শীত শেষে যখন গড়ম শুরো হয়।গড়মের পরে শীত।খুব স্বাভাবিক ঘটনা। প্রথম যে দিন প্রচন্ড গড়ম পরে। কিংবা প্রথম যেদিন তীব্র শীত পরে আমি সেই দিনটাকে মনে রাখি। প্রথম বৃষ্টি শুরো হলে মনে মনে নিজেকে জানিয়ে দেই,আজ কিন্তু প্রথম বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তায় যখন প্রথম বৈশাখের প্রথম কৃষ্ণ চূড়া দেখি সে মনে মনে বলি প্রথম কৃষ্ণচূড়া। এটা কোন আহামরি ব্যপার না। কিন্তু তবু আমি তা করি। জীবন থেকে প্রতিটা ক্ষন যখন হারিয়ে যায়। আমি দেখি প্রতিটা ক্ষন কি করে হারায়। কি করে প্রতিটা মূহুর্ত আমাকে ছেড়ে চলে যায়। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি। হয়তো কিছুই করা হয়না। কখনো থামতে দেইনা। কখনো খুব প্রয়োজন মনে করে আলমীরাতেও উঠাতে যাইনা। হেলায়ই কাটে তবু মনের ক্যালেন্ডারে নিজের অজান্তেই একটা দাগ বসে যায়।
প্রথম যেদিনটায় বাড়ি থেকে বাইরে আসলাম। আমি জানতাম আর কোনদিন ফেরা হবে না।সবাই ফিরতে পারেনা। আমি ফিরতে না পারার দলে। বাড়ি থেকে বের হয়ে আসার মূহুর্তে আমার মায়ের মলিন মুখের কথা মনে পরে। বোনের ছলছল চোখের চাহনির কথা মনে পরে। বাবার দূরে তাকিয়ে থাকার কথা মনে পরে। সব কিছুই মনে পরে কিন্তু আমি ফিরে যেতে পারিনা।
প্রথম যে বন্ধুটি চাকরির জন্য দূরে সরে যায়, বুঝতে পারি কাছা কাছি আর কখনো হবোনা। দেখা অবশ্য আমাদের মাঝে মধ্যে হয় কিন্তু দূরত্ব ক্রমশ বেড়েই চলেছে। কারো হয়তো ভুড়ি বাড়ছে। কারো বাড়ছে শৃঙ্খল। সবাই তার বৃত্তকে নতুন বৃত্তের সাথে সমন্বয় করে চলেছে। পেছনে ফেরার মতো সময় কই?
বিয়ে করার পর বন্ধ ফোন দিয়ে বলে এবার আসার আগে ফোন দিও।বন্ধুটি জানে আমি পাগলের মতো হয়তো হুট হাট চলে আসতে পারি। তার মতো এত সার্প কনমসেন্স তো আমার নেই। নতুন ঘর নতুন সংসার। সেখানে কি হুট হাট চলে আসা সাজে?আত্নীয় হলে হয়তো অন্য ব্যপার হতে পারতো। তাই বলে ছাত্র জীবনের বন্ধুত্ব! আমি বলি অবশ্যই দেব। আসার আগেই ফোন দিয়ে জানাব।
বুঝতে পারি সেতু ছিন্ন হয়ে একা হয়ে পরছি। নতুন নতুন সাঁকু হয়তো নিয়মিতই হয় কিন্তু সেতু হয়না। চৈত্রের খড়ায় যখন খাল শুকিয়ে যায় তখন কোন রকমে একটা বাঁশ দিয়ে চালিয়ে নেয়া।উত্তাল নদী তো আর সাঁকু দিয়ে পার হওয়া যায় না। তাই চেয়ে ছিলাম সেতু গুলো থাকুক। কিন্তু সব কিছুরই একটা পরিনতি আছে। এই হচ্ছে সেই পরিনতি। আমার সেতু গুলো যখন নড়বড়ে হয়ে যায়। আমি বুঝতে পারি। ছোট খাট পাখি বসলেও যখন শক্ত সেতুতে দোলনী উঠে আমি বুঝতে পারি। কিন্তু আমি বড় অসহায়।