'' ধর্ষকদের জন্য একটাই আইন চাই , ৯০ দিনের মধ্যে ফাঁসী চাই । যাবজ্জীবন কিংবা জরিমানা নয় । কোন প্রকার ক্ষমা / বিশেষ ক্ষমা / সাধারণ ক্ষমা নয় । ''
এই দাবীকে সামনে রেখে সিলেটে আজ ১১-০১-১৩ইং তারিখে অনুষ্ঠিত হয়েছে আলোর মিছিল। মাত্র ৪ দিনের নোটিশে শুধু ফেসবুক আর ব্লগে প্রচারনা করেই আমরা পেয়েছি বিপুল মানুষের সমর্থন। যা আমাদের কাছেই অপ্রত্যাশিত। সবার এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণই বলে দিচ্ছে সকল মানুষ চায় " ধর্ষকের ফাঁসি, আর নয় নারী নির্যাতন কিংবা ইভটিজিং "
ইভেন্ট প্রস্তুতি ঃ আমিনুর রহমান ভাই হঠাৎ করেই ফেসবুকে জানিয়ে দিলেন ঢাকায় উনারা আলোর মিছিল করবেন আমরাও করবো নাকি। টার পরেই সাকিন উল আলম ইভান ভাই এবং তানভীর চৌধুরী পিয়েল ইভেন্ট ওপেন করলেন ফেবুতে আর ডাক আসলো মিটিং এর। সবার পরীক্ষার কারনেই অনেকেই আসতে পারেনি। কিন্তু ফেবুতে আপডেট নিচ্ছে সব সময়। আমি, পিয়াল ভাই, সাকিনভাই এবং মামুন ভাই এক সাথে বসেই একটা পরিকল্পনা করা হলো। তারপরের দিন আবার আমি, পিয়েল ভাই, রুপম দা এবং সুমন ভাই বিকেলে বসে ঠিক করলাম কি কি করতে হবে। আলো প্রদানকারী হিসেবে মোমবাতিকে বাদ দিয়ে তুলে নেওয়া হলো মাটির প্রদীপ। একই সাথে পুলিশ পারমিটের জন্য পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে যেতে যেতে হয়ে যায় সন্ধ্যা। উনারা আর অবেদন গ্রহণ করলেন না। পরদিন আমি একা গিয়ে আবেদন জমা দেই। কিন্তু সন্ধার দিকে আমাকে উনারা আমাকে কল দিয়ে বলে " আমরা কে, ব্লগার কি কেন করবো, ইত্যাদি ইত্যাদি। " আমি তাদের সাথে আজকে যোগাযোগ করবো বলে দিলাম। যথারীতি আজকে সকালের দিকে দেখা করলাম এবং বুঝলাম উনাদের সমস্যা নাই কিন্তু উনারা আসলে নিশ্চিত হয়ে চেয়েছেন আমরা কোন রাজনৈতিক দলের লোক কিনা কিন্তু সমস্যা হয় " আমাদের প্রতিবাদের বিষয় নিয়ে " উনার সংক্ষিপ্ত ভাষ্য হলো " এভাবে প্রতিবাদ করে কিছু হবে না, এটা চলমান প্রক্রিয়া, এটা আগেও ছিল আগামীতেও থাকবে এবং এটা আগামীতে বৃদ্ধি পাবে। এবং এর জন্য মেয়েরাও দায়ী। এরা টাইট পোষক পড়ে, চলাফেরা করে অশালীন। যুদ্ধের সময়ও ধর্ষণ হয় এবং এটাই স্বাভাবিক। মেয়েরা পুরুষদের শ্রদ্ধার সাথে ভয় পাবে এটাই নিয়ম। ইত্যাদি ইত্যাদি। " যাই হোক আমাদের হাতে ছিল মাত্র কয়েক ঘণ্টা তাই আমরাও কথা না বাড়িয়ে ৩০ মিনিটের বিশাল বক্তব্য শুনে বেরিয়া গেলাম এই সিদ্ধান্ত নিয়ে যে উনাদের কোন আপত্তি নেই।



অনুষ্ঠান ঃ বিকেল ৪।৩০ মিনিটে আমরা বলেছিলাম সবাইকে চলে আসতে এবং সবার আগে আলিম আল রাজি তারপর একে একে সবাই চলে আসেন। সন্ধার ঠিক পরেই দেখা যায় সাংবাদিকদের চলে আসতে এবং শুরু হয়ে যায় আমাদের আলোর পথে আলোর মিছিল। সমাজের অন্ধকার দূর করতে প্রদীপ শিখা নিয়ে ছুটে চলা। আলোর মিছিলটি নগরীর চৌহাট্টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে জিন্দাবাজার হয়ে আবার শহীদ মিনারে এসে শেষ হয় তারপর শহীদ মিনারের সামনে একটা মানববন্ধন করা হয় জাতে বক্তব্য দেন ব্লগার দলছুট শুভ , অনিন্দিতা দাশ গুপ্ত, সাংবাদিক ও সংস্কৃতি কর্মী আল আজাদ, নাট্যব্যক্তিত্ব নিরঞ্জন দে যাদু এবং সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন সাংবাদিক " দেবাশীষ দেবু "। তারপর শহীদ মিনারে প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় আমাদের এই ইভেন্ট। ধন্যবাদ সবাইকে।
এই ইভেন্টে যারা সাহায্য না করলে আমরা অনুষ্ঠান সফল করতে পারতাম না তারা হলেন " প্রান্তিক পর্ষদের " " একুশ তাপাদার , কবির য়াহমদ , দেবাশীষ দেবু, এরা সাহায্য না করলে আমরা এতদূর যেতেই পারতাম না। অসংখ্য ধন্যবাদ প্রান্তিক পর্ষদের ভাই-বোনদের। আগামীতেও তাদের সাহায্য পাবো এই আশা আমাদের।
ধন্যবাদ সিলেটের সকল ব্লগারদের যারা শুধু অনলাইনেই নয় অফলাইনেও প্রতিবাদের ঝড় তুলেন। আমি আবারও ধন্যবাদ জানাই নিয়েল ( হিমু ) ভাইকে যার আহবানে আমরা প্রথম একত্রিত হয়েছিলাম। এবং এখনো আছি। আগামীতেও থাকবো। যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে।
সাধারণ মানুষরা আমাদের এই ইভেন্টে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশগ্রহন করেছে। আমাদের সাথে আলোর মিছিলে যোগ দিয়েছে এমন অনেক মানুষ যাদের সাথে আমাদের ভার্চুয়াল জগতের কোন মানুষের পূর্ব সাক্ষাৎ নেই। আমাদের ব্যানারের বক্তব্য দেখেই তারা আমাদের সাথে একাত্ততা ঘোষণা করে। ধন্যবাদ সবাইকে। এই জাগরণই আমরা চাই। সাধারণ মানুষের বক্তব্য প্রকাশ হোক এটাই আমরা চাই।
তাছাড়া অনেকের অবদান ছিল আজকের এই ইভেন্টে তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। এবার কথা হলো " ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড " এতে নেই কোন আপিল। ধর্ষক প্রমানিত মানেই মৃত্যুদণ্ড।
আজকেই এই ইভেন্ট তখনই শতভাগ সফল যখন এই ধর্ষকদের ফাঁসি হবে। যখন একটা মেয়ে আর ধর্ষণ কিংবা ইভটিজিং এর শিকার হবে না। এসিড নিক্ষেপ যেভাবে বন্ধ হয়েছে ঠিক সেভাবেই যেন বন্ধ হয় ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতন
আলোর মিছিলের ছবি ঃ
১। চলছে প্রস্তুতি ঃ
২। চলছে তেলবাজি। তানভীর চৌধুরী পিয়েল।
৩। চলছে প্রদীপ প্রজ্বলন। দলছুট শুভ

৪। চলছে প্রদীপ প্রজ্বলন। আলম আল রাজি। মুখের এক পাশ দেখা যাচ্ছে তন্ময় দার।

৫। শুরু হয়ে গেলো ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতনের অন্ধকার দূর করতে আলোর মিছিল। এখানে কবির ভাই এবং একুশ ভাইকে দেখা যাচ্ছে।

৬। আলিম আল রাজি ভাইকে দেখা যাচ্ছে দু হাতে প্রদীপ নিয়ে এগিয়ে গেতে। আলো আসবেই ।
৭। এবার দলছুট শুভ। চাদর পড়া। চাদরের নিচে আবার সোয়েটার আছে। শীতে মরে গেলাম রে ।

৮। দলছুট শুভ, কবির য়াহমদ, সাকিন উল আলম ইভান।
৯। ডান পাশে সাকিন উল আলম ইভান, দলছুট শুভ। ঠিক অন্য পাশে অনিন্দিতা দাস গুপ্ত ।
১০। মানববন্ধনের প্রস্তুতির সময়। দলছুট শুভ, সাকিন উল আলম ইভান ।
১১। প্রথমেই আলিম আল রাজি। মানব বন্ধনের শেষে।

১২। শহীদ মিনারে প্রদীপ প্রজ্বলন। ফটো ঃ সাকিন ভাই ।
১৩। প্রদীপ প্রজ্বলন। রূপম ( মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় )
প্রস্তুতি পর্ব প্যারার মধ্যে থাকায় একজন পুলিশের বক্তব্য হয়তো অনেকের চোখ এড়িয়ে যাবে তাই আবার দিলাম ঃ
উনার সংক্ষিপ্ত ভাষ্য হলো " এভাবে প্রতিবাদ করে কিছু হবে না, এটা চলমান প্রক্রিয়া, এটা আগেও ছিল আগামীতেও থাকবে এবং এটা আগামীতে বৃদ্ধি পাবে। এবং এর জন্য মেয়েরাও দায়ী। এরা টাইট পোষক পড়ে, চলাফেরা করে অশালীন। যুদ্ধের সময়ও ধর্ষণ হয় এবং এটাই স্বাভাবিক। মেয়েরা পুরুষদের শ্রদ্ধার সাথে ভয় পাবে এটাই নিয়ম। তবে অবশ্যই ভয় পেতে হবে। ভয় পাবে না কেন ?? ওরা থাকবে ঘরে। ওরা এখন চাই সমঅধিকার। এসব করলে তো ধর্ষিত হবেই। ইত্যাদি ইত্যাদি। "
নিউজ লিঙ্ক এবং টিভি নিউজ ভিডিও আপলোড হবে। খুব শীঘ্রই
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৫৫