হ্যাঁ আমার জানতে ইচ্ছে করে। পুরুষদের চোখের চেয়ে মেয়েদের চোখ বেশী কাজ করে, সত্যি কিনা? আমার কাছে সত্যি মনে হয়। জানি না, আপনারা কি জানেন।
বিয়ে করব বলে মেয়ে দেখতে গেলাম। সাথে আমার ছোট বোন। পনের মিনিটের মত দুজনে বসে একজনকে দেখলাম। বাসায় যখন চলে আসলাম, আম্মা জিজ্ঞেস করলেন, কি দ্যাখলি? মেয়ে ক্যামন? বললাম, মোটামুটি। মেয়ের চোখ ক্যামন? ঠালা ঠালা, না ভাসা ভাসা? বললাম, খেয়াল করিনি। মেয়ের নাক ক্যামন? ভোচা, না খারা? বললাম, খেয়াল করিনি। মেয়ের চুল ক্যামন? ঘন, লাম্বা, না পাতলা? বললাম, ভালমত খেয়াল করিনি। মেয়ের হাত পায়ের আঙ্গুল গুলো ক্যামন? মোটা মোটা, না চিকন চিকন? বললাম, খেয়াল করে দেখিনি।
আম্মা রাগ করে বললেন, এই বলদ দিয়া কিছু অইবে না। মেয়ে দ্যাখতে গ্যাছে, আইয়া কিছু কইতে পারে না। এই! সুম্মীকে ডাক!
সুম্মীকে ডাকা হল। মেয়ের চোখ কেমন? সুম্মী উত্তর দিল। চুল কি রকম? উত্তর দিল। নাক কেমন? উত্তর দিল। আঙ্গুল কেমন? উত্তর দিল। সব প্রশ্নের একশ ভাগ সহিহ শুদ্ধ উত্তর দেয়ার পর বোনাস উত্তর হিসাবে আরো বলল, মেয়ে হাসি দিলে দাতের উভয় পাট দেখা যায়, না এক পাট। হাসি দেয়ার সময় উপরের ঠোটে একটা ভাঁজ পড়ে। তা দেখতে কেমন লাগে, একেবারে মুখস্থ বলে দিল।
আম্মা ওর সবগুলো উত্তর শুনে আমার দিকে চোখ পাঁকিয়ে বললেন, কী? ওতো তোর সাথেই আছিলো, ও এতো খেয়াল করল ক্যামনে?
আড়াল থেকে ভাবী বলল, আম্মা, সেজ ভাইয়া তো আগে কখনো মেয়ে দ্যাখে নাই। এই প্রথম, তাই আন্ধার আন্ধার দ্যাখছে।
আরেকটি ঘটনা বলি- এমন ঘটনা অনেক আছে। তবে এটি ৯৯ সালের মেয়ে দেখার কাহিনী নয়। মাত্র তিন চার মাস আগের কথা।
আমার বউয়ের খালাত বোন তানিয়া আমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছে। বরিশাল মহিলা কলেজে পড়ে। কলেজ সংলগ্ন হোস্টেলেই থাকে। কেমন আছো? ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন? ভাল, জাতীয় কথা-বার্তা হল। মনে মনে ভাবলাম, এতটুকু কথা-বার্তায় ও খুশী হবে না। খারাপ ভাববে। বলবে অহংকারী। তাই অল্প করে হলেও একটু গল্প করতে হবে।
একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল, ১২/১৩ বছর আগের কাহিনী। ঢাকাতে একটি বাসে উঠলাম। শংকর থেকে যাবো গুলিস্তান। উঠে দরজার পাশের সিটে বসলাম। একটি মেয়ে উঠে আমার পাশেই বসে পড়ল। আমি ভাবলাম, আমি হুজুর মানুষ। একটি মেয়ের পাশে বসব, দেখতে কেমন লাগে? আমার কাছেই তো ভাল লাগে না। মানুষের কাছে তো আরো খারাপ লাগবে? তা ছাড়া আমার পিছনে যখন আরো অনেক সীট খালী, তখন কোন অজুহাতে আমি একটি মেয়ের কাছে গায়ে গা লাগিয়ে বসে থাকব? উঠে গিয়ে পিছনের সীটে বসলাম। আমি বসামাত্র মেয়েটি পিছনে ফিরে চোখ রাঙিয়ে বলল, এত হিংসা! এ জন্যইতো দুনিয়ার কোন মানুষ হুজুরদের চোখে দেখতে পারে না।
আমি লজ্জা পেলাম। কিছু বলতে পারলাম না। ভাবলাম, আবার উঠে গিয়ে তার পাশে বসে কাফফারা আদায় করে দিই। হিংসার পরিবর্তে বিনয় প্রকাশ করি। কিন্তু ভয় হল, এবার যদি সে নিজেই উঠে যায়?
এখান থেকে শিক্ষা নিয়েছি। আর কখনো মেয়েদের পাশ থেকে উঠে যাইনি। জোর করেই বসে থেকেছি।
এ অনুভব থেকেই তানিয়াকে কাছে বসালাম। জানতে চাইলাম, হোস্টেলে খাওয়া-দাওয়া, স্বাধীনতা কেমন? বাহিরে বের হওয়ার সুযোগ কেমন? মাঝে মধ্যে বাসায় কেন আসতে পারো না? ইত্যাদি। তার কথা শুনে বললাম, তোমরা কলেজের ছাত্রী। তোমাদের এত কড়াকড়ির মধ্যে রাখে? আমরা যখন মাদরাসায় পড়েছি তখনও এ রকম কড়াকড়ি ছিল না। আসলে কড়াকড়ি সব জায়গায়ই আছে, কিন্তু বদনামটা হয় শুধু মাদরাসাওয়ালাদের।
তানিয়া দুপুরে খেয়ে দেয়ে বিকালে হোস্টেলে চলে গেল। তার বোন তাকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এসে আমাকে বলল, এই সাথি! তোমার নাকি মাথার চুল পেকেছে?
আমি বললাম, উহ! আমার মাথার চুল পেকেছে আমার খবর নেই, আছে তোমার? বলল, না আমারও খবর নেই। তানিয়া যাওয়ার সময় আমাকে বলল, ভাইয়ার কানের কাছে কয়েকটা চুল সাদা হয়েছে। ওগুলো কলপ দিয়ে কালো করে দিও!
আমার বউটা বালিশ থেকে আমার মাথাটা নিয়ে তার উরুর উপর রাখল। যেন বালিশের উপর মাথা থাকলে চুল বাছাই করা একেবারে অসম্ভব। খুজতে লাগল সাদা চুল। অনেকক্ষণ পর পেল। ডান পাশে দুটি আর বাম পাশে তিনটি।
বলল, আচ্ছা এতো অল্প সময়ে তানিয়ার চোখে এগুলো পড়ল কিভাবে? তুমিও দেখলে না, আমিও তো দেখলাম না।
আমি বললাম, আসলে তুমি আগের মত মেয়েলী দৃষ্টিতে আমার দিকে আর তাকাও না।