কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটায় বলে সাধারণত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংরক্ষিত বনভূমি ও বসতির ১৫ থেকে ২০ কিমি এর মধ্যে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়না। ইআইএ রিপোর্ট অনুসারে প্রস্তাবিত ১৩২০ মেগাওয়াট রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পটি সুন্দর বন থেকে মাত্র ১৪ কিমি দূরে যা সরকার নির্ধারিত সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিমি এনভাইরনমেন্টালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া(ইসিএ) থেকে ৪ কিমি বাইরে বলে নিরাপদ হিসেবে দাবী করা হয়েছে। অথচ যে ভারতীয় এনটিপিসি বাংলাদেশে সুন্দরবনের পাশে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করতে যাচ্ছে সেই ভারতেরই ওয়াইল্ড লাইফ প্রটেকশান অ্যাক্ট ১৯৭২ অনুযায়ী, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১৫ কিমি ব্যাসার্ধের মধ্যে কোন বাঘ/হাতি সংরক্ষণ অঞ্চল, জৈব বৈচিত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বনাঞ্চল, জাতীয় উদ্যান, বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য কিংবা অন্যকোন সংরক্ষিত বনাঞ্চল থাকা চলবে না। অর্থাৎ ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসিকে বাংলাদেশে সুন্দরবনের যত কাছে পরিবেশ ধ্বংস কারী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে দেয়া হচ্ছে, তার নিজ দেশ ভারতে হলে সেটা করতে পারতো না! আবার সুন্দরবন থেকে দূরত্ব আসলেই ১৪ কিমি কিনা সেটা নিয়েও বিতর্ক আছে, অনেকেই বলছেন সুন্দরবন থেকে আসলে দূরত্ব ৯ কিমি। খোদ ইআইএ রিপোর্টের এক জায়গায় বলা হয়েছে প্রকল্পের স্থানটি একসময় একেবারে সুন্দরবনেরই অংশ ছিল, সেটলার বা বসতি স্থাপনকারীরা বন কেটে আবাসভূমি তৈরী করেছে:
“The area is about 14 km northeastwards from the Nalian Range of Sundarbans. Once it was a part of Sundarbans but had been evacuated by the settlers.”(ইআইএ, পৃষ্ঠা ২০৮)
ফলে দূরত্ব যাই হোক গোটা এলাকাটি সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থানের সাথে ঘনিষ্ট ভাবে সম্পর্কিত, ফলে এরকম একটি স্পর্শকাতর স্থানে ১৩২০ মেগাওয়াটের বিশাল আকারের কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ফলাফল কি হবে যাচাই করে তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া ভীষণ জরুরী। পরিবেশগত প্রভাবকে মোটা দাগে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ পর্যায়ে প্রভাব, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি অপারেশনে থাকার সময়কার প্রভাব ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র এর জন্য কয়লা পরিবহনের প্রভাব এই তিন ভাগে ভাগ করে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ পর্যায়ে কৃষি ও পরিবেশের উপর প্রভাব:
কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে ৬৬০ মেগাওয়াটের দুইটি বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট থাকবে। প্রথম ইউনিটটি নির্মাণের জন্য ৪৮ মাস বা চার বছর এবং দ্বিতীয় ইউনিটটি শেষ হতে আরো ৬ মাস বাড়তি অর্থাৎ মোট সাড়ে ৪ বছর সময় লাগবে। এই সাড়ে চার বছর সময় জুড়ে গোটা এলাকার পরিবেশ, কৃষি, মৎস ও পানি সম্পদের উপর নিম্ন লিখিত প্রভাব সমূহ পড়বে:
১) রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ১৮৩৪ একর কৃষি, মৎস চাষ ও আবাসিক এলাকার জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে যদিও ভারতে একই আকারের একটি প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৭৯২ একর যার বেশির ভাগটাই এক ফসলি কিংবা অনুর্বর পতিত জমি।(রায়গড় ইআইএ, এক্সিকিউটিভ সামারি, পৃষ্ঠা ১)। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইআইএ রিপোর্ট অনুসারে প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকার(১৮৩৪ একর) ৯৫ শতাংশই কৃষি জমি ও চারপাশের ১০ কিমি ব্যাসার্ধের এলাকার(স্টাডি এলাকা) ৭৫ শতাংশ কৃষি জমি যেখানে নিম্নোক্ত হারে চিংড়ি অথবা ধান সহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন করা হয় (পৃষ্ঠা ১৩৫, ১৯৪, ১৯৭, ১৯৮, ২০৪) :
ক) বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১০ ব্যাসার্ধের মধ্যে বছরে ৬২,৩৫৩ টন এবং প্রকল্প এলাকায় ১২৮৫ টন ধান উৎপাদিত হয়;
খ) ধান ছাড়াও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১০ ব্যাসার্ধের মধ্যে বছরে ১,৪০,৪৬১ টন অন্যান্য শস্য উৎপাদিত হয়;
গ) প্রতি বাড়িতে গড়ে ৩/৪টি গরু, ২/৩টি মহিষ, ৪টি ছাগল, ১টি ভেড়া, ৫টি হাস, ৬/৭টি করে মুরগী পালন করা হয়;
ঘ) ম্যানগ্রোভ বনের সাথে এলাকার নদী ও খালের সংযোগ থাকায় এলাকাটি স্বাদু ও লোনা পানির মাছের সমৃদ্ধ ভান্ডার। জালের মতো ছড়িয়ে থাকা খাল ও নদীর নেটওয়ার্ক জৈব বৈচিত্র ও ভারসাম্য রক্ষা করে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১০ কিমি ব্যাসার্ধের মধ্যে বছরে ৫২১৮.৬৬ মেট্রিক টন এবং প্রকল্প এলাকায় (১৮৩৪ একর) ৫৬৯.৪১ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়।
ইআইএ রিপোর্টে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রকল্প এলাকায় (১৮৩৪ একর) ধান, মাছ, গৃহপালিত পশুপাখি ইত্যাদির উৎপাদন ধ্বংস হবে স্বীকার করে আশাবাদ প্রকাশ করা হয়েছে, সঠিক পরিবেশ ব্যবাস্থাপনা অনুসরণ করা হলে এর বাইরের ১০ কিমি এলাকার মধ্যে কোন ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না(!)। যদিও বিভিন্ন ধরণের নির্মাণ কাজ, ড্রেজিং, বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক ও তৈল নি:সরণ ইত্যাদির ফলে পশুর ও মাইদারা নদী, সংযোগ খাল, জোয়ার-ভাটার প্লাবণ ভূমি ইত্যাদি এলাকার মৎস আবাস, মৎস চলাচল ও বৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে বলে আশংকাও প্রকাশ করা হয়েছে।(পৃষ্ঠা ২৬৬, ২৬৭)
২) বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের মালামাল ও যন্ত্রপাতি সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নদী পথে পরিবহন করা হবে। এর ফলে বাড়তি নৌযান চলাচল, তেল নি:সরণ, শব্দদূষণ, আলো, বর্জ্য নি:সরণ ইত্যাদি পরিবেশ আইন অনুসারে নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে সুন্দরবনের ইকো সিস্টেম বিশেষ করে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, ডলফিন, ম্যানগ্রোভ বন ইত্যাদির উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে বলে ইআইএ রিপোর্টে আশংকা করা হয়েছে।(পৃষ্ঠা ২৬৮)
৩) প্রকল্পের জন্য ব্যবহ্রত যন্ত্রপাতি, যানবাহন, জেনারেটর, বার্জ ইত্যাদি থেকে তেল পুড়িয়ে ক্ষতিকর কার্বন ডাই অক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড নির্গত হবে। এই কার্বন ও নাইট্রোজের পরিমাণ কি হবে ও ক্ষীতকর প্রভাবই বা ৪/৫ বছরের নির্মাণ পর্যায়ে কিরুপ হবে তার কোন পর্যালোচনা ইআইএ রিপোর্টে করা হয় নি।
৪) নির্মাণ কাজের যন্ত্রপাতি ও যানবাহন ব্যাবহারের ফলে শব্দ দূষণ হবে। এক্ষেত্রেও নির্মাণ পর্যায়ে শব্দ দূষণের মাত্রা এবং সুন্দরবন ও প্রকল্পের চারপাশের পরিবেশের উপর কি প্রভাব পড়বে তা যাচাই করা হয় নি ইআইএ রিপোর্টে।
৫) নির্মাণ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরণের কঠিন বর্জ্য তৈরী হবে যা সঠিক পরিবেশ ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা না হলে পরিবেশ এর উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে বলে আশংকা করা হয়েছে;
৬) নির্মাণ স্থলের নিকটবর্তি নদী-খালের পানিতে নির্মাণ যন্ত্রপাতি ও যানবাহনের তেল নি:সরিত হয়ে পানি দূষণ ঘটাতে পারে।
৭) ড্রেজিং এর ফলে নদীর পানি ঘোলা হবে। ড্রেজিং সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না হলে তেল গ্রীজ ইত্যাদি নি:সৃত হয়ে নদীর পানির দূষিত হবে।
৮) পশুর নদীর তীরে যে ম্যানগ্রোভ বনের সারি আছে তা নির্মাণ পর্যায়ে জেটি নির্মান সহ বিভিন্ন কারণে কাটা পড়তে পরবে। নদী তীরের ঝোপঝাড় কেটে ফেলার কারণে ঝোপ ঝারের বিভিন্ন পাখি বিশেষ করে সারস ও বক জাতীয় পাখির বসতি নষ্ট হবে।
(সূত্র: রামপাল ইআইএ, Impacts: pre-construction and construction stages , পৃষ্ঠা ২৬৩-২৬৮)
বিদ্যুৎ কেন্দ্র অপারেশনে থাকার সময়কার প্রভাব:
রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইআইএ রিপোর্টে পরিচালন পর্যায় কে ২৫ বছর ধরা হয়েছে। এই ২৫ বছর ধরে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সুন্দরবনের পরিবেশের উপর নিম্নলিখিত প্রভাব ফেলবে:
১) ক্ষতিকর সালফার ও নাইট্রোজেন গ্যাস:
ইআইএ রিপোর্ট অনুসারে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৪২ টন বিষাক্ত সালফার ডাইঅক্সাইড(SO2) ও ৮৫ টন বিষাক্ত নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড(NO2) নির্গত হবে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই এই বিপুল পরিমাণ বিষাক্ত গ্যাস সুন্দরবনের বাতাসে SO2 ও NO2 এর ঘনত্ব বর্তমান ঘনত্বের তুলনায় কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়ে গোটা সুন্দরবন ধ্বংস করবে। কিন্তু রিপোর্টে এর মাত্রা পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৭ নির্ধারিত সীমার মধ্যে দেখানোর জন্য ইআইএ রিপোর্টে একটা জালিয়াতি আশ্রয় নেয়া হয়েছে- পরিবেশগত ‘স্পর্শকাতর’ এলাকার মানদন্ডের বদলে সুন্দরবনের জন্য ‘আবাসিক ও গ্রাম’ এলাকার মানদন্ড বেছে নেয়া হয়েছে!
ইআইএ রিপোর্ট অনুসারে:
“The concentration of SO2 in the ambient air near Sundarbans region is found 8 to 10 μg/m3
(field monitoring data, see Table 6.5). Hence, it is found that the resultant concentration (24
hr average after emission contribution and only during November to February) from the
power plant) of SO2 in the ambient air may be maximum 53.4 μg/m3 (see Table 8.3c) which
is much below the MOEF’s standard (ECR 1997), 80 μg/m3 for residential and rural area.
Therefore, the concentration of emitted SO2 is very insignificant to have any impact on Air
quality of Sundarbans.”(ইআ্ইএ, পৃষ্ঠা ২৭৮)
অর্থাৎ কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত SO2 এর কারণে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সময়ে সুন্দরবনের বাতাসে SO2 এর ঘনত্ব প্রতি ঘনমিটারে ৮ মাইক্রোগ্রাম থেকে বেড়ে ৫৩.৪ মাইক্রোগ্রাম হবে যা পরিবেশ আইন ১৯৯৭ (ECR 1997) অনুযায়ী আবাসিক ও গ্রাম্য (residential and rural) এলাকার জন্য নির্ধারিত মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ৮০ মাইক্রোগ্রাম এর থেকে অনেক কম।
একই ভাবে সুন্দরবন এলাকার NO2 এর ঘনত্ব ১৬ মাইক্রোগ্রাম তিনগুণ বেড়ে থেকে ৫১.২ মাইক্রোগ্রাম হলেও তা নিরাপদ মাত্রার মধ্যেই থাকবে বলে দাবী করা হয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো সুন্দরবন কি আবাসিক বা গ্রাম এলাকা, নাকি পরিবেশ গত ভাবে স্পর্শকাতর একটি এলাকা?তাহলে সুন্দরবন এর মতো পরিবেশগত স্পর্শকাতর একটি এলাকার মানদন্ড হিসেবে আবাসিক ও গ্রাম এলাকার জন্য নির্ধারত মানদন্ড বেছে নেয়া হলো কেন? পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৭ ঘাটতেই কারণটা বোঝা গেল। এই আইন অনুসারে পরিবেশগত স্পর্শকাতর এলাকার বাতাসে SO2 ও NO2 এর ঘনত্ব প্রতি ঘনমিটারে ৩০ মাইক্রোগ্রাম(৩০ μg/m3) এর চেয়ে বেশি থাকা যাবে না। যেহেতু পরিবেশগত স্পর্শকাতর এলাকার জন্য নির্ধারিত মানদন্ডের(৩০ μg/m3) সাথে তুলনা করলে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প কোনভাবেই জায়েজ করা যাবে না সেজন্য পরিকল্পিত ভাবেই পুরো রিপোর্ট জুড়ে সুন্দরবনের বাতাসে বিষাক্ত গ্যাসের ঘনত্বের মানদন্ড হিসেবে আবাসিক ও গ্রাম এলাকার জন্য নির্ধারিত মানদন্ডকে ব্যাবহার করা হয়েছে!
২) কার্বন ডাই অক্সাইড এর প্রভাব:
প্রস্তাবিত কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যাবহারে ঢাক ঢোল পেটানো হচ্ছে যদিও ইআইএ রিপোর্ট অনুসারে এই প্রযুক্তি ব্যাবহারের ফলে সাধারণ কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় মাত্র ১০ শতাংশ কার্বন ডাই অক্সাইড কর্ম নির্গত হবে। এবং ৮০% লোড ফ্যাক্টর ধরে প্রতিবছর কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমণের পরিমাণ হবে ৭৯ লক্ষ টন সুন্দরবনের পরিবেশের উপর যার সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে একটা কথাও বলা হয় নি ইআইএ রিপোর্টে! কেবল আশ্বস্ত করা হয়েছে বাংলাদেশের সার্বিক কার্বন নির্গমণের পরিমাণ এর ফলে নাকি খুব বেশি বাড়বে না!(পৃষ্ঠা ২৮৪)
৩) পশুর নদী থেকে পানি প্রত্যাহার:
ইআইএ রিপোর্ট অনুসারে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যাবহারের জন্য পশুর নদী থেকে প্রতি ঘন্টায় ৯১৫০ ঘনমিটার করে পানি প্রত্যাহার করা হবে। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শীতলিকরণ সহ বিভিন্ন কাজে ব্যাবহারের পর অবশিষ্ট পানি পরিশোধন করে ঘন্টায় ৫১৫০ ঘনমিটার হারে আবার নদীতে ফেরত দেয়া হবে। ফলে নদী থেকে প্রতি ঘন্টায় কার্যকর পানি প্রত্যাহারের পরিমাণ হবে ৪০০০ ঘনমিটার। ইআইএ রিপোর্টে এভাবে পশুর নদী থেকে ঘন্টায় ৪০০০ মিটার পানি প্রত্যাহারের ফলে পানির লবণাক্ততা, নদীর পলি প্রবাহ, প্লাবন , জোয়ার ভাটা, মাছ সহ নদীর উদ্ভিদ ও প্রাণী জগৎ ইত্যাদির উপর কেমন প্রভাব পড়বে তার কোন বিশ্লেষণ করা হয়নি এই যুক্তিতে যে ৪০০০ ঘনমিটার পানি পশুর নদীর শুকনো মৌসুমের মোট পানি প্রবাহের ১ শতাংশেরও কম। দুর্ভাবনার বিষয় হলো, প্রত্যাহার করা পানির পরিমাণ ১ শতাংশেরও কম দেখানোর জন্য পানি প্রবাহের যে তথ্য ব্যাবহার করা হয়েছে তা সাম্প্রতিক সময়ের নয়, ৮ বছর আগে, ২০০৫ সালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ণ বোর্ড কর্তৃক সংগ্রহীত। (পৃষ্ঠা ২৮৫) অথচ এই ইআইএ রিপোর্টেই স্বীকার করা হয়েছে, নদীর উজানে শিল্প, কৃষি, গৃহস্থালি সহ বিভিন্ন উন্নয়ণ কর্মকান্ড ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে নদী থেকে দিনে দিনে পানি প্রত্যাহারের পরিমাণ বাড়ছে যার ফলে শুকনো মৌসুমে দিন দিন পানির প্রবাহ কমে যাচ্ছে যা পশুর নদীর জন্যও একটি চিন্তার বিষয়।(পৃষ্ঠা ২৫০)। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের সময় লাগবে সাড়ে ৪ বছর এবং অপারেশনে থাকবে অন্তত ২৫ বছর। তাহলে এই দীর্ঘ সময় কাল জুড়ে পশুর নদীর পানি প্রবাহ ইআইএ রিপোর্ট অনুসারেই ২০০৫ সালের অনুরুপ থাকার কথা না। ফলে ঐ সময়ে পশুর নদী থেকে ঘন্টায় ৪ হাজার মিটার পানি প্রত্যাহার করলে তা পশুর নদীর পানি প্রবাহের উপর কি কি প্রভাব ফেলবে তার গভীর পর্যালোচনা ছাড়া স্রেফ নদীর হাইড্রোলজিক্যাল বৈশিষ্টের কোন পরিবর্তন নাও হতে পারে(may not be changed) জাতীয় কথাবার্তা বলে পার পাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
বাকি অংশ এখানে