বাংলাদেশের টেলিকম অপারেটরদের কাস্টমার প্রতি মাসিক আয় ভারতের তুলনায় দেড়গুণ এবং টেলিডেনসিটি ভারতের চেয়ে ১৫ শতাংশ কম(অর্থাৎ ভবিষ্যত বিকাশের সুযোগ বাংলাদেশে বেশি) হওয়া স্বত্ত্বেও থ্রিজি তরঙ্গ নিলামের বেলায় ভারতের এক তৃতীয়াংশ ভিত্তি মূল্য ধরে থ্রিজি তরঙ্গের নিলাম ডাকায় ২৫ মেগাহার্টজ লাইসেন্স গ্রামীণ,রবি, বাংলালিংক, এয়ারটেলের কাছে মাত্র ৪ হাজার ৮১ কোটি টাকায় বিক্রি করারয় বাংলাদেশের অন্তত সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে! এ বিষয়ে ভারত ও থাইল্যান্ডের উদাহরণ দিয়ে বণিক বার্তায় প্রকাশিত তথ্যের দিকে তাকালে দেখা যায়:
ভারতীয় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (টিআরএআই) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, শুধু দিল্লি অঞ্চলের থ্রিজি তরঙ্গ বরাদ্দ পেতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে গুনতে হয়েছে ৩ হাজার ৩১৭ কোটি রুপি। মোট চারটি প্রতিষ্ঠানকে তরঙ্গ বরাদ্দ পেতে প্রায় ১৩ হাজার ২৬৮ কোটি রুপি ব্যয় করতে হয়েছে। একইভাবে মুম্বাইয়ে তরঙ্গ বরাদ্দ পেতে চার প্রতিষ্ঠান ১২ হাজার ৯৮৮ কোটি ২৮ লাখ রুপি ব্যয় করেছে।
গত বছরের শেষ দিকে থাইল্যান্ডে থ্রিজির তরঙ্গ বরাদ্দে নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এ নিলাম থেকেও প্রত্যাশিত আয় করতে পারেনি থাই সরকার। প্রত্যাশার তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ কম আয় হয়েছে বলে সে সময় দেশটির টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা দাবি করে। এর পরও নিলাম থেকে ১৪০ কোটি ডলার(১১ হাজার ২০০ কোটি টাকা) আয় করে থাইল্যান্ড।
- See more at: Click This Link
3G তরঙ্গ: সস্তায় বেচে দেয়া জাতীয় সম্পদ
টেলিযোগাযোগের কাজে ব্যাবহ্রত তরঙ্গ বা স্পেকট্রাম কে আন্তর্জাতিক ভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সীমিত জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয় যার অর্থনৈতিক মূল্য অপরিসীম। ফলে তেল-গ্যাস-কয়লার মতোই এই জাতীয় সম্পদ নিয়েও চলে বহুজাতিক ও দালালদের লুটপাটের খেলা। ভারতের সাম্প্রতিক টুজি স্প্রেক্ট্রাম কেলেঙ্কারির পর ভারতের হাইকোর্টের নির্দেশে ভারতীয় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আরো কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তারা তরঙ্গ বরাদ্দের নতুন নীতিমালা ঘোষণা করার বেলায় ভারতীয় হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে তরঙ্গ বা স্পেকট্রামকে “জাতীয় সম্পদ” বলে উল্ল্যেখ করে বলেছে:
Spectrum has been internationally accepted as a scarce, finite and renewable natural resource which is susceptible to degradation in case of inefficient utilisation. It has a high economic value in the light of the demand for it on account of the tremendous growth in the telecom sector.
(সূত্র: Recommendations on Auction of Spectrum, Telecom Regulatory Authority of India, 23rd April, 2012, পৃষ্ঠা ৪)
এই জাতীয় সম্পদের মালিকানা ও ব্যাবস্থাপনা সম্পর্কে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের হাতে এই সম্পদ ব্যাবস্থাপনার দ্বায়িত্ব থাকলেও এর প্রকৃত মালিক জনগণ, ফলে জনস্বার্থ বা পাবলিক ইন্টারেস্ট ক্ষুণ্ন হয় এমন কিছু রাষ্ট্র করতে পারে না:
Natural resources belong to the people but the State legally owns them on behalf of its people…. The State is empowered to distribute natural resources. However, as they constitute public property/national asset, while distributing natural resources, the State is bound to act in consonance with the principles of equality and public trust and ensure that no action is taken which may be detrimental to public interest.
(সূত্র: Recommendations on Auction of Spectrum, Telecom Regulatory Authority of India, 23rd April, 2012, পৃষ্ঠা ৩)
ভারতে সাম্প্রতিক কালে এই বিষয়ে সচেতনতা দেখা গেলেও, বাংলাদেশে বরাবরই অন্যান্য জাতীয় সম্পদের মতো এই তরঙ্গ বা স্পেকট্রামও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর লুটপাটের জন্য তুলে দেয়া হয়েছে, এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে দুর্বল করে যেমন শেভরন কনোকোফিলিপস এর হাতে গ্যাস ব্লক তুলে দেয়া হয়েছে, তেমনি ভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টেলিটককে দুর্বল করে রেখে বহুজাতিক কোম্পানির হাতে এর আগে টুজি তরঙ্গ সস্তায় তুলে দেয়া হয়েছে, এবার থ্রিজি’র ক্ষেত্রেও একই ধরনের ঘটনা ঘটানো হলো। টেলিটককে পরীক্ষামূলক ভাবে প্রথমে থ্রিজি লাইসেন্স দেয়া হয়েছে বহুজাতিকদের স্বার্থে বাজার যাচাই করার জন্য, এরপর যখন বহুজাতিক কোম্পানিগুলো সস্তায় থ্রিজি লাইসেন্স ও সস্তা তরঙ্গ নিয়ে বিপুল বিক্রমে ঝাপিয়ে পড়বে , টেলিটককে তখন পুজি ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে দুর্বল করে রাখা হবে।
বিটিআরসি’র 3G নিলাম:
গত ৮ সেপ্টম্বর বিটিআরসি থ্রিজি নিলামের আয়োজন করে।নিলামে প্রতি মেগাহার্জ তরঙ্গ ফি’র ভিত্তি মূল্য বা বেইজ প্রাইস ২০ মিলিয়ন ডলার রাখা হয়।প্রতিযোগীতা না থাকায় প্রতিমেগাহার্জ মাত্র ২১ মিলিয়ন ডলার হারে মোট ২৫ মেগাহার্জ লাইসেন্স বিক্রি হয় যার ফলে বিটিআরসি তথা সরকারের আয় হওয়ার কথা ৪ হাজার ৮১ কোটি টাকা।যদিও এর আগে বিটিআরসি কর্তৃক প্রণীত খসড়া নীতিমালায় প্রতি মেগাহার্জের ভিত্তি মূল্য ৩০ মিলিয়ন ডলার এর কথা বলা হয়েছিলো, বহুজাতিক টেলিকম অপারেটরদের চাপ ও লবিং এ এর পরিমাণ এভাবে কমানো হয়েছে।
এই সামান্য লাইসেন্স ফি’র বিনিময়ে ১৫ বছরের জন্য তরঙ্গ বা স্পেক্ট্রাম বরাদ্দ বরাদ্দের ঘটনাকেও টেলিকম অপারেটর ও তাদের দালালরা বিভিন্ন ভাবে প্রচার করেছে প্রতি মেগাহার্জের এই ভিত্তি মূল্য(অর্থাৎ যে মূল্য থেকে তরঙ্গ নিলামের প্রতিযোগীতা শুরু হবে) নাকি অনেক বেশী হয়ে গেছে, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে দিয়েও তারা লবিং করিয়েছে লাইসেন্স ফি কম রাখার জন্য। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো প্রস্তাবে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় বলেছে, ভারত, পাকিস্তান থাইল্যান্ডের তুলনায় নাকি এই ভিত্তি মূল্য বেশি ধরা হয়েছে! অথচ অনুসন্ধান করে খুব সহজেই দেখা যায়, ভারতে তরঙ্গ নিলামে তোলার সময় ভিত্তি মূল্য বা ন্যূন্যতম যে মূল্য থেকে তরঙ্গের নিলাম শুরু হবে, তা কত নির্ধারিত করা হয়েছে এবং জনসংখ্যা, টেলিডেনসিটি, এআরপিইউ ইত্যাদি বিবেচনায় বাংলাদেশের সাথে তার পার্থক্যটাই বা কি।
ভারতের তরঙ্গ মূল্যের সাথে তুলনা:
বিটিআরিসি যেমন গোটা বাংলাদেশের জন্য একটি লাইসেন্স দেয়, ভারতে তেমনটি ঘটে না, সেখানে গোটা ভারতকে ২২ টি সেলুলার সার্কেল এ ভাগ করে প্রতিটি ভাগের জন্য ৫ মেগাহার্জ করে বিভিন্ন ভিত্তি মূল্যের একেকটি লাইসেন্সের জন্য নিলাম হয় । তার মানে, কোন টেলিকম অপারেটর যদি ন্যূনতম ৫ মেগাহার্জ ব্যান্ড উইথ সারা ভারতের জন্য পেতে চায় তাহলে তাকে মোট ২২টি লাইসেন্স কিনতে হবে। নিলাম ডাকার আগে এরকম ২২ টি লাইসেন্সের প্রতিটির তরঙ্গের বা স্পেকট্রামের জন্যই ভিত্তি মূল্য নির্ধারণ করে দেয় ভারতের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। ২১০০ মেগাহার্জের জন্য ভিত্তি মূল্য জন্মু ও কাশ্মীরের ক্ষেত্রে ৬.৮৩ কোটি রুপী থেকে শুরু করে দিল্লীর জন্য সর্বোচ্চ ৭৪৭.১৭ কোটি রুপি নির্ধারণ করা হয়েছে। এভাবে গোটা ভারতকে কাভার করবে এরকম ২০ বছর মেয়াদি ২২টি ৫ মেগাহার্জ করে লাইসেন্সের আওতায় প্রতি মেগাহার্জ তরঙ্গের ভিত্তি মূল্য হলো সর্বমোট ৩৭৭৩.২৪ কোটি রুপি। আর গোটা বাংলাদেশ কাভার করবে এরকম ১৫ বছর মেয়াদি ১০ মেগাহার্জ করে লাইসেন্সের আওতায় প্রতি মেগাহার্জ ভিত্তি মূল্য ধরা হয়েছে মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলার বা ১৫৫.৫০ কোটি টাকা মাত্র(১ ডলার=৭৭.৭৫ টাকা)।
বাংলাদেশ ও ভারতের জনসংখ্যা, আয়তন, লাইসেন্সের মেয়াদ ইত্যাদির ভিন্নতা বিবেচনা নিয়ে তুলনা করার জন্য সহজ ও গ্রহণযোগ্য একটি উপায় হলো Price per MHzPop Multiple টি ব্যাবহার করা।
Given the wide range of factors that can impact value, it is commonplace in the industry to convert the prices paid for spectrum into multiples in order to compare prices across bands and in different markets. The most common multiple is a price per MHzPop multiple, calculated as follows:
Price per MHzPop Multiple = Sales Price / (MHz of license x population covered)
সহজ ভাবে বললে, প্রতি মেগাহার্জ তরঙ্গের দামকে গোটা দেশের জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে এই তুলনার কাজটি করা সম্ভব। যেহেতু ভারতের লাইসেন্স ২০ বছর মেয়াদি এবং বাংলাদেশের লাইসেন্সে ১৫ বছর মেয়াদি, তাই বছর ওয়ারি হিসাব করলে তুলনাটা আরো নিখুত হবে। এ বিবেচনায় আমরা ব্যাবহার করব Price per MhzPop per year মাল্টিপল টিকে।
Price per MHzPop per year = Sales Price / (MHz of license x population covered)/year
ভারতের জনসংখ্যা ২০১২ এর হিসেবে ১২২ কোটি, প্রতি মেগাহার্টজ লাইসেন্সের ভিত্তি মূল্য ৩৭৭৩.২৪ কোটি রুপি বা ৬৮.৯৫ কোটি ডলার(১ রুপি= ৫৪.৭২ ডলার), লাইসেন্সের মেয়াদ ২০ বছর, সুতরাং ভারতের লাইসেন্স ফি’র
Price per MHzPop per year = ৬৮.৯৫/(১X১২২)/২০ = ০.০২৮ ডলার।
অন্যদিকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ২০১২ এর হিসেবে ১৬ কোটি , প্রতি মেগাহার্টজ লাইসেন্সের ভিত্তি মূল্য ২০ মিলিয়ন বা ২ কোটি ডলার, লাইসেন্সের মেয়াদ ১৫ বছর, সুতরাং বাংলাদেশের লাইসেন্স ফি’র
Price per MHzPop Multiple per year = ২/(১X১৬)/১৫= ০.০০৮৩ ডলার যা ভারতের লাইসেন্স ফি ০.০২৮ ডলারের ২৯.৬৪% অর্থাৎ প্রতি একক জনসংখ্যার জন্য প্রতি মেগাহর্টজ তরঙ্গের লাইসেন্স ফি বাংলাদেশে যা ধার্য করা হয়েছে তা ভারতের তিন ভাগের এক ভাগেরও কম! কাজেই ভারতকে অনুসরণ করা হলে প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের দাম বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ২০ মিলিয়ন ডলার থেকে কম পক্ষে ৩ গুণ বাড়িয়ে ৬০ মিলিয়ন ডলার বা ৬ কোটি ডলার করতে হতো।
প্রশ্ন উঠতে পারে, ভারতের অর্থনীতি, মাথাপিছু আয়, টেলিকম মার্কেটের পরিস্থিতি ইত্যাদি তো বাংলাদেশের থেকে আলাদা। সেসব বিবেচনা না করে স্রেফ লাইসেন্স ফি’কে জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলেই তুলনাটা সঠিক হয়? চলুন দেখা যাক, এসব বিষয় বিবেচনা করলে কি দাড়াতে পারে! এই তুলনাটা করার জন্য আমরা ভারত ও বাংলাদেশের এআরপিইউ এবং টেলিডেনসিটি’র দিকে নজর দেয়া যাক।
প্রতি মাসে কাস্টমার প্রতি আয় বা Average Revenue Per User (ARPU) বাংলাদেশে গড়ে ৩ ডলার (Click This Link)
আর ভারতে গড়ে ২ ডলার(TELECOM SECTOR: TRENDS & OUTLOOK, sep 2012 Click This Link Sector .pdf) অর্থাৎ বাংলাদেশে গড়ে কাস্টমার প্রতি আয় ভারতের দেড়গুণ।
অন্যদিকে বাংলাদেশের টেলিডেনসিটি ৬৫ % (Click This Link)এবং ভারতের ৮০% (Click This Link press release -final.pdf)অর্থাৎ বাংলাদেশের টেলিকম বাজার এখনও ভারতের চেয়ে ১৫ % কম বিকশিত। বাংলাদেশের টেলিকম মার্কেট এই বিবেচনাতেও ভারতের চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় কারণ টেলিকম অপারেটরের সামনে বাজার বাড়ানোর সুযোগ অপেক্ষাকৃত বেশি বাংলাদেশে।
লাইসেন্সের দাম বেশি রাখলে কি দেশী কাস্টমারের ক্ষতি হতো?
থ্রিজি লাইসেন্সের দাম নিয়ে অনেকের মাঝেই বিভ্রান্তি আছে দেখা যাচ্ছে। অনেকে মনে করছেন লাইসেন্স এর দাম বেশি রাখা মানেই পরবর্তীতে কাষ্টমারের কাছ থেকে কোম্পানিগুলোর বেশি টাকা আদায়। অনেক সময় এভাবে যুক্তি দেয়া হয়: ৫০০ টাকা দিয়ে জিনিস কিনলে যতই কম্পিটিশান থাকুক, কেউ তো আর ১০০ টাকা দরে বিক্রি করতে চাইবে না, তাকে তো ৫৫০ বা ৬০০ টাকায় বিক্রি করতে হবে!
দেখেন অবস্থা, লাইসেন্সকে মনে করছে “একটা জিনিস” যা একবারেই পুরোটা বিক্রি করতে হয়!! আরে , লাইসেন্স নামের পণ্যটি হলো কোন কিছু ব্যাবহারের অধিকার। সরকার যখন কাউকে থ্রিজি তরঙ্গের লাইসেন্স দিচ্ছে তখন তাকে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য (১৫ বছর) তরঙ্গ ব্যাবহার করে সার্ভিস বিক্রি করার অধিকার দিচ্ছে। লাইসেন্সের দাম যাই হোক সে ঐ দাম পরিশোধ করার বিনিময়ে ১৫ বছর ধরে থ্রিজি সার্ভিস কাষ্টমারের কাছে বিক্রি করে অর্থ আদায় করতে পারবে। লাইসেন্সের দাম ১০০ টাকা হলেও সে ১৫ বছর ধরে ১৬ কোটি মানুষের কাছে থ্রিজি সার্ভিস বেচে পয়সা কামাতে পারবে, আবার লাইসেন্সের দাম ৫০০ টাকা হলেও সে ১৬ কোটি মানুষের কাছে থ্রিজি সার্ভিস বেচে সেই একই পয়সা কামাতে পারবে। ফলে এই লাইসেন্স ৫০০ টাকা দিয়ে কিনে কেউ ১ টাকা দামের সার্ভিস ৫০০ জনের কাছে বিক্রি করে বিনিয়োগের ৫০০ টাকা তুলতে চাইতে পারে আবার কেউ ১০০ টাকা করে দরে ৫ জন কাস্টমারের কাছে বিক্রি করে দ্রুত বিনিয়োগটা তুলে ফেলতে চাইতে পারে। কে কিভাবে করতে পারবে তা নির্ভর করে বাজারের ধরণের উপর অর্থাৎ বাজারে কম্পিটিশান কেমন আছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিয়ন্ত্রণ কেমন করে করছে ইত্যাদি বিষয়ের উপর।
সোজা কথায়, লাইসেন্সের দাম বেশি হওয়া মানে কোম্পানির খরচ বেশি হওয়া। বাজারে কম্পিটিশান থাকলে বা নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়ন্ত্রণ থাকলে সে ইচ্ছা মতো দামে সার্ভিস বিক্রি করে সেই বাড়তি খরচ দ্রুত তুলতে পারবে না, তাকে কম দামেই প্রতিযোগীতা করে বেশি কাস্টমার ধরতে হবে, ফলে আগের চেয়ে দেরীতে সে ব্রেক ইভেন পয়েন্ট এ পৌছাবে এবং সবচেয়ে বড় কথা আগে ১৬ কোটি মানুষের কাছে ১৫ বছর ধরে সার্ভিসটা বিক্রি করে যত মুনাফা করতো, তার থেকে এখন তাকে লাইসেন্সের “বাড়তি” দামের সমপরিমাণ কম মুনাফায় সন্তুষ্ট থাকতে হবে। লাইসেন্সের দাম ১০০ টাকা বাড়ানো হলে তার মুনাফা আগের চেয়ে ১০০ টাকা কম হবে, ৫০০ টাকা বাড়ালে তার মুনাফা আগের চেয়ে ৫০০ টাকা কম হবে ইত্যাদি। এই ভাবে মুনাফা কমে যাবে বলেই মোবাইল কোম্পানি ও তার দালালরা লাইসেন্সের দামের সাথে কল রেটে বা সার্ভিসের দামের ভুয়া সম্পর্ক পাতিয়ে একটা বিভ্রান্তি তৈরী করছে যার শিকার হয়ে অনেকে সস্তায় ব্যান্ড উইথ বা থ্রিজি সার্ভিস পাওয়ার আশায় এমনকি পানির দরে মোবাইল কোম্পানিগুলোকে থ্রিজি লাইসেন্স দেয়ার দাবী তুলছেন! কি সার্কাস!
কাজেই বোঝা জরুরী যে লাইসেন্স “একটা জিনিস”, এটা তরঙ্গ ব্যাবহার করে ব্যাবসা করার অধিকার। ফলে এই লাইসেন্স ৫০০ টাকা দিয়ে কিনে কেউ ১ টাকা দামের সার্ভিস ৫০০ জনের কাছে ধীরে ধীরে বিক্রি করে বিনিয়োগের ৫০০ টাকা তুলতে চাইতে পারে আবার কেউ ১০০ টাকা করে দরে ৫ জন কাস্টমারের কাছে বিক্রি করে দ্রুত বিনিয়োগটা তুলে ফেলতে চাইতে পারে। কে কিভাবে করতে পারবে তা নির্ভর করে বাজারের ধরণের উপর অর্থাৎ বাজারে কম্পিটিশান কেমন আছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিয়ন্ত্রণ কেমন করে করছে ইত্যাদি বিষয়ের উপর।
উপসংহার ও দাবী:
কাস্টমার প্রতি বাড়তি আয় এবং বাজার বিকাশের বাড়তি সুযোগ এর কথা বিবেচনা বাদ দিলেও বাংলাদেশে প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গ ফি’র ভিত্তি মূল্য স্রেফ ভারতের সমান্তরালে আনতে হলেই ২০ মিলিয়ন বা ২ কোটি ডলার থেকে ৩ গুণ বাড়িয়ে অন্তত ৬ কোটি ডলার করা প্রয়োজন ছিল।তা না করায়,প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গে বাংলাদেশের ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৬-২.১= ৩.৯ কোটি ডলার। ফলে বিক্রয় করা ২৫ মেগাহার্টজ এ মোট ক্ষতি হয়েছে ৩.৯X২৫=৯৭.৫ কোটি ডলার বা ৭ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা।এই দরে বাকি ১৫ মেগাহার্টজ বিক্রি করলে আরো ৪ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা ক্ষতি হবে। আমরা তাই এই লেখার মাধ্যমে বিটিআরসি’র কাছে দাবী জানাচ্ছি প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গ ফি’র ভিত্তি মূল্য পুনর্বিবেচনা করে ভারতের টেলিকম রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষের বেধে দেয়া নীতি’র অনুরুপ হারে প্রতি মেগাহার্টজ এর দাম কমপক্ষে ৬০ মিলিয়ন বা ৬ কোটি ডলার করা হোক।