প্রতিটা মানুষই তার সামাজকে তার মতো করে ভাগ করে নেয়। তার উচ্চতা দিয়ে সাবাই কে মাপে। তার ওজন দিয়ে সবাইকে ওজন করে। তার যোগ্যতা দিয়ে সবার যোগ্যতা যাচাই করে। আমার ধারনাএই সহজ সূত্রটা সমাজের জন্য খুব ক্ষতিকর। একজন তাই তার পেশার কিংবা দক্ষতার বাইরে অন্যকে সম্মান করতে চায়না। সমাজ বাঁচিয়ে রাখতে হলে সব পেশার মানুষই থাকতে হবে। তাই তাচ্ছিল্য করে একে অন্যকে উপহাস করার এই রীতির পরিবর্তন করতে হবে।
ধরা যাক কোন X সে ইংরেজীতে ভাল, ILTS৬ স্কোর আছে। সে সবার সাথে ইংরেজীতে কথা বলতে পারে। এটা তার অহংকার করার মতো একটা সম্পদ। তো সেই X তার পরিচিত মানুষদের দুই ভাগে ভাগ করবে এক যারা তার মতো ইংরেজী জানে আর যারা জানে না। ইংরেজী না জানা দুষের কিছু নয়। জানলে এটা বাড়তি সুবিধা। কিন্তু একজন স্পোকেন পাশ করা ছেলের কাছে এটা খুবই বড় বিষয়। তাই তার গুনকে ঢালাও ভাবে সবার সাথে প্রকাশ করতে থাকে। প্রয়োজনে ,বেশির ভাগ অপ্রয়োজনে জোর করে ইংরেজী শব্দ কিংবা একটা দুইটা বাক্য ব্যবহার করে। মাঝে মাঝে মনে হয় কথা বলা আসল উদ্দেশ্য নয় বরং ইংরেজী জানার বিষয়টা প্রকাশ করাই আসল। তাই কোন একটা বিষয় করে কথা বলতে হয়। আর কোন যোগ্যতাই তার কাছে এর সমান নয়।
যারা জিম করে। তাদের ক্ষেত্রেও বিষয়টা তাই। সেও তার চেনা পৃথিবীটাকে ভাগ করে পেশীদার ব্যক্তি এবং অপেশীদার ব্যক্তি। যারা জিম করেনি। কিংবা শরীর রেসলিং প্লেয়ারদের মতো শক্তপোক্ত নয় তাদের দিকে একটা তাচ্ছিল্য ভঙ্গিতে তাকায়। এটা হতে পারে তার অজান্তেই।
আমি দেখেছি যারা গান করে নাচ করে তাদেরও একই প্রবণতা থাকে। একই ভাবে তারা তাদের পৃথিবীকে দুই ভাগ করে নেয়।
আর একটি মজার বিষয়ও আছে। আমার চার পাশে যারা একটু বেশি বই পড়ে, কিছুটা সাহত্য নিয়ে নাড়াচাড়া করে তাদেরও এমন একটি ভাব দেখতে পাওয়া যায়। যারা একাডেমিক বই এর বাইরে বই পড়েনা তাদের মানুষই মনে করতে রাজি নয়। অল্প কয়েকটি বই পড়েই তারা জ্ঞানী তকমা লাগিয়ে নেন। তাই রাস্তাঘাটে ,জুতার তলায়ও কিছু কবিদের দেখতে পাওয়া যায়। তাদের গর্ব করার বিষয় হলো তারা সাহিত্যিক। তারা কবি কিংবা গল্প কার। তাদের মধ্যে এলিট শ্রেণি হলো লিটল ম্যাগের সম্পাদক।
পত্রিকা সম্পাদনা নিশ্চয় সহজ বিষয় নয়। কিন্তু তাদের আচার আচরণ দেখলে মনে হয় দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ জয় আর একটা লিটল ম্যাগ সম্পাদনা প্রায় সমান গুরুত্ব পূর্ণ।
এতো গেল এক শ্রেণির কথা। এবার আসা যাক পেশাজীবিদের কথা। ছাত্র জীবন থেকেই কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে আমার ঘনিষ্ট একটা সম্পর্ক ছিল। এখনও আছে। আমি প্রতিদিনই তাদের সাথে আড্ডা দিতে যাই। তাদের মাঝেও দেখা যায় আত্ন গরিমার ব্যপার(সবাই নয় কেউ কেউ)। তারা শিক্ষক তাই অন্য কোন পেশার সাথে তাদের তুলনা চলেনা। ঐতিহাসিক প্রক্ষাপট তুলে ধরে তাদের বিশেষত্ব ব্যাখ্যা করেন। তারা না থাকলে পৃথিবীর মানুষই..... ইত্যাদি আবোল তাবোল। সব সময়ই তারা ভুলে যান শিক্ষকরাও মানুষ। এবং সমাজের সাবার মতোই সমাজের প্রতি তার দ্বায়িত্ব আছে। তারা নিজেদের পৃথিবীকে ভাগ করেন আরো মাজাদার উপায়ে।তারা সমাজের মানুষকে দেখেন শিক্ষক এবং ছাত্র হিসেবে। আমি গভীর ভাবে লক্ষ করে দেখেছি। তাদের ছাত্রদের সাথে যে ধরনের আচরণ করে থাকে তার বাইরের লোকের সাথেও এমন আচরণ করেন । কোন একটা বিষয় বুঝাতে গেলে তাদের এই বিষয়টা বেশি পরিলক্ষিত হয়। তখন তারা বেশির ভাগই ভুলে যান যে সবাই তার ছাত্র নয়।
ডাক্তার বেলায় তো এই শ্রেণি বিভাগ আরো স্পষ্ট। এই নয়ে ব্লগে অনেক তুলপাড় হলো। ডাক্তাররা তাদের ব্লগে আচরণ থেকেই তা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে তারা ডাক্তার মানুষ নয়(ব্যতিক্রম আছে, কিন্তু ব্যতিক্রম নিয়ম নয়)। আর এই সময়ে রোগি মানেই তো ক্লায়েন্ট,ক্লায়েন্ট মানেই তো টাকা। আর টাকা মানেই তো....(যা বুঝার বুঝে নেন)।
উকিল,ব্যরিস্টার,পুলিস,সস্বস্ত্রবাহিনী। তাদের আর নতুন করে বলার কিছু নাই।তাদের দলে যোগ হতে পারে ব্যবসায়ী। যারা লাভ ছাড়া কিছু বুঝেনা। প্রয়োজনে পাঁচ টাকা লাভের জন্য দ্রব্যে বিষ মিশাবে। ফল ,মাছ এসবে ফরমালীন মিশানো কি এর মধ্যে পরেনা?