somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুক রিভিউ: হাত বাড়িয়ে দাও

২৯ শে মে, ২০১৫ রাত ৩:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই গল্প টি একজন অবিবাহিত মায়ের গল্প এবং তার গর্ভে দিন দিন বেড়ে ওঠা অনাগত এক সন্তানের গল্প। ঠিক যখন থেকে কোন একটা মেয়ের শরীরে নতুন আরেকটি প্রাণের উদ্ভব হয় তখন থেকেই একটা সাধারন মেয়ে একজন মা হয়ে যায়! কিন্তু একজন অবিবাহিত মেয়ে যখন তার পেটে ধারন করে আকস্মিক ঘটে যাওয়া এক অসময়ের বীজ, যার দায় ভার কখনোই সেই পুরুষটি নিতে চায় না, কিন্তু মেয়েটি চায় তার সন্তান কে এই বিচিত্র পৃথিবী দেখাতে; তখন সেই মেয়েটিকে আশেপাশের সবাই কোন চোখে দেখে, পেটের মধ্যে বেড়ে ওঠা সন্তানের প্রতি সকলের কি মনোভাব হয়; কিভাবে তার অনাগত সন্তানের সমগ্র ভার তার কাঁধে এসে পরে, কিভাবে মা ও সন্তান একে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে বেঁচে থাকে, সেই গল্পের নাম ই— হাত বাড়িয়ে দাও।

মেয়েটি নিজের মধ্যে বেড়ে ওঠা সন্তানের সাথে প্রতিটি মুহূর্ত কথা বলে। নিজের সন্তান কে প্রতি মুহূর্তে বোঝাতে থাকে এই পৃথিবী টা কত কঠিন! মাতৃগর্ভ থকে মুক্ত হলেই প্রকৃত জীবনের শুরু। আর সে জানে— জীবন একটা যুদ্ধ, যেখানে প্রতি বিন্দু আনন্দের জন্য জীবন কে কঠোর মূল্য দিতে হয়! তাই তার ভয় হয়, এমন একটা পৃথিবীতে তার সন্তানের জন্ম দেওয়া কতটা সঠিক সিদ্ধান্ত! যেখানে স্বাধীনতা কেবল একটা নাম, কারন জন্মের পর থেকে নিজের অনিচ্ছায় করতে হয় অনেক কিছু, পূরণ করতে হয় প্রভুদের ভুল চাওয়া; যেখানে ভালবাসা হল এক ধরনের তামাশা আর প্রতারণা, যা মানুষকে সবসময় বিভ্রান্ত করে; যেখানে মানুষের আগামী কখনোই আসে না; যেখানে মেয়েদের জন্ম দেওয়াকে অনেক বাবা মা অভিশাপ মনে করে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা নারীদের কোণঠাসা করে রাখে, যেখানে মেয়েদের বেড়ে উঠতে হয় ধর্ষনের ভয় নিয়ে; আবার পুরুষকে নিতে হয় দুনিয়ার ভার, যারা কিনা কাঁদতেও পারবে না; যেখানে ভালবাসার শাস্তি মৃত্যু; যেখানে গরীবের সন্তান একটা চকলেট পায় না; যেখানে নিষ্ঠুর, সবল, হৃদয়হীন মানুষেরাই সর্বত্র জয়ী হয়— এমন একটা পৃথিবীতে তার সন্তানের জন্ম দেওয়া টা কি ঠিক হবে? যেখানে আবার তার সন্তান হবে পিতৃ পরিচয়হীন! অনেক বাঁধা পেরিয়ে, অনেক কষ্ট সহ্য করে জন্ম দিতে চাওয়া সন্তানই যদি কোনদিন তাঁকে প্রশ্ন করে বসে—‘কেন তুমি আমাকে এই পৃথিবীতে নিয়ে এলে? কেন? কে বলেছিল তোমাকে?’ তখন সে কি করবে?

একা হওয়ার জন্য অনেক কষ্ট সহ্য করতে হবে জেনেও এই নারীটি সমগ্র পৃথিবীর বিপরীতে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে তার সন্তানের জন্য। হজম করে সকলের বাঁকা দৃষ্টি আর কঠিন কঠিন সব কথা। যেখানে একজন গর্ভবতী নারী সকলের নিকট থেকে অনেক শুভেচ্ছা, ভালবাসা ও সাহায্য পায় সেখানে তার সাথে কেউ ন্যূনতম ভাল ব্যাবহার টুকুও করে না! তবু নিজের সন্তানের জন্য সে সবকিছু মেনে নেয়। বিসর্জন দেয় নিজের ক্যারিয়ার, ভুলে যায় নিজের ভাললাগা মন্দলাগা। এতকিছুর পরেও যখন সে জানতে পারে তার সন্তানের বৃদ্ধি ঠিকমত হচ্ছে না, তখন তার মন হঠাৎই বিদ্রোহ করে ওঠে। সে তার সন্তান কে নিজের শরীর ছেড়ে দিতে পারে, কিন্তু নিজের মন কে নয়। তাছাড়া শুরুর দিকে সন্তানের প্রতি যে ভালবাসাটুকু ছিল কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হয়ে তা ক্রমেই কমতে থাকে এবং সাময়িকের জন্য তা যেন একেবারে হারিয়েই যায়! সে আবার সিগারেট-হুইস্কি খাওয়া শুরু করে, নতুন করে কাজে যোগ দেয়।

অনিয়মের জন্য তার রক্তপাত হয়। পুরিপূর্ণ বিশ্রামের জন্য হাসপাতালে থাকতে শুরু করে। কিন্তু এইবার আবার একাকিত্ব তাকে বিষিয়ে তোলে। আবারও নতুন করে অস্বাভাবিক জীবন শুরু করে। তারপর আবার ডাক্তারের দ্বারস্থ হতে হয়। তখনই তাকে শুনতে হয় সবচাইতে কষ্টের কথাটি। ডাক্তার তাকে নিশ্চিত করে তার সন্তান টি সপ্তাহ দুয়েক আগেই মারা গেছে। যাকে নিয়ে এত স্বপ্ন দেখা, যার জন্য দিনগুনে এত গুলি রাত পার করা, সে এই ভাবে তাকে ফাঁকি দিল? সারা পৃথিবী মুহূর্তের মধ্যে ওলোট পালোট হয়ে যায়, তারপর সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

তার পরের গল্প টা করুণ! অ্যালকোহলের মধ্যে ভাসতে থাকা একটা ডিম সদৃশ বস্তু, যেটা হতে পারত একটা মায়ের সবচেয়ে আদরের সন্তান, যেটা হতে পারত একজন অবিবাহিত মায়ের জীবন যুদ্ধের ঢাল! কিন্তু তা হয় নি, একটা ডিমের চেয়ে বড় কিছু সে হতে পারেনি।

হাসপাতেলের বিছানায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে জীবনযুদ্ধে হেরে যাওয়া এক মা। সন্তান মরে গেছে, হয়ত সেও মরে যাবে। কিন্তু সে বাঁচতে চেয়েছিল। অবলম্বন হিসেবে চেয়েছিল ধরার জন্য একটা হাত। কিন্তু নিষ্ঠুর পৃথিবীর কেও তার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় না, হাত বাড়ায় না তার নিজের সন্তানও!

বুক রিভিউ: হাত বাড়িয়ে দাও
অনুবাদ: আনু মুহাম্মদ
মূল: ‘Letter To A Child Never Born’ by ‘Oriana Fallaci’

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৫ রাত ৩:২১
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×