বিচারপতি নিজামুল হকের পদত্যাগে বেশকিছু বিষয় পরিষ্কার হল:
১. স্কাইপি কেলেংকারির মাধ্যমে যা কিছু প্রকাশিত হয়েছে সব সত্য।
২. সরকারী দলের ও সরকার সমর্থক কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছিলেন স্কাইপি সংলাপে যা কিছু প্রকাশিত হয়েছে তাতে তেমন দোষের কিছুতো নেই-ই বরং বিভিন্ন ব্লগে কিছু লেখা এসেছে যাতে লেখকরা বলার চেষ্টা করেছেন, এতে নাকি ট্রাইব্যুনালের নিরপেক্ষতা ও আন্তর্জাতিক মানের উচ্চতার দিকটি ফুটে উঠেছে। সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম দিগন্ত টিভির একটি টকশোতে বলেছেন, এতে নাকি রায় আরো নিরপেক্ষ হবে। যাইহোক নিজের ঘাড়ে দোষ নিয়ে নাসিম যখন পদত্যাগ করলেন, তখন তিনি নিজেই সবাইকে জানিয়ে গেলেন তিনি যা করেছেন তা অবশ্যই দোষের ছিল।
পদত্যাগের খবরের সাথে সাথেই আর একটি খবর চোখে পড়ল ডেভিড বার্গম্যানের ব্লগে। আইনমন্ত্রী বলেছেন, আরেকজন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হবে দু’একদিনের মধ্যে এবং বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। তার কথাটা কতটুকু যৌক্তিক?
১. নতুন বিচারক আসলে আবস্থা এমন দাড়াবে যে, কোন বিচারকই পূর্ণাংগ শুনানিতে অংশ নেননি।
২. বিচারক নাসিম চেয়ারম্যান হিসেবে পুরো বিচার প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন আদেশ দিয়েছেন যা বিচার প্রক্রিয়াকে একটি নির্দিষ্ট খাতে প্রবাহিত করেছে। সামান্য কিছু উদাহরণ:
ক. সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী অপহরণের মত মারাত্মক অভিযোগে তিনি প্রসেকিউটরকে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেন যেখানে নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দেয়া উচিত ছিল। এ ব্যাপারে তিনি আদালত মূলতুবী করতেও রাজী হননি। এই একই সাক্ষীকে আদালতে হাজির হবার ব্যাপারে ২১ অক্টোবর সমন জারির আবেদন করে বিবাদী পক্ষ। কিন্তু তিনি তা করতে রাজী হননি। [http://bangladeshwarcrimes.blogspot.com/2012/11/tribunal-response-to-abduction.html]
খ. ১৫ জন ব্যক্তির পুলিশের কাছে দেয়া জবানবন্দীকে সাক্ষী হিসেবে গ্রহন করার আদেশ দেন। অথচ যাদের অনেকেই টিভিতে সাক্ষাতকার দিয়েছেন।
গ. ১৪ই আগস্ট তিনি কোন যুক্তিসংগত কারণ ছাড়াই ডিফেন্স সাক্ষীর সংখ্যা ২০-এ সীমাবদ্ধ করে একটি অর্ডার দেন। অথচ এর আগে প্রসেকিউশনের ১৩৮ জন সাক্ষীর প্রাথমিক তালিকা গ্রহন করতে তিনি কোন আপত্তি করেননি। এটি ছিল প্রসেকিউশনের প্রতি চরম পক্ষপাতদুষ্টতা এবং এটি রোম স্ট্যাটিউটের ৬৭(১)(ই), ইউনিভার্সেল ডিক্লারেশন অব হিউম্যান রাইটস্-এর আর্টকেল-১০ এর লংঘন। [বিস্তারিত:http://bangladeshwarcrimes.blogspot.com/search/label/Sayedee 20 witness order]
এরকম আরো অসংখ্য উদাহরণ পাঠকরা ডেভিড বার্গম্যানের ব্লগ থেকে পড়ে নিতে পারেন। তবে এখন আমরা বুঝতে পারছি এরকম পক্ষপাতদুষ্ট আদেশের কারণ।
এখন জানা যাচ্ছে যে তিনি তাড়াহুড়া করতে বাধ্য ছিলেন। তার উপর প্রশাসনের প্রভাব ছিল। তিনি নিরপেক্ষ ছিলেননা। তিনি বিচারক হিসেবে অযোগ্য, অবৈধ। তাই তার সব নির্দেশগুলোই অবৈধ। ফলে এই অবৈধ প্রক্রিয়ায় বিচারকাজ যতটুকু এগিয়েছে, সেখান থেকেই যদি নতুন বিচারক শুরু করেন তা অবৈধ হবে।
অন্যদিকে নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক বিশেষজ্গদের মতে ট্রাইব্যুনাল যে আইন দ্বারা পরিচালিত তাতে নিরপেক্ষ বিচার সম্ভব নয়। এসব মিলিয়ে আইন সংশোধন এবং ট্রাইব্যুনাল বাতিল করা ছাড়া সরকার কোনভাবেই এই কলংকের কালি মুছতে পারেনা। আর ট্রাইব্যুনাল পূণর্গঠন করতে হবে জাতিসংঘের সরাসরি তত্ত্বাবধানে, নিরপেক্ষ ও অভিজ্ঞ বিদেশী বিচারক নিয়োগ করে, রোম স্ট্যাটিউটের আলোকে।
পরিশেষে বলি কামরুল সাহেবরা বিচারকদের যে চাপের মুখে রেখেছেন তাতে কোন নিরপেক্ষ বিচারক এপদে এসে নিজামুল হকের মত নিজের ক্যারিয়ার নষ্ট করতে চাইবেন কীনা জানিনা। তবে পরিস্থিতি জেনেশুনে কেউ যদি রাজী হন তাকে কী নিরপেক্ষ বলা যাবে? বা তিনি কী চাইলেও নিরপেক্ষ থাকতে পারবেন? এইমাত্র খবর পাওয়া গেলো বিচারপতি ফজলে কবীর ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২এর দায়িত্ব পাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান হিসেবে বিচারপতি ফজলে কবীর ও ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান হিসেবে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান দায়িত্ব পাচ্ছেন। এছাড়া ট্রাইব্যুনাল-২-এ নতুন সদস্য হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





