যে সকল শিশু-কিশোরদের পিতা বা মাতা নেই তাদের আমরা তিনভাগে ভাগ করতে পারি।
প্রথমত: যার মা বাপ কেউ বেঁচে নেই।
দ্বীতিয়ত : যার পিতা বেঁচে নেই।
তৃতীয়ত : যার মা বেঁচে নেই।
প্রথম ও দ্বীতিয় দল-কে এতিম বলা হয়।
এতিম ইসলামি পরিভাষা। কুরআন ও হাদীসে এ শব্দটি শত শত বার এসেছে। এতিমদের সম্পর্কে ইসলামের স্কুলে একটি বিশাল অধ্যায় রয়েছে।
যে সকল অপ্রাপ্ত ছেলে-মেয়েদের পিতা বেঁচে নেই তাদের ইসলামি পরিভাষায় এতিম বলা হয়। অনেকে বাংলাতে অনাথ বলে থাকেন। কিন্তু অনাথ ও এতিম এক নয়।
গত ০৪-১৬-২০১০ তারিখের বিভিন্ন সংবাদপত্রে একটি খবর দেখলাম, যাদের মা নেই তাদেরকেও এতিম বলা হবে, মর্মে সুপারিশ বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে।
(আমি খবরের লিংকটা ধরে রাখতে পারিনি, কারো কাছে থাকলে যোগ করে দেবেন)
ইসলাম সন্তান লালন পালনের দায়ীত্বটা দিয়েছে পুরুষকে। যখন মায়ের অকাল মৃত্যু হবে তখন তার বাবা তার পূর্ণ দায়ীত্ব নেবেন। বাবার অবর্তমানে দাদা। দাদার অবর্তমানে চাচা . . . . .।
এখানে যে বিষয়টি আমরা দেখতে পাই, তাহল, নারীকে একটা সুবিধা দেয়ার জন্যই এ ব্যবস্থা করেছে ইসলাম। স্বামী মরে যাওয়া পর সন্তানের জন্য তার ভবিষ্যতটা যেন অন্ধকার হয়ে না যায়, সে যেন অন্যত্র বিয়ে করে আবার সংসার গড়তে পারে, সে জন্য তাকে সন্তান লালন পালনের দায়ীত্ব থেকে মুক্ত করে, সন্তানদের এতিম বলে গণ্য করে তাদের দায়ীত্বটা সরকার বা সমাজের কাধে ছেড়ে দিয়েছে।
তাই যার মা নেই, তাকে এতিম বলার প্রস্তাবটা আমরা যে সকল কারণে মেনে নিতে পারি না :
এক. এতিম ইসলামি পরিভাষা। এটার পরিবর্তন কাম্য নয়। যাদের মা নেই তাদের কিছু করতে হলে, তাদের ভিন্নভাবে পরিচিত করার প্রয়োজন হলে অন্য শব্দ প্রচলন করা যেতে পারে। এতিম শব্দটি নয়।
দুই. যার মা নেই তাকে এতিম করা হলে সমাজে দু রকম এতিম সৃষ্টি হবে। ইসলামি এতিম আর সরকারী এতিম।
তিন. এটা পুরুষকে তার সন্তান লালন-পালনের দায়ীত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে তাদের স্বার্থে একটি সুবিধার প্রচলন বলে আমাদের কাছে মনে হয়। নারীদের এতে কোন সুবিধা নেই। বরং মানসিকভাবে তারা এটা পছন্দ করবে না। তারা পছন্দ করে, তার অকাল মৃত্যু হলে সন্তানেরা যেন বাবার কাছেই থাকে। তার হাতেই মানুষ হয়। তাদের অনাথ আশ্রমে যেতে যেন না হয়। মায়ের মৃত্যুর পর তার সন্তানকে এতিম করা হলে মায়ের মর্যাদা বৃদ্ধি হয় না। মা কোন সুবিধাও পায় না।
চার. আমরা যখন বলি, মেয়েটি এতিম বা ছেলেটি এতিম, তখন এ কথাটি সামাজিকভাবে মেয়েটির বা ছেলেটির মর্যাদা বৃদ্ধি করে না। বরং কমায়। কাজেই কতগুলো শিশুকে -যারা এতিম নয় তাদের- এতিম বলে খাটো করাটা মানবিক মুল্যবোধের পরিপন্থী বলে মনে হয়।
পাঁচ. আমাদের দেশে বহু এতিম আছে। কাজেই এতিমের সংখ্যা বাড়ানোর দরকার কী?