বৃষপর্ব্ব-কন্যা শর্মিষ্ঠার দাসীত্বের বিবরণঃ
জন্মেজয় যোড়হাতে পুনরায় কি হল জিজ্ঞাসা করলেন।
মুনি বলেন –কচের দুঃখ দেবযানীর মনে থেকে গেল।
তিনি একদিন বৃষপর্ব্বপুরে স্নান করতে গেলেন।
বৃষপর্বরাজার কন্যা শর্মিষ্ঠাও দাসীদের সাথে সেখানে স্নান করতে এলেন।
চৈত্ররথ নামে বনে এক সরোবর ছিল। সেখানেই সকলে জলক্রীড়া করছিলেন। সকলে আপনার বস্ত্র পাড়ে রেখে জলে নামেন।
এমন সময় খরতর বায়ু বয়। সকলের বস্ত্র একত্র হয়ে যায়।
দৈত্য কন্যা শর্মিষ্ঠা সকলের আগে উঠে ভুল বশত দেবযানীর বস্ত্র পরিধান করেন।
দেবযানী দেখে ক্রোধান্বিত হয়ে বলেন -শুদ্র কন্যা হয়ে শর্মিষ্ঠার এত অহংকার! যে সে ব্রাহ্মণ কন্যার বস্ত্র পরে!
দেবযানীর বাক্যে শর্মিষ্ঠাও কুপিতা হয়ে বলেন -সত্যি, তাদের মধ্যে অনেক অন্তর! কারণ তার পিতার অন্ন গ্রহণ করেন দেবযানীর পিতা, তার পিতার সদা স্তুতি গান দেবযানীর পিতা।
এসব কথা বলতে বলতে রাগে শর্মিষ্ঠা দেবযানীকে কূপে ফেলে নিজ গৃহে ফিরে গেলেন।
দেবযানী বাঁচল কি মরল কেউ তা দেখল না।
সেই বনেই ভাগ্যের ফেরে সে সময় যযাতি মৃগয়া করছিলেন।
যযাতির সৈন্যরা তৃষ্ণার্ত হয়ে জলের সন্ধানে বেড়িয়ে কূপে সুন্দরীকে পড়ে থাকতে দেখে রাজাকে সে কথা জানায়।
যযাতি এসে দেখেন এক অতি পুরাতন কূপ তৃণে আচ্ছন্ন, সেখানে চন্দ্রের সমান এক কন্যা পড়ে আছেন। তিনি কন্যার পরিচয় জানতে চান।
দেবযানী বলেন –সব পরিচয় দেব, আগে হাত বাড়িয়ে তোল। আমি শুক্রাচার্যের কন্যা।
রাজা ভয় পান। একে ব্রাহ্মণ শ্রেষ্ঠ শুক্রের কন্যা, তায় যুবতী।
দেবযানী আশ্বস্ত করলেন নারীকে অন্ধকূপ থেকে বাঁচালে রাজার কোন পাপ হবে না।
যযাতি কন্যার ডান হাত ধরে তাকে কূপ থেকে উদ্ধার করলেন। পরে নিজ দেশে ফিরে গেলেন।
সে সময় ঘূর্ণিকা দাসীকে দেখে দেবযানী কেঁদে সব বৃত্তান্ত জানিয়ে পিতাকে বলে পাঠান তিনি কোন মুখে পিতৃগৃহে যাবেন।
ঘূর্ণিকার মুখে শর্মিষ্ঠার দেবযানীকে কূপে ফেলার ঘটনা শুনে শুক্র বিষণ্ণ হন এবং প্রাণপ্রিয় কন্যাকে দেখতে যান।
গিয়ে দেখেন কন্যা বনের ভিতর হেঁট মুখে বসে কাঁদছেন। তিনি কন্যাকে শান্তনা দিতে থাকেন। দেবযানী শর্মিষ্ঠার সকল কথা পিতাকে যানান।
শুক্র দেবযানীকে ক্রোধ দমন করতে বলেন।
তিনি বলেন –ক্রোধে মানুষ ভ্রষ্ট হয়, যে ক্রোধকে দমন করতে পারে সেই প্রকৃত সর্ব ধর্মে ধার্মিক।
তবু দেবযানীর মন থেকে কষ্ট দুর হয় না। শর্মিষ্ঠার অপমান তাকে পীড়িত করে।
বলেন –পিতা আমি ওসব কথা জানি, কিন্তু পন্ডিতেরা বলেন নীচ লোকের কাছে অপমানিত হওয়ার চেয়ে মরণ ভাল। অস্ত্রাঘাতে যে ক্ষত হয় তা সারে, কিন্তু বাক্ক্ষত সারে না।
কন্যার কথা শুনে শুক্র বৃষপর্ব রাজার সামনে উপস্থিত হয়ে জানালেন তিনি রাজ্য ত্যাগ করতে চান।
ব্রাহ্মণ শ্রেষ্ঠ বৃহস্পতির নন্দন কচকে তারা মিথ্যা হত্যার চেষ্টা করেছে। তার কন্যা শর্মিষ্ঠা দেবযানীকে মারবার জন্য অন্ধকূপে ফেলেছে।
নারীবধ, ব্রাহ্মবধ যারা করে তারা পাপী। তাদের কাছে থাকলে তারও পাপ হবে।
দৈত্যরাজ শুক্রের পায়ে এসে পড়লেন। তাকে অনুনয় করতে লাগলেন, শুক্র যেন তাদের ত্যাগ না করেন। সকল পাপের জন্য তিনি ক্ষমা চাইলেন।
শুক্র বলেন –আমার আদরের কন্যা দেবযানীকে যদি তুষ্ট করতে পার তবেই আমি এস্থানে থাকব।
রাজা যোড়হাতে দেবযানীর কাছে গিয়ে ক্ষমা চান।
দেবযানী কোন কথা শুনতে নারাজ। তিনি শর্মিষ্ঠাকে দাসীরূপে চান।
রাজা অন্তপুরে দাসী পাঠান কন্যা শর্মিষ্ঠাকে আনার জন্য। কুল রক্ষার্থে, স্বজাতীর কল্যাণার্থে শর্মিষ্ঠা চতুরদোলায় চেপে পিতার সামনে উপস্থিত হলেন।
বৃষপর্ব বলেন দৈবের লিখন তাই শর্মিষ্ঠাকে দেবযানীর দাসী হতে হবে।
শর্মিষ্ঠা বলেন –পিতা আপনার আজ্ঞায় এবং নিজ কর্ম দোষে আমি দাসী হলাম।
দেবযানী বলেন –তুমি রাজকন্যা! তোমার পিতার স্তুতি আমার পিতা করেন। তুমি কি ভাবে আমার দাসী হবে!
এই ব্যঙ্গে শর্মিষ্ঠা বলেন –জ্ঞাতির কুশল আর পিতার বচন রাখতেই আমি দাসী হলাম। এতে আমার এতটুকু লজ্জা নেই।
এভাবে শুক্র কন্যা দেবযানীকে আপন গৃহে নিয়ে গেলেন। এবং শর্মিষ্ঠাও তার দাসীরূপে সে গৃহে অবস্থান করতে লাগলেন।
..........................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
..........................................
আগের পর্ব:
কথাচ্ছলে মহাভারত - ২৬
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১১:৫৭