somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার মেয়ে দেখে ভয় পাওয়া রোগ- ১ম পর্ব

০২ রা জুলাই, ২০১০ সকাল ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটকাল থেকেই আমি মেয়েদের ভয় করি। এ নিয়ে আম্মার দু:চিন্তার শেষ ছিল না। ঘরে কোন মেয়ে মানুষ আসলে আমি নাকি ঘর থেকে বের হয়ে কোথাও পালিয়ে থাকতাম।
আম্মার বান্ধবীরা এসে আমাকে দেখতে চাইত। আম্মা তখন বলতেন, ও মাইয়া লোক দ্যাখলে পলাইয়া থাহে। তারা বলত, আপা! এটা খুব ভালো লক্ষণ। ও বড় হলে অলী আল্লা অইবে।
আমি ভাবতাম, অলী-আল্লারা বুঝি মেয়েদের-কে ভয় করেই অলী আল্লা হয়।
মেয়েদের যদিও ভয় করতাম, ঐ বয়সেও তাদের কিন্তু ভালো লাগত। তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখলেও তাদের দেখতাম ঠিকই। কখনো দেখতাম বেড়ার ফাঁক দিয়ে, কখনো আর চোখে। আমি দেখবো তারা আমাকে দেখবে না, এমনভাবে।
উঠতি বয়সে আমার ছোট বড় সব ভাইয়েরাই নাকি মেয়েদের কাছে চিঠি চালাচালি করেছে। প্রেমের নামে ফষ্টি নষ্টি করেছে। ঘুর ঘর করেছে মেয়েদের পিছনে।
কিন্তু আমি নাকি কোন বয়সেই কিছু করিনি। আম্মার এ চিন্তা থেকে দু:শ্চিন্তা আসলো, শহীদের কোন সমস্যা আছে। নইলে আমি এত মেয়ে-বিমুখ হয় কি করে?
তিনি প্রায় বলতেন, ওর সাথে বউ থাকবে না। আমি কি যে করি?

আর এ চিন্তা থেকেই আমাকে বিয়ে করালেন একটি ছোট-খাট সুন্দরী, অল্প-বয়সী, সল্প শিক্ষিতা, এক বাপের এক গ্রাম্য দস্যি মেয়ে।
যাকে বিয়ের আগেও আমার পছন্দ হয়নি, পরেও না। কিন্তু নাক-ফুল দিতে গিয়ে তার প্রেমে পড়ে গেলাম। কাউকে দেখতে শুনতে পছন্দ না হলেও তার সাথে এত ভালোবাসাবাসি সম্ভব, এর আগে জানা হয়নি কখনো।

শিউলীরা আসল আমাদের পাশের বাড়ীর দালানে। ভাড়া থাকে। আমার বয়স তখন ১০/১১ আর ওর বয়স ১২/১৩।
আমি তখন ২য় শ্রেণীতে আর শিউলী তৃতীয়তে। ৭৭ সন, মনে আছে। শিউলী অসম্ভব সুন্দরী আর চঞ্চল। কি সাহস! যে আমি মেয়ে দেখলে দৌড়ে পালাই, সেই আমাকে হাত ধরে বলল, শহীদ খেলতে যাবি? ভয় পেলাম। কিন্তু সুন্দরী মেয়ে বলে কথা, যা বলে তা-ই শুনি। যদি না শুনি, মনটা খা খা করে ওঠে।
এ অবস্থা দেখে আম্মা অনেকটা আশ্বস্ত হলেন। তাহলে শহীদের মেয়ে ভীতি ভেঙ্গেছে। আম্মা একদিন শিউলীর মাকে বললেন, আপনার মেয়ে তো আমাদের বিরাট এক উপকার করেছে। শহীদের একটা রোগ আছে, মেয়ে দেখলে ভয় পায়। কিন্তু শিউলী ওর সাথে মিশে ওর ভয় দুর করেছে।
শিউলীর মা বলল, কি বলব আপা! মেয়েটা ভারী দুষ্ট!
ওদিকে আমার বড় বোনেরা বলে, দেখছ! শহীদ কি নিমনিম্মা! মেয়েদের দেখলে নাকি ওর খুব ভয় লাগে। এখন শিউলীর সাথে প্রতিদিন চোর পুলিশ খেলে। ভয় কোথায় গেল?
আম্মা বিষয়টা আব্বাকে জানালেন। আব্বাও খুশী। এর নামই পরিবার। ছোট একটি সদস্যের সামান্য সমস্যায় বড়রা তা নিয়ে পবর্তসম ভাবে।

স্কুল সেদিন বন্ধ। দুপুর বেলা শিউলী এসে বলল, চল, আমাদের বাসায়। তোকে আচার খাওয়াবো। তুই তো আচার খুব ভালবাসো।
আমি বললাম, তোমাদের বাসায় যাবো, তোমার আব্বা আম্মা কিছু বলবে না?
-না, কী বলবে। আব্বা তো এখন বাসায় নেই। শুধু আম্মা আছে।
গেলাম শিউলীর পিছনে। ওর আম্মা পাক ঘরে। আমাকে নিয়ে পাক ঘরে ঢুকে বলল মা! শহীদকে একটু আচার দিই? বলল, দিবি, তা আবার জিগান লাগে নাকি? সারাদিন চুরি করে করে আচার খাও, একটুও জিগাও না, আর এখন জিগাইতে আইচো! ওরে আমার সাধু মা মনি! আমি যেন কিছু বুঝি না!
আসলে মায়েরা মনে হয় সবই বুঝে। সন্তানের মনের ফাইলগুলোর ব্যাক আপ কপি থাকে মায়েদের হৃদয়ে।
শিউলী আমাকে নিয়ে তাদের বড় রুমটায় প্রবেশ করল। আমাকে বয়াম থেকে আচার বের করে দিল। বলল, কেমন লাগে? তুই দশ পয়সা দিয়া যা খাও তার চেয়ে ভাল না? আমি মাথা নাড়ালাম।
একটু পর বলল, বিছানায় শো। আমি শুয়ে পড়লাম। জানিনা কেন শুতে হবে, তবু যেন না বলতে পারি না।
শোয়ার পর শিউলী যা করল সে ব্যাপারে আমার কোন পড়াশুনা ছিল না। দেখা-শোনাও না। প্রথম প্রথম ভালো লাগল। এরপর ব্যথা পেতে লাগলাম। ব্যথার কারণে প্রথম ভালো লাগাটা মিলিয়ে গেল। চরম ঘৃণা লাগল। বমি আসতে চাইল। উঠতে চাইলাম। শিউলী বলল, এই বলদ! আর অল্প একটু।
যখন সরে গেল, আমি উঠে দরজার দিকে দিলাম দৌড়। শিউলী দৌড়ে যেয়ে হাত ধরে বলল, আরে বলদ, লঙ্গি থুইয়া যাও ক্যা?
এ ঘটনার পর থেকে শিউলীকে দেখলেই ভয় লাগত। মেয়ে ভীতি আরো বেড়ে গেল।

বিয়ের পর বউকে ঘটনাটা বললাম। শুনে সে তো হেসে কুটি কুটি। আসলে বউদেরকে -মনে হয়- এ সব কাহিনী বলতে নেই। শোনার সময় মজা করেই শোনে, আবার সময় মত খোটা দেয়।
আমার বউ প্রায়ই বলে, শিউলীর আচার খাওয়ানোর কাহিনীটা একটু বল না!
আমি রেগে যাই। একটা কাহিনী কতবার বলতে মনে চায়? কিন্তু তার শোনায় ক্লান্তি নেই। আমার মুখে শুনে নাকি খূ-ব মজা পায়।
আর প্রায়ই বলে, তুমি আমাকে এ কাজটুকু করে দাও না, তাহলে তোমাকে আমি শিউলীর মত আচার খাওয়াবো। তবে ব্যথা পাবে না। আর আমি বলদের মত নাকি তার কাজ করে দিই।
তার ধারনা হল, এ কথা বললে আমি নাকি গায়ে জোর পাই। অন্যথায় তার কথা শুনি না। এটা নাকি সে বহুবার পরীক্ষা করে দেখেছে।
কিন্তু আমি তো তেমন কিছু অনুভব করি না। যখন ভাল লাগে তার কথা শুনি, যখন লাগে না, শুনি না। কিন্ত তার পর্যবেক্ষণ হল, এ কথা বললেই আমি নাকি তার কাজে শুরু করি। না বললে, করি না।
আমি বউকে বলেছি, বাচ্চাদের সামনে বসে আমার সাথে প্রেম-ভালোবাসার কথা বলবে না। ইয়ার্কী-বাঁদরামি করবে না। ওরা এখন বড় হয়েছে না? বড় ছেলের বয়স আট, নাম রায়হান। আর ছোট ছেলের বয়স ছয়। নাম মারজান। বড়টা একটু উদাসী ভাবের। মেধায় তেমন নয়। আর ছোটটা, মেধায় অসাধারন। কোন কথা একবার বললেই হল। কোন কিছু শুনলে তার সম্পর্কে প্রশ্ন করতেই থাকে। পাকা পাকা প্রশ্ন করে তাক লাগিয়ে দেয়।
মারজান একদিন আমার পাশে শুয়ে আছে। ওর মা মনে করেছে, ঘুমিয়েছে। আমার কাছে এসে বলল, এই সুখী! শিউলীর আচার খাওয়ানোর কাহিনীটা একটু বলো না!
শুনা মাত্রই মারজান উঠে বসল। বলল, আব্বু! কাহিনীটা কি একটু বল।
ওর মায়ের উপর আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। আমি বকা-ঝকা শুরু করলাম। কিন্তু যত বকি, মারজানের কাহিনী শোনার চাপ তত বৃদ্ধি পায়। ছি! ছি!! ওকে এ কাহিনী কিভাবে বলি?
আমি বউকে বললাম, এখন কেমন হল? তোমাকে কত সতর্ক করেছি, তুমি ছেলেমী ছাড়তে পারো না। এখন ছেলেকে কিভাবে এই কাহিনী শোনাবে? শোনাও! আমি কিছু জানি না।
আমি মারজানকে বললাম, তোমার আম্মু কাহিনী জানে, তার কাছ থেকে শুনে নাও।
-ঠিক আছে আম্মু, তুমিই বল!
-শোনো তাহলে। ছোট বেলায় শিউলী নামের একটি মেয়ে তোমার আব্বুকে আচার খাওয়াবে বলে তাদের বাসায় নিল। আচার খাইয়ে তার দাম তো উসূল করলোই, তারপর ছোট-খাট একটা মার দিল। তোমার আব্বু দৌড়ে বাসায় চলে আসল। এ হল কাহিনী।
আমি দেখলাম, বউটার বুদ্ধিতো বেশ! আমিতো এ রকম বলতে পারতাম না।
বুদ্ধিমত্তার জন্য তাকে ধন্যবাদ দিতে মনে চাইল, দিলাম না।
কারণ মুরব্বীরা বলেছেন: সামনে বসে বউয়ের প্রশংসা করতে নেই। তাহলে বউ মাথায় চড়ে বসবে। বউকে বোকা বানিয়ে রাখবে। তাহলে ঠিক ঠাক থাকবে।
মারজান আমাকে বলল, আব্বু! শিউলী মেয়েটা এখন কোথায় থাকে, আমাকে একটু বলতে পারো?
আমি বললাম, সে আছে না মারা গেছে, কে জানে?
ও প্রশ্ন করল, আব্বু! তোমাকে যখন মার দিল, তখন আমরা কোথায় ছিলাম?
আমি বললাম, তোমরা তখন ঘুমে ছিলে।

৩০টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×