দ্র সঙ্গীত জানলেই কার্তিকদার পছন্দ। তখন থেব্ড়া নাখ্ও বাঁশীর মত হয়ে যায়। আমিও তার ব্যকরণ ধরে ধরে বর্ণনা করি। তারপরও হংস দেবী তো দুরের কথা কীর্তন দলের ঢ্যাংগা মেয়েটাও আসে না। আমি কার্তিকদার রুমান্টিসিজ্ম নিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখেছি,তার দোষ একটাই, প্রেমিকাকে ছাএী মনে করে পাঠ দান করা। এ ছাড়াও একটা অজ্ঞতা পরিলক্ষিত হয়, সেটা হল, সে জানে না-নারীরা সর্বপরি বুদ্ধিমতী হয়, জ্ঞানী হয় কম।
অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা চলে এলাম শিল্পকলায়। দেখলাম রবিন্দ্র গানের অনুস্ঠান, বুঝতে আর বাকী রইল না। দীর্ঘ সময় ধরে কার্তিকদার সাথে বসে গান শুনতে হবে। কষ্ট হচ্ছিল এই ভেবে যে, গানের মধুর রস শুকিয়ে যাবে, কার্তিকদার বিশ্লেষণের শুষ্কতায়। যা হোক্ রিক্সা থেকে নেমে ফোন দিলাম।
-দাদা, আমি কি ভিতরে ঢুকবো ?
-আরে না, নৃত্যকলা বিল্ডিংয়ের দোতলায় আয়,
- আচ্ছা।
হিসাব মিলাতে পারলাম না। সোজা চলে এলাম নৃত্যকলার দোতলায়। সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই আমার চোখ আটকে গেল করিডোরের রেলিং-এ। ছিপছিপে লম্বা গড়ন, গৌর মুখ, বড় কালো টিপ পরেছে কপালে। ঠিক রবিন্দ্রনাথের ছোট গল্পের নায়িকার মত। তার পাশে কেউ বসে আছে কিনা লক্ষ্য করিনি। সামনে এগোতেই কার্তিকদার কন্ঠ ভেসে এল। এ হলো আমার বন্ধুৃৃৃৃৃ..........। মেয়েটা হাত বাড়িয়ে দিল। আমি কার্তিকদার দিকে তাকালাম। কার্তিকদা মুখ নেড়ে হ্যান্ডশেক করার অনুমতি দিল। মেয়েটি মিষ্টি হেসে বলল- আমি লাবন্য।
মুহুর্তে শিলং-এ ফিরে, দেখে নিলাম। কার্তিকদা লাবন্যের অন্য হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল- শী ইজ মাইন।
আমি হাত সরিয়ে কার্তিকদাকে সাভাবিকভাবে জিজ্ঞেস করলাম- গান শুনবে না? কার্তিকদা হাসল-জানিস্,ও ভালো রবিন্দ্র সংগীত গায়। তাছাড়া ওর বড় পরিচয়,ও একজন পেন্টার, ভালো ছবি আঁকে।
আমি হা করে সব শুনছিলাম আর লুকিয়ে লুকিয়ে আড় চোখে লাবন্যকে দেখছিলাম। চা খেতে খেতে গোটা চারিক রবীন্দ্র সংগীত শুনলাম। বেশ মিষ্টি কন্ঠ। কখন যে ৯টা বেজে গেছে বুঝতেও পারিনি। তড়ি ঘড়ি করে উঠে পড়লাম। যাওয়ার সময় কার্তিকদা উচ্চ স্বরে আমাকে শুনালো- সামনে মাসে আমরা বিয়ে করছি, সবাইকে বলে দিস।
কার্তিকদার সাহসিকতায়, আমি লজ্জামিশ্রিত সাফল্যের দিগন্ত দেখতে পেলাম। অসম্ভব রকমের ভাল লাগল।
আড্ডা , অফিস সবখানে ঢি,ঢি পড়ে গেল। দুই দিন বাদে কার্তিকদা এসে সবাইকে মিষ্টিও খাইয়ে গেল। বিয়ের দিন তারিখ ঠিক। আয়োজন চলছে জোরেসরে। যাচিত হয়ে মাঝে মাঝে কার্তিকদাকে ফোন করি, যদি আমাকে কোন কাজে লাগে। সত্যি কথা বলতে কি, প্রথম দেখায় আমিও তাকে ভালোবেসে ফেলেছি। ওর মধ্যে বাংলার রুপ খুজে পাই। মিহি কন্ঠ, শান্ত চাহনি, অপূর্ব বাচন ভঙ্গি মনে পড়তেই,ভিতরটা কেমন যেন উহু করে উঠে। হিংসে হয় কার্তিকদাকে।
আজ একটু আগে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়েছি। নিউমার্কেটে কিছু কেনকাটা করব বলে। ভ্যাপসা গরম পড়েছে। রিকসার জন্য মড়ে এসে দাড়িয়েছি। হঠাৎ ফোন। অপরিচিত নাম্বার।
-হ্যালো
-আমি লাবন্য বলছি।
-কন্ঠ আড়ষ্ঠ হয়ে এলো।
-হ্যা বলুন লাবন্যদি।
-একটু সময় হবে?
-নিশ্চয়, কোথায় আসতে হবে বলুন?
-বেঙ্গলে একটা এক্সজিবিশন চলছে। ওখানে আসুন প্লিজ্।
- ঠিক আছে, আমি আসছি।
কিছু বুঝলাম না । আমাকে নিয়ে হঠাৎ এত উৎসাহ ! ঠিক আছে তো, না কার্তিকদার সাথে আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘঠেছে? সন্দেহ কাটাতেই আমি কার্তিকদাকে ফোন করি। আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজেই বলতে থাকে- লাবন্যকে তোর নাম্বার দিয়েছি। ওকে একটু সাহায্য করিস। আর শোন, কার্ড ছাপা হয়ে গেছে। অতিথি নির্বাচনে তোকে একটু সাহায্য করতে হবে। পরে কথা হবে, এখন রাখি।
কিছুই মাথায় ঢুকল না। রিক্সা নিয়ে সোজা বেঙ্গলে চলে এলাম। ঘন্টা দুয়েক লাবন্যর সাথে ছিলাম। মনে মনে যা ভেবেছিলাম তা নয়। কার্তিকদাকে সে সত্যি সত্যি ভালোবাসে। কিন্তু আমার উপর একটা দায়িত্ব চাপানো হয়েছে। সে দায়িত্ব এতটাই কঠিন যে,তার ভার বহন করিবার শক্তি আমার নাই। তবুও আমাকেই পালন করতে হবে। বৈচিএ্ময় সৃষ্ঠির কতটুকুই বা আমরা ভেবেছি?
পরের দিন আমার অফিসে কার্তিকদাকে ডেকে পাঠালাম। চা খেতে খেতে কার্তিকদাকে জিজ্ঞেস করলাম-লাবন্যকের্ তুমি কতটা জান?
কার্তিকদা এক গাল হেসে বলল-তুই,এই জন্যই আমাকে ডেকেছিস। শোন, কারো অতীত নিয়ে আমার বিন্দুমাএ ইন্টারেষ্ট নাই। ও আমাকে অনেকবার বলতে চেয়েছে। কি বলবে, তা আমি জানি। হয়তো আগে বিয়ে ছিল, অথবা প্রেম ছিল, এই তো? সো হয়াট? আমি এখন উঠি, অনেক কাজ পড়ে আছে ।
চা শেষ না করে, কার্তিকদা উঠে দাঁড়াল। আমি চা শেষ করে য়াওয়ার বিষেশ অনুরোধ করলাম। কার্তিকদা বসল। কিছুক্ষন চুপ করে রইলাম। সত্য যতই নির্মম হোক না কেন, আমাকে তো বলতেই হবে। আমি চা শেষ করে খুব সাভাবিকভাবে বললাম-সী ইজ সীমেল। সাথে সাথে কার্তিকদার মাতায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। চাপা কন্ঠে উচ্চারন করল-হোয়াট?
-ইসেস, ও আমাকে ডেকেছিল, ওটা বলার জন্য।
মুহুর্তে পরিবেশ তার ভাষা হারালো। প্রতিকুলতার ঘনত্ব আরও বাড়তে থাকল। কার্তিকদার চোখে মুখে চাপা দুঃখের উষ্ণতা টের পেলাম। ঘোর কৃষপক্ষে কালবৈশাখীর কবলে পড়া অসহায় পাখির মত কার্তিকদা বিদ্ধস্ত অবস্থায় উঠে গেল।
এখন নিজেকে খুব হালকা লাগছে। শুধু মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন বার বার উঁকি দিচ্ছে, কার্তিকদা কি পারবে প্রকৃতির এই নির্মম বিন্যসকে মেনে নিতে? হয়ত পারবে, ন
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১০:৫৫