মনটা আজ খুব বেশী খারাপ। গত কয়েক বছরে কখনো এত খারাপ হয়নি। আমার সাথে ভালো সম্পর্ক আছে এমন একজন এম বি বি এস ডাক্তারের কথা বলছি। ঢাকার একটি নামকরা সরকারি হাসপাতালে চাকুরী করেন। তার নাম ও হাসপাতালের নাম যদি আমি বলে দেই, অনেকেই চিনবেন। যখন সেই এলাকায় থাকতাম, অসুখ-বিসুখে উনার কাছে যেতাম। সেই থেকে ঘনিষ্ঠ পরিচয়। রোগীদের সাথে এত আন্তরিক আচররণ ও সুন্দরভাবে কথা বলতে আমি দেখিনি কোন ডাক্তার-কে। আমার পরিবারের খোঁজ-খবর জানতে চাইতেন। তার পরিবারের খবর আমি জানতে না চাইলেও তিনি নিজেই বলতেন, আমার দুটো মেয়ে। বড় মেয়ের বয়স বারো বছর। দুটোকেই মাদরাসায় পড়াচ্ছি। ইত্যাদি গল্প তার শেষ হতো না।
দু বছর হয়, তার সাথে আমার দেখা নেই। আজ এক সহকর্মী বললল, ডাক্তার . . . সাবের দুর্ঘটনার কথা শুনেছেন?
আমি বললাম. না, কি হয়েছে? সে বলল, তার স্ত্রী অন্য একটি ছেলের সাথে প্রেম করে চলে গেছে।
শুনে যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল মাথায়। বিষন্নতায় আচ্ছন্ন হয়ে গেলাম।
সে বিস্তারিত বলল এভাবে; অনেকদিন পর্যন্ত একটি অবিবাহিত ছেলের সাথে তার সম্পর্ক। ডাক্তার যখন চেম্বারে রোগী নিয়ে ব্যস্ত থাকতো তখন তার গাড়ীতে করে প্রেমিকা-প্রেমিকা ঘুরে বেড়াত আর মজা করত। আজে-বাজে স্থানে যেত। ড্রাইভার সব জেনেও কখনো ডাক্তারকে কিছু জানায়নি। এরপর ডাক্তার দেখল, স্ত্রীর আচার-আচরণ একেবারে পাল্টে গেছে। কথায় কথায় তাকে তেড়ে আসে। ডাক্তার তাকে প্রশ্ন করল, আচ্ছা তুমি এমন করো কেন? কি চাও? উত্তরে স্ত্রী বলল, আমি অমুক ছেলেকে ভালোবাসি। তাকে পেতে চাই।
ডাক্তার বলল, তার কন্টাক্ট নম্বর দাও। নম্বর দিল। ডাক্তার তাকে ফোন করে কাজীর অফিসে আসতে বলল। স্ত্রীকে নিয়ে সেও গেল সেখানে। স্ত্রীকে বলল, তুমি আমাকে তালাক দাও। স্ত্রী তালাক দিল। আর সাথে সাথে সেই ছেলের সাথে নিজের স্ত্রীকে বিয়ে দিয়ে দিল। আর তাকে বলল, আমার মেয়ে দুটো নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না। তুমি তোমর নতুন স্বামী নিয়ে সূখী হও। আর শোন, তুমি আমার কাছে কি আর কিছু চাও? স্ত্রী বলল, না, চাই না। ডাক্তার বলল, তুমি এখন আমার কাছে যা চাবে তার সবই দেব। তবে একটি শর্ত। তাহল, কখনো তুমি আমার কাছে ফিরে আসতে পারবে না। তোমাকে আমি উত্তরায় একটি ফ্ল্যাট লিখে দেব আর সত্তর লাখ টাকা দেব আগামী কালই। তুমি কখনো আমাকে আর মনে করতে পারবে না।
ডাক্তার তাকে পরদিন একটি ফ্ল্যাট আর সত্তর লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট করে দিল। এখন পর্যন্ত প্রেমিক-প্রেমিকা সূখে আছে। ঘটনাটা দু সপ্তাহ আগের।
যখন এ ঘটনা শুনেছিলাম, তখন জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি সেমিনারে যাচ্ছিলাম। বিষন্নতা আমাকে এমনভাবে আক্রান্ত করল, সভাপতিকে ধন্যবাদ দেয়া ব্যতীত আর কোন বক্তব্য রাখতে পারিনি সেখানে।
আমাকে এতটা অস্থির হতে দেখে সহকর্মীটি বলল, আপনি এত দু:খ পেলেন, কিন্তু ডাক্তার সাহেব তো স্বাভাবিবক। হাসেন, কথা বলেন, রোগী দেখেন।
আমি বললাম, এটা হয়ত তার বাহিরের অবস্থা। ভিতরে সে কাঁদছে না, এ আমি বিশ্বাস করি না। কাঁদছে। তার অন্তরতা খা খা করছে। কখনো কখনো ভাবে, কিছুই নেই, হারিয়ে গেছে সব। হয়ত সে তার কান্না কাউকে শুনতে দিতে চায় না। এ কান্নাকে সে ভাবে ব্যর্থতার প্রকাশ। এটা যে পুরুষের জন্য মানায় না, একেবারেই না।
আমি ভাবি, আমার বউ যদি এ রকম করত, আমি বাঁচতাম না। সে বাঁচে কিভাবে?
ডাক্তার চুয়াল্লিশ বছর বয়সে হয়ত আবার ১৮/১৯ বছরের একটি সুন্দরী, স্বল্প শিক্ষিতা, ধার্মিক মেয়ে বিয়ে করে সূখী হবেন। কিন্তু যখন মনে পড়বে ... প্রথম ভালোবাসার স্মৃতিগুলো .. ..?
আবার কিছুক্ষণ ভাবি, ডাক্তার লোকটা সৎ ও ধার্মিক। তাই হয়ত আল্লাহ তার পাপিষ্ঠা স্ত্রীকে সরিয়ে দিয়েছেন তার সূখ-শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যই। আর তার কষ্টের জন্য তাকে পুরস্কার দেবেন, দুনিয়া ও আখেরাতে।
ডাক্তার বেচারা কত মহানূভব, ভাবতে থাকি। এমন হৃদয়বান মানুষ কতটা মেলে এ কলুষিত সভ্যতায়?
কার প্রেমটা খাটি ছিল, এ নিয়ে একদিন এই দুই প্রেমিক-প্র্রেমিকা তর্ক করবে। প্রেমিক বলবে আমি একজন অবিবাহিত পুরুষ হয়ে তোমার মত দু সন্তানের মাকে বিয়ে করেছি। আর প্রেমিকা বলবে, আমি তোমার জন্য আমার নাম করা ডাক্তার স্বামীকে ত্যাগ করেছি। মেয়ে, সংসার সব ভুলে গেছি, তোমার প্রেমে। প্রেমিক বলবে, তুমি কত বড় খারাপ মেয়ে মানুষ। ডাক্তার বেচারার এতদিনের আদর ভালবাসা আর দানা-পানির সাথে বিশ্বাস ঘাতকটা করে আমার কাছে এসেছো। আমি কি তোমাকে চিনি না?
এভাবে প্রেমের বড়াই করতে করতে দুজনের প্রেমই শেষ হবে একদিন। হয়ত মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই। যুবকটা আরেকটা বিয়ে করবে। তার আগে সম্পদটুকু আত্নসাত করবে। ওকে আবার রাস্তার মেয়ে বানাবে। জীবন বাঁচাতে, রাগে, দুখে, অভিমানে, হতাশায়, নিজের ব্যর্থতার প্রতিশোধ নিতে হয়ত কোন হোটেলে পতিতা হিসাবে কাজ করবে।েআর এগুলো হবে মহান প্রতাপশালী আল্লাহর ইচ্ছায়। হবেই। হুবহু না হলেও ওরকমই কিছু।
মুনীর তার স্ত্রীকে খুন করেছিল, খুকুর সাথে পরকীয়া করে। মুনীর সুখের ঘর বাঁধতে পারেনি। খুকু কতটা সূখী হয়েছে তার ফলোআপ জানি না। আয়েশা হুমাইরার সূখী হয়নি। রাশেদুল কবীররা এখন লাল দালানে। এভাবেই, আর এভাবেই। হারামে কখনো আরাম নেই। সুমনা মেহেরুনরা হারিয়ে গেছে জনমের তরে। কেউ তাদের নিয়ে আর ভাবতে চায় না। লাভ কি ভেবে?
পরকীয়া প্র্রেম বলতে আমরা কী বুঝি?
যার স্বামী আছে সে যদি অন্য পুরুষের সাথে প্রেম করে, যার স্ত্রী আছে সে যদি অন্য নারীর সাথে প্রেম করে, আমরা সেটাকে পরকীয়া প্রেম বলে জানি।
পরকীয়া প্রেম কোন প্রেম নয়। এটা জঘন্য এক ব্যভিচার। একটা ডাকাতি।
যারা পরকীয়া প্রেম করে তারা এ নিষিদ্ধ প্রেমের অভিশাপে পাগলা কুকুরের মত হয়ে যায়। তখন বাপ হয়ে নিজের সন্তান-কে পর্যন্ত অস্বীকার করে বসে। মা হয়ে নিজের একমাত্র ছেলেকে খুন করতে সাহায্য করে খুনীকে। সন্তানের লাশটা ফ্রীজে রেখে স্থির শান্ত থাকে। ভাবতেই চায় না, আমি যে একজন খুনীর জন্য জীবনটা দিয়ে দিচ্ছি।
এ রকম কত ঘটনা সমাজে ঘটে, তার কয়টার খবর আমাদের কানে আসে? ওয়াফির পিতা আযম সাহেব মামলা না করলে আমার কি জানতাম এ নোংড়া ঘটনাগুলো? যখন ঝামেলা বেধে যায় তখন আমরা জেনে যাই।
তাই সরকার ও আইন প্রণেতাদের কাছে দাবী জানাচ্ছি, তারা যেন আর দেরী না করে এর বিরুদ্ধে একটি কঠোর শাস্তির বিধান রেখে আইন করেন।
যে আইনে নারী ও পুরুষ উভয়-কে সমানভাবেই শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে।
এতে পরকীয়া বন্ধ না হলেও মানুষ এটাকে মন্দ জানবে, বেআইনী ভাববে, ঘৃণা করবে।
সাথে সাথে পরকীয়া প্রেম কে বৈধ বলে ভাবায়, এমন নাটক, সিনেমা, গল্প, উপন্যাস নিষিদ্ধ করতে হবে। এগুলোর রচয়িতা, নির্মাতা, আমদানী কারকদের শাস্তি দিতে হবে।
পরিবার ব্যবস্থা রক্ষা, পরিবারে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখায় সরকারের দায়িত্ব রয়েছে।
তারা যদি মনে করেন, এর বিরুদ্ধে আইন করলে আমরা নিজেরাও তো আর পরকীয়া করতে পারব না। তাই থাকনা, থাক। তাহলে আপনাদের মেয়ে, আপনাদের ছেলে যখন এর শিকার হবে তখন আফসোস করবেন, অনুতপ্ত হবেন, সময়টা থাকবে না।
এ ক্ষেত্র্রে নাস্তিক সম্প্রদায়ের নেতিবাচক ভূমিকা আছে। তারা তাদের লেখা প্রবন্ধ, গল্প কবিতায় পরকীয়াকে উৎসাহিত করে থাকে।
আমি তসলিমার আত্নজীবনী পড়ে দেখেছি, সে তার বইতে পরকীয়া প্রেমকে সাপোর্ট করেছে। আমি হলফ করে বলতে পারি, কমজোর ঈমানের মানুষগুলো তার ও তাদের বই পড়ে বিভ্রান্ত হচ্ছে। পরকীয়া প্রেম করতে আগ্রহী হচ্ছে। সমাজে অস্থিরতা বাড়ছে। পরিবারে মধ্যে অনাস্থা, অবিশ্বাস সৃষ্টি হচ্ছে।
পুরুষদেরও আমি নির্দোষ বলবো না। তারা স্ত্রী-সন্তানদের সূখী করার জন্য টাকা পয়সা অর্জনে এত সময় দেন যে, স্ত্রীকে, সন্তানদেরকে সময় দিতে সময় পান না।
ঐ ডাক্তারের কথা আমি জানি। সে আড়াইটা পর্যন্ত হাসপাতালে কাটাতেন। এরপর ঢাকার কেন্দ্র থেকে উত্তরাতে আসেন বাসায়। বিকাল চারটা থেকে সারে পাঁচটা পর্যন্ত ডিউটি করেন একটি ল্যাবে। সারে পাঁচটা থেকে রাত ১০-১১ টা পর্যন্ত চেম্বারে। আমার প্রশ্ন, উনি স্ত্রীকে সময় দেন কখন? যখন রাতে অল্প সময়ের জন্য স্ত্রীর কাছে যান, তখন সারাদিনের ব্যস্ততা ও ক্লান্তি ঘাড়ে রেখে স্ত্রীকে তিনি কি দিতে পারেন? ঘুমাবেন, না ঘুম পাড়াবেন? ঘুমানোই হয়, ঘুম পাড়ানো হয় না।
আমি তাকে একদিন বলেছিলাম, এত কাজ কেন করেন? কিছুটা সময় বই-পত্র, সুন্দর সাহিত্য পাঠে ব্যয় করুন। টিভিতে ভালো ভালো অনুষ্ঠান দেখুন। ভাবী-বাচ্চাদের সময় দিন।
সে বলেছিল, ভাই! ডাক্তারী এখন আর আমার শুধু পেশা নয়, নেশাও।
আমি মনে করি, পুরুষরা তাদের স্ত্রীর প্রতি যত্নবান হলে এ সমস্যা অনেকটা এড়ানো যায়। কিন্তু ভোগবাদী মানসিকতা তাদের উভয়কে উম্মাদ করে দুজনকে দু প্রান্তে নিক্ষেপ করে। তাদের সাথে দু:খ পোহাতে হয় কতগুলো নিষ্পাপ মানুষকেও।
আজকের পত্রিকা একটু পড়ে দেখেন। পরকীয়া মানুষকে পশুর চেয়েও খারাপ বানায়। কোন পশুর দ্বারা কি একাজ সম্ভব ?
Click This Link
Click This Link