রবিউল আর নাদিরা দু জনে স্বামী স্ত্রী। দু জনেই চাকুরী করে একটি পোশাক কারখানায়।
স্বামীটার নাম রবিউল ইসলাম। সুন্দর নাম। মানে ইসলামের বসন্ত কাল। আরবীতে রবি মানে বসন্ত। যেমন আরবী মাসের দুটো নাম আছে, রবীউল আউয়াল আর রবীউল আখের। মানে, প্রথম বসন্ত আর শেষ বসন্ত।
কিন্তু মানুষ এ ধরনের নাম বিকৃত করে আদায় করে। ডাকে, রবিউল। যেমন ডাকে সামীউল, আশ্রাফুল, শহীদুল। আসলে এ ধরনের নামগুলো সংক্ষেপে ডাকতে হলে, বলা উচিত, রবি, সামী, আশ্রাফ, শহীদ।
কিন্তু এ বিকৃতি যেন আমাদের সংস্কৃতি বনে গেছে।
আমার কাছে আসল দু জনই। বলল, আমাদের মধ্যে একটি সমস্যা হয়েছে। এর সমাধানের জন্য আপনার কাছে এসেছি। গিয়েছিলাম মসজিদের ইমাম সাবের কাছে। ইমাম সাহেব কোন সমাধান না দিয়ে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন।
না পাঠিয়ে উপায় কী? মানুষ এক সময় তাদের ছোট-খাট সমস্যার সমাধানের জন্য ইমাম সাহেবদের কাছে যেতেন। তাদের দু:খ-বেদনা, স্বপ্ন-আশা, সংকট-সমস্যার কথাগুলো তাদের কাছে বলতেন। তাদের সব সময় হাতের কাছে পাওয়া যায় বলেই। আর বিনা পয়সায় আনলিমিটেড সার্ভিস পাওয়া যায় তাদের থেকেই।
তারা তাদের বিদ্যা-বুদ্ধি অনুযায়ী ইসলাম সম্মত সমাধান দিতেন। কিন্তু এখন তারা ভয় পান। দুষ্টলোকেরা কিনা বলবে, হুজুর ফতোয়া দিয়েছে। সাথে সাথে পুলিশ আসবে। সাংবাদিক আসবে। মিসকীন হুজুরকে ধরে নিয়ে যাবে থানায়, হাজতে, জেলে।
এ কারণে অনেক আলেম মানুষের প্রশ্নের উত্তর দেয়া ছেড়ে দিয়েছেন। অনেকে আবার এড়িয়ে যান।
আমি তাদের বলেছি, আপনারা প্রশ্নের উত্তর দেবেন অবশ্যই। আর বলবেন, আমি এটা কোন ফতোয়া দেয়নি। কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী আপনার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি মাত্র।
প্রশ্নের উত্তর তো হুজুরদের দিতেই হবে। কারণ, ইসলামের রাসূল বলে গেছেন, যদি প্রশ্ন করা, আর জানা থাকা সত্বেও উত্তর না দেয়, তাহলে কেয়ামতের দিন মুখে আগুনের লেগাম পরানো হবে।
হয়ত প্রশ্ন শুনে ইমাম সাহেব উত্তর দিতে ভয় করেছেন। আর ফিরিয়েও দিতে পারছেন না। তাই আমার কাছে পাঠিয়েছেন।
নাদিরা বলল, আমরা দুজনে চাকুরী করি। দু জনের বেতন এক রকমই।
আমার স্বামীর দাবী হল, ঘর ভাড়া আর সংসারের খাওয়া-দাওয়ার যত খরচ আছে তা আমরা দুজনে সমান ভাগে বহন করব।
কিন্তু আমি বলেছি, না, তা হবে না। আমি যেহেতু মেয়ে মানুষ, তাই তিন ভাগের এক ভাগ খরচ বহন করব। আর বাকী দু ভাগ তুমি বহন করবে। কিন্তু সে এতে রাজী নয়। তাই আমি বললাম, বিষয়টির ফয়সালার জন্য হুজুরের কাছে যাবো। এখন আপনি আমাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন।
আমি বললাম, সংসার, ঘর ভাড়া ও আপনাদের দুজনের যাবতীয় খরচ আপনার এ স্বামীই বহন করবে। সংসারের কোন খরচের দায়িত্ব আপনার নয়। সংসারের খরচ ছাড়াও আপনার যা কিছু প্রয়োজন, তা-ও সে বহন করতে বাধ্য। আপনি আপনার উপার্জনের টাকা পয়সা আপনি নিজের ইচ্ছা মত খরচ করবেন। যেভাবে যেখানে মনে চায়, সেভাবে। আমার মতে, এটাই হল ইসলামের ফয়সালা।
এ কথা শুনে রবিউল বলল, তাহলে সে টাকা পয়সা কী করবে, যদি সংসারে কোর খরচ না করে?
আমি বললাম, তার বাপকে দেবে, মাকে দেবে, ভাই-বোনকে দেবে, আলতা, কাজল, লিপিষ্টিক, স্নো, পাউডার কেনবে। আর যদি আপনাকে কোন দান-ছদকা করে, সন্তুষ্ট হয়ে কিছু দেয়, তাহলে আপনি তা খেতে পারবেন। সে তার টাকা কোথায় খরচ করবে, সে ব্যাপারে আপনার কোন মাধা ব্যথা থাকা উচিত নয়।
রবিউল বলল, তাহলে সে চাকুরী করবে ক্যান?
আমি বললাম, কেন সে করবে না? ইসলাম নারী পুরুষ উভয়কে উপার্জন করার অধিকার দিয়েছে। তাই তার অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা যাবে না।
নাদিরা বলল, আমি তো ওকে বলেছি, আমার কামাই সংসারেই খরচ করবো। তোমাকে আমি হেল্প করবো। আমি তো জানি, তোমার মা-বাবা আছে তাদের খরচ দিতে হয়। তোমার ছোট ভাই বোন আছে, তাদের পড়াশোনা চালাতে হয়।
কিন্তু তুমি আমারটা চাপাচাপি কইরা খাইতে চাও ক্যান? হালাল কইরা খাইতে পারো না?