ছেলে ঘরে ফিরবে। এ নিয়েই তোড়জোড় শুরু হয়েছে পুরোবাড়িতে। মা তার ছেলের জন্য প্রিয় খাবার রান্না করছে। বাবা আর দিদি পথ চেয়ে বসে আছে।
অনেকদিন বাদে তাদের আদরের ছেলে ঘরে ফিরছে। কিন্তু কিভাবে ফিরছে কেউ জানে না।
অনেক অপেক্ষার পর বাড়িতে একটা কফিনের প্রবেশ। সাদা কফিনের উপরে ছেলের নাম লেখা। বাকরুদ্ধ বাবা কফিনের মুখ খুলে ছেলের দেখা পেলো। দিদি জ্ঞানহারা হয়ে পড়লো,মা ছুটে এলো। সব ব্যস্ততাকে যেন নিরবতা একমুহূর্তে গ্রাস করে ফেলেছে।
ছেলের বুকের পর একটা চিঠি পেলো মা। তাতে লেখা,
প্রিয় মা,
তোমার ছেলে তোমার কাছেই ফিরতে চাই। তোমাকে শেষ বারের মতো দেখতে চাই। মা আমাকে একটু মুখে তুলে খাইয়ে দিবে। তোমার হাতে অনেকদিন হলো খাইনি। মা,তোমার ছেলে এই সভ্য সমাজের জন্য না,এই পৃথিবীতে কেউ তোমার মতো ভালবাসতে পারবে না এটা আমি ভুলে গেছিলাম।
মা,আমাকে যখন পাবে তখন তোমার বুকে টেনে নিবে তো! আদর করে বলবে তো,বাবা খেয়ে নে,এই দ্যাখ তোর প্রিয় খাবার রেধেছি নিজ হাতে।
মা, মা গো বাবাকে নিজের প্রতি খেয়াল নিতে বলো আর দিদিকে বলো ও যেন আমার ঘরে কাউকে ঢুকতে না দেয়। ও ঘরে যে আমার শেষ চোখের জল আর অর্ধসমাপ্ত এককাপ চা আর কবিতার খাতা পড়ে আছে।
মা,আমার ডায়েরীতে যাদের নাম লেখা আছে ওরা কেউ আমার বন্ধু কেউ আবার শত্রু। তাদের প্রত্যেকে আমার বিদায়ের কথা জানিয়ে দিবে মা। ওদের প্রত্যেককে যে আমি অনেক ভালবেসেছি মা।
আমার কফিনের পাশে কেউ যেন না কাঁদে,কারো মুখে যেন কান্না না থাকে,শেষ বিদায়ের সময় আমাকে হাসি মুখে বিদায় দিবে।
যদি আমার লাশ থেকে গন্ধ ছোটে,তবে পোড়ানের আগে আমাকে একটু সাজিয়ে দিও। নতুন বরকে যেভাবে সাজায় ঠিক তেমন করে কিন্তু।
ভালো থেকো মা। আমি তোমাদের পাশেই থাকবো।
ইতি,
তোমার খোকন।
মায়ের চোখের জলে চিঠি ভিজলো। লেখাগুলো ভিজে খসে খসে পড়ছে। বাবা তার ছেলের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
দিদি তার ভাইয়ের হাতে হাত রেখে বললো,চল ভাই খেলা করি,খেলবি না আমার সাথে! কি রে কথা বল।
একে একে সবাই এলো।
অনেক অপেক্ষার পরেও, কফিনের পাশে শুধুই ছেলেটির চেনা একটি মানুষ আসলো না।
অবশেষে কফিনের মুখ বন্ধ হলো।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:০৯