মহর্ষি বৈশম্পায়ন প্রমুখাৎ মহারাজ জন্মেজয়ের "শ্রীমহাভারতকথা" – শ্রবণারম্ভঃ
মহারাজ জন্মেজয় বিনয়ের সঙ্গে মুনিকে কাছে পেয়ে সেই পূণ্য কথা শুনতে চাইলেন।
জগৎ বিখ্যাত বৈশম্পায়ন মুনি ভারতকাহিনী বর্ণনা শুরু করলেন।
প্রথমে তিনি গুরু ব্যাসদেবকে স্মরণ করলেন, যিনি এই ভারতকাহিনী রচনা করেছেন।
এই ভারতকাহিনী শ্রবণ করলে অশেষ পাপ খন্ডিত হয়। সকল যজ্ঞের ফল পাওয়া যায়।
রাজা শুনলে সর্বত্র জয় লাভ হয়। ব্রাহ্মণ হয়ে শুনলে নরকের ভয় দুর হয়। বৈশ্য ও শুদ্র শুনলে, তাদের সকল দুঃখ দুর হয়।
অপুত্রক শুনলে পুত্রমুখ দর্শন পায়।
রাজভয়, শত্রুভয়, পথিভয়, সকল ব্যাধি ও দুর্গতি এই ভারত কথনে খন্ডিত হয়।
মর্তের মানুষ এর শ্রবণে স্বর্গ সুখ লাভ করে। ইহলোকে যশ পায়, অন্তে স্বর্গে যায়। ধর্ম-অর্থ-কাম-মোক্ষ পেতে সক্ষম হয়।
শুদ্ধ মনে যে এই ব্যাসদেবের রচনা শোনে সে অশেষ সুখ লাভ করে। এতে নানা ধর্মের সুবিচিত্র চিত্র-উপাখ্যান অঙ্কিত হয়েছে।
.....................
ভগবানের পরশুরাম অবতারঃ
পৃথিবীতে ক্ষত্রিয়দের শক্তি বর্ধিত হলে তারা কদাচার শুরু করলো।
এই অনাচার বিষ্ণু সহ্য করতে পারলেন না। তিনি ভৃগুবংশে জন্মগ্রহণ করলেন। করে(হাতে) কুঠার নিয়ে জমদগ্নির এই কুমার(পরশুরাম) তিন সপ্তবার (একুশবার) পৃথিবীকে নিঃক্ষত্রা করলেন। ক্ষত্রিয়ের দুগ্ধ শিশুদেরও হত্যা করলেন। এরপর ব্রাহ্মণের হাতে রাজ্য দিয়ে তিনি তপোবনে গেলেন।
ক্ষত্রিয় নারীরা ব্রাহ্মণের গৃহে আশ্রয় পেলেন।
ব্রাহ্মণদের দ্বারা রাজকার্য সম্ভব হল না। ফলে ক্ষেত্রজ সন্তানের জন্ম হল। এই ক্ষত্রিয় সন্তানরা নিষ্পাপ ও ধার্মিক হলেন। ধর্মে মতি থাকায় বংশবিস্তার ঘটল।
এভাবে ধর্মকে আশ্রয় করে ক্ষত্রিয়রা রাজকর্ম তথা প্রজাপালন করলেন। নিজ নিজ বৃত্তিতে সবাই সুখি হলেন। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্র -যে যার কর্মে প্রবৃত্ত হলেন। পাপের প্রসঙ্গ দুর হল। সাগর পর্যন্ত পৃথিবী নরে পূর্ণ হল। স্বর্গের বৈভব যেন ক্ষিতি তথা মর্তে–পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হল।
মর্তের রাজারা দ্বিতীয় দেবরাজ হলেন।
এদিকে যত দৈত্য-দানব স্বর্গ থেকে বিতারিত হয়ে পৃথিবীর সুখ–স্বাচ্ছন্দ দেখে ভোগের কারণে মনুষ্য জন্ম নিতে শুরু করল। তারা পুনরায় পৃথিবীতে হিংসা আনল।
এই দানবদের ভার ধরা আর সহ্য করতে না পেরে বিষাদ বদনে ব্রহ্মার কাছে উপস্থিত হলেন। পৃথিবীর ক্রন্দনে ব্রহ্মা চিন্তিত হলেন। তাকে সান্ত্বনা জানালেন।
বললেন –তোমার জন্য আমি সব দেবতাদের নররূপে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণের আজ্ঞা দেব।
পৃথিবীকে সান্ত্বনা দিয়ে তিনি দেবতাদের নিয়ে পদ্মযোনি বিষ্ণুর কাছে উপস্থিত হলেন। অসুরদের অত্যাচারে পৃথিবী ভারাক্রান্ত। হরি বিনা আর কেউ তাদের সংহার করতে পারে না। সকলে বিষ্ণুর স্তুতি করলেন। প্রজাপতি উর্দ্ধবাহু করে নারায়ণকে কৃপা করতে বললেন।
ব্রহ্মার অনুরোধে লক্ষ্মীপতি অবতার রূপে জন্মগ্রহণে সম্মত হলেন। আশ্বাস দিলেন অবনী তথা পৃথিবীর ভার তিনি লাঘব করবেন।
তিনিও দেবতাদের নিজ অংশ নিয়ে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করতে বললেন। এই আকাশবাণী পেয়ে প্রজাপতি সকল দেবগণকে কার্যে নিযুক্ত হতে বললেন।
এভাবে পৃথিবীতে এক সাথে দেবতা, দানব ও মানব একত্র হল।
এত কথা শুনে জন্মেজয় মুনিকে কোনজন কি রূপে জন্মগ্রহণ করলেন তা জানতে চাইলেন।
..........................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
..........................................
আগের পর্ব:
কথাচ্ছলে মহাভারত - ২০
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ১১:৫০