পৃথিবীতে যে এত মানুষ। এত এত মাথা। এসবের কি দরকার? এই মানুষ গুলো যদি আরো কম হতো তো কি হতো? এই একটা আমি জন্ম না নিলে পৃথিবীর কি এমন ক্ষতি হতো? এই আমি তো এক বছর বয়সে মারাও যেতে পারতাম। কি হতো?
এই প্রশ্ন গুলো কেন যেন আমার মাথায় সব সময় কাজ করে। আমার প্রেমিকা যে আমাকে এত ভালবাসে। এত মিস করে। আমি না থাকলে কি হতো? আমি যদি এক বছর আগে রোড এক্সিডেন্টে মারা যেতাম কি হতো? অদ্ভুত কৌতূহল আমার আছে। আছে সেই উদ্ভট কৌতূহল নিয়ে নিজের মতো গল্প তৈরী করতে।
আহসান হাবীবের একটা বই এর নাম অপশান থ্রি । উপন্যাসে একটি ঘটনা তিন ভাবে দেখিয়েছেন। কখনো একজন মারা গেছেন। হয়তো পরের অপশানেই তিনি জীবিত। এই চিন্তাটা আমার ভাল লেগেছে। বিদেশী সাহিত্যে আমার জানাশুনা খুবই কম। তাই এই বিষয় নিয়ে আগে কেউ লিখেছেন কিনা জানা নেই। কার জানা থাকলে জানাতে পারেন। সুযোগ পেলে পড়ে নেব।
মানুষের একটা কমন স্বভাব হলো সব কিছু পরীক্ষা করা।আমরা সব কিছু পরীক্ষা করতে পছন্দ করি। যদিও পরীক্ষা দিতে একেবারেই পছন্দ করিনা। প্রেমের ক্ষেত্রেই দেখুন প্রতিনিয়তই প্রেমিক প্রেমিকারা নিজেদের প্রেমের পরীক্ষায় পরে। প্রেমিক যাচাই করে দেখতে চায় তার প্রেমিকা কতটুক তাকে ভালবাসে। প্রেমিকাও প্রেমিকের নানা রকম পরীক্ষা করে নেয়।
ব্যক্তি জীবন গুলাও যদি এমন অপশান থাকব। আমি এক শত বছর বাঁচতে চাই,তাহলে আমাকে সারাজীবন মুচি হয়ে থাকতে হবে। আমি ৫০ বছর বাঁচতে চাই তাহলে আমাকে সরকারী আমলা হয়ে বাঁচতে হবে। আমি ২৫ বছর বাঁচতে চাই তাহলে আমাকে বিপ্লবী হয়ে বাঁচতে হবে। আমি বেছে নিতে পারতাম। আসলেই আমি নিজের জীবনকে কত ভালবাসি।
যদি এমন অপশান থাকত, তুমি তোমার প্রেমিকাকে পেলে বাঁচবে ৩০ বছর। আর তাকে না নিয়ে অন্য কোন মেয়েকে নিয়ে সংসার করলে বাঁচবে ৬০ বছর। আমি তুমি একাই বাঁচতে চাইলে বাঁচবে ৯০ বছর। আমি বেছে নিতে পারতাম আসলে আমি কি চাই।
কিন্তু এই জীবনে আমার চাওয়ার উপর কোন যায় আসে না। আমি চাইলেই এই দেশের প্রধান মন্ত্রী হতে পারবো না। আমি চাইলেই এই দেশের সবচেয়ে ভাল খেলোয়াড় হয়ে যেতে পারব না। আমি চাইলেই দেশের সবচেয়ে নাম করা সাহিত্যিক হতে পারব না। চাইলেই আমার কবিতা বিশ্বমানের হয়ে যাবে না। চাইলেই আমার কলামের জন্য পত্রিকার সম্পাদন অনুরোধ করবে না।
আমি চাইলেই এক শত বছর বাঁচতে পারিনা।আমি চাইলেই প্রতিটা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারিনা। আমি চাইলেই যুদ্ধ থামাতে পারিনা। আমি চাইলেই পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে সুখি করতে পারিনা। তবু নিজেকে একজন স্বাধীন মানুষ ভাবি। কি সেই স্বাধীনতা। রাষ্ট্রে বাস করলে বন্দি থাকি রাষ্ট্রের শৃঙ্খলে। সীমান্তে থাকি কাঁটা তারের আবদ্ধ। ভাষায় থাকি অবরুদ্ধ। তবু আমি স্বাধীন মানুষ। এটা ভেবে সুখি বোধ করি। আমি স্বাধীন মানুষ এটা ভেবে শান্তিতে ঘুম দেই। আমি সুখি মানুষ এটা ভেবে যা ইচ্ছা লিখে যাই।
স্বাধীনতা বিষয়টাও আপেক্ষিক। কেউ হতো স্বাধীনতা মানে কাঁটাতার মুক্ত বিশ্ব চায়। কেউ হয়তো অবাধ সংগ্রহ করার মতো সম্পদ চায়। কেউ হয়তো কথা বলার স্বাধীন ভাষা চায়। কেউ হয়তো প্রতিবাদের স্বাধীন মাধ্যম চায়। কেউ চায় স্বাধীন ভাবে পান,ভোজন করার অধিকার। আমি মানুষের কাছে সব সময়ই তো দায়বদ্ধ। আমি সমাজের কাছে দায়বদ্ধ। আমি দেশের কাছে দায় বন্ধ। আমি আমার জন্মের প্রতি দায় বন্ধ। মৃত্যুর প্রতি সমীহ করে চলি। আমরা আসলে স্বাধীনতার নামে আমার সামনের দরজাটা খুলে যাক তাই চাই। আমি যেখানে গিয়ে বাঁধা পরি সেখানেই মুক্তি চাই। যেখানে গিয়ে হোঁচট খাই সেখানেই প্রতিকার চাই।
সার্বজনীন স্বাধীনতা বলতে আসলেই কি কিছু আছে?স্বাধীন মানুষ মাত্রই হয় উন্মাদ নয় বোকা।